অনলাইন বিজনেস এর এই হিউজ ল্যান্ডস্কেপ এ ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধি করতে F-Commerce আর E-Commerce এর মধ্যে স্মার্ট সিলেকশন এর বিকল্প নেই। একদিকে F-commerce (Facebook Commerce), যার আছে নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি, ডাটা এনালাইসিস টুলস, অডিয়েন্স টার্গেটিং ফ্যাসিলিটি।
অন্যদিকে E-commerce, বা ইলেক্ট্রনিক কমার্স, যেটা ইন্টারনেটের সেই শুরুর দিক থেকেই স্বতন্ত্রতা ধরে রেখেছে। মূলত অনলাইন মার্কেটিং এর হাতেখড়ি ই ঘটেছে ই-কমার্সের হাত ধরে। তাহলে ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধিতে কোনটা বেশি ইফেক্টিভ?
প্রতিটি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি কিন্তু তার রিলেটেড ফিল্ডে বেশি ইফেক্টিভ। সময়, ট্রেন্ড ও অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট এর ওপর ভিত্তি করেও প্লাটফর্মের ইফেক্টিভিটি তেও আসে তারতম্য। তাই, দুই ধরনের স্ট্র্যাটেজি এর বেনিফিট, ড্র ব্যাক ও স্ট্র্যাটিসিটিক্যাল এনালাইসিস এর মাধ্যমে তুলে ধরবো, ব্রান্ড রেপুটেশন এর জন্য F-commerce নাকি E-commerce বেস্ট।
F-commerce বা ফেসবুক কমার্স :
এফ-কমার্স, বা ফেসবুক কমার্স, ফেসবুকের একটি অনলাইন স্টোর। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে অফলাইন স্টোর ছাড়াই সবাই প্রোডাক্ট কিনতে এবং বিক্রি করতে পারেন। বলতে গেলে এটা আপনার ফেসবুক পেজে একটি দোকান থাকার মত!
আপনি কি জানেন যে প্রতিদিন ১.৮ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন? এফ-কমার্সের জন্য এটা একটা বিরাট অডিয়েন্স গ্যাদারিং! এবং Facebook এর প্রায় ৭০% বিজনেস তাদের পণ্য বিক্রির জন্য F-commerce ব্যবহার করে।
একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে ৮০% এরও বেশি লোক এমন একটি প্রোডাক্ট ফেসবুক আবিষ্কার করেছে যা তারা আগে থেকে কিনতে চেয়েছিল। ফলে সোশ্যাল মিডিয়া এই জায়ান্টের হাত ধরে অনলাইন কেনাকাটা বাড়ছে অবিশ্বাস্য হারে!
ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধি তে এফ-কমার্সের ভূমিকা হাইলাইট হয়েছে, 2022 সালে। একটি রিপোর্টে উঠে আসে আগের বছর গুলোর তুলনায় বিক্রির জন্য Facebook ব্যবহার করে ব্যবসায় ৫০% বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, ফেসবুক শুধুমাত্র বন্ধুদের সাথে কানেক্টেড হওয়ার জন্য নয়; এটা একটা জমজমাট মার্কেটপ্লেসও!
সুবিধা:
হিউজ অডিয়েন্স বেস:
আগেই বলেছি ফেসবুক হল, অসংখ্য অডিয়েন্স এর একটা সোশ্যাল গ্যাদারিং। মান্থলি একটিভ মেম্বারই এখানে ২.৮ বিলিয়নের ওপরে। আর এর অর্ধেক বেশি সংখ্যক ইউজার ই ফেসবুক থেকে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে। তাই, ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধিতে F-commerce এর এর ইউজ অনেক বেশি ইফেক্টিভ।
সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশন:
ফেসবুক শুধু অডিয়েন্স গ্যাদার করে না। বরং এই অডিয়েন্স এর কন্সিটেন্সি বজায় রাখার জন্য অসংখ্য ডাটা এনালাইসিস ও Interactive টুলস ব্যবহার করে। ডাটা ড্রাইভেন ডিসিশন ও মাইক্রো ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে অনেক বেশি পার্সোনালাইজড ডাটা তৈরি করে।
ফলে কার সাথে কিভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে হবে, কিভাবে রেগুলারলি এনগেজড থাকা যাবে এই বিষয়ে গুলো ফেসবুক নিজেই মনিটর করে। তাই সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশন বাড়িয়ে ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধিতে F-commerce বলতে গেলে একটা ব্লেসিং৷
অসুবিধা:
লিমিটেড কাস্টমাইজেশন:
যেহেতু এটা একটা অফলাইন স্টোর নয়, সম্পূর্ণ স্টোর টি সুন্দর ভাবে কাস্টমাইজ করার অপশন থাকবে না। অর্থাৎ কিছু লিমিটেড ও সেইম প্যাটার্নেই সবাইকে স্টোর করতে হবে।
প্লাটফর্ম পলিসি ইস্যু:
আপনি চাইলেও আপনার মন মত মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করতে পারবেন না। অবশ্যই ফেসবুকের টার্মস এবং কন্ডিশন ফলো করতে হবে। এক সাথে অনেক বেশি ইন্টারঅ্যাকশনের ক্ষেত্রে ফেসবুকের অনেক রুলস এবং লিমিটেশন রয়েছে।
E-commerce বা ইলেক্ট্রনিক কমার্স :
অনলাইন কেনাকাটার শুরুটাই হয়েছে ই-কমার্স এর হাত ধরে। যখন থেকে ইন্টারনেট মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে, তখন থেকেই ই-কমার্স এর বিস্তৃতি শুরু।
ই-কমার্স হল অনলাইনে কেনাকাটার মত। ২০২২ সালে, এর পরিধী ছিল – বিশ্বব্যাপী ৪.২ ট্রিলিয়ন! ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ অনলাইনে জিনিস কিনেছে এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি আরো বাড়বে।
৭৩% ফোন ব্যবহার করে মোবাইলে কেনাকাটা শুরু হয়েছে৷ অ্যামাজন এর ই ৩৮৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রয় ছিল। কল্পনা করুন: লাস্ট ৬ বছরে ১০ টির মধ্যে ৪ টি কেনাকাটাই অনলাইনে ছিল।
সুবিধা:
ফ্লেক্সিবিলিটি ও কাস্টমাইজেশন :
অনলাইন স্টোর হওয়া স্বত্বেও আপনি হাজার হাজার ডিজাইনে স্টোর কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এর ম্যানেজমেন্ট ও মনিটরিং এও থাকে ফ্লেক্সিবিলিটি। অর্থাৎ, একটি অনলাইন স্টোর কে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রেজেন্ট করার জন্য ই-কমার্স প্লাটফর্ম এ আছে অসংখ্য অপশন।
ব্র্যান্ড কন্ট্রোল :
ই-কমার্স এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বেনিফিট হল, এখানে আপনার ওয়েবসাইট এ আপনিই বস। অর্থাৎ এখানের রুলস, রেগুলেশনের সব দায়িত্ব, ডিসিশন আপনার নিজের। তাই আপনি আপনার পছন্দমত মার্কেটিং মেথড এপ্লাই করতে পারবেন।
অসুবিধা:
ট্রাস্ট বিল্ডিং :
বর্তমানে কাস্টমার কে ক্রেডিবিলিটি দিতে সবচেয়ে ইফেক্টিভলি কাজ করে সোশ্যাল রিকগনিশন। আর শুধুমাত্র একটি ই-কমার্স প্লাটফর্ম বিল্ড করে রাখলে এর রিলায়েবলিটি প্রুভ করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।
মার্কেটিং চ্যালেঞ্জ:
মার্কেটিং ছাড়া হিউজ রেসপন্স আসা করা বৃথা। আপনি অবশ্যই ভাল কনটেন্ট দিয়ে ওয়েবসাইট এ ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু এই ট্রাফিক কে কাস্টমারে রুপান্তরিত করতে যে মার্কেটিং প্রয়োজন তা শুধুমাত্র ই কমার্স প্লাটফর্ম দিয়ে পসিবল না।
স্ট্যাটিসিক্যাল ডাটা:
মেট্রিক্স | F- commerce | E-commerce |
ইউজার বেজ | ২.৮ বিলিয়ন মান্থলি একটিভ ইউজার | প্লাটফর্মের ওপর ডিপেন্ডেবল। টোটাল ৪.২ ট্রিলিয়ন |
কাস্টমাইজেশন অপশন | লিমিটেড | অসংখ্য অপশন |
সোশ্যাল ইন্টিগ্রেশন | কন্টিনিউয়াস ইন্টারঅ্যাকশন | ডিসকন্টিনিউয়াস |
ব্র্যান্ড কন্ট্রোল | প্লাটফর্ম পলিসি তে সীমাবদ্ধ | ব্র্যান্ডের ওপর নিজস্ব কন্ট্রোল |
ট্রাস্ট বিল্ডিং | সোশ্যাল ভ্যালিডেশন | লিমিটেড সোশ্যাল ভ্যালিডেশন |
মার্কেটিং ইফোর্ট | সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং | ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ট্র্যাটেজি |
ডিসিশন এনালাইসিস:
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে দুটি প্লাটফর্ম এর ই নিজস্ব সুবিধা অসুবিধা আছে। কারণ, এদের ইফেক্টিভনেস একেক সেক্টরে একেক রকম।
অর্থাৎ, আপনি যদি দ্রুত একটা ম্যাসিভ অডিয়েন্স চান, অনেক বেশি রিচ চান তাহলে আপনার জন্য বেস্ট ডিসিশন F-commerce।
আর আপনি যদি একটি কাস্টোমাইজ, বেশি অর্গানাইজড ও স্ট্যাবল স্টোর করতে চান তাহলে আপনার জন্য বেস্ট ডিসিশন E-commerce।
অর্থাৎ, আপনার বিজনেস গোল এর ওপর ডিপেন্ড করে, আপনি আপনার ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধি করতে কোন প্লাটফর্ম টি বেছে নিবেন।
পরিশেষে,
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স দুটি প্লাটফর্ম ই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গোল ও অডিয়েন্স এর চাহিদা অনুযায়ী ডিসাইড করতে হবে আপনার ব্র্যান্ড রেপুটেশন বৃদ্ধি করতে আপনি কোনটি বেছে নিবেন৷ তবে, এই বিতর্কের সবচেয়ে ইফেক্টিব সমাধান হচ্ছে F-commerce ও E-commerce এর একটি ব্রীজ তৈরী করা।
অর্থাৎ, আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকলেও আপনি চেষ্টা করুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেটেড থাকার ও এনগেজমেন্ট বাড়ানোর। অন্যদিকে একজন এফ- কমার্স ব্যবসায়ী হলেও চেষ্টা করুন ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি একটি স্ট্যাবল ই-কমার্স ওয়েবসাইট রাখার। যাতে আপনার বিজনেস আরো বেশি প্রফেশনালি রিপ্রেজেন্ট হয়।