বর্তমানে অনেকেরই ব্যবসায় করার প্রবল ইচ্ছা কিন্তু ঝুঁকির ভয়ে উদ্যোগ নিতে পারছেন না। এর মধ্যে থেকেই অনেক নতুন উদ্যোক্তা আছে যারা উদ্যোগ নিচ্ছে এবং সফলও হচ্ছে। আসলে তারা উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল রপ্ত করেই সফলতা পেয়েছে। সঠিক গাইডলাইন এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করার মাধ্যমেই একজন মানুষ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বলা বাহুল্য উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশলগুলো কারো ক্ষেত্রেই একবারে ফলো করা সম্ভব হবে না। এজন্য দরকার ধৈর্য। প্রবল ধৈর্যশক্তি দিয়ে ধীরে ধীরে এই কৌশলগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে হয়।
তাহলে চলুন আমরা এমন ৯ টি কৌশল জেনে নেই যা আপনাকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
১। নিজের লক্ষ্যকে নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন
সফলতা কি? অন্যের কাছে যেটা সফলতা সেটা আপনার কাছে সফলতা নাও হতে পারে। কারন আমাদের সবার লক্ষ্য ভিন্ন। আপনি জীবনে যাই হতে চান না কেন সেটা সম্পর্কে আপনার নিশ্চিত হতে হবে। এর মানে হচ্ছে আপনার নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
আচ্ছা লক্ষ্য কি! আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান। বা আপনি নির্দিষ্ট ভাবে কি চান। কোন অবস্থানে গেলে নিজেকে মনে হবে যে হ্যা এটাই আমি চেয়েছিলাম। ঠিক ওই জিনিসটাকেই স্থির করাই হলো লক্ষ্য। একজন উদ্যোক্তার জন্য লক্ষ্য কতোটা জরুরি? লক্ষ্য ঠিক না করলেও তো হয়! শুরু করি যেভাবে চলে চলুক দেখি কোথায় পৌঁছাই। না, এভাবে যারা করে তারা সফল হতে পারে না।
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে আপনার লক্ষ্যে স্থির হতে হবে। যেমন ধরুন আমি আমার ডিজাইন করা প্রিন্টেড কফি মগ নিয়ে বিজনেস করব। এবং আমার লক্ষ্য হচ্ছে আমার মগগুলো যে কেউ যেখানেই দেখুক দেখেই বুঝবে যে এটা আমার অমুক ব্র্যান্ডের মগ! তাহলে অবশ্যই এমন কোন ডিজাইন আমার মগে করতে হবে যা আগে কোন ব্রান্ড করেনি। তাই নয় কি? এইযে আমার এই লক্ষ্যটি যে আমি নির্ধারণ করলাম এটি আমার বিজনেস এ সফলতা বয়ে আনতে সহায়তা করবে।
২। অভিজ্ঞদের পরামর্শ শুনুন
অভিজ্ঞতা একদিনে হয়না। অনেক সাকসেস ফেইল মিলিয়ে অভিজ্ঞতা হয়। অনেক ভালো খারাপ দিক মোকাবেলা করে একজন অভিজ্ঞ হয়। তাই আপনি সবচেয়ে ভালো ধারণা পাবেন অভিজ্ঞদের পরামর্শ শুনে।
একজন অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার কাছ থেকে জানতে পারবেন সে কি কি সমস্যায় পড়েছেন কিভাবে তা মোকাবেলা করেছেন। কি কি ধাপে সে এগিয়েছেন। কোন কোন ভাবে আগাতে পারলে সফল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। কিভাবে তারা পার্টনার সিলেক্ট করেছে। এ সকল বিষয় আপনি জানতে পারবেন। আপনি চাইলে লিঙ্কড ইন এর মতো প্লাটফর্মে তাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ইউটিউবে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ভিডিও আছে তাও দেখতে পারেন।
৩। উদ্যোক্তা সম্পর্কিত ইভেন্টগুলোতে যোগ দিন
একজন উদ্যোক্তাহিসেবে নিজেকে দেখার জন্য উদ্যোক্তাদের নিয়ে যে সেমিনার হয় বা উদ্যোক্তা ট্রেইনিং ইভেন্ট গুলি হয় এগুলির বিকল্প নেই! জানা এবং শেখার কোন শেষ নেই। আপনি যখন এসবে অংশগ্রহণ করবেন আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।আপনি অনেক সফল উদ্যোক্তার গল্প শুনতে পারবেন তারা কি কি ভাবে নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়েছে। অনেক টিপস এন্ড ট্রিক্স জানতে পারবেন। আরও জানতে পারবেন তারা কি কি বাধা পেড়িয়েছে।
এবং সাথে অনেক বের্থতার গল্পও জানতে পারবেন যে কেনো তারা সফল হলো না। কি কি ভুল ছিলো। যা যা আপনি এড়াতে পারেন। তাই নিজেকে উদ্যোক্তাহিসেবে দেখতে হলে সেমিনারে অংশগ্রহণ করুন অন্যদের সম্পর্কে জানুন, তাদের কথা শুনুন, আরও বিস্তারিত আইডিয়া নিন এবং আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হন।
৪। অভাব বুঝতে হবে
