বাংলাদেশী ফুল স্ট্যাক ক্লাউড কিচেন এবং ডিজিটাল ফুড কোর্ট ‘ক্লুডিও’

ক্লুডিও
Share This Post

ক্লাউড কিচেন গত কয়েক বছরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে। কারণ খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থাগুলো বাজার জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছে। ক্লুডিও একটি ঢাকা বেসড ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম যারা নিজেদের “ফুল স্ট্যাক ক্লাউড কিচেন এবং ডিজিটাল ফুড কোর্ট” হিসাবে পরিচিত করে আসছে।

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মটি একাধিক ক্যাটাগরিতে বেশ কয়েকটি ফুড ব্র্যান্ড চালু করেছে এবং বর্তমানে বনানী, মহাখালী, গুলশান, বসুন্ধরা, ডিওএইচএস এলাকায় খাদ্য সরবরাহ প্রোভাইড করে আসছে তাদের মধ্যে এর উল্লেখযোগ্য ফুড ব্র্যান্ড হচ্ছে ডো অন দ্য গো, ফ্রাই বক্স এবং চৌবক্স। এই টোটাল ব্র্যান্ড ডিজাইন এবং পরিচালিত হয় এই প্ল্যাটফর্মটির আন্ডারে। বর্তমান সময়ে মানুষ ফুড সিলেকশন এর ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। খুব ভালোভাবে নয় বরং স্মার্ট ভাবে খেতে পছন্দ করে। আর এই স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা মেটাতে এই ইন্ডাস্ট্রির পথ চলা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশী এমন একটি ক্লাউড কিচেন হল ক্লুডিও। এটি ঢাকা ভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ ক্লাউড কিচেন এবং তারা নিজেদের ডিজিটাল ফুড কোর্ট বলতে পছন্দ করে। এ ধরণের প্ল্যাটফর্ম গত কয়েক বছর ধরে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ক্লাউড কিচেন হল এক ধরণের রেস্টুরেন্ট যেখানে ডাইন-ইন অপশন থাকে না। বরং অন-ডিমান্ড অনলাইন ফুড ডেলিভেরি প্লাটফর্মের সাহায্যে বা সরাসরি নিজেরা ডেলিভারি করে তাদের ফুড সেল করে। 

ক্লাউড কিচেন এবং ডিজিটাল ফুড কোর্ট 'ক্লুডিও'

একটি ক্লাউড কিচেন এক ছাদের নিচে একাধিক রেস্টুরেন্ট হোস্ট করতে পারে, অনেকটা একসাথে একই স্পেস শেয়ার করার মতো ফলে প্রত্যেকের এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু এই প্ল্যাটফর্মটি ডাইন-ইন অফার করে না তাই তারা কম ব্যয়বহুল জায়গা থেকে কাজ করতে পারে এবং রিসোর্স শেয়ার করে যারা ইনভল্ভ রয়েছে তাদের সবার জন্য কস্ট স্ট্রাকচার ইম্প্রোভ করাটাও অনেক বেশি সহজ হয়। 

যদিও ক্লুডিও একটি ক্লাউড কিচেন প্ল্যাটফর্ম কিন্তু এটি ট্র্যাডিশনাল মডেল অনুসরণ করে না যেখানে বেশিরভাগ কিচেন অর্ডারের জন্য ফুড ডেলিভারি অ্যাপ্লিকেশনের উপর নির্ভর করে। ফুল স্ট্যাক এবং ফুড কোর্ট এই দুটো ওয়ার্ড ক্লুডিওর নামের পাশে যুক্ত করা হয়। ফুল-স্ট্যাক ক্লাউড কিচেন মানে ক্লুডিও তার বিজনেসের প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করে, কাঁচামালের সোর্সিং থেকে শুরু করে খাবার তৈরি করা, অর্ডার ডেলিভারির জন্য সংগ্রহ করা পর্যন্ত সব।

