২০২৪ সালে প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর মার্কেট সাইজ কত বড় হবে?

প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড (POD) ইন্ডাস্ট্রি সাম্প্রতিক বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে গ্রো করেছে। সাক্ষী হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাইলফলকের। রিসেন্ট কিছু  পরিসংখ্যানগত তথ্য অনুসারে, গ্লোবাল প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড মার্কেট সাইজ ২০২২ সাল থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে একটা পাওয়ারফুল ট্রান্সফরমেশন এর মধ্যে দিয়ে যাবে। আমরা ইতিমধ্যে এর বাস্তবায়নও দেখেছি। 

কাস্টমারের পছন্দের বিকাশ, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের উত্থান এবং পার্সোনালাইজড পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য পিওভি এর ওয়েভ এতটা ম্যাসিভ আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া প্রযুক্তির অগ্রগতি চলতে থাকায়, POD ব্যবসা বিভিন্ন ধরনের সেক্টরকে পুঁজি করার জন্য শক্ত অবস্থান করেছে, কম্পিটিটিভ এবং গতিশীল বাজারে এগিয়ে চলছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই এর মার্কেট সাইজ ১০ বিলিয়ন কে ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রেডিক্ট করা হচ্ছে এই সংখ্যা আরো কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে। প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস এর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ মার্কেট সাইজ এর সম্ভাবনা গুলোই এক্সপ্লেইন করবো। 

প্রিন্ট অন ডিমান্ড: প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস ও অপর্চুনিটি :

প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস এর চাহিদা ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটা ব্রিফ ধারণা দিলেই এই সেক্টরের অসংখ্য অপর্চুনিটি গুলো প্রেডিক্ট করতে পারবেন। 

কী- স্ট্যাটিসটিক্স- 

• ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে পিওডি বিজনেস এর রিচ।
• ২০ শতাংশের ওপরে অনলাইন কাস্টমার রা কাস্টমাইজড প্রোডাক্ট কিনেছে POD বিজনেস থেকে ।
• পিওডি বিজনেস বেইজড ই-কমার্স প্লাটফর্ম গুলোর মার্কেট সাইজ ইতোমধ্যে ১৫ % বৃদ্ধি পেয়েছে। 
• জনপ্রিয় POD প্লাটফর্ম যেমন, Printful, Printify এর বার্ষিক রেভিনিউ ২০২২- ২০২৩ সালে, ত্রিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পিওডি বিজনেস অপর্চুনিটিস :

১. ই-কমার্স ইন্টিগ্রেশন:

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের সাথে POD-এর কম্বিনেশন ও পার্টনারশিপ ব্যবসা গুলোকে হিউজ রেঞ্জ এর পার্সোনালাইজড প্রোডাক্ট  অফার করার অপর্চুনিটি দেয়। এছাড়া অনন্য এবং কাস্টমাইজড আইটেমের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পিওডি বিজনেস ও ই-কমার্সের ইন্টিগ্রেশন একটা স্মার্ট চয়েস।  

২. অল্প বিনিয়োগে বিজনেস স্টার্ট অপর্চুনিটি :

POD ইনভেন্টরিতে বড় আর অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটা মূলত স্টার্টআপ এবং ছোট ব্যবসার জন্য একটা আকর্ষণীয় অপশন বলা চলে। কারণ, প্রিন্ট অন ডিমান্ড মানেই, ডিমান্ড ও অর্ডার আসার পর প্রোডাক্ট কাস্টমাইজড করা। তাই এখানে ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট অনেক কম। আর লস হওয়ার সম্ভাবনাও অন্যান্য হাই ক্যাপিটাল বিজনেস এর থেকে কম। 

৩.গ্লোবাল রিচ:

POD কিন্তু ব্র্যান্ড গুলোকে আন্তর্জাতিক শিপিং এবং স্টোরেজ খরচের চ্যালেঞ্জ ছাড়াই বিশ্বব্যাপী অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে৷ এটা  অনেক ক্ষুদ্র ও বিগনার সেলারের জন্য বাজারে এন্ট্রি করার ও গ্লোবাল রিচ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। 

৪. পার্সোনালাইজেশনের জন্য ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা:

ভোক্তারা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পার্সোনালাইজড পণ্যের সন্ধান করে। এবং POD কিন্তু পোশাক থেকে শুরু করে বাড়ির সাজসজ্জা পর্যন্ত কাস্টমাইজ যোগ্য আইটেমগুলির একটি বিশাল অ্যারের মাধ্যমে তাদর এই চাহিদা পূরণ করে।

৫. প্রযুক্তিগত অগ্রগতি:

প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, যেমন ডিজিটাল প্রিন্টিং এবং ডাইরেক্ট-টু-গার্মেন্ট প্রিন্টিং, POD-এর গুণমান এবং গতিকে উন্নত করেছ। কাস্টমার কর্তৃক এর ব্যাপক অ্যাডাপটেশন এ অবদান রেখেছে।

প্রিন্ট অন ডিমান্ড সাকসেস সিক্রেট :

কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী পিওডি বিজনেস এ আছে অসংখ্য অপর্চুনিটি। এই বিজনেস এখন গ্রো করছে দুর্দান্ত স্পিডে। একজন উদ্দোক্তা বা বিগিনার হিসেবে এই ফাস্ট গ্রোয়িং বিজনেস এ কিভাবে সাকসেস পাবেন? কিংবা যারা অলরেডি পাওয়ারফুল বিজনেস রান করেছে তাদের কৌশল গুলো কি ছিল? মূলত, POD বিজনেসে সফল হবার জন্য প্রয়োজন কিছু সিস্টেমিক স্ট্র্যাটেজি- 

১. নিশ নির্বাচন:

প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট নিশ বা টার্গেটেড দর্শক সনাক্ত করুন। এটা আসলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট বাজারের সাথে আপনার পণ্যগুলিকে এনলিস্ট সাহায্য করবে। আপনার ব্যবসাকে একটি নির্দিষ্ট কাস্টমার বেসের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

২. কোয়ালিটি প্রোডাক্ট:

চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, নিশ্চিত করুন যে আপনার পণ্যের মান ধারাবাহিকভাবে হাই কোয়ালিটি থাকে। কারণ ব্যবসায় গুন মান, কনসিস্টেন্সি  এবং ইতিবাচক ফিডব্যাকের জন্য গ্রাহক সন্তুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. কার্যকর মার্কেটিং: 

আপনার পণ্যের প্রচারের জন্য একটি শক্তিশালী মার্কেট কৌশল এপ্লাই করুন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইনফ্লুয়েন্সার পার্টনারশিপ এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন গুলোর  ভিজিবিলিটি বাড়াতে এবং সেলস ড্রাইভ ও মার্কেট সাইজ ডেভেলপ করতে সাহায্য করতে পারে।

৪. ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট:

একটি ইজি নেভিগেট এবং ভিজিবিলি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করুন। কারণ, জিরো ইন্টারফেয়ারেন্স অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতা কাস্টমার কে উল্লেখযোগ্যভাবে স্যাটিসফাই করে এবং তাদের কনসিসটেন্সি ধরে রাখতে পারে।  

৫. কাস্টমার সার্ভিস:

খুব দ্রুত পরিচিত ও রিলায়েবলিটি পেতে এক্সিলেন্ট কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইড করুন। দ্রুত তাদের সমস্যা গুলোর সমাধান করুন, কমেন্ট ও মেসেজ এর ফাস্ট রিপ্লাই করুন। এবং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে একটি ইতিবাচক ইন্টারঅ্যাকশন নিশ্চিত করুন৷

২০২৪ সালে পিওডি বিজনেসের প্রেডিক্টেড মার্কেট সাইজ ও ভবিষ্যৎ:

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের অবিশ্বাস্য বৃদ্ধি সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগায় যে, ২০২৪ এ প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের মার্কেট সাইজ কেমন হব? এবং আসন্ন বছর গুলোতেও কি এই বিজনেস লাভজনক হবে? অথবা, এর আকাশচুম্বী চাহিদা কি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে? 

আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ২০২২ সালে প্রিন্ট অন ডিমান্ড মার্কেট সাইজ গবেষণা অনুসারে, এই শিল্পের বৈশ্বিক বাজারের মূল্য ছিল ৬.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর প্রেডিক্ট করা হচ্ছে যে ২০২৩ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত, এই বাজারটি ২৫.৮ % এর CAGR এচ্যিভ করবে। 

আমেরিকার মার্কেট রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও সংশ্লিষ্ট মার্কেট এক্সপার্টদের মতে ২০২৪ সালে এর মার্কেট সাইজ ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

পরিশেষে, প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস কিন্তু শুরু থেকেই সাকসেসফুল ইন্ডাস্ট্রি ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডাউনফলের সম্মুখীন হয়েছে। বৈশ্বিক অবস্থা, কখনও প্যানডেমিক ও চাহিদা ও ট্রেন্ডের পরিবর্তনের কারণে পূর্বও ১৫-২৫ ভাগ রেভিনিউ লসের সাক্ষী হয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রি। 

তবে, সৌভাগ্যক্রমে পিওড বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি তাদের এর ডাউনফল ইতোমধ্যে ওভারকাম করেছ এবং অনেক ফাস্ট গ্রো করছে। এজন্য, প্রিন্ট অন ডিমান্ডের মার্কেট সাইজ ইতিবাচক ভাবে বাড়বে বলেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও মার্কেট রিসার্চাররা আশাবাদী। তাই, একজন পিওডি উদ্দোক্তা হিসবে কিংবা বিজনেস বিগিনার হিসেবে পিওডি বিজনেস এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে সন্দিহান থাকতে হবে না। পজিটিভ মোটিভ নিয়ে চালিয়ে যান আপনার পিওডি বিজনেস।