আপনি কি একটি দুর্দান্ত আইডিয়া নিয়ে বসে আছেন, কিন্তু ফান্ডিং এর অভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন অন্ধকারেই থেকে যাবে ভাবছেন? তবে আমি বলি আপনি অযথাই দুচশ্চিন্তা করছেন। যারা বলে নো ফান্ডিং এ একটি বিজনেস স্টার্ট করতে পারবেন না, তারা এখনো বিংশ শতাব্দীর ক্রিয়েটিভ বিজনেস টেকনিক নিয়ে জানেন না। কি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে,নো ফান্ডিংয়ে একটি বিজনেস কীভাবে স্টার্ট করবেন? আপনার যদি দুর্দান্ত বিজনেস আইডিয়া থাকে, তবে আপনি নো ফান্ডিংয়েও বিজনেস শুরু করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই-
নো ফান্ডিং এ একটি বিজনেস স্টার্ট করার টিপস :
১.ফ্রি বিজনেস আইডিয়া জেনারেট করুন :
কোনো বিজনেস মডেল দাঁড় করাতে চাইলে সবার প্রথমেই দরকার একটি সলিড আইডিয়া এবং ফান্ডিং। যদি ফান্ডিং এর অভাবে বিজনেস শুরু করতে না পারেন তবে এই ক্রিয়েটিভ বিজনেস আইডিয়াগুলো আপনার জন্য।
ড্রপশিপিং :
ড্রপশিপিং হল উদ্যোক্তাদের ব্যবহৃত জনপ্রিয় ব্যবসায়িক মডেল যেখানে কোনো ফান্ডিং ছাড়াই আপনি ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এটি একটি স্বল্প-বিনিয়োগ স্টার্টআপ আইডিয়া যেখানে বিক্রেতা শুধু অনলাইন প্লাটফর্মে প্রোডাক্ট বিক্রি করেন কিন্তু প্রোডাক্টের উৎপাদন, সংরক্ষণ বা সরবরাহের কাজ করেন না। প্রধান বিক্রেতা তাদের প্রোডাক্ট এর প্রাইজের একটা অংশ প্রোভাইড করে, এবং বাকি টা পরে লাভ করে।
প্রোডাক্টের চেয়ে সার্ভিসে ফোকাস করুন :
নো ফান্ডিং এ একটি ব্যবসা শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল আপনার কোনো একটি স্কিলের মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়া। এমনকি যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট দক্ষতায় অ্যাডভান্সড না হয়ে থাকেন, তবে আপনি যে জিনিসগুলি জানেন তা সবার চেয়ে কীভাবে ভালভাবে করা যায় তা সনাক্ত করে কাজ শুরু করুন।
“যেহেতু আপনার কাছে এখনও ফান্ড নেই, তাই আপনার কাছে যে জিনিসগুলি আছে তা দিয়ে শুরু করুন, যেমন – হতে পারে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, দক্ষতা।
- ফিলান্সিং সার্ভিস।
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
- ফটোগ্রাফি এজেন্সি।
- বুককিপিং সার্ভিস।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জার :
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জার হওয়ার মাধ্যমেও আপনি নো ফান্ডিং এ একটি বিজনেস স্টার্ট করতে পারবেন। ঠিক কীভাবে? জনপ্রিয় সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আপনার যখন কয়েক হাজার ফলোয়ারস হয়ে যাবে, তখন আপনি কোনও ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই অর্থ উপার্জনের এই সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারবেন:
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং :
কোনো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট প্রমোশন করুন এবং আপনার ফলোয়াররা এটি কিনলে এর একটা শতাংশ কমিশন লাভের মাধ্যমে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
- স্পনসরশিপ :
আপনার ফলোয়ারদের কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করার জন্য, সেসব কোম্পানির কাছ থেকে স্পনসরশীপ পাওয়া।
