শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সহস্র ব্র্যান্ড রয়েছে আপনাকে চ্যালেঞ্জ দেয়ার জন্য। সেখানে বিশ্বব্যাপী এর সংখ্যা তো লক্ষাধিক। আজকের এই প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক ফিল্ডে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কীভাবে?
অনেক ব্র্যান্ড একই ধরনের পণ্য এবং সার্ভিস অফার করে। ফলে কাস্টমারদের জন্য তাদের মধ্যে পার্থক্য করা, ব্র্যান্ড চুজ করা এবং কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পরে ।
আপনি কিভাবে কাস্টমারকে আপনার ব্র্যান্ড চুজ করতে কনভিন্স করতে পারেন? এই আর্টিকেলে আপনাকে আপনার ব্র্যান্ডকে আলাদা করতে এবং অনন্য এবং বিশেষ কিছু খুঁজছে এমন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সহায়তা করার জন্য ৭ টি টিপস নিয়েই আলোচনা করবো ৷
কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড চুজ করার ৭টি হ্যাকস :
আপনার গ্রাহকদের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারলে আপনি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবেন। এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে পারেন ৷ এটা আপনার ব্যবসাকে এই চ্যালেঞ্জিং এবং গতিশীল বাজারে উন্নতি করতে এবং বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করবে। এমনই কিছু কার্যকরী টিপস-
১. ফোকাস করুন টার্গেট অডিয়েন্সে :
আপনার ব্যবসাকে আলাদা করে তোলার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের আলাদা করা। বাজারে অনেক ধরনের অপশন রয়েছে, তাই সকলকে আকৃষ্ট করার চিন্তা না করে আপনাকে নির্দিষ্ট একটা নিশের দর্শকদের টার্গেট করতে হবে।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে শনাক্ত করা আপনার ব্র্যান্ডকে প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করে তোলার মূল চাবিকাঠি। এর জন্য, আপনার প্রয়োজন মার্কেট গবেষণা এবং বিশ্লেষণ করা , গ্রাহকের আচরণ বোঝা এবং একটি কাস্টমার ফ্রেন্ডলি ব্যক্তিত্ব বিকাশ করা । একবার আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স খুঁজে পেলে সেই অনুযায়ী মার্কেটিং করাও সহজ হবে এবং আপনার ব্র্যান্ড চুজ করার জন্য কনভিন্স করাটাও যুক্তিযুক্ত হবে।
এছাড়াও, আপনি গ্রাহকের আগ্রহ এবং আচরণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বোঝার জন্য Google অ্যানালিটিক্স বা অন্যান্য বিশ্লেষণ সফ্টওয়্যারের মতো বিশ্লেষণ টুলস ব্যবহার করতে পারেন।
২. বেস্ট কাস্টমার সার্ভিস :
কাস্টমার সার্ভিস থাকতে হবে top notch। কারণ এখান থেকেই কাস্টমার আপনাকে ডিফাইন করবে আপনার ব্র্যান্ড কতটুকু যোগ্য? কাস্টমার সার্ভিস শুরু হবে পোটেনশিয়াল কাস্টমার থেকেই। অর্থাৎ যারা আপনার অডিয়েন্স, কাস্টমার হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের থেকেই সার্ভিস প্রোভাইড করা শুরু করতে হবে।
অর্থাৎ, প্রোডাক্ট কেনার আগে এটা সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো, সময়মত রেসপন্স করা, কো-অপারেট করা, কাস্টমার কে বোঝা, এগুলো দিয়েই ফার্স্ট ইমপ্রেশনস তৈরি করতে হবে। তবেই পোটেনশিয়াল কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ড চুজ করতে উৎসাহী হবে।
বর্তমানে ম্যানুয়াল কিংবা সরাসরি কাস্টমার সার্ভিস এর থেকেও অনলাইন এবং এআই চ্যাটবট সার্ভিস খুব চমৎকার কাজ করছে। ফাস্ট রেসপন্স, ২৪ ঘন্টা একটিভ থাকা সহ কাস্টমার সার্ভিস সেক্টরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
৩. কোয়ালিটি এবং ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট :
কোয়ালিটি কনটেন্ট ব্যতিত একটা ওয়েল ডিফাইনড ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করা সম্ভব নয়। বলতে গেলে আপনার কনটেন্ট এর কোয়ালিটি আপনার বিজনেসকেই রিপ্রেজেন্ট করবে। পাশাপাশি এতে থাকতে হবে নিজস্বতা এবং ক্রিয়েটিভিটি। কনটেন্ট এর কোয়ালিটি ও ক্রিয়েটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট এর জন্য –
- সর্বপ্রথম ফোকাস করুন রিলেটেবল কনটেন্ট তৈরিতে।
- সময়োপযোগী কনটেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করুন।
- ভিজুয়ালিটি, ভিডিও কোয়াল, ছবির কোয়ালিটি তে নজর দিন।
