সময় খুব দ্রুতই চলে যায়, যারা এর সদ্ব্যবহার করতে পারে, শুধু তারাই সফল ও সার্থক হয় ।
– বেকেন বাওয়ার।
একজন উদ্দোক্তার ক্ষেত্রেও তাই। সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া, অর্থাৎ একটা প্রোপার টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব। একটা সুনির্দিষ্ট ওয়ার্কিং শিডিউল ছাড়া কখনই বিজনেস গোল গুলো ফুলফিল করা সম্ভব নয়। এমনকি একটা রানিং বিজনেস এর সাসটেইনেবল প্রফিট ধরে রাখতে হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর কোনো বিকল্প নেই।
মূলত, একটি বিজনেজ ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে বেস্ট প্রোডাক্টিভিটি এবং সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য ইফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের যেহেতু বিজনেস পরিচালনার সময়ে অসংখ্য কাজ নেভিগেট করতে হয়। তাই টাইম ইউটিলাইজেশন অত্যাবশ্যক। একজন রানিং বিজনেস ওনার কে সিস্টেমেটিক, কনসেন্ট্রেটেড এবং দক্ষ থাকতে সাহায্য করার জন্য এখানে সাতটি প্রয়োজনীয় টাইম ম্যানেজমেন্টের টিপস দেয়া হল-
৭ টি টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস:
১. টাস্ক প্রায়োরিটি বা কাজের অগ্রাধিকার দিন:
একজন উদ্দোক্তা হিসেবে আপনার ওপর শুধুমাত্র একটি দায়িত্ব থাকবে না। বরং অনেক গুলো কাজের সমন্বয় করতে হবে আপনাকে। তবে আপনার সব গুলো কাজের গুরুত্ব কিন্ত সমান নয়। এমন কিছু কাজ থাকবে যেগুলো খুব দ্রুতই সম্পন্ন করতে হবে। আবার এমন কিছু টাস্ক থাকবে যেগুলো কম সময়েও করা সম্ভব। কিংবা কিছুটা দেরীতে করলেও সমস্যা নেই।
অর্থাৎ, আপনার পুরো টাস্ক শিডিউল এ কোনটা আগে করা জরুরি, কোথায় কতটুকু সময় দিতে হবে এটাই টাইম ম্যানেজমেন্ট এর এর প্রথম শর্ত। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু কাজ, যেমন প্রোডাক্ট ডেলিভারি, কাস্টমার কমিউনিকেশন, অর্ডার কনফার্মেশন, এগুলো ইমিডিয়েটলি করে ফেলতে হয়। অন্যদিকে, A/B টেস্টিং, প্রোফিট এনালাইসিস ইত্যাদি বিষয় গুলো মান্থলি বা ইয়ারলি একটা সময় নিয়ে করা সম্ভব। তাই প্রায়োরিটি অনুযায়ী টাস্ক টাইম সিলেক্ট করুন। কাজগুলো চিহ্নিত করে এবং অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিটি দিন শুরু করুন।
২. বিজ্ঞতার সাথে প্রতিনিধি বা টিম মেম্বার বাছাই করুন:
এটা স্বীকার করতেই হবে যে আপনি একা সবকিছু করতে পারবেন না। আপনি যত বেশি নিজের ওপর কাজ চাপাবেন, কাজের গতি তত কমবে, সময় ও বেশি নষ্ট হবে। তাই সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে আপনাকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যবসার উন্নয়নে ফোকাস করতে সক্ষম একটি টিম তৈরী করতে হবে এবং তাদেরকে তাদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার ওপর ভিত্তি করে দায়িত্ব গুলো ভাগ করে দিতে হবে। এতে করে আপনার কাজের স্ট্রেস, দায়িত্ব গুলো ভাগাভাগি হবে এবং কম সময়ে একটা প্রোফিটেবল আউটকাম আসবে।
এক্ষেত্রে একটা ইউজফুল টিপস হচ্ছে, আপনি প্রথমে প্রতিটি কাজের লিস্ট করে এবং সেখানে কোন কোন স্কিল গুলো প্রয়োজন তার একটা আউটলাইন তৈরী করতে পারেন। এরপর আপনি টিম মেম্বার সিলেকশন করে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দিতে পারেন।
৩. বাস্তববাদী লক্ষ্য এবং ডেডলাইন সেট করুন:
আপনার বিজনেস এর উদ্দেশ্য কি? একটা ক্লিয়ার অবজেক্টিভ ছাড়া কোনভাবেই সময়কে সঠিকভাবে ইউটিলাইজ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আপনি যদি প্রোপারলি আপনার বিজনেস গোলস গুলো ডিফাইন করতে না পারেন, তাহলে টাস্ক গুলো ম্যানেজ ও টাইমলি কমপ্লিট করতে পারবেন না।
তাই একটা বাস্তববাদী লক্ষ্য সেট করুন পাশাপাশি এই লক্ষ্য গুলো ফুলফিল করার জন্য একটা ডেডলাইন বা সময়সীমা সেট করুন। অর্থাৎ আপনার টার্গেট হল আপনি দুই লক্ষ টাকার প্রোফিট করতে চাচ্ছেন। ডেডলাইন হিসেবে একটা নিদিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে নিবেন। যেমন, ঠিক এক মাসের মধ্যে আপনি দুই লক্ষ টাকার সেল চাচ্ছেন। এই একমাস কে টার্গেট করে আপনি আপনার ওয়ার্কিং শিডিউল সাজাবেন। এতে করে টাইম ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে ইফেক্টিভ হবে।
৪. টাইম ব্লকিং টেকনিক ব্যবহার করুন:
