এফ-কমার্স বিজনেস সেক্টর এখন পর্যন্ত যুগান্তকারী বিপ্লবের মুখোমুখি হয়েছে। এটা মূলত কেনাকাটা, পেমেন্ট, ডেলিভারি, সাপ্লাই চেইন এবং কাস্টমার সাপোর্ট সহ বিভিন্ন দিক থেকে নতুন প্রযুক্তি এনে দিচ্ছে। এফ-কমার্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবের একটি অংশ হলো কাস্টমার জার্নি। কাস্টমারের পুরো লাইফস্টাইল,পছন্দ, প্রয়োজনীয়তা এবং অনুভূতি এনালাইসিস করে এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সর্বোত্তমভাবে প্রোভাইড করতে চেষ্টা করছে।
কাস্টমার জার্নিতে এই বিপ্লবের মূল ধারণা হলো ‘পার্সোনালাইজেশন’। এফ-কমার্স প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কোম্পানিগুলি সর্বোত্তম কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স সরবরাহ করতে চেষ্টা করছে,যেখানে কাস্টমারের পছন্দ এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস কাস্টমাইজ করা হয়।
এফ-কমার্স এবং কাস্টমার জার্নি :
এফ-কমার্স বিজনেসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস হলো কাস্টমার জার্নি। এই জার্নি সহজেই একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনার জন্যই কাস্টমারকে নিশ্চিত করে না, বরং কাস্টমারের জন্য একটি satisfactory কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স সৃষ্টি করে। এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি এখন এই জার্নির প্রতিটি পর্যায়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
১. পার্সোনালাইজেশন:
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যেমন নিজস্বতা আছে তেমন প্রত্যেক কাস্টমারের ও পছন্দের ভ্যারিয়েশন আছে। এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি কাস্টমারের পছন্দ, প্রয়োজনীয়তা এবং অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে তাদেরকে সার্ভিস প্রদানে সাফল্য অর্জন করেছেন। এফ-কমার্স যেহেতু কাস্টমারকে তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও প্রয়োজন অনুসারে প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে সাহায্য করে।তাই এফ-কমার্স কাস্টমার জার্নিতে একটা স্যাটিসফেক্টরি ইমপ্যাক্ট ফেলে।
২. কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সের রিপিটেশন বা পুনরাবৃত্তি:
কাস্টমারের রিপিটেশন সাধারণত একটি এনালাইসিস প্রোসেসের সাথে শুরু হয়, এবং এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি এখন এই প্রোসেসকে একটি নতুন ভ্যালু দিয়েছে। কাস্টমারের আগামী চাহিদার উপর ভিত্তি করে পুনরাবৃত্তি প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে।যা তাদেরকে আরও রিলেটেড অনুভব করতে সাহায্য করে।
সহজ কথায়, কাস্টমার যাতে আবারও রিপিট পারচেজ করে এজন্য তাদের পছন্দ, ভবিষ্যতে প্রয়োজনকে এনালাইসিস করা এবং সে অনুযায়ী তাদের সামনে প্রোডাক্ট নিয়ে যাওয়া। এতে করে কাস্টমারও সমানভাবে উপকৃত হয়।
৩. ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির ব্যবহার:
এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি এখন একটি ভার্চুয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কাস্টমারের পছন্দ, অপছন্দ এবং আগামী চাহিদা প্রেডিক্ট করতে সক্ষম। এই তথ্য সাহায্যে তারা হাই কোয়ালিটি অফার ও প্রোডাক্ট মোডিফিকেশন এ সাহায্য করতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গুলো কাস্টমারের বিহেভিয়ার এনালাইসিস করে,তাদের প্রেজেন্টেবল ফিউচার চাহিদা গুলো এনালাইসিস করে তাদেরকে আরো এডভান্স সার্ভিস প্রোভাইড করে।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পরিচিত। যেহেতু, অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউজার তাদের ব্যক্তিগত প্রচুর ইনফরমেশন এখানে শেয়ার করে, এফ-কমার্সের কাছে এই জিনিস গুলো ট্র্যাক করা অত্যন্ত সহজ এবং এগুলো পরবর্তীতে কাস্টমারকে আশানুরূপ সার্ভিস পেতে সাহায্য করে।