- অনলাইন মার্কেটিং :
আপনার ব্র্যান্ডের নাম, লোগো বা ছবি যোগ করে, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া স্টোরে বিক্রি করার মাধ্যমে বিজনেস করতে পারেন।
২.আপনার বিজনেস প্ল্যানটি লিখুন :
একটি বিজনেস প্ল্যান হল এমন একটি রোড ম্যাপ যেখানে আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তা লিপিবদ্ধ থাকে। সঠিক বিজনেস প্ল্যানের সাহায্যে, আপনি সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ গুলো অনুমান করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের জন্য পরিকল্পনা করতে পারবেন। আপনি বিনিয়োগকারীদের এবং কর্মচারীদের পাশাপাশি ফান্ডিং এর দিকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। আপনি যখন আপনার বিজনেস প্ল্যানটি লিখছেন, তখন জোর দিন কেন আপনার অফারগুলি অন্যদের থেকে আলাদা। একটি বিজনেস প্ল্যানের মূল অংশ গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- কোম্পানির ওভারভিউ: আপনি যে ব্যবসা শুরু করতে চলেছেন সেটির এটি একটি বিবরণ। আপনার ব্যবসার মডেল এবং আইনি কাঠামো উল্লেখ করতে ভুলবেন না, যেমন এটি S-corp বা LLC।
- মার্কেট গবেষণা: আপনার মার্কেট গবেষণা ফলাফল সংক্ষিপ্ত করে উল্লেখ করুন। আপনার পণ্য বা সার্ভিস কীভাবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা পূরণ করবে এবং আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে তুলবে তা ব্যাখ্যা করতে ভুলবেন না।
- মার্কেটিং কৌশল: মার্কেটিং কৌশল বলতে বোঝায় কিভাবে আপনি নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনার ব্যবসার প্রচার করার পরিকল্পনা করছেন। আপনার ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে ইমেল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ইভেন্ট মার্কেটিং করতে পারেন।
- আর্থিক পরিকল্পনা: আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আপনি অর্থ কীভাবে উপার্জন এবং ব্যয় করবেন তা উল্লেখ থাকবে। আদর্শভাবে বলতে, এটি একটি ব্যালেন্স শীট যখানে অর্থ বিনিময়ের সব ডাটাবেস থাকবে।
৩.মার্কেট রিসার্চ :
আপনি আপনার বিজনেস আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আগে, মার্কেট গবেষণার মাধ্যমে জেনে নিন এটি আসলে কার্যকর কিনা। আপনার প্রতিযোগীদের শনাক্ত করুন এবং আপনার স্পেশাল সেলিং পয়েন্ট বের করুন, যা মূলত আপনাকে মার্কেট কম্পিটিশনে সারভাইভ করতে সাহায্য করবে। হতে পারে আপনার সার্ভিস অত্যন্ত দ্রুততর, আরও ক্রিয়েটিভ বা কম ব্যয়বহুল হবে৷ এছাড়াও আপনি ফোকাস গ্রুপগুলি হোস্ট করতে পারেন এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন।
৪.সফল উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন :
পারস্পরিক নেটওয়ার্কিং প্রতিটি সেক্টরেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই এই সেক্টরের সফল ব্যক্তিদের সাথে নেটওয়ার্কিং করতে হবে।
- নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগদান।
- বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করে।
- অনলাইন নেটওয়ার্কিং গ্রুপ যোগদান।
- একজন ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা খোঁজা।
৫.আপনার বিজনেসের নামকরণ করুন :