টাইম ব্লকিং বলতে একটা নির্দিষ্ট কাজ বা কাজের ধরন গুলোর জন্য নির্দিষ্ট টাইম ডেডিকেট করাকে বুঝায়। সহজ কথায়, আপনার প্রতিদিনের শিডিউলে একটা কাজ করতে আপনি নির্দিষ্ট একটা টাইম লিমিট বরাদ্দ রাখবেন। চেষ্টা করবেন ওই টুকু সময়ের মধ্যেই কাজটা কমপ্লিট করতে।
উদাহরণসরূপ, আপনার বিজনেস ডে এর শুরুতে প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে ইমেইল গুলো রিপ্লাই করা। এখানে গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়েছে বলে এখানেই অনেকটা সময় নিতে হবে এমনটা নয়। আপনি পূর্বেই এই কাজের জন্য একটা নির্দিষ্ট টাইম লিমিট রাখবেন, যেমন ওয়ার্কিং ডে এর শুরুতে ৩০ মিনিট সময় আপনি ইমেইল রিপ্লাই তে ব্যয় করবেন। পরবর্তী এক ঘন্টা আপনি শিপমেন্ট এর কাজে ব্যায় করবেন, ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রোপার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য মিটিং, ইমেল, চিঠিপত্র, সৃজনশীল কাজ এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ডেডিকেটেড ব্লক তৈরি করুন। এই কাঠামোগত পদ্ধতি আপনাকে মাল্টিটাস্কিং কমাতে, কাজের স্পিড বাড়াতে এবং সামগ্রিক প্রোডাক্টিভিটি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
৫. টাইম ম্যানেজমেন্টে প্রযুক্তির ব্যবহার :
প্রযুক্তির আগমন ঘটেছে মানুষের কাজকে সহজ করতে, একেকটা কাজের পেছনে সময় কমাতে, সময়কে আরো ভাল ভাবে ইউটিলাইজ করতে।
তাই ব্যবসায়িক কাজ গুলোকে স্ট্রিমলাইন করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সবচেয়ে স্মার্ট চয়েস। তাই ম্যানুয়াল কাজের চাপ কমাতে ও কম সময়ে অধিক কাজ করতে, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস, কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম এবং অটোমেশন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন।
যেমন ফেস টু ফেস অফলাইন মিটিং এরেঞ্জ করা এক দিকে সময়সাপেক্ষ অন্যদিকে ব্যয়বহুল। তাই ভার্চুয়াল মিটিং, কনফারেন্স টুলস এর ব্যবহারের মাধ্যমে কম সময়ে এই টাস্ক গুলো কমপ্লিট করুন। তাছাড়া, ডাটা এনালাইসিস, ম্যানুয়াল টেস্টিং এর পেছনে সময় নষ্ট না করে, গুগল কিংবা অন্যান্য এনালাইটিক্যাল টুলস ও সফটওয়্যার এর সাহায্য নিন।
ডিসট্র্যাকশন লিমিট করুন :
আপনার কাজের পরিবেশে আপনার মনযোগ নষ্ট করে এমন বিষয় গুলো ডিটেক্ট করুন। এগুলোকে এভয়ড করার চেষ্টা করুন অথবা এসব দিকে সময় কম দেয়ার চেষ্টা করুন। যেমন – ধরুন ফেসবুকে ঢুকলেই কখন আপনার ২/৩ ঘন্টা সময় অনায়াসে চলে যাচ্ছে আপনি বুঝতেও পারবেন না। হয়ত সামান্য কোন একটা নোটিফিকেশন, কল আপনাকে ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ে যেতে প্ররোচিত করছে। তাই কাজের সময় মোবাইল ফোন কিংবা সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে ভিজিট করার অভ্যাস কে পরিবর্তন করুন।
সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ ওয়ে হল, একটা নিদিষ্ট সময়ের জন্য অবসর নেয়া। একটানা কাজ করতে অস্বস্তি হলে ওই সময়টাতে বিনোদনমূলক কিছু করার চেষ্টা করুন। কিন্তু ওই নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময় গুলোতে এসব এড়িয়ে চলুন।
৭. নিয়মিত রিভিউ করুন এবং এডজাস্ট করুন:
Periodically আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি গুলো মূল্যায়ন করুন। কোন কোন টিপস গুলো ভাল কাজ করছে এবং কি কি এডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন তা আইডেন্টিফাই করুন। যেহেতু বিজনেস প্লেস গুলো ডায়নামিক , তাই ফ্লেক্সিবল থাকা এবং আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিকে প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়া দ্রুত সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
সাকসেসফুল বিজনেস এর জন্য ইফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট এর কোনো বিকল্প নেই। তাই ওয়াইজলি আপনার বিজনেস এর টাস্ক গুলোকে প্রায়রিটিজ করুন এবং টাইম সেট করুন। তাছাড়া স্ট্রং টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কম সময়ে দ্রুত সফল হওয়ার দিকে ফোকাস করুন। সর্বোপরি, টোটাল বিজনেস মডিউলকে আরো এডভান্স ও ইফেক্টিভ করতে একটা ধৈর্য সহকারে একটা সিস্টেমেটিক টাইম ম্যানেজমেন্ট শিডিউল গড়ে তুলুন।