“মায়া” – বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল পার্সোনাল ওয়েলবিয়িং প্লাটফর্ম

Share This Post

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম হল মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক সাধারণ রিপ্রোডাক্টিভ ডিসর্ডার যা বিশ্বজুড়ে সন্তান জন্মদানের প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে প্রতি ১ জনকে প্রভাবিত করে। একটি স্টাডি অনুসারে, পিসিওএস-এ আক্রান্ত ৭৫% নারী বিভিন্ন কারণে আনডায়াগোনাইজড থেকে যান। কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, প্রায়শই মহিলাদের মানসিক সুস্বাস্থ্য এই বিষয়টাকেও উপেক্ষা করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০ এর মহিলার মধ্যে ১ জন মহিলা তার নিজ বাড়িতে যৌন এবং শারীরিক সহিংসতার মুখোমুখি হন। বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশে মহিলাদের প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর ২০১৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে বিবাহিত ৭০% মহিলা বা মেয়েরা নিজের পার্টনার এর নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক হ্যারাসমেন্ট এবং বিচারের ভয় পাওয়ার কারণে মহিলারা তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানাতে দ্বিধা প্রকাশ করে। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে একটি দারুন আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন আইভি হক রাসেল।

আইভি হক রাসেল - মায়ার ফাউন্ডার

মায়া” বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল পার্সোনাল ওয়েলবিয়িং এসিস্টেন্ট যা মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা, অনলাইন হেল্থ এবং হেলথ রিলেটেড অন-ডিমান্ড ইনফরমেশন প্রোভাইড করার একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলাদের শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আইনী সেবার মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একটি নামহীন নিরাপদ ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাব দিয়ে এটি যাত্রা শুরু করেছিল। ২০১৫ সালে ব্র্যাক এর সহযোগিতায় মায়া অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়।

একজন গ্রাহক এখানে খুব সহজেই তাদের হেলথ রিলেটেড যেকোনো প্রশ্ন পোস্ট করতে পারে, যা বিশেষজ্ঞের একটি নিরীক্ষিত নেটওয়ার্কে পৌঁছায় এবং একটি উপযুক্ত রিপ্লাই পাওয়া যায়। মায়া বর্তমানে একটি নামহীন নিরাপদ ম্যাসেজিং এর পাশাপাশি যে কোনো মানুষের জন্য হেল্থ, সাইকোলজি , সোশ্যাল প্রব্লেম এবং লিগ্যাল সমস্যাগুলোর ওন ডিমান্ড এক্সপার্ট সুবিধা দিয়ে আসছে। আপনি এসএমএস এবং অ্যাপের মাধ্যমে মায়ার অন-ডিমান্ড বিশেষজ্ঞদের পুল থেকে তথ্য এবং পরামর্শ পেতে পারেন খুব সহজেই , তাদের প্রিমিয়াম সেবার জন্য উত্তর পেতে সময় লাগেমাত্র ১০ মিনিট। মায়ার প্রথমদিকে, যেকোন প্রশ্নের যথাযথ পদ্ধতিতে উত্তর দিতে প্রায় ৪৮ ঘন্টা সময় লাগলেও পরবর্তীতে এটি ২৪ ঘন্টা এবং তারপরে ১২ ঘন্টায় হয়ে ওঠে এবং গত কয়েক বছর ধরে এটি মাত্র ০৩ ঘন্টায় এই সেবা দিয়ে আসছে এবং বর্তমানে প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীরা এটি ১০ মিনিটের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন। 

রিসেন্টলি মায়া আপা প্লাস, রবির সাথে পার্টনারশিপ এর মাদ্ধমে এই সেবা চালু করেছে। এছাড়াও ‘মায়া শপ‘ নামে একটি পার্সোনাল কেয়ার অনলাইন কমার্স শপ এর সেবাও তাদের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তারা প্রোভাইড করে আসছে। মায়া তার ডিজিটাল এসিস্ট্যান্ট এর জন্য মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং টেকনোলজি ব্যবহার করে যা ৯৫% নির্ভুলতার সাথে স্বয়ংক্রিয় উত্তরগুলো সরবরাহ করতে সক্ষম। টিম মায়া তার ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং টেকনোলজি বিকাশে দুই বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছে। বর্তমানে এটি চারটি ভাষার পাশাপাশি এটি উর্দু, হিন্দি এবং আরবি ভাষার প্রসেসিং করার জন্য এনএলপি (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং) প্রযুক্তিতে কাজ করেছে।

