আপনার কর্মক্ষেত্রে কি কখনো এমন হয়েছে যে একটি কাজ একাধিক বার করার পরও আপনাকে কথা শুনতে হচ্ছে। একটা কাজ বার বার এডিট করার অর্ডার আসছে। ব্যাপারটি খুবই বিরক্তিকর তাই না? এমতাবস্থায় আপনার রিয়্যাকশন কি হবে? আপনি আপনার উর্ধতন কর্মকর্তাকে না করে দিবেন? অথবা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাবেন? নাকি ঠান্ডা মাথায় কাজ টা কমপ্লিট করবেন?
এই পুরো ঘটনাটাই আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর একটি পরীক্ষা। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে একটা বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হলেও আবেগ, রাগ, মানসিক চাপ এবং আকস্মিক ঘটনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের অনেকেরই নিজের আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এখানেই প্রয়োজন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।
আজকের আর্টিকেলে বিভিন্ন প্রতিকুল সিচুয়েশনে নিজের মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এ পারদর্শী হওয়ার উপায় গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (EI) কি?
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হল এমন একটি মানসিক দক্ষতা যেটা দিয়ে আপনি নিজের এবং অন্যের মানসিক অবস্থা, তাদের আচরণ, তাদের রিয়্যাকশনের পেছনের কারণ, তাদের অনুভূতি গুলো বুঝতে পারেন এবং এই দক্ষতা মানুষের সাথে কমিউনিকেট করার জন্য, পার্সোনাল ও প্রফেশনাল লাইফে স্মার্টলি ডিল করার জন্য, নিজের ইমোশন কে নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াইজ সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে পরে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স জিনিসটার উপস্থিতি সবসময়ই ছিল কিন্তু এটা ছিল underrated। অর্থাৎ এটা যে আমাদের জীবনকে সহজ, মিনিংফুল এবং সুন্দর করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেটা অজানাই ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে সাংবাদিক ড্যানিয়েল গোলম্যান তার “Emotional Intelligence” নামক বইটির মাধ্যমে এই ধারনারটিকে হাইলাইট করেন।
ব্যক্তিগত জীবন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যাপক ব্যবহার হলেও, প্রফেশনাল ফিল্ডে এটাকে এখন একটা মেজর স্কিল হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ জীবনের যেকোনো পর্যায়ে সঠিক ও ইফেক্টিভ সমাধান খুঁজে বের করতে প্রয়োজন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।
কিভাবে নিজের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ইম্প্রুভ করবেন?
আপনার অসংখ্য স্কিল থাকার পরও যেন জীবনের কোন মুহুর্তে আপনাকে আপনার অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কাছে হেরে যেতে না হয়। এজন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করুন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। কিছু বিষয়ে নিয়মিত চর্চা করার মাধ্যমে আয়ত্ত করা সম্ভব ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স –
১. নিজেকে জানুন:
আত্মনিয়ন্ত্রণের শুরুটা হবে নিজেকে জানার মাধ্যমে। কোন বিষয় গুলোতে আপনি রাগান্বিত হন, আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন কিংবা যে বিষয় গুলো আপনাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে বাঁধা দেয় সেগুলো আগে খুঁজে বের করুন। এমন টা নয় প্রতিবার আপনিই ভুল।হয়তো তাদের কারণে আপনি কন্ট্রোল হারাচ্ছেন। কিন্তু এই সিচুয়েশনে ওভার রিয়্যাক্ট না করে অন্য কোনো ভাবে হ্যান্ডেল করা যায় কিনা ভাবুন।
অর্থাৎ নিজেকে আগেই জানুন, যাতে অপ্রীতিকর বা আকস্মিক ঘটনা ফেইস করার আগেই আপনার এর রেসপন্স জানা থাকে।
