বর্তমান অনলাইন মার্কেটিং যুগে, কন্টেন্ট হচ্ছে রাজা। এর থেকেই বুঝা যায় কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব কতটুকু।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম এবং সেই সাথে অনলাইন কন্টেন্ট এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে, বিজনেস মালিকরা টার্গেট অডিয়েন্স আকর্ষণ করার জন্য এবং তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য হাই-কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরির গুরুত্ব বুঝতে পারছে।
এটি মডার্ন মার্কেটিং এর একটি প্রয়োজনীয় অংশ এবং বিজনেসে ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি, ট্রাফিক ড্রাইভ, এবং সেল বৃদ্ধি করার জন্য একটি পাওয়ারফুল টুল হতে পারে।
চলুন তাহলে জেনে আসি কন্টেন্ট মার্কেটিং আসলে কী? এবং বিজনেসের ক্ষেত্রে কন্টেন্ট মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ!
কন্টেন্ট মার্কেটিং কী?
কল্পনা করুন আপনি এবং আপনার ফ্রেন্ড একটি কফি শপে বসে আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড সম্পর্কে আলোচনা করছেন।
প্রথমে সেই ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে আপনার মনে কি আসে? তাদের নজরকাড়া লোগো, নাকি আকর্ষণীয় জিঙ্গেল, নাকি তাদের মজার বিজ্ঞাপন?
এই এলিমেন্ট গুলো আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেও, প্রকৃতপক্ষে একটি ব্যবসা নামি-দামী ব্র্যান্ডে পরিণত হতে হলে তাদের প্রয়োজন উন্নত মানের স্টোরি টেলিং এর ক্ষমতা।
আর এখানেই আসে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর বিষয়। কনটেন্ট মার্কেটিং স্টোরি টেলিং এর একটি আর্ট।
আর এই আর্ট- ভেলুয়্যাবল, প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্য পূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি এবং শেয়ার করার জন্য একটি কৌশল গত পদ্ধতি যা একজন অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করে ধরে রাখে।
আর এভাবেই কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসাগুলোর প্রফিটেবল ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়। সত্যি বলতে এখানেই কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিহিত।
এখন চিন্তা করুনতো আপনার কোন ব্র্যান্ডটির কথা বেশি মনে আছে- ঐ ব্র্যান্ডটি যেটি কিনা শুধু বিজ্ঞাপনের দ্বারা আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল নাকি যে ব্র্যান্ডটি আপনার সাথে তথ্যপূর্ণ ও বিনোদনমূলক কন্টেন্ট শেয়ার করেছিল?
বিজনেসে কন্টেন্ট মার্কেটিং কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব
আজকের ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে কন্টেন্ট মার্কেটিং, যার দ্বারা অডিয়েন্সদের বিভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট করা হয় এবং এই ধারা বজায় রাখার কারণে ধীরে ধীরে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি বেরিয়ে আসছে।
দরকারী এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট প্রদানের মাধ্যমে, একটি বিজনেস কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিজেকে এগিয়ে নিতে পারে এবং তার অডিয়েন্সদের আস্থা অর্জন করতে পারে।
এবং এভাবে বিজনেসটি নিজের ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস, কাস্টমার লয়ালিটি ও বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারে।
নিম্নোক্ত অংশে আমরা ব্যবসায় কন্টেন্ট মার্কেটিং এর কিছু মূল সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
- ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি
মূল্যবান এবং তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করে ব্যবসাগুলো তাদের ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদেরকে লিডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
এভাবেই এই পদ্ধতিটি কাস্টমারদের আকৃষ্ট করে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বিক্রয় ও কাস্টমারদের লয়ালিটি বৃদ্ধি করে।
- লিড জেনারেট তৈরি
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসাগুলো তাদের টার্গেট অডিয়েন্সদের চাহিদা
এবং ইন্টারেস্ট অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করে লিড জেনারেট করতে পারে।
এর মধ্যে ব্লগ পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া আপডেটস, ভিডিও এবং অন্যান্য ধরনের কন্টেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা মূল্যবান তথ্য প্রদান করে এবং সম্ভাব্য কাস্টমারদের এংগেজ তথা জড়িত করে।
- সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং উন্নত করে
কনটেন্ট মার্কেটিং নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড এবং টাইটেলের জন্য অপ্টিমাইজ করা কনটেন্ট তৈরি করে ব্যবসাগুলোকে তাদের সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং উন্নত করতে সাহায্য করে।
এভাবে ব্যবