প্রায় ৪৭ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই আছে যারা একটা সময় অনলাইন বাস ট্র্যাকিং অথবা অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে অবগত ছিল। অনির্ধারিত বাস, দীর্ঘ সারি ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা এবং লাইন ধরে বাসের টিকেট কাটা এবং আরও রয়েছে নিয়মিত লড়াই। যেহেতু যাতায়াত আমাদের জীবন এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের এবং বাস অপারেটরদের উভয়ের মুখোমুখি হতে হয় এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যার আসলে কোন সমাধান হচ্ছেনা।
ঠিক এই বিষয়গুলোকে মাথায় নিয়ে সকল সমস্যার সমধানের চেষ্টা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশী অনলাইন ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যাটফর্ম ‘যাত্রী’। যেহেতু জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হলে যাতায়াত এর মানও উন্নত করতে হবে এবং যাতায়াতকে করতে হবে খুবই সহজ ও ঝামেলামুক্ত। তাই ডিজিটাল সল্যুশন ব্যবহার করে যাতায়াতকে খুব সহজ এবং উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি। আজকে আমরা কথা বলব মাস ট্রান্সপোর্টেশন অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম যাত্রী সম্পর্কে।
যাত্রীর সার্ভিস
যাতায়াত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন আমরা যেই সমস্যাগুলো ফেস করতে থাকি তা সমাধান করাই ছিল আমাদের জন্য অনেক বড়ো একটি চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ সালে এই জটিল সমস্যাগুলো কাজ শুরু করেন আজিজ আরমান। যিনি বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির ফাউন্ডার এবং চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘যাত্রী’ (Jatri) বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন বাস ট্র্যাকিং এবং টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম।
বর্তমানে তারা তাদের প্ল্যাটফর্ম এর মধ্যে অনলাইন বাস ট্র্যাকিং সার্ভিস, রাইড সুবিধা নেয়ার জন্যে কোচ সার্ভিস, অনলাইন টিকিটিং সার্ভিস এবং রেন্টাল সার্ভিস সুবিধা দিয়ে আসছে।
কোনো রাইড সুবিধা নেয়ার পর বাস ট্র্যাকিং সার্ভিস থেকে আপনি জানতে পারবেন আপনার বাসটি এখন কোথায় আছে অথবা কতক্ষন সময় লাগবে পৌঁছাতে। এই ক্ষেত্রে যেমন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আর অপেক্ষা করতে হবেনা আবার অন্যদিকে খুব সহজে আপনি নির্দিষ্ট টাইম মত এসে বাস পেয়ে যাবেন।
এছাড়াও এই প্ল্যাটফর্মটির থাকছে অনলাইন টিকেটিং এর সুবিধা। আপনি যে কোন জায়গা থেকে সেফলি (নিরাপদে) আপনার টিকেট কনফার্ম করতে পারবেন ঘরে বসেই তাদের অ্যাপস এর মাদ্ধমে। এছাড়াও আপনার পছন্দমতো বাস সিলেক্ট করার সাথে সাথে আপনি জানতে পারবেন ওই বাসে কয়টা সিট এভেইলেবল আছে যার মাদ্ধমে আপনি কন্ফার্ম হয়ে টিকেট ইস্যু করতে পারবেন।
এছাড়াও বর্তমানে তাদের রেন্টাল সার্ভিসটিও অনেক বেশি পপুলার। তার মাধ্যমে আপনার পছন্দ মত প্রয়োজনীয় গাড়ি আপনি রেন্ট করার সুবিধা পাবেন। বর্তমানে সিডান কার, মিনি মাইক্রোবাস, মাইক্রোবাস, মিনিবাস রেন্ট করার সুবিধা পাচ্ছেন তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস এর মাধ্যমে।
এছাড়াও আপনার ট্রিপ প্ল্যান করার সুবিধা, ট্রিপ হিস্ট্রি চেক করা, মান্থলি, উইকলি সাবক্রিপশন সুবিধাসহ বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে আসছে এই ডিজিটাল ট্রান্সপোরটেশন প্ল্যাটফর্মটি। বাস কোম্পানিগুলোর জন্য, বাসের অবস্থান, যাত্রীসংখ্যার ডেটা এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে পর্যালোচনা প্রতিটি বাসের যাত্রা মসৃণ এবং নির্বিঘ্নে নিশ্চিত করার জন্য ক্রমাগত তথ্য সংগ্রহ করে আসছে প্ল্যাটফর্মটি। এই অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম এর কাছে বিভিন্ন বাস কোম্পানিগুলোর ডাটা থাকার কারণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সুদক্ষতার সাথে অনলাইন টিকিটিং সার্ভিস দিয়ে আসছে এই প্ল্যাটফর্মটি।
