বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে,বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর প্রিপারেশন গুলো ও এখন নির্ভর করছে ডেটা অ্যানালিটিক্সে। ডেটা অ্যানালিটিক্স গুলো বর্তমানে ডিজিটাল বিজনেস গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ একটি টুলস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।একটি পরিসংখ্যান উঠে এসেছে পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় ৭৮ শতাংশ সফল কোম্পানি গুলো তাদের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে সাহায্য নিচ্ছে ডেটা অ্যানালিটিক্সের।
সৌভাগ্যক্রমে, ডেটা অ্যানালিটিক্স একটি বিজনেস এর সফলতার হার বৃদ্ধি করতে পারে প্রায় ৩ গুন। এছাড়াও দেশীয় বিজনেস গুলোও ডিজিটাল খাতে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সাহায্য নিচ্ছে এই অত্যাধুনিক টুলস গুলোর। আপনিও যদি আপনার বিজনেসের দ্রুত বৃদ্ধি ও সফলতা চান তাহলে চলুন শিখে নিন ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহারের কৌশল গুলো।
ডেটা অ্যানালিটিক্স কীভাবে ব্যবহার করবেন :
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন :
যেকোনো কাজের একটি ক্লিয়ার গোল বা উদ্দেশ্য না থাকলে সেটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ঠিক ডেটা অ্যানালিটিক্স এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ ডেটা অ্যানালিটিক্স এর প্রতিটি স্ট্র্যাটেজি এর জন্য আলাদা আলাদা মোটিভ বা গোলস থাকে। তাই আপনি কোন উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স করতে চাচ্ছেন আগে সেটা নির্ধারণ করুন।
অর্থাৎ, প্রথমে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা “টার্গেট সেট” ক্লিয়ার করুন, যাতে ডেটা অ্যানালিটিক্স এর মাধ্যমে আপনি সেই লক্ষ্যে অনুযায়ী আপনার ওয়ার্ক প্লান তৈরি করতে পারেন।
২. ডেটা কালেক্ট করুন :
প্রথমে আপনার বিজনেস এর জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করুন। এটি আপনার ব্যবসার সম্পর্কে তথ্য অর্জনে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে অপশন সিলেকশন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে,আপনার ব্যবসার উন্নতি করতেও হেল্প করবে।
ডেটা সংগ্রহ করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ডিজিটাল টুলস যেমন : গুগল অ্যানালিটিক্স, কি-ওয়ার্ড রিসার্চ ও লিড জেনারেশান টুলস গুলো। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু ডেটা সংগ্রহের একটি দারুন মাধ্যম। প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করুন এবং তা মূল্যায়ন করুন। এটি আপনার বিজনেস রিলেটেড সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানের জন্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
৩. একটি বাজেট আউটলাইন করুন :
ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রোসেসটি অনেক সময়ে কিছু পেইড প্রোসেস এর মধ্যে দিয়েও যেতে পারে। যেমন : আপনি কোনো অ্যানালিটিক্স টুলস ইউজ করলেন। কিংবা অ্যানালাইসিস এর জন্য, ডাটা সংগ্রহ করা কিংবা লিড জেনারেট করার জন্য কোনো কর্মী রাখলেন। অথবা পুরো ম্যানেজমেন্ট এর জন্য এক্সপার্ট হায়ার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডাটা অ্যানালাইসিস এর জন্য আপনি বিজনেস এর কতটুকু অংশ খরচ করতে চাচ্ছেন তার একটি প্রোপ্রার বাজেট অপটিমাইজেশন করতে হবে।
৪. ডেটা ক্লিয়ার করুন :
ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রসেস গুলোর একটি মূলনীতি হচ্ছে, শুধু প্রয়োজনীয় বা ইফেক্টিভ ডেটাগুলো অ্যানালাইসিস করা। কারণ অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য, এনালাইসিস এর প্রোসেস স্লো, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল করে দিতে পারে। তাই পুরো ডেটাকে ফিল্টার করা অর্থাৎ ডেটা ক্লিয়ারিং করতে হবে। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ডেটা দিয়ে একটি ডেটা সেট তৈরি করতে হবে।
৫. ডেটা বিশ্লেষণ করুন :