একটি ব্যবসা শুরু করার পরবর্তী পর্যায়ে এর নামকরণ করা অতীব প্রয়োজন। আপনার বিজনেসের নাম হতে হবে আকর্ষণীয়, স্বীকৃত এবং যা ইতিমধ্যে ব্যবহার হয়নি। মনে রাখবেন, আপনার বেছে নেওয়া নামটি সারাজীবন ক্যারি করতে হবে।
৬.ব্র্যান্ড তৈরি করুন :
একবার আপনি আপনার ব্যবসার নামকরণ করতে পারলে, পরবর্তী ধাপে এর ব্যান্ড তৈরি করুন।
- একটি ডোমেইন নাম । নো ফান্ডিং এ করতে চাইলে ফ্রী ডোমেইন বেস্ট। উদাহরণস্বরূপ, BRAND.com
- সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল। উদাহরণস্বরূপ, facebook.com/BRAND
এখন যেহেতু আপনার বিজনেসের নাম আছে, আপনি একটি ব্র্যান্ড তৈরির এক ধাপ কাছাকাছি।
যাইহোক, ব্র্যান্ড একটি নাম বা লোগোবিশিষ্ট হবে। এছাড়া ব্র্যান্ডিং এ থাকবে:
- ব্র্যান্ড মান এবং ট্যাগলাইন।
- কালার এবং ফন্ট সহ ব্র্যান্ড গাইডলাইন।
- ফটোগ্রাফি স্টাইল।
- ব্র্যান্ড স্টোরি।
৭.নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করুন :
সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্পূর্ণরূপে আপনার ব্যবসা চালানো সম্ভব হলেও, বিজনেসের সুবিধার্থে ওয়েবসাইট থাকা দরকার। এটি অনলাইন দর্শকদের জন্য একটি গন্তব্য এবং আপনার পণ্য ও সামগ্রীর জন্য একটি সেন্টার হিসেবে কাজ করে৷
বিজনেস ওয়বেসাইট তৈরিতে আপনাকে প্রতিমাসে ২৯ ডলার পে করতে হবে। আপনার পণ্য এবং ব্র্যান্ড সম্পর্কে সম্ভাব্য গ্রাহকদের জানাতে এটা ব্যবহার করতে পারেন।
৮.ফ্রি বা কম খরচের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন করুন :
বিশ্বাস করুন বা না করুন, আপনার মতো উদ্যোক্তা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসার মালিকদের সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে বা কম খরচে মার্কেটিং সুবিধার অভাব নেই। সেগুলি খুঁজে পেতে হলে, Google এ লিখে সার্চ দেন। এছাড়াও চেক করতে ভুলবেন না, স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসবিএ) এবং ইউএস চেম্বার অফ কমার্স ৷
৯.আপনার প্রোডাক্টিভিটি ট্র্যাক ও সেভিংস প্লান করুন :
একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসার মালিক হিসাবে, আপনার উদ্যোগের জন্য একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট তৈরি করা দরকার। এর মাধ্যমে আপনার খরচ ট্র্যাক করুন এবং আপনার খরচ আইডেন্টিফাই করুন।
এছাড়াও আপনি ক্যাশ ব্যাক এবং ট্রাভেল পয়েন্টের মতো সুবিধা গুলো বিজনেস ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে পেতে পারেন। মাসিক বাজেট সেট করুন এবং মেইন্টেইন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করুন।
শেষ কথা
যদিও ফান্ডিং একটি ব্যবসা শুরু করার পথটা সহজ করে তুলতে পারে, তবে এটি অবশ্যই প্রয়োজনীয় নয়। বাস্তবতা হল যে, সব ধরনের ব্যবসার জন্য কিছু না কিছু ইনভেস্ট করা প্রয়োজন। যদি এই মুহূর্তে আপনার কাছে টাকা না থাকে বা আপনার হাতে একেবারে ন্যূনতম আর্থিক তহবিল থাকে, তাহলে চিন্তা করবেন না। আপনি এখনও আপনার প্ল্যান অনুযায়ী আগাতে পারেন। একটি কঠিন গেম চেন্জিং প্ল্যান এবং আসন্ন বাধাগুলির জন্য পরিকল্পনা আপনার বিজনেস মডেল টিকে থাকতে সাহায্য করবে। তাই যদি আপনার হাতে প্রচুর নগদ নাও থাকে, তাহলেও আপনি নো ফান্ডিং এ নিজের বস হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। যতক্ষণ আপনি অবিচল থাকবেন এবং কঠোর পরিশ্রম করবেন, ততক্ষণ আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।