যাত্রীর শুরুর দিকের গল্প
স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করার পূর্বে আজিজ আরমান একটি ফ্যাশন-টেক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। তার সপ্ন ছিল তিনি একজন উদ্যোক্তা হবেন। কিন্তু তিনি কনফিউজড্ ছিলেন কোন সেগমেন্ট অথবা কোন সেক্টরে উদ্যোগ নিবেন।
তার গ্রাজুয়েশন চলাকালীন সময়ে তার কিছু রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে। যেগুলো টেকনলোজিকাল অনেকে উন্নত। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেখানে বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ করবেন কারণ যে কোনো আইডিয়া ডেভেলপমেন্ট করতে গেলে প্রয়োজন ফান্ড।
একটি উক্তি আছে বিজনেস আইডিয়া খুঁজে পাওয়া যায়না সেটা পাওয়া যায় আমাদের জীবনের সমস্যা গুলো সমাধানের মাধ্যমে। ঠিক সেরকমই আজিজ আরমান প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিইয়ে রিয়ালাইজ করলেন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার সময় মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। যেমন অসঙ্গতিপূর্ণ সময়সূচী, অর্থ প্রদানের অসুবিধা, প্রতিনিয়ত রুটগুলো পরিবর্তিত হওয়া। এই সমস্যাগুলো সমাধানের খুঁজতে গিয়ে তিনি তার পার্টনার, খন্দকার তাসওয়ার জাহিন, জিয়া ইউ আহমেদের সাথে সম্ভাব্য ধারণাগুলি অনুসন্ধান করা শুরু করে। মাসজুড়ে আলোচনার পর, তারা যাতায়াতকে চাপমুক্ত করার একটি পরিকল্পনায় স্থির করেছিলেন।
স্টার্টআপ হিসেবে যাত্রা শুরু করার সময় যাত্রী এবং পরিবহন অপারেটর প্রত্যেককে বুঝাতে হয়েছিল এটি কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে তাদের জীবন ও ব্যবসা উন্নত করতে পারে। বাস কোম্পানিগুলোর সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরার সময় অনেকে বুঝেছে আবার অনেকে প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেনি যে এই অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম কিভাবে তাদের সার্ভিসকে সাপোর্ট দিবে। এটি প্ল্যাটফর্মটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তারা এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।
২০১৯ সালে যাত্রীর যাত্রা শুরু করেছিল দুটি বাস নিয়ে। যা শুধুমাত্র একটি রুট অতিক্রম করত। এক বছর এর কম সময়ের মধ্যে বাস সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ টিরও বেশি এবং তাদের রয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি ইউজার যারা এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি টিকেটিং সার্ভিস এর মাধ্যমে রাইড সুবিধা নিয়েছে। বর্তমানে ঢাকার বনানীতে কর্পোরেট অফিস পরিচালনার পাশাপাশি লিঙ্কডিনে দেয়া তথ্য অনুসারে ৪০ জন এর উপর টীম মেম্বার নিয়ে কাজ করছে এই অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম।
ফান্ডিং
রিসেন্টলি যাত্রী প্রথমবারের মতো তাদের ফান্ডিং কালেক্ট করেছে। গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ওয়েভমেকার পার্টনার্সের নেতৃত্বে একটি সীড রাউন্ডে ১.২ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট প্লানার এবং মাস ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যাটফর্মটি। তাদের মোস্ট রিসেন্ট ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার হলেন Brain-Too-Free Ventures and Reflect Ventures.
যাত্রী চায় ভবিষ্যতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মান উন্নত করতে। দীর্ঘমেয়াদে যানজট কমাতে এবং প্রত্যেকের জীবনের এই অবিচ্ছেদ্য অংশ যাতায়াতকে ঝামেলা মুক্ত এবং সহজ করার পাশাপাশি এই অনলাইন বাস ট্র্যাকিং এবং টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম তাদের সার্ভিসটি পুরো এশিয়াতে এক্সপ্যান্ড করার মাধ্যমে এশিয়ার একটি লিডিং বাস হেলিং অ্যাপ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আশা রাখে যাত্রী।
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।