- অন্যকে কপি না করে, রিসার্চ এর মাধ্যমে গ্যাপ গুলো খুঁজে বের করুন এবং এপ্লাই করুন।
- ক্রিয়েটিভ এবং দক্ষ টিম মেম্বার নিয়োগ দিন
৪. অফার, ডিসকাউন্ট ও ক্যাম্পেইন :
কাস্টমার কে আকৃষ্ট করার এবং সরাসরি এনগেজড করার একটা দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে অফার, ডিসকাউন্ট ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। অফার এবং ডিসকাউন্ট কাস্টমার কে আপনার বিজনেস এর ওপর ইন্টারেস্টেড হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতা, ক্যাম্পেইন কাস্টমারদের আপনার বিজনেস এর সাথে রিয়েল টাইম ইন্টারেকশন এ ভুমিকা রাখে।
উৎসব, সিজন কিংবা বিশেষ দিবস কে কেন্দ্র করে অফার, রিওয়ার্ড আয়োজন করা অন্যতম ইফেক্টিভ মাধ্যম। এছাড়াও ট্রেন্ড ফলো করে ভার্চুয়াল বা লাইভ কনটেস্ট এর মাধ্যমে কাস্টমার কে আরো কানেক্টেড করা এবং আপনার ব্র্যান্ড চুজ করতে উৎসাহী করা সম্ভব।
৫. রিয়েল লাইফ ইন্টারেকশন :
বর্তমানে ভার্চুয়াল, অনলাইন বিজনেস এর পরিমাণ অনেক বেশি । এর মধ্যে সৎ-অসৎ ব্যবসায়ী আলাদা করা, প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কোয়ালিটি যাচাই করা বেশ কঠিন। এই কারণেই রিয়েল লাইফ ইন্টারেকশন জরুরি হয়ে পরেছে।।
গিভওয়ে, গেট টুগেদার, লাইভ শো কিংবা ক্যাম্পেইন কাস্টমারকে আপনার বিজনেস সম্পর্কে ক্লিয়ার একটা আইডিয়া দেয়ার পারফেক্ট উপায়৷ এছাড়াও রিয়েল টাইম ইন্টারেকশন এর জন্য বিভিন্ন ফেয়ার, উদ্দোক্তা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে। কাস্টমারের সাথে সরাসরি কানেক্টেড হওয়ার অন্যতম সহজ এবং কার্যকরী মাধ্যম এগুলো।
৬. বিল্ড সোশ্যাল রেপুটেশন :
ট্রাস্ট ও ক্রেডিবিলিটি নিশ্চিত না করে কখনই কাস্টমার কে আপনি আপনার ব্র্যান্ড চুজ করতে কনভিন্স করতে পারবেন না। তবে একজন নতুন কাস্টমার কিংবা পোটেনশিয়াল কাস্টমার, অডিয়েন্স কিভাবে আপনার বিজনেস কে বিশ্বাস করবে? এবং সহস্র ব্র্যান্ড এর ভীড়ে আপনাকে চুজ করবে?
এরজন্য প্রয়োজন হবে সোশ্যাল আইডেন্টিটি ও রেপুটেশন। সোশ্যাল মিডিয়া হোক কিংবা রিয়েল লাইফ, আপনার বিজনেস সম্পর্কে একটা পজিটিভ ইম্প্রেশন ধরে রাখতে হবে। এরজন্যও আপনাকে কাস্টমারের ওপরই ভরসা করতে হবে। সোশ্যাল রেপুটেশন বৃদ্ধি করার একটা ইফেক্টিভ উপায় হচ্ছে, পুরনো কাস্টমারদের কাছ থেকে রিভিউ ও ফিডব্যাক সংগ্রহ করা। তাদের ভাল সার্ভিস এর গল্প আপনার পরবর্তী টার্গেটেড কাস্টমারকে আকৃষ্ট করবে।
বর্তমানে সোশ্যাল রেপুটেশন বৃদ্ধি করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রিয় ও পরিচিত মুখ আপনার বিজনেস এর রিচ ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
৭. ট্রেন্ড, আপডেট এবং এডাপটেশন :
একেকটা জেনারেশন একেক গতিতে চলে সেই অনুযায়ী মার্কেটিং এও আনতে হবে ভিন্নতা। অর্থাৎ সময়ের সাথে আপনাকে নতুন নতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি এডাপ্ট করতে হবে। তবে বর্তমান যুগের বাজার চাহিদা অনেকটাই নির্ভর করে ট্রেন্ডের ওপর। অর্থাৎ মানুষ সময়োপযোগী ও ট্রেন্ডি পণ্যের প্রতি বেশি আকর্ষণ দেখায়।
তাই আপনাকে থাকতে হবে আপডেট, সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ডি বিষয় গুলোকে পুঁজি করত পারন নতুন মার্কেটিং কৌশল এর। সহজ কথায় নতুন নতুন মার্কেটিং স্কিল এপ্লাই করা ও আপডেটেড থাকা আপনাকে আপনার কাস্টমারের চাহিদা পুরন করতে সাহায্য করবে।
উপসংহারে,
আপনার ব্র্যান্ড কে সুন্দর ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে হলে প্রতিযোগিতায় সবার থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়ানো জরুরি। কারণ, একটা শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি রেপুটেশন বৃদ্ধি করতে এবং গ্রাহকের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কাস্টমারদের এমন একটি ব্র্যান্ড চুজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে যেটা তারা সবার থেকে আলাদা করে। আইডেন্টিফাই করতে পারে এবং যা তাদের এক্সপেকটেড কোয়ালিটি এবং পছন্দের সাথে রিলেটেবল হয়। তাই ফোকাস করুন, টার্গেটেড অডিয়েন্সে, কোয়ালিটি ও কনটেন্ট এ, কাস্টমার কে দিন একটা সুন্দর এক্সপেরিয়েন্স। অবশ্যই কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড চুজ করতে উৎসাহী হবে।