ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ গাইডলাইন

ই-কমার্স-বিজনেস-সেট-আপ
Share This Post

ই-কমার্স বিজনেস হলো অনলাইন ভিত্তিক প্রোডাক্ট, সার্ভিস ক্রয় বিক্রয়। ইউরোপ কান্ট্রি গুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ই-কমার্স বিজনেস এখন বেশ জনপ্রিয়। কারণ ট্রেডিশনাল বিজনেসের তুলনায় ই-কমার্স পদ্ধতিতে বিজনেসের গ্রোথ বাড়ছে দ্বিগুন। বর্তমানে আমরা প্রায় সবকিছুর জন্যই অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। নিউজ আপডেট, কমিউনিকেশন, শপিং, মার্কেটিং সব কিছুই এখন অনলাইনের মাধ্যমে করা পসিবল হচ্ছে।

ই-কমার্স বিজনেসের মাধ্যমে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই লাভ হচ্ছে, সময় এবং শ্রম দুটোই কম ওয়েস্ট হচ্ছে। যেহেতু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ই-কমার্স বিজনেস বেড়েই চলেছে, এজন্য ই-কমার্স সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন না থাকলে সাক্সেস্ফুল হওয়া কঠিন। কেননা, প্রায় প্রত্যেক টা বিজনেস ব্র‍্যান্ড ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন আইডিয়া, ক্রিয়েটিভিটির মাধ্যমে ই-কমার্স কে নিয়ে যাচ্ছে এক অন্য লেভেলে, ব্যাপার টা নতুন ব্র‍্যান্ড মালিকদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং।

আজকের ব্লগে থাকছে ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ করার কিছু গাইড লাইন, যেগুলি ই-কমার্স বিজনেসে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাক্সেস্ফুল হতে হেল্প করবে।

বিজনেস মডেল সিলেকশন 

বিজনেসের জন্য ই-কমার্স বিজনেস মডেল সিলেক্ট করুন। কি ধরনের বিজনেস আপনি শুরু করতে যাচ্ছেন, কোন বিজনেসের জন্য আপনার প্যাশন কাজ করে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট আপনি সেল করতে যাচ্ছেন সেই অনুযায়ী ডিসিশন নিন আপনার বিজনেসের মডেল কি হবে। বিজনেসের মডেল গুলি হলোঃ

  • B2B (Business-to-business):  অনলাইনে একটা বিজনেস অরগানাইজেশান থেকে আরেকটা অরগানাইজেশানে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সেল করাকে B2B মডেল বলে।
  • B2C (Business-to-consumer): কমন একটা ই-কমার্স বিজনেস মডেল হলো B2C অর্থাৎ বিজনেস টু কাস্টমার সেল।
  • C2C (Consumer-to-consumer): এই ধরনের ই-কমার্স বিজনেসে মূলত অনলাইনে কনজ্যুমারদের মধ্যে ট্রানসাকাশন হয়ে থাকে।
  • C2B (Consumer-to-business): এই ই-কমার্স বিজনেস মডেলটি পপুলারিটি পেয়েছে ফ্রিল্যান্সার হায়ারিং প্ল্যাটফর্ম আপ-ওয়ার্ক থেকে যেখানে কনজ্যুমারস বিভিন্ন বিজনেসে সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকে।

সুতরাং আপনার ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ করার আগে ঠিক করে ফেলুন আপনার বিজনেসের মডেল কি হবে। এটা হলো ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ এর ফার্স্ট স্টেপ যেটা সঠিক ভাবে করা গেলে ই-কমার্স বিজনেস স্মুথলি রান করবে।

সিলেক্ট ডেলিভারি মেথড 

ই-কমার্স বিজনেসের গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট হলো প্রোডাক্ট ডেলিভারি সিস্টেম। কোন সিস্টেমে আপনি প্রোডাক্ট কাস্টমারের কাছে সেন্ড করবেন, এবং তারা ইনটেক প্রোডাক্ট পাবে কিনা এগুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি।

ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ

এজন্য আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের জন্য পার্ফেক্ট ডেলিভারি মেথড সিলেক্ট করুন। ফাস্ট এবং সময় মতো  ডেলিভারি দিবে এমন ডেলিভারি এজেন্সি সিলেক্ট করুন। ডেলিভারি চার্জ, সময়, ক্যাশ অন ডেলিভারি অথবা বিকাশ সবকিছু ই-কমার্স সেট আপ এর সেকেন্ড স্টেপ হিসেবে সেট করে ফেলুন 

রিসার্চ 

ই-কমার্স বিজনেসের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হলো রিসার্চ। এতো এতো অনলাইন বিজনেসের মধ্যে নিজের ব্র‍্যান্ড কে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে, প্রোডাক্ট পরিচিতি এবং সেল বাড়াতে প্ল্যান মাফিক কাজ করা জরুরি। এবং এই প্ল্যান করার জন্যই আপনার প্রয়োজন হবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর রিসার্চ যেমন, 

  • কম্পিটিটর রিসার্চ 
  • অডিয়েন্স রিসার্চ 
  • সাপ্লায়ারস রিসার্চ 
  • প্রোডাক্ট রিসার্চ 

ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ করার সময় উপরের চারটি বিষয়ে পর্যাপ্ত রিসার্চ করে আপনাকে আইডেন্টিফাই করতে হবে মার্কেটে আপনার কম্পিটিটর কারা, তাদের সিগনেচার প্রোডাক্ট কি, এবং তাদের গ্যাপ গুলো কোথায় এবং অডিয়েন্সের pain point  খুঁজে বের করুন, তাদের চাহিদা, ইন্টারেস্ট, বাজেট এসব জানা জরুরি। তারপর কারা আপনার প্রোডাক্টের রিসোর্স সাপ্লায়ার, এবং প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এভ্রিথিং রিসার্চ করে স্ট্র‍্যাটেজি ক্রিয়েট করুন।

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান

রিসার্চ করার পর এখন প্ল্যান করার পালা। রিসার্চ করে আপনি কাস্টমারের pain point খুঁজে পেলেন এবং আপনার কম্পিটিটর দের গ্যাপ আইডেন্টিফাই করতে পারলেন, এখন সেই অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্ট কিভাবে গ্যাপ টা পূরন করতে পারছে, সেগুলি লিস্ট করে প্ল্যান সেট করে ফেলুন। 

প্ল্যান করার সময় মার্কেটিং প্ল্যান, প্রোডাক্ট প্ল্যান, ক্যাম্পেইন প্ল্যান গুলি আলাদা আলাদা সেগমেন্ট করুন, এবং ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট প্ল্যান ক্রিয়েট করুন। যেমন, প্ল্যান A কাজ না হলে প্ল্যান B এক্সিকিউট করতে হবে।

অনলাইন শপ

রিসার্চ এবং প্ল্যান করার পর এইবার অনলাইনে প্রফেশনাল বিজনেস শপ খুলে ফেলুন। কোন কোন প্ল্যাটফর্মে আপনি প্রোডাক্ট সেল করতে চান সেইসব প্ল্যাটফর্ম গুলিতে (Facebook, Instagram, TikTok, YouTube) বিজনেস প্রোফাইল ক্রিয়েট করুন এবং ওয়েবসাইট বিল্ট করুন। ওয়েবসাইট ওয়েল ডেকোরেট করুন এবং প্রোডাক্ট সার্ভিসের ডেসক্রিপশন এড করুন। ই-কমার্স সাইট লঞ্চ করার সময় অন্যান্য সাইট রিসার্চ করে দেখতে হবে তারা কিভাবে কি করেছেন। প্রোডাক্ট রিলেটেড বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট পাব্লিশ করুন। এবং রাইটিং, ভিডিও কনটেন্ট এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট হাইলাইট করুন। মনে রাখবেন আপনার পেইজ, ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর প্রোডাক্টসের কোয়ালিটি, ডেকোরেশন, ডেসক্রিপশন দেখে অডিয়েন্স যেন সহজেই ইম্প্রেস হয় সেই ভাবে সবকিছু সেট করুন।