যা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে মানব বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার কিনা। প্রয়োজনীয়তার লেন্থ, জটিলতা এবং প্রশ্নের জরুরীতার উপর নির্ভর করে যদি প্রয়োজন হয় ব্যবহারকারীদের একটি হিউমান মেডিকেল এক্সপার্ট এর কাছে পাঠানো হয়। বর্তমানে ১০ মিলিয়ন ইউনিক ইউজার এর পাশাপাশি ডাক্তার, পরামর্শদাতা এবং বিশেষজ্ঞ সহ ৩০০ জন লাইসেন্সপ্রাপ্ত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মায়ার প্ল্যাটফর্মে প্রতি ১৪ সেকেন্ডে একটি পরামর্শ প্রদানের জন্য কাজ করছেন। মায়া অ্যাপ্লিকেশনটির প্রায় ৩০% ব্যবহারকারী পুরুষ।

ইউজারদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে অ্যাপটি রোগীদের রেন্ডম একটি আইডি জেনারেট করে এবং কনসালটেন্সি পর্যন্ত তা এনক্রিপ্ট করা হয়. মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং টেকনোলজি ইউজ করলেও প্লাটফর্মটি এ পর্যন্ত পরিচালিত ০৪ মিলিয়ন প্রশ্নের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের উত্তর দিয়েছেন হিউমান মেডিকেল এক্সপার্টরা। মায়া ২০২০ সালে অ্যাপ-এ অন-ডিমান্ড ভিডিও কনসালটেন্সি এবং প্রেসক্রিপশন ডেলিভারিসহ প্রিমিয়াম সেবা চালু করেছে। ঢাকার বনানীতে বর্তমানে তারা তাদের অফিস অপারেশন চালিয়ে আসছেন । 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়া প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ এবং এশিয়ান বাজারে বিনিয়োগের প্রভাবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বেসরকারী ইক্যুইটি ফার্ম ওসিরিস গ্রুপের নেতৃত্বে একটি সীড রাউন্ডে ২.২ মিলিয়ন ডলার ফান্ড সংগ্রহ করেছিল। নতুন এই ফান্ডটি মায়ার টেলিহেলথ প্ল্যাটফর্ম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে তাদের সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট এ ব্যবহৃত হবে।

টিম - মায়া

এটি বাংলাদেশি হেলথ টেক সংস্থাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত বৃহত্তম সংগ্রহ। এর আগে ২০১৭ সালে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংস্থা, ব্র্যাক এর একটি ৪ কোটির প্রাথমিক ফান্ড নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে “মায়া” গুগল লঞ্চপ্যাড এক্সিলিটারের পার্টনার হিসাবে যাত্রা শুরু হয় , যেখানে বিশ্বজুড়ে ৩০+ স্টার্টআপ গ্রুপ উপস্থিত ছিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সান ফ্রান্সিসকো গুগল ডেভেলপারস লঞ্চপ্যাড স্পেসে এ দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে মায়া এসিআই অওনেড বাংলাদেশ টপ রিনাউন্ড সুপারশপ চেইন “স্বপ্ন” এর সাথে পার্টনারশিপ এ কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের ১৯ মে অনুষ্ঠিত গুগল আই/ও তে গুগলের ভিপির উদ্বোধনী মন্তব্যে মায়া টিমকে ফিচার করা হয়েছে। 

মায়া সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় চালু হয়েছিল এবং ভারত,পাকিস্তান এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে এর সার্ভিস টেস্ট করতে শুরু করেছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক্সপ্যান্ড করার পরিকল্পনাও করছে। 

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
PPC কি ? একটি পাওয়ারফুল লিঙ্ক-বিল্ডিং-এ PPC কিভাবে কাজ করে ?
Marketing

PPC কি ? একটি পাওয়ারফুল লিঙ্ক-বিল্ডিং-এ PPC কিভাবে কাজ করে ?

PPC, বা পে-পার-ক্লিক হল একটা ডিজিটাল মার্কেটিং মডেল। এখানে বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতিবার তাদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার সময় একটি ফি প্রোভাইড করে। অনলাইন অ্যাডস বা বিজ্ঞাপনের একটি

১০ টিপস ফলো করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে লিড জেনারেট করুন
Marketing

১০ টিপস ফলো করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে লিড জেনারেট করুন

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিল্ড হচ্ছে ডায়নামিক আর চেইঞ্জিং। এমন পরিস্থিতিতে লিড জেনারেট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগানো ও তাদের কাস্টমার বেস কে আরো ব্রড