একজন ভালো উদ্যোক্তা অভাব বুঝে। বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তারা যারা আছেন তারাও অভাব বুঝেছে বলেই আজ আপনি অভাব বোধ করছেন না! এই অভাব টা কোন অভাব? যদি একটি উদাহরণ দেই তাহলে, আমি যে জায়গায় থাকি সেখানে কোন বিকালের খাবার বা সকালের নাস্তার দোকান নেই। ওই এলাকা থেকে বেশ অনেক সুরে যাওয়া লাগে বিকালের নাস্তা কিনতে। এলাকার মুরুব্বিরা বসে তারা চা এর সাথে খাওয়ার মতো কিছু পায়না। এটি একটি অভাব। আমরা অভাব বোধ করছি এটার। আপনি যদি সেখানে এমন একটি উদ্যোগ নেন যেটাতে এই অভাব দূর হবে তাহলে কেমন হবে। আপনি যখন অভাব বুঝবেন তখন আপনি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে পারবেন।
৫। নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন
একটি উদ্যোগ যখন নিবেন তখন আপনি একা কিন্তু সব কাজ করতে পারবেন না। বা একা সব রিসোর্স মেনেজ করতে পারবেন না। তো আপনার কি দরকার। নেটওয়ার্ক ! এটা কি ফোন এর নেটওয়ার্ক যা কিছুক্ষন পর পর চলে যায়? এটা হচ্ছে সেই নেটওয়ার্ক যেখানে আপনি বিভিন্ন রকমের ব্যাক্তিবর্গের সাথে কানেক্টেড থাকবেন। তাদের সম্পর্কে জানবেন। তাদের রিসোর্স সম্পর্কে জানবেন। নিজের টা শেয়ার করবেন। যাতে আপনি যখন উদ্যোগ নিবেন আপনার জানা থাকে আপনি কথা থেকে কি পাবেন।
৬। নতুন চ্যালেঞ্জ অনুসন্ধান করুন
কোন সমস্যায় পড়েছেন তা সমাধান এর চেষ্টা করুন। কোন না কোন উপায় আছেই। আগে যা কেউ কখনো করেনি তা আপনি করুন। চ্যালেঞ্জ নিন। অন্যে্র চিন্তা ভাবনা শুনতে হবে। একজন উদ্যোক্তার একটি অন্যতম দক্ষতা এটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা। কেউ আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিবেনা আপনার নিজের খুজে নিতে হবে।
৭। ঝুঁকি নেওয়ার মানুসিকতা রাখুন
আপনি যদি ঝুঁকি না নিতে পারেন আপনি কখনো একজন উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।উদ্যোগ মানেই আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। কোন কিছু আপনি নিশ্চিত বলতে পারবেন না। নিজেকে গুটিয়ে রাখা যাবেনা। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা আর ধৈর্য খুবই প্রয়োজন। আপনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাইলে আপনার থাকতে হবে মানসিক শক্তি, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা, অধ্যবসায়, কৌশলী ও ব্যক্তিত্ব।
৮।সঠিক বিজনেস পার্টনার সিলেক্ট করুন
কখনো মনে হতে পারে আমি একাই পারবো পার্টনার লাগবে কেনো। কিন্তু এটা সঠিক কোন ধারণা নয়। কারণ একা আগানো সম্ভব না বিজনেস এর ক্ষেত্রে। আপনার সাহায্য লাগবেই।
একজন উদ্যোক্তা হতে হলে অনেক কিছু সামাল দিতে হয়। অনেক দিকে গবেষণা করতে হয়। বিজনেস পার্টনার থাকলে সকল কাজে আলোচনার মাধ্যমে অনেক দিক বের হয়ে আসে। অনেক নতুন পরিকল্পনা গঠন করা যায়, বিভিন্ন ধরণের ট্রিক্স পাওয়া যায়। অথবা কোথায় ভুল হচ্ছে বা কোথায় আগানো দরকার। একেকজন একেক দিক সামাল দিতে পারে। এগুলি সঠিক পার্টনার সিলেক্ট করলেই কেবল সম্ভব। তাই বিজনেস পার্টনার না শুধু সঠিক বিজনেস পার্টনার জরুরি।
৯। ব্যর্থতা থেকে শিখতে হবে
আপনি বিজনেস শুরু করবেন আর সাথে সাথে সফলতা এসে পরবে আপনার দরজায় এভাবে চিন্তা করলে ব্যবসায় হবেনা। আপনি ব্যর্থ হবেন আপনি সেটা থেকে শিক্ষা নিবেন। আপনার এই ব্যর্থতা আসছে কারণ আপনি চেষ্টা করেছেন। অনেকে তো চেষ্টা করেনা। তাই ব্যর্থ হলে বসে থাকা যাবেনা। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ওটাকে উন্নত করবেন কিভাবে তা ভাবতে হবে।
উদ্যোক্তা অনেকেই হতে পারে, কিন্তু যখন কেউ উপরে উল্লেখিত উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশলগুলো নিজের মধ্যে রপ্ত করতে পারে এবং সঠিক গাইডলাইন ফলো করে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয় তারাই দিনশেষে নিজেদেরকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করতে পারে। তাই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীদের সঠিক গাইডলাইন নেওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশলগুলো রপ্ত করা অনেক বেশি জরুরী।