ই-কমার্স সেট আপ

অনলাইন শপের ক্ষেত্রে ব্র‍্যান্ড লোগো এবং স্লোগান অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। ট্রাই করুন প্রত্যেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এ বিজনেস প্রোফাইল নেইম সেইম রাখতে এবং লোগো এড করতে। ব্র‍্যান্ড এর সাথে রিলেটেড দুই লাইনের ইউনিক স্লোগান এড করুন যেটা পড়লে অডিয়েন্স সহজেই আপনার ব্র‍্যান্ড সম্পর্কে ধারণা করতে পারে।

ই-কমার্স বিজনেস মার্কেটিং

রিসার্চ, প্ল্যান এবং শপ সেট করার পর ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ এর লাস্ট স্টেপ হলো মার্কেটিং। মার্কেটিং যে কোনো বিজনেসের প্রাণ হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়া এডস ব্যবহার করতে পারেন। এবং মোস্ট পপুলার মার্কেটিং সিস্টেম হলো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। যেকোনো ফেমাস ইনফ্লুয়েন্সার কে দিয়ে আপনার প্রোডাক্ট প্রমোট করিয়ে নিন। তাদের কে আপনার প্রোডাক্ট গিফট করুন। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার দের কথায় অডিয়েন্স অনেক ইনফ্লুয়েন্স হয়। যখন কোনো ইনফ্লুয়েন্সার আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে পজিটিভ রিভিউ শেয়ার করে তখন আপনার প্রোডাক্ট পরিচিতি বাড়ে এবং সেল অপরচুনিটি তৈরি হয়। 

এছাড়াও মার্কেটিং করার জন্য ইমেইল মার্কেটিং, ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং, টিকটক মার্কেটিং কে কাজে লাগাতে পারেন। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে রিলস এবং স্টোরি শেয়ারিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্টসের মার্কেটিং করুন। সোশ্যাল মিডিয়া বিজনেস প্রোফাইল থেকে লাইভ শেয়ার করতে পারেন এবং বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার দের মাধ্যমে লাইভ প্রমোট করাতে পারেন। মনে রাখবেন বিজনেস ইজ অল এবাউট মার্কেটিং। আপনি যতো দক্ষতার সাথে প্রোডাক্টসের মার্কেটিং করতে পারবেন ততো দ্রুত বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারবেন এবং সেল বাড়াতে পারবেন।

পরিশেষে, যদি আপনি উপরের স্টেপ গুলি ভালো করে ফলো করে থাকেন তাহলে আপনি পুরোপুরি রেডি ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ করতে। তাহলে আর দেড়ি কেন? ভালো করে রিসার্চ করে প্ল্যান ক্রিয়েট করা, স্ট্র‍্যাটেজি তৈরি করা, শপ বিল্ট করা, মার্কেটিং করার মাধ্যমে শুরু করে দিন ই-কমার্স বিজনেস। 

মনে রাখবেন ই-কমার্স বিজনেস সেট আপ করার আগে অবশ্যই আপনাকে লার্ন করতে হবে, স্কিল ডেভেলপ করতে হবে৷ তবেই আপনি ই-কমার্স বিজনেসে কম্পিটিটর দের বিট করতে পারবেন এবং সাক্সেস্ফুল হবেন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
মার্কেটিং অটোমেশনের আল্টিমেট গাইডলাইন
Marketing

মার্কেটিং অটোমেশনের আল্টিমেট গাইডলাইন

কেমন হয় যদি মার্কেটিং এর জন্য আপনার তেমন কোন পরিশ্রমই না করতে হয়? অটোমেটিকালি, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি গুলো আপনার বিজনেস কে কিউরেট করে! এতে, একদিকে আপনার

বাইয়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির উপায়
Marketing

বাইয়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির উপায়

একটা কঠিন সত্য হল, যদি বায়ার্সাদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট না থাকে, সেটা কোনো সফল বিজনেস এর পর্যায়ে পরে না। মার্কেটে সহস্র প্রোডাক্টের ভীড় থাকা,