ডিজিটাল হেলথটেক প্ল্যাটফর্ম “মায়া”র ফাউন্ডার এবং প্রধান নির্বাহী আইভি হক রাসেল

আইভি হক রাসেল
Share This Post

আইভি হক রাসেল মায়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো মা হওয়ার পর, আইভি হক রাসেল মূলত বাংলাদেশের মায়েদের জন্য ব্লগ হিসেবে মায়া প্রতিষ্ঠা করেন। মায়ের নামের সাথে মিল রেখে আইভি হক তার প্রতিষ্ঠানটি নাম রাখেন “মায়া” যা আগে মায়া আপা নামে পরিচিত ছিল। প্রতি ১৪ সেকেন্ডে মায়ার পরামর্শদাতারা পরামর্শ প্রদান করেন। মহিলাদের সুস্থতার জন্য আইভি হক রাসেলের উদ্বেগ তাকে মায়া তৈরি করতে প্ররোচিত করেছে।

একজন বাংলাদেশী নারী হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা খোঁজার জন্য কতগুলি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা, সরবরাহকারীর অভাব এবং ক্লিনিকে যেতে দীর্ঘ সময় ব্যয়। বিশ্বাসযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে মায়া শুরু হলেও আইভি হক রাসেল দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে গ্রাহকদের আরও সহায়তা প্রয়োজন। অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল বা সাইটের চ্যাট বক্সের মাধ্যমে মেসেজ দিয়েছিলেন, যার মধ্যে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ এবং ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার হওয়া নারীরাও ছিলেন। বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে অনুদান পাওয়ার পর, আইভি হক রাসেল এবং তার দল গ্রাহকদের সঠিক চিকিৎসা তথ্য এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে সংযুক্ত করার জন্য অ্যাপ তৈরি করা শুরু করেন।

মায়া অ্যাপলিকেশন এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- যখন কেউ কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, উত্তরটি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রদান করা হয়। ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তাদের গ্রাহকদের নাম লুকিয়ে রাখে সেজন্য ব্যবহারকারীরা নির্দ্বিধায় যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন। মায়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অনেক নারীদের জীবন উন্নত করতে সাহায্য করেছে। এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সমস্যাগুলি শেয়ার করেন।

ব্র্যাকের এনজিও এর সাথে পার্টনারশীপ করার পর, ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মায়া পরিসেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়  যেখানে নারীদের যখন কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয় তখন তাদের যে তথ্য প্রদান করা হয়। পরিসেবাটি অ্যাপ, ওয়েব এবং সম্প্রতি মেসেঞ্জারে উপলব্ধ হয়েছে। মায়া সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় চালু হয়েছে এবং ভারত,পাকিস্তান এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে এর সার্ভিস টেস্ট করতে শুরু করেছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক্সপ্যান্ড করার পরিকল্পনাও করছে। 

বিগত কয়েক বছরে, স্টার্টআপটি অনেকটা বিকশিত হয়েছে এবং স্বাস্থ্য, মানসিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা এবং আইনী দিকের ক্ষেত্রে অন-ডিমান্ড বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে লিঙ্গ নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষকে সাহায্য করে একটি বেনামী বার্তা পাঠানোর প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

ইউজারদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে অ্যাপটি রোগীদের রেন্ডম একটি আইডি জেনারেট করে এবং কনসালটেন্সি পর্যন্ত তা এনক্রিপ্ট করা হয়. মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং টেকনোলজি ইউজ করলেও প্লাটফর্মটি এ পর্যন্ত পরিচালিত ০৪ মিলিয়ন প্রশ্নের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের উত্তর দিয়েছেন হিউমান মেডিকেল এক্সপার্টরা । মায়া ২০২০ সালে অ্যাপ-এ অন-ডিমান্ড ভিডিও কনসালটেন্সি এবং প্রেসক্রিপশন ডেলিভারি সহ প্রিমিয়াম সেবা চালু করেছে। ঢাকার বনানীতে বর্তমানে তারা তাদের অফিস অপারেশন চালিয়ে আসছেন । 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়া প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ এবং এশিয়ান বাজারে বিনিয়োগের প্রভাবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বেসরকারী ইক্যুইটি ফার্ম ওসিরিস গ্রুপের নেতৃত্বে একটি সীড রাউন্ডে ২.২ মিলিয়ন ডলার ফান্ড সংগ্রহ করেছিল। নতুন এই ফান্ডটি মায়ার টেলিহেলথ প্ল্যাটফর্ম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে তাদের সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট এ ব্যবহৃত হবে।

২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে “মায়া” গুগল লঞ্চপ্যাড এক্সিলিটারের পার্টনার হিসাবে যাত্রা শুরু করে, যেখানে বিশ্বজুড়ে ৩০+ স্টার্টআপ গ্রুপ উপস্থিত ছিল। ২০২১ সালের ১৯ মে অনুষ্ঠিত গুগল আই/ও তে গুগলের ভিপির উদ্বোধনী মন্তব্যে মায়া টীমকে ফীচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রতি ৪০০০ মানুষের জন্য ডাক্তার ১ জন এবং প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মাত্র ১ জন, সেখানে আইভি হক রাসেলের উদ্যোগ দেশ এবং বিদেশে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। 

আইভি হক রাসেল বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। তিনি ওয়ারউইক বিজনেস স্কুল থেকে ফিনান্স এবং ইকোনমিক্স এ এমএসসি কমপ্লিট করেন। তিনি এইচএসবিসি (HSBC), জিএএম (GAM) এবং বার্কলেস (Barclays) সহ শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলিতে ইনভেসমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং হেজ ফান্ড প্রফেশনাল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমানে তার সময় বাংলাদেশ এবং সান ফ্রান্সিসকোর মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন, যেখানে তিনি তার স্বামী, বিকি এবং ২ সন্তান, আমেনা এবং আমিরের সাথে থাকেন।

বিভিন্ন সেক্টরে আইভি হক রাসেলের প্রায় ৭ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার দক্ষতার মধ্যে রয়েছে আর্থিক বিশ্লেষণ, গবেষণা, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, সম্পর্ক পরিচালনা, বড় তথ্য বিশ্লেষণ, এনএলপি। 

তিনি বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের একজন অগ্রদূত। তিনি যুক্তরাজ্যে এইচএসবিসি অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্টসের একজন সাবেক বিশ্লেষকও ছিলেন। ব্র্যাকের ৫০ বছর উদযাপনের উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় তিনি রানার্সআপ হন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