ই-কমার্স ২০২৩ বিগত বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হওয়ার সাথে সাথে ই-কমার্সের প্রসারও অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমরা খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছি।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, শুধুমাত্র ২০২০ সালে, সমগ্র বিশ্বের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে বিক্রয় $৪.২ ট্রিলিয়ন অতিক্রম করেছে এবং অর্থনীতিবিদদের সাম্প্রতিক অনুমানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এই সংখ্যাটি উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে।
ই-কমার্সের সদা পরিবর্তনশীল ল্যান্ডস্কেপ বোঝার জন্য, বিশ্ববাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।
বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক চিত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আমরা অনলাইন শপিংয়ে ব্যাপক বৃদ্ধি আশা করতে পারি।
সেই সাথে খুচরা বিক্রেতারাও ব্যাবসায়িক সাফল্যের জন্য আগামী বছরগুলিতে, এই ব্যতিক্রমী গ্রাহক অভিজ্ঞতা সরবরাহ করবে বলে আশা করা যায়।
যাই হোক, আজকে আমরা জানবো কেমন হবে ই-কমার্স ২০২৩ সালের অবস্থা? এবং সেরা ৮টি ট্রেন্ড সম্পর্কে।
২০২৩ সালে ই-কমার্স মার্কেটিং এর সেরা ৮টি ট্রেন্ড
১। অগমেন্টেড রিয়েলিটির দ্বারা গ্রাহক পরিসর বৃদ্ধি
ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেগুলো ক্রমাগত গ্রাহকসেবা বাড়ানোর জন্য নিত্যনতুন উপায় সন্ধান করছে।
এই উন্নত ও বৃহত্তর গ্রাহকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে, অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) ব্যবহার ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে ।
এই প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের ফলে গ্রাহকদের ভার্চুয়াল পরিবেশে বিভিন্ন পণ্য পর্যালোচনা করে পছন্দসই পন্য বেছে নিতে এবং অল্প সময়ে নির্বিঘ্নে লেনদেন করতে সাহায্য করছে।
শুধু তাই নয়, ‘এআর’ এর ব্যবহার বর্তমানে অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের মাধ্যমে কেনাকাটার অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ দিচ্ছে।
২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে উন্নত গ্রাহকসেবা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিংয়ের ব্যবহার ২০২৩ সালে, ই-কমার্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে।
এআই এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি ব্যক্তিগত সুপারিশ এবং অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য গ্রাহকডেটা এবং আচরণ বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রাহকদের পছন্দ, অতীত কেনাকাটার ইতিহাস এবং ব্রাউজিং আচরণ বোঝার মাধ্যমে, আরও প্রাসঙ্গিক এবং উন্নত পণ্যের বিজ্ঞাপন সরবরাহ করতে পারে।
ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহকদের সন্তুষ্টি এবং রিভিউ প্রাপ্তির সুযোগও উন্নত হচ্ছে।
আগামী বছরগুলিতে আমরা ই-কমার্সে এআই এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির আরও উন্নত ও কৌশলগত প্রয়োগ দেখতে পাবো বলে আশা করতে পারি।
৩. মোবাইল এবং সামাজিক বাণিজ্যের উপর ক্রমবর্ধমান জোর
২০২৩ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ই-কমার্স কৌশল হিসাবে মোবাইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেশ আশা ব্যাঞ্জক।
স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির প্রসারের ফলে, ভোক্তারা কেনাকাটা করতে এবং ব্র্যান্ডগুলির সাথে আরও বেশি পরিচিত হওয়ার জন্য তাদের মোবাইল ডিভাইসগুলি ব্যবহার করছেন।
মোবাইল ডিভাইসগুলি আরও বেশি সর্বজনীন হয়ে ওঠার সাথে সাথে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি বিকশিত হতে থাকবে বলে আশা করা যায়।
এর ফলে ব্র্যান্ডগুলি একটি নির্বিঘ্ন এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে ই-কমার্স ল্যান্ডস্কেপে আরও বেশি সাফল্য দেখতে পাবে।
৪. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর উত্থান
বর্তমানে ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে তাদের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে।
এছাড়া, বিভিন্ন স্পনসরড পোস্ট এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কন্টেন্ট মনিটাইজ করতে পারে।
এর মাধ্যমে ভোক্তারা যেমন উপকৃত হচ্ছে, সেই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বেকারদের কর্মক্ষেত্রের নিত্য নতুন দরজা খুলছে দেশের ই কমার্সে সেক্টরকে সমৃদ্ধ করছে।
৫. লাইভ শপিং এর উত্থান
লাইভ শপিং এর উত্থান ও প্রসারকে ২০২৩ সালে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ই-কমার্স ট্রেন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
লাইভ শপিং ই-কমার্সের একটি ইন্টারেক্টিভ ফর্ম যার মাধ্যমে গ্রাহকরা পণ্যগুলো সরাসরি দেখতে পারে, সেই পণ্যের সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্ন করতে এবং রিয়েল-টাইমে পণ্য ক্রয় করতে পারে।
বিগত বছর গুলোতে করোনা মহামারির সময় ভোক্তারা তাদের প্রয়োজনের জন্য অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন এবং তখন থেকেই লাইভ স্ট্রিমের ব্যবহার ত্বরান্বিত হয়েছে।
বাস্তবিক পক্ষে, লাইভ শপিং কেনাকাটার একটি অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা ব্যবসায়িক স্টোরগুলির ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি এবং ব্যস্ততার সাথে অনলাইন কেনাকাটার সুবিধাকে বাস্তবায়ন করে।
গবেষণা বলে, যে লাইভ শপিং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্র্যান্ডগুলির উন্নত ও অব্যাহত কৌশল দেশের ই-কমার্স বিজনেসকে আরও বেশি ফলপ্রসূ করবে।
৬. সাইবার সিকিউরিটির ওপর বেশি মনোযোগ
অনলাইনে লেনদেন বৃদ্ধির সাথে সাথে, ডেটা লঙ্ঘন, পরিচয় চুরি এবং অন্যান্য সাইবার ক্রাইমের ঝুঁকিও বাড়ছে।
২০২৩সালে, আমরা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের অধিকার সমানভাবে রক্ষা করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলিতে আরও বেশি ফোকাস আশা করতে পারি।
এর মধ্যে বায়োমেট্রিক্সের মতো আরও উন্নত পদ্ধতির পাশাপাশি এনক্রিপশন এবং নিরাপদ যোগাযোগ প্রোটোকলগুলির বর্ধিত ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
পরিশেষে আশা করছি, সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ এবং তাদের প্রভাব হ্রাস করতে ব্যবসায়ি এবং ভোক্তা উভয়ের জন্য সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ করা হবে।
সেইসাথে ই-কমার্সের প্রতি আস্থা তৈরি এবং এর অব্যাহত বৃদ্ধি ও সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য সাইবার সিকিউরিটির উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৭। অধিক ইকো-ফ্রেন্ডলি অপশন
বর্তমানে কাস্টমাররা তাদের পণ্য ক্রয় নিয়ে বেশ সচেতন। তারা ভালো প্যাকেজিং চায়, পণ্যের মান ভালো চায়। এক্ষেত্রে অনেক কাস্টমার টাকার ব্যাপারে চিন্তা করেনা। তারা অধিক টাকার বিনিময়ে ভালো পণ্য পেতে চায়।
তাই ই-কমার্স অধিক ইকো-ফ্রেন্ডলি অপশন প্রদান করতে হবে যেমন টেকসই প্যাকেজিং, কার্বন অফসেট, এবং পরিবেশ বান্ধব পণ্য।
৮। উন্নত ব্লকচেইন টেকনোলোজি
আমরা প্রায় সবাই ব্লকচেইন টেকনোলোজি সম্পর্কে জানি!
ই-কমার্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্লকচেইন টেকনোলোজির অবদান রাখছে এবং ভবিষ্যতে আরও অধিক রাখবে।
উদাহরণস্বরুপ, চেইন ট্রান্সপেরেন্সি উন্নত করতে, জালিয়াতি হ্রাস করতে, এবং এবং অনলাইন লেনদেনে বিশ্বাস ও আস্থা বাড়াতে ব্লকচেইন টেকনোলোজি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে ব্লকচেইন টেকনোলোজি দ্বারা আরো কিছু চমৎকার ব্যবহার হচ্ছে, নিরাপদ পেমেন্ট প্রক্রিয়া, ডিজিটাল আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন, এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট।
উপসংহার
২০২৩ সালে এবং আগত বছরগুলোতে ই-কমার্স বিশ্বে আমরা কী কী পরিবর্তন পেতে পারি, উপরের ট্রেন্ড গুলোর মাধ্যমে আমরা বেশ ভালো একটি ধারনা পেয়েছি।
এই ট্রেন্ডগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন ভবিষ্যৎ প্রতিযোগীদের সাথে লড়াই করে টীকে থাকার জন্য আপনার বিজনেসে কোথায় কোথায় পরিবর্তন করতে হবে, কোনো ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় যেতে হবে ইত্যাদি।