৫. সাংগঠিক ডেটা অ্যানালিসিস:
এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি ডেটা অ্যানালিসিস এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কাস্টমারের বাস্তব প্রোফাইল তৈরি করে,তাদের চাহিদা এবং পছন্দ বুঝতে সাহায্য করে। সহজ কথায়,এখানেও ডেটা এনালাইসিস এর মাধ্যমে কাস্টমারকে উন্নত সার্ভিস প্রোভাইড করা হয়। অতিরিক্ত স্টোর ভিজিট, প্রোডাক্ট খোঁজা ইত্যাদি কাজে হয়রানি পোহাতে হয় না।
৬. স্মার্ট লজিস্টিকস:
এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি তাদের লজিস্টিক্স প্রক্রিয়াকে আরো এডভান্স করে ফেলেছে। তাদের এই ডেভেলপড সার্ভিস তাদের কাস্টমারদের প্রোডাক্ট ডেলিভারিতে করতে সাহায্য করে, যাতে কাস্টমার তাদের পণ্য সঠিক সময়ে এবং সঠিক অবস্থায় পান। ফলে কাস্টমার জার্নি আরো বেশি স্মুথ হয়।
৭. বৃহত্তর মার্কেট এনালাইসিস :
এফ-কমার্স কোম্পানিগুলি মূল বাজার তথ্য ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এবং মার্কেটিং পরিকল্পনা তৈরি করে। বলা হয়ে থাকে যত বেশি মার্কেট এনালাইসিস করা হয়, তত বেশি কার্যকর সার্ভিস দেয়া পসিবল। কারণ মার্কেট রিসার্চ করে কম্পিটিটরদের স্ট্রং ও উইক পয়েন্ট গুলো ফাইন্ড আউট করে সার্ভিস দেয়া হয়। এফ কমার্স ও এই স্ট্রাটেজি ই ইউজ করে।
ফলে তারা অন্য প্লাটফর্ম গুলোর থেকে আরে ভালো ও এডভান্স ওয়ে তে কাস্টমার নিড এনালাইসিস করতে পারে। কাস্টমস জার্নি ও অন্য মার্কেটপ্লেসের তুলনায় বেশি ইফেক্টিভ হয়।
৮. ইন্টারঅ্যাক্টিভ প্লাটফর্ম:
এফ-কমার্স প্লাটফর্মগুলি কাস্টমারের সাথে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনুভূতি শেয়ার করার অপশন প্রোভাইড করে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করে।ফলে, অন্য যেকোনো প্লাটফর্ম থেকে এফ-কমার্স গুলো সবচেয়ে বেশি একটিভ ও ইন্টারেক্টিভ হয়ে থাকে।
৯. রিভিউ ও ফিডব্যাক :
এফ-কমার্স প্লাটফর্ম হল এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে কাস্টমাররা তাদের পছন্দ মত প্রোডাক্টের রিভিউ করতে পারে। শেয়ার করতে পারে প্রোডাক্ট সম্পর্কে তাদের ধারণা, ইউজ করার পর তার এক্সপেরিয়েন্স। এটা পজিটিভ নেগেটিভ কোনটিই হতে পারে। এখানেই এফ-কমার্সের বিশেষত্ব।তারা কাস্টমার কে একদম অনেস্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ দেয়।
তাছাড়া এখানে কাস্টমাররা ফিডব্যাক ও দিতে পারেন। মোডিফিকেশন বিষয়ক টিপস ও সরাসরি তাদের পছন্দ গুলো জানাতে পারেন। ফলে এফ-কমার্সে এসব তথ্য গুলো ব্যবহার করে আরো মোডিফিইড সার্ভিস দেয়া পসিবল হয়।
উপসংহারে,
এফ-কমার্স কাস্টমার জার্নি ইম্প্রুভ করতে টেকনোলজির ব্যবহার, একে অন্যের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার দারুন অপর্চুনিটি ক্রিয়েট করেছে।আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা এবং রোবোটিক্স এর মত টেকনোলজিস এর ইউজ এফ-কমার্স কোম্পানি গুলোকে আরো বেশি এডভান্স করেছে।
সমগ্রভাবে বলা যায় যে, এফ কমার্স বিজনেসে কাস্টমার জার্নি বিপ্লবের জন্যই তৈরি হয়েছে এবং এই বিপ্লবের সাথে সাথে নতুন প্রযুক্তি এনে দিচ্ছে,যা এই ডিজিটাল মার্কেটিং জগতের অগ্রগতিতে দারুনভাবে সাহায্য করছে।