আজকের ডিজিটাল যুগে, প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটপ্লেসে বেস্ট প্রোডাক্ট বা সার্ভিস অফার করলেই কি হবে? সবার আগে, আপনাকে আপনার অডিয়েন্সের কাছে সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পৌঁছাতে হবে। কিন্তু, কিভাবে? আপনার প্রোডাক্ট যাদের জন্য উপযুক্ত, তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে হলে রি-মার্কেটিং একটি পাওয়ারফুল টুল।
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, আপনি যখন একবার কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে ওয়েবসাইটে খুঁজতে যান, তারপর সেই প্রোডাক্টটা একাধিক ওয়েবসাইটে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার সামনে আবার আসে। এটাই রি-মার্কেটিং -এর কৌশল। রি-মার্কেটিং-এর মাধ্যমে, আপনি সেই প্রোডাক্ট তার আগের দর্শকদের আবার একবার দেখাতে পারেন এবং তাদের ফিরিয়ে আনতে পারেন।
রি-মার্কেটিং: কিভাবে আপনার প্রোডাক্ট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাবেন?
রি-মার্কেটিং করে বিজনেস গ্রো করার জন্য জানতে হবে রি-মার্কেটিং কি এবং কিভাবে কাজ করে-
রি-মার্কেটিং কি?
রি-মার্কেটিং হলো একটি প্রসেস, যেখানে আপনি আপনার সাইটে আসা, কিন্তু কিছু কেনাকাটা না করা দর্শকদের আবার টার্গেট করেন। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের সামনে আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন আবার শো করবেন। এটা অনেকটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করে, যাতে তারা মনে করে, “ও, আমি তো এই প্রোডাক্টটা দেখেছিলাম!”

রি-মার্কেটিং এ সফলভাবে কাজ করার জন্য, আপনার অবশ্যই কুকি বা ট্র্যাকিং পিক্সেল ইন্সটল করা থাকতে হবে। কাস্টমার যখন আপনার ওয়েবসাইটে আসেন, তখন তার ব্রাউজারে একটি ট্র্যাকিং পিক্সেল কাজ করে। এর মাধ্যমে, আপনি কাস্টমারের আগের অ্যাক্টিভিটি এর উপর ভিত্তি করে, তাকে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন।
কেন রি-মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ?
১. রিসার্চ এবং ডাটার ভিত্তিতে টার্গেট নির্ধারণ:
রি-মার্কেটিং, অন্য যে কোনো মার্কেটিং কৌশলের তুলনায় আরও বেশি কার্যকর কারণ এটি নির্দিষ্ট দর্শককে টার্গেট করার সুযোগ দেয়। আপনি যদি জানেন যে, কোনো কাস্টমার আপনার পেজে গিয়েছিল কিন্তু কিনে নি, তাহলে আপনি তাকে সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন পুনরায় দেখাতে পারবেন।

২. কনভার্সন রেট বাড়ানো:
রি-মার্কেটিং একটি এমন স্ট্রাটেজি যা কনভার্সন রেট বাড়াতে সাহায্য করে। ধরুন, আপনি সাইটে এসে পণ্য দেখেছেন কিন্তু কেনেন নি। কয়েকদিন পর, যখন আপনি অন্য ওয়েবসাইটে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে যাবেন, তখন সেই পণ্য আবার আপনার সামনে আসবে। এতে করে আপনার মনে থাকবে যে আপনি এই পণ্যটা দেখেছিলেন এবং আবার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই কৌশলটি কাস্টমারের মনোযোগ ধরে রাখে এবং তাকে কিনতে ইনফ্লুয়েন্স করে।

৩. কম খরচে বেশি ফলাফল:
রি-মার্কেটিং-এর আরেকটি বড় সুবিধা হল এটি অন্য ধরনের প্রচারের তুলনায় কম খরচে বেশি ফলাফল দেয়। আপনি যখন নতুন কাস্টমার আকর্ষণ করতে চান, তখন প্রচুর বাজেট খরচ হয়। কিন্তু, যদি আপনার কাছে আগের কাস্টমারদের তথ্য থাকে, তাহলে আপনি তাদেরকে পুনরায় টার্গেট করে কম খরচে তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। আপনি তাদেরকে নন-কনভার্টেড ভিজিটর হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কাছে আপনার বিজ্ঞাপন পাঠাতে পারবেন, যার ফলে খরচ কম এবং রিটার্ন বেশি হবে।

৪. ব্র্যান্ড এক্সপোজার:
রি-মার্কেটিং কেবল আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য নয়, বরং আপনার ব্র্যান্ডের এক্সপোজার বাড়ানোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক প্ল্যাটফর্মে, যেমন Facebook, Instagram, Google Display Network বা YouTube-এ আপনার বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হলে, আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ে। এই এক্সপোজারের মাধ্যমে, আপনি কাস্টমারদের কাছে পরিচিতি তৈরি করতে পারবেন, যাতে তারা আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বাস বিল্ড করতে পারে।

রি-মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
রি-মার্কেটিং চালু করার জন্য প্রথমে আপনার ওয়েবসাইটে একটি ট্র্যাকিং পিক্সেল ইন্সটল করতে হবে। এই পিক্সেল কাস্টমারের ওয়েবসাইটে প্রবেশের সময় তাদের আচরণ ট্র্যাক করে। একবার ট্র্যাক করা হলে, সেই কাস্টমার যখন অন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে, তখন আপনার পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন তার সামনে আসবে। এই পুরো প্রসেস তিনটি মেজর স্টেপে কাজ করে:
১. First Seen এবং ট্র্যাকিং:
কাস্টমার যখন আপনার সাইটে আসে, তখন তার ব্রাউজারে একটি কুকি স্থাপন করা হয়। এটি আপনাকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করে যে তারা কোন পেজগুলো দেখেছে, কত সময় ধরে দেখেছে এবং তাদের আগ্রহের বিষয় কী ছিল।

২. বিশেষ বিজ্ঞাপন:
রি-মার্কেটিং বিজ্ঞাপনটি কাস্টমারের আগের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কাস্টমার কোনো পণ্য পেজে গিয়ে দেখে কিন্তু ক্রয় না করে চলে যায়, তবে সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন তাকে পরবর্তী সময়ে দেখানো হবে। এটি কাস্টমারদের পুনরায় ফিরিয়ে আনার একটি effective উপায়।

৩. বিজ্ঞাপনের পুনরাবৃত্তি:
আপনার বিজ্ঞাপনটি কাস্টমারের সামনে বারবার প্রদর্শিত হবে, যতক্ষণ না তারা কেনাকাটা করেন। এটি কাস্টমারের মনে সেই প্রোডাক্টটি অ্যাকটিভ করে তুলতে সাহায্য করে।

রি-মার্কেটিং স্ট্রাটেজি: Start Remarketing for Your Business
১. সেগমেন্টেশন:
রি-মার্কেটিংয়ে সেগমেন্টেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কাস্টমারদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করতে পারেন, যেমন যারা সাইটে এসে পণ্য দেখেছে কিন্তু কেনেনি, যারা তাদের কার্টে পণ্য রেখে চলে গেছে বা যারা পূর্বে ক্রয় করেছে। এর মাধ্যমে আপনি তাদের কাছে আরো কাস্টমাইজড বিজ্ঞাপন পাঠাতে পারবেন।

২. ক্রস-প্ল্যাটফর্ম মার্কেটিং:
এক প্ল্যাটফর্মের বাইরে আপনার বিজ্ঞাপন রাখতে পারেন। Google Ads, Facebook Ads, Instagram এবং YouTube এর মাধ্যমে আপনার অ্যাডগুলো কাস্টমারের সামনে একাধিক জায়গায় আসবে, যেটি ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ায় এবং তাদেরকে বারবার আপনার প্রোডাক্টের দিকে আকর্ষণ করবে।

৩. বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট:
আপনার বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে আপনি কাস্টমারের মনোযোগ আরও সহজে আকর্ষণ করতে পারেন। বিশেষ করে যারা কার্টে পণ্য রেখে চলে গেছে তাদের জন্য এসব অফার খুবই কার্যকরী হতে পারে।

শেষ কথা:
রি-মার্কেটিং একটি অত্যন্ত শক্তিশালী টুল যা আপনার ব্র্যান্ডকে কাস্টমারের কাছে বারবার পৌঁছাতে সাহায্য করে। এই কৌশলটির মাধ্যমে, আপনি আপনার কনভার্সন রেট বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসাকে আরও লাভজনক করতে পারবেন। তাই, আপনার ব্যবসার জন্য রি-মার্কেটিং -এর পুঁজি আজ থেকেই তৈরি করে ফেলুন!