সংগৃহীত ইফেক্টিভ ডেটার উপর ভিত্তি করে এবার এগুলোকে বিশ্লেষণ করুন।এটি আপনাকে আপনার বিজনেস এর নিশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডেটা প্রেজেন্ট করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আপনাকে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে ব্যবসার উন্নতির করতেও ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।বিশ্লেষণের শেষে কোন ডেটা কোন কাজের জন্য ব্যবহার করছেন তাদের একটা তালিকা তৈরি করুন।
৬. প্রস্তুতি নিন :
এবার আপনার বিশ্লেষণ করা ডেটার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নিন। আপনি যেসব সমস্যা বা ডিফিকাল্টিজ এর সম্মুখীন হচ্ছেন,সেগুলোর সাথে প্রতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা করুন যাতে আপনি সঠিক ডেটা রিসোর্স সঠিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন এবং আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারেন।
সহজ কথায় অ্যানালাইসিস করার ডেটারভিত্তিতে ওয়ার্ক প্রিপারেশন নিন। যেমন : কোন ডেটাটি লিড জেনারেশান এর জন্য ব্যবহার কথা ছিল সেটাকে শুধু লিড জেনারেশান এর কাজে ইউজ করুন।
৭. রিলেটেড টেকনোলজিস অ্যাপ্লাই করুন :
ডেটা অ্যানালিটিক্স একটি আধুনিক ও অ্যাডভান্স প্রোসেস তাই এখানে যতবেশি আপডেটেড টেকনোলজিস ইউজ করবেন তত বেশি দ্রুত ও ইফেক্টিভ ভাবে প্রবলেম সলভিং করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, গুগল অ্যানালিটিক্স এর মাধ্যমে ডেটা অ্যানালাইসিস করা, গুগল বা বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে নেওয়া। এছাড়াও লিড জেনারেশান এর জন্য অত্যাধুনিক টেকনোলজিস ইউজ করা ডেটা অ্যানালিটিক্স এর প্রোসেস কে আরো সহজ করে দেয়।
৮. ব্যবসায়িক ভ্যালু ডেভেলপ করুন :
ডেটা অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে ব্যবসার ভ্যালু ডেভেলপ করুন, যাতে নতুন সুযোগ এবং আয়ের উৎস তৈরি হয়। আরেকটু সহজ ভাবে বলতে গেলে ডেটা অ্যানালাইসিস এর মাধ্যমে খুঁজে বের করুন আরো বেশি কাঙ্ক্ষিত অডিয়েন্স, এমন কোনো প্লাটফর্ম যেটা আপনার গতানুগতিক সেলিং প্লাটফর্মের থেকে বেশি ইফেক্টিভ।এই স্ট্রাটেজি ব্যবহার করে নিজের প্রোফিটের জন্য নতুন নতুন অপর্চুনিটিজ খুঁজে বের করুন এবং বিজনেস এর ভ্যালু ডেভেলপ করুন।
৯. অ্যানালাইসিস করুন এবং ডেভেলপ করুন :
সময়ের সাথে সাথে ডেটা অ্যানালিটিক্স ইউজের ফলাফল নিয়ে নিজের ব্যবসার কাজের পরিকল্পনা করুন এবং প্রয়োজনে স্ট্র্যাটেজি মোডিফিকেশন করুন। অর্থাৎ,আপনার ডেটা অ্যানালিটিক্স এর স্টেপস গুলো আদৌ কাজে দিচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করুন। এগুলো যাচাই করার জন্য ও বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল টুলস ইউজ করতে পারেন। এগুলোর মাধ্যমে অ্যানালিটিক্স অ্যাপ্লাই করার আগের ও পরের পারফর্মেন্স কম্পেয়ার করুন এবং প্রয়োজনীয় স্থানে মোডিফিকেশন আনুন বা স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করুন।
১০. ইনফ্লুয়েন্সার নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করুন:
ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে আপনার বিজনের এর নেটওয়ার্ক আরো এডভান্স করুন। এক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর দিকে ফোকাস করুন। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের একটা হিউজ ফলোয়ার বেজ থাকে। তাদের মাধ্যমে ফলোয়ারদের পছন্দ-অপছন্দ সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।তাই ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে শক্তিশালী ডেটা আদান প্রদান নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন৷
উপসংহারে,
ডেটা অ্যানালিটিক্স একটা সিঙ্গেল প্রসেস নয়। কয়েকটি সিস্টেমেটিক ধাপের মাধ্যমে এই ডেটা অ্যানালিটিক্স এর কাজ গুলো কমপ্লিট করা হয়। এজন্য সঠিক গোল সিলেকশন,ডেটা ক্লিয়ারিং,বিশ্লেষণ,নেটওয়ার্কিং ও নতুন নতুন এডাপটেশন এর মাধ্যমে ডেটা অ্যানালিটিক্সকে আরো এডভান্স ভাবে ইউটিলাইজ করুন এবং আপনার বিজনেসকে কম্পিটিটরদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখুন।