গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজার এবং তিনি ইয়ুথ লিডার প্রোগ্রাম “বিওয়াইএলসি গ্রাজুয়েট নেটওয়ার্ক” এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। শাম্মী কুদ্দুস বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বড় হয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে স্ট্যানফোর্ড জিএসবি এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে যথাক্রমে এমবিএ (MBA) এবং এমপিএ আইড (MPA ID) ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
শাম্মী কুদ্দুস স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় যান এবং এমআইটি থেকে পরিবেশ প্রকৌশল (Environmental engineering) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভালে বসবাস করছেন। ফিনটেক শিল্পে শাম্মী কুদ্দুসের বিস্ময়কর অবদানের জন্য তার খ্যাতি আরও বেড়ে গিয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে তিনি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি খাতে একজন নারী হিসেবে তার অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমআইটিতে পড়াশুনা শাম্মী কুদ্দুসের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। সাধারণত, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের যে কোন মেয়ের জন্য বিদেশে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন। তারপরেও, তার বাবা-মা যারা পেশায় শিক্ষক ছিলেন, তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। তথাকথিত নিয়মের বাইরে গিয়ে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মার্শাল আর্টে দক্ষতা অর্জন করেছেন। তিনি ক্যারাটে এবং তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তিনি নিজের পছন্দের পেশা বেছে নেন। মহিলাদের প্রতি সমসাময়িক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি তার পরিবারের সমর্থন ও আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির কারণে এটি করতে পেরেছেন।
উচ্চ বিদ্যালয়ে, তিনি SAT ওয়ান এবং টু এই দুই পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৪ টি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করেন। শাম্মী কুদ্দুস এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ থেকেই স্কলারশিপ পেয়েছিলেন এবং তিনি অবিলম্বে এমআইটি বেছে নিয়েছিলেন, যেটি ছিল তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।
এমআইটি থেকে বিএসসি করার পর, প্রথমে মাল্টিন্যাশনাল ইন্ফ্রাস্ট্রাটারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম ECOM এ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি ডাটা এনালাইসিস এর মত থিওরীটিক্যাল কাজ করেন। কিন্তু শাম্মী কুদ্দুসের ইচ্ছা ছিল নিজেকে এমন কিছু কাজে যুক্ত করার যা সরাসরি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে, তিনি ২০১১ সালে ওয়াটারহেলথ ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ দলের সাথে কাজ শুরু করেন।
এরপর তিনি বাংলাদেশের একটি স্টার্ট-আপ জিওন (Jeeon) যা একটি সামাজিক সংগঠন স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে সাথে কাজ করে তাদের সাথে যুক্ত হন। শাম্মী কুদ্দুসের মাধ্যমে, জিওনের প্রথম টেলিমেডিসিন পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই সময়ে, তার দ্বারা বাস্তবায়িত প্রজোটনো মোবাইল টেলিমেডিসিন পরিসেবাটি দক্ষিণ এশিয়ায় সেই বছরের সবচেয়ে উদ্ভাবনী মোবাইল অ্যাপ পরিসেবা হিসেবে ইউএসএআইডি এম4ডি (USAID M4D) পুরস্কার পায়।
২০০৮ সালের শুরুর দিকে, শাম্মী কুদ্দুস তার স্বামী এজাজ আহমেদের সাথে ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মতামত বিনিময় এবং এক্টিভ সিটিজেনশিপ প্রচারের লক্ষ্যে ইয়ং লিডারশিপ-ভিত্তিক প্রোগ্রাম (BYLC) গঠন করেন। সেই সময়ে তিনি এমআইটি থেকে ডেভিস প্রজেক্টস ফর পিস (Davis Projects for Peace) নামে একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক কলেজিয়েট সোশ্যাল ইনোভেশন গ্রান্ট জিতেছিলেন এবং সেটি বিওয়াইএলসির জন্য প্রাথমিক ফান্ড হিসেবে ব্যবহার করেন।
শাম্মী কুদ্দুস বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল পরামর্শক সংস্থায় কাজ করেন এবং অনেক স্টার্ট-আপ স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রান্তিক ভোক্তাদের সাথে আলোচনা, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন, জমির মালিকদের সাথে আলোচনা, বিদ্যুৎ অনুমোদন আনা এবং নিয়োগের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
এমবিএ কমপ্লিট করার পর পরই শাম্মী কুদ্দুস গুগলে যোগ দেন। গুগলে প্রথম দেড় বছর তিনি কাস্টমার ইনসাইট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তারপর পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিমের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিমের কাজ হল গুগল মনিটাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এমআইটি-তে সম্পূর্ণ ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া এবং ১৫ বছর পরেও, তিনি এখনও সেই স্কলারশিপ পাওয়ার প্রচেষ্টার কথা মনে রেখেছেন। শাম্মী কুদ্দুসের জন্য হার্ভার্ড এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন পরিবেশে পড়াশোনা করা খুব কঠিন ছিল। কারণ তার স্বামী এবং সন্তানদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য হিমালয় পার হওয়ার মতো ছিল। BYLC এর প্রতিষ্ঠাতা এজাজ আহমেদ সে সময় তার পাশে ছিলেন। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি পারিবারিক জীবনকেও সমান গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন এর ফলে জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে।