একটা কঠিন সত্য হল, যদি বায়ার্সাদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট না থাকে, সেটা কোনো সফল বিজনেস এর পর্যায়ে পরে না। মার্কেটে সহস্র প্রোডাক্টের ভীড় থাকা, একই নিশে অসংখ্য সেলার এর কাজ করা খুবই সাধারণ বিষয়। তবে, এত সব ব্রান্ড, সেলার এর ভীড়ে আপানার প্রোডাক্ট এর প্রতি অডিয়েন্স কে অ্যাট্র্যাক্ট করা ও তাদেরকে কাস্টমারে রুপান্তর করা এবং কন্সট্যান্ট রাখাই বিজনেস এর মূল উদ্দেশ্য।
আর, প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট হল একটা গেইমের মত যেখানে আপনি এই সব গুলো গোল ফুলফিল করতে পারবেন। যখন বায়ার্সদের সাথে আপনার পণ্যের কানেকশন তৈরি হচ্ছে, অর্থাৎ প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট শুরু হচ্ছে, পাশাপাশি ক্রমাগত এঙ্গেজমেন্ট বাড়ছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই আপনার কনভার্সন রেট বেড়ে যাবে। ব্রান্ড রেপুটেশন এবং রিচ উভয়ই টপ পজিশন এ থাকবে। আপনি কিভাবে বাইয়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করবেন সেটা নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা।
প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বুঝুন :
প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বলতে আপনি কি বুঝেন? অনেকেরই ধারণা, কাস্টমার তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানা, প্রোডাক্টের পরিচিতিটাই প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট। তবে বিজনেস ও মার্কেটিং এর জগতে প্রোডাক্ট এনগেজমেন্ট এর ডেফিনিশন টা কিছুটা ভিন্ন। এখানে কাস্টমার আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে জানবে, প্রোডাক্ট এর উদ্দেশ্য, বেনিফিট, ইউজ সম্পর্কে জানবে, এই পণ্যের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে, তারা নিজেরা পন্য কিনতে উৎসাহী হবে, পাশাপাশি অন্যকেও ইন্সপায়ার করবে বা রিকমেন্ড করবে, এমনটা বুঝায়। তাছাড়া সাকসেসফুল প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট শেষে থাকবে কাস্টমারের রিভিউ বা অনেস্ট ফিডব্যাক।
প্রোডাক্ট এনগেজমেন্ট যেহেতু একটা কাস্টমার সেন্ট্রিক এপ্রোচ, এটা আপনাকে হাজারো সেলার এর ভীড়ে নিজের ব্রান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধি করতে এবং প্রোডাক্টের পরিচিতি বাড়াতে, শতভাগ সাফল্য আনতে সাহায্য করবে।
প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করার উপায় :
১. আপনার কোম্পানির অজানা গল্প, মিশন ও ভিশন শেয়ার করুন :
বায়ার্স হোক কিংবা অডিয়েন্স, কারো সাথে কানেক্টেড হওয়ার একটা দারুণ স্ট্র্যাটেজি হল ইমোশনাল ইন্টারেকশন। তাই, আপনার কোম্পানি তৈরি করার পেছনের একটা সুন্দর গল্প, আপনার উদ্দেশ্য, মোটিভ গুলো গুছিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার ব্রান্ডের প্রতি বায়ার্সদের ইমোশনালি এটাচ থাকতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে বিশেষ ভূুমিকা রাখবে।
এক্ষেত্রে আপনার ব্রান্ড কিভাবে এই প্রোডাক্ট দিয়ে ক্লায়েন্ট এর চাহিদা পূরণ করবে, সমস্যার সমাধান করবে, ডিমান্ড অনুযায়ী সার্ভিস দেবে, এ সকল তথ্য ও হাইলাইট করার চেষ্টা করুন।
২. পার্সোনালাইজড ইন্টারেকশন :
বায়ার্সদের সাথে আপনার ইন্টারেকশন যত বেশি পার্সোনালাইজড হবে, প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহ ও তত বেশি থাকবে। সহজ কথায়, আপনি বিভিন্ন ভাবে নজরদারি করবেন গ্রাহকের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, পছন্দ ও সমস্যা গুলোতে। ওই অনুযায়ী প্রোডাক্ট গুলো সঠিক সময়ে কাস্টমারের সামনে নিয়ে যেতে হবে। এই স্ট্র্যাটেজিটাকে বলে পার্সোনালাইজড মার্কেটিং। এর মাধ্যমে আপনি আপনার অডিয়েন্সকে কনভিন্স করতে পারবেন আপনার প্রোডাক্ট কেনার প্রতি।
৩. অ্যাকটিভ লিসেনিং প্র্যাকটিস করুন :
একটিভ লিসেনিং ব্যতিত একটা স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেয়া সম্ভব না। তাই পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে আপনার ইউজারদের, বা অডিয়েন্স এর সমস্যা গুলো শুনুন। একটিভ লিসেনিং আরো বেশি ইফেক্টিভ ও ডায়নামিক করতে চাইলে মিটিং, লাইভ শো, গিভওয়ে বা মিট আপ এরেঞ্জ করতে পারেন। এখানে আপনি আপনার অডিয়েন্সদের সমস্যা, চাহিদা ও পছন্দ সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারবেন। এতে করে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট এর ওপরও পজিটিভ ইম্প্র্যাক্ট পড়বে।
৪. প্রচুর হেল্পফুল কনটেন্ট অফার করুন :
প্রবলেম সলভিং উদ্যোগ নিয়ে কাস্টমারদের সাথে এনগেজমেন্ট বাড়ানো একটা দারুন অপর্চুনিটি। তাই নিয়মিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ও তার সমাধান নিয়ে পোস্ট, ওয়ার্কশপসহ নানা উপায়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ আপনার কোম্পানিই পারবে তাদের প্রাসঙ্গিক সমস্যা গুলোর সমাধান করতে, এমন একটা বিলিভ তৈরি করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনও যদ স্কিন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে থাকেন, তাহলে প্রতিনিয়ত স্কিন রিলেটেড সাধারণ সমস্যা গুলো ও সেগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করুন।
৫. কাস্টমার কোলাবোরেশান :
কাস্টমারের সাথে কোলাব করে ডিসিশন নিন আপনার বিজনেস এ কি কি মোডিফিকেশন আনতে হবে। কাস্টমারের চাহিদার ওপর যেহেতু আপনার বিজনেস ডিমান্ড ডিপেন্ড করে, তাই পোস্ট, কমেন্ট, লাইভ, ভার্চুয়াল কিংবা অনলাইন মিট আাপের মাধ্যমে তাদের সাথে কোলাবোরেট করুন। এতে করে সরাসরি কাস্টমার ডিমান্ড, আপনার বিজনেস এর ত্রুটি, সার্ভিস সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারনা পাবেন। পাশাপাশি কোলাবোরেশান এর কারণে আপনার ব্রান্ড ও প্রোডাক্ট এর সাথে এনগেজমেন্ট ও বৃদ্ধি পাবে।
৬. রিভিউ ও ফিডব্যাক :
নতুন কাস্টমার এর ট্রাস্ট অর্জন এবং ক্রেডিবিলিটি নিশ্চিত করার একটা পাওয়ারফুল স্ট্র্যাটেজি হল রিভিউ ও ফিডব্যাক। তাই, আপনার পুরনো কিংবা রিসেন্ট কাস্টমারদের কাছ থেকে সব সময়ে প্রোডাক্ট রিভিউ আদায় করার চেষ্টা করুন অর্থাৎ ব্যবহারের পরে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার ও ফিডব্যাক দিতে বলুন। এতে করে আপনার বিজনেস এর ওপর নতুন বায়ার্সদের ট্রাস্ট তৈরি হবে এবং আপনার প্রোডাক্ট এর সাথে এনগেজমেন্ট বৃদ্ধিতে আগ্রহী থাকবে৷
৭. নিয়মিত আপডেট ও এনাউন্সমেন্ট :
রেগুলারিটি মেইনটেইন করা প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অর্থাৎ, আপনার একটা রুটিন-মাফিক ও ধারাবাহিক ওয়ে তে মার্কেটিং চালিয়ে যেতে হবে। বার বার গ্যাপ হয়ে যাওয়া , কাস্টমারের সাথে ইন্টারেক্টিভ না হওয়া, কমেন্ট বা মেসেজ এর রিপ্লে না দেয়া ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর ওপর নেগেটিভ ইফেক্ট ফেলে। প্রোডাক্ট এর প্রতি এবং সর্বোপরি ব্রান্ডের প্রতি আগ্রহ ও কমে যাবার রিস্ক থাকে।
তাই প্রতিনিয়ত, বিভিন্ন পন্য, কন্টেন্ট, প্রবলেম সলভিং, আপডেট নিয়ে অডিয়েন্স এর সাথে প্রতিদিন ইন্টারেক্ট করুন।
উপসংহার
একটা বিজনেস এর লাভ ক্ষতি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার কাস্টমার এর ওপর। প্রোডাক্ট এর ডিমান্ড ও পরিচিতি যতদিন থাকবে অতদিন ই আপনার বিজনেস সার্ভাইব করবে। তাই বায়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে চাইলে ফোকাস করুন তাদের পছন্দ অপছন্দ তে। আয়োজন করুন সোশ্যাল ইভেন্ট, মিট আপ, কম্পিটিশন এর মত ক্যাম্পেইন। পাশাপাশি সুন্দর ও সাবলীল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রোভাইড করার বিষয় টিও মাথায় রাখুন। আর এমনই কিছু সাধারণ কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক্যাল বিষয়ের ওপরে কাজ করে, কম্পিটিটরদর থেকে এগিয়ে থাকুন কয়েক ধাপ।