এই প্ল্যাটফর্মটি খাবার তৈরি করা, তাদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল, ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করা এবং তারপর গ্রাহকদের কাছে খাবার সরবরাহ করার জন্য নিজেদের লজিস্টিক ব্যবহার করা পর্যন্ত সবকিছু করে থাকে। এই কারণেই তারা নিজেকে একটি ডিজিটাল ফুড কোর্ট হিসেবে পরিচিত করতে বেশি পছন্দ করে।

এটি সরাসরি ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে কমিউনিকেট করে। সেই হিসেবে এটি ফুড ডেলিভারি সার্ভিস এর জন্য একটি ডিটিসি প্লাটফর্ম। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মটি এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড চালু করেছে তাদের কিচেনে যার মধ্যে রয়েছে,  ডো অন দ্য গো, ফ্রাই বক্স এবং ফিশ অ্যান্ড চিপস ব্র্যান্ডগুলো । যদিও ট্রাডিশনাল ক্লাউড কিচেনগুলো শুধুমাত্র ফুড প্রিপেয়ারিং সার্ভিস পর্যন্ত পরিচালনা করে থাকে, যেখানে এই প্ল্যাটফর্মটি ফুড, টেকনোলজি এবং লজিস্টিক পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করে থাকে।

এই ক্লাউড কিচেনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিশোয়ার হাশেমী। প্ল্যাটফর্মটিকে খাদ্য সরবরাহের একটি ইউনিলিভার হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ক্লুডিও এমন একটি অ্যাপ যা একটি ডিজিটাল ফুড কোর্টের মত কাজ করে এবং আপনাকে বিভিন্ন ফুড ব্র্যান্ডের চমৎকার খাবার একসাথে অর্ডার করার অপশন প্রোভাইড করে এবং ডেলিভারি সুবিধাও দিয়ে থাকে”। সুতরাং যদি আপনার বন্ধুরা মিলে চাইনিজ খাবার অথবা দেশিয় খাবার অর্ডার করতে চান তাহলে এই প্ল্যাটফর্মটি হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট অপশন। কারণ আপনি একই সাথে সব অর্ডার করতে পারেন এর নিজস্ব অ্যাপ থেকে।

ক্লাউড কিচেন এবং ডিজিটাল ফুড কোর্ট 'ক্লুডিও'

কিশোয়ার হাশমীর জন্ম এবং বেড়ে উঠা ঢাকায় হলেও তিনি তার উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন কানাডা থেকে। কিশোর বয়সেই নতুন কিছু তৈরী করার চিন্তা তাকে সব সময় উৎসাহ দিত। ২০১৬ সালে গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশে এসে কিশোয়ার হাশমী পাঠাও তে যোগ দেন।  সেখানে তিনি শেয়ারহোল্ডার এবং গ্রোথ অ্যান্ড অপারেশনের ভিপি হিসাবে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালে তিনি লক্ষ্য করেন ফুড টেকনোলজি এবং অপারেশনের কোনো ভারসাম্য নেই এবং সেই ভারসাম্য এর মধ্যে পরিবর্তন আনতে কিশোয়ার হাশেমী তার এই প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।  

এর একটিভ টীম গ্রাহকদের খাবার রিপ্লেস করে দেয়া থেকে শুরু করে কাস্টমার স্যাটিসফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যবস্থা করে থাকে। গ্রাহকের অবসেশনকে সংস্কৃতির একটি অংশ মনে করেন তারা। যা অন্যান্য ধরণের ফুড ডেলিভারি প্লাটফর্মের জন্য কিন্তু সম্ভব নয়। একটি প্রেস রিলিসে প্রকাশ করা হয়, পেনডেমিক এর কারণে বেশিরভাগ খাদ্য উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, এই প্ল্যাটফর্মটি তার ক্লাউড কিচেন এবং ফুড ব্র্যান্ডগুলো মহামারী চলাকালীন সময়ে আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিশোয়ার হাশেমীর মতে, পেনডেমিক এর সময় দেয়া লকডাউনে মাত্র দুই মাসে ২০,০০০ এরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে ক্লুডিও অ্যাপটি। বর্তমানে এই অ্যাপটি ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক এবং এর আন্ডারে নয়টি ব্র্যান্ড কাজ করছে।

বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৫-৭% খাবার নষ্ট হয় এবং বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয়। এর উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চয়স্থান এবং পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে, প্ল্যাটফর্মটি এই ক্ষতি কমিয়ে আনতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। লিংকডইন এ দেয়া তথ্য অনুযায়ী এর বর্তমান কর্পোরেট হেডকোয়াটার কুমিল্লা পাড়া রোড, ঢাকা এবং তাদের এম্পলয়ী সংখ্যা ২০ জনের ও বেশি। 

সম্প্রতি ক্লুডিও লঞ্চপ্যাড নামে একটি ০৩ মাসের ক্যাম্পেইন লঞ্চ করেছে যেখানে বাংলাদেশের ফুড উদ্যোক্তারা তাদের সাথে জয়েন করতে পারে সহজেই এবং সেখান থেকে টপ সিলেক্টেড ফুড প্লাটফর্ম ক্লুডিও থেকে বিজনেস অপারেশন, ব্র্যান্ডিং, গ্রোথ স্ট্রাটেজি মেইনটেইন সহ সব ধরণের সুবিধা পেয়ে থাকবে।

ক্লাউড কিচেন এবং ডিজিটাল ফুড কোর্ট 'ক্লুডিও' এর লঞ্চপ্যাড ক্যাম্পেইন

সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্টার্টআপ এক্সিলারেটর ইটিরেটিভ, এক্সিলারেটর প্রোগ্রামের তৃতীয় ব্যাচের জন্য ফুড-টেক ঢাকা ভিত্তিক ফুল-স্ট্যাক ক্লাউড কিচেন স্টার্টআপ ক্লুডিওকে নির্বাচন করেছে। দশটি নির্বাচিত স্টার্টআপের মধ্যে এটি একটি এবং বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত একমাত্র কোম্পানি এটি। ইটারেটিভ একটি তিন মাস ব্যাপী এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম চালায় যা ১০% শেয়ারের বিনিময়ে প্রতিটি সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ১৫০০০ ডলার ইনভেস্ট করে এবং প্রতিষ্ঠাতাদের তাদের পার্টনার, সহকর্মী, ব্যবসায়িক লিডার, ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টস এবং ইনভেস্টরদের সাথে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে।

ক্লুউডিও এখন পর্যন্ত টোটাল ৩ টি ফান্ডিং রাউন্ডে মোট ৬ লক্ষ্য ৮০ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছে। তাদের সর্বশেষ ফান্ডটি ২০২১ সালের ৮ আগস্ট, একটি সীড রাউন্ড থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের এই ইনভেস্টমেন্ট যাত্রায় ইটারেটিভ, ইমপিরো প্রাইভেট লিমিটেড এবং সিডস্টার এর মতো ইনভেস্টমেন্ট ফার্মগুলোর সহযোগিতা পেয়ে আসছে তারা। নতুন ইনভেস্টমেন্টের সাহায্যে তাদের প্ল্যাটফর্মকে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে তারা।

https://youtu.be/PEfSX2mdlrU

এক্সিস্টিং ব্রান্ডের সাথে আরো নতুন ব্র্যান্ড যোগ করে গ্রাহকদের জন্য ১০ গুন্ বেশি খাবারের অপশন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্লাটফর্মটির। এই মুহূর্তে ক্লুডিও বনানী, মহাখালী, গুলশান, বসুন্ধরা, ডিওএইচএস এলাকা এবং এর পরিধির মধ্যে ডেলিভারি দিচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত ঢাকা শহর কভার করার লক্ষ্য নিয়েছে তারা এবং পরবর্তীতে সারা দেশ এবং এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলোতে প্লাটফর্মটি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন
Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন?

আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর

প্যাশনকে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাকসেস এ পরিণত করুন
Marketing

প্যাশনকে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাকসেস এ পরিণত করুন

জীবনে সাকসেসফুল হতে হলে অবশ্যই আপনাকে আপনার যেকোনো ধরনের কাজের প্রতি দৃঢ় প্যাশন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সকলের কিছু ভালো লাগার জিনিস রয়েছে যেমন ছবি আঁকা।