২. লিসেনিং প্র্যাকটিস করুন:
আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ব্যাড প্র্যাকটিস হচ্ছে, নিজের কথা, নিজের ধারণা টা সবার আগে প্রকাশ করতে চাই। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাই না। তাই আমরা একপক্ষের পার্সপেক্টিভ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করি। ফলস্বরূপ আমাদের আবেগের ওপর কখন, কেন নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে সেটা বুঝে উঠতে পারি না।
তাই অন্যকে শোনা, তাদের জানা ও তাদের দিকের এক্সপ্লেনেশন বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য ঠান্ডা মাথায় এবং সময় নিয়ে অপর পক্ষের বক্তব্য শোনার প্র্যাকটিস করুন।
৩. কনফিডেন্স বিল্ড করুন:
নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার আরেকটা কারণ হল আত্মবিশ্বাসের অভাব। আপনি যদি কনফিডেন্ট থাকেন যে আপনার বক্তব্য বা আপনার কাজ টি সঠিক। তাহলে আপনাকে নিজেকে প্রমান করার জন্য হাইপার হতে হবে না। আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে, ঠান্ডা মাথায় সেটা সামাল দিতে পারবেন। তাই নিজের কাজকে, নিজের ব্যক্তিত্বকে ও নিজের স্ট্রং ও উইক পয়েন্ট জানা, সেগুলো ডেভেলপ করার মাধ্যমে আত্নবিশ্বাস অর্জন করুন। কনফিডেন্স বিল্ড করার জন্য বেশি বেশি মানুষের সাথে কমিউনিকেট করাও একটা বেস্ট আইডিয়া।
৪. প্রতিকূল সিচুয়েশনে শান্ত থাকুন:
আমাদের জীবনে সব মুহুর্ত একই ধাঁচে চলে না। নানা প্রতিকূলতা আমাদের ফেইস করতে হয়৷ তবে এই সময়ে frustrated হয়ে সময় নষ্ট না করে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন সমাধান খুঁজে বের করতে। এক্সপার্টরা বলেন, “focus on the solution, not the problem”.
এই সিম্পল মাইন্ডসেট টা আপনাকে adverse কন্ডিশনে শান্ত থাকতে সাহায্য করবে।
৫. সাইলেন্ট প্রিন্সিপালে ফোকাস করুন:
চট করে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন না। বিশেষ করে যখন প্রশ্নের উত্তর টি আপনি জানেন না, বা কনফিউশন আছে। এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে কমপক্ষে ৫-২০ সেকেন্ড সময় নিন। নীরব থাকুন এবং উত্তরটি দিতে পারবেন কিনা ভাবুন৷
কারণ, আমাদের যখন ডিফিকাল্ট কোনো প্রশ্ন বা সমস্যার সম্মুখীন করা হয়, আমাদের মস্তিষ্ক একটু অশান্ত হয়ে পড়ে এবং সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারেনা।
তবে এই silent principle আপনাকে আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে।
৬. জবাব দেয়ার আগে ভাবুন:
কোনো বিষয়ে কাউকে জবার দেয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনি নিজে জানেন কিনা, এটা বলাটা জরুরি কিনা, এটা এখনই বলা দরকার নাকি পরে বুঝিয়ে বলা সম্ভব। এই বিষয় গুলো আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত, প্রফেশনাল সব জায়গায়ই সম্পর্ক তৈরি করতে ও ভাল রাখতে এবং একটা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স একটা underrated কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা স্কিল। আমরা রিয়্যাক্ট করার আগে ভাবি না, অপরপক্ষ এটা কিভাবে নিবে, কথা বলার আগে ভাবি না, এটা বলা কতটা যুক্তিযুক্ত, অন্যরা কেন রিয়্যাক্ট করলো অথবা adverse কন্ডিশনে শান্ত থাকবো ইত্যাদি। এই বিষয় গুলো নিয়েই বিল্ডিং হয় ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। তবে একদিনে আপনি আপনার আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তায় এক্সপার্ট হতে পারবেন না। তাই নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আয়ত্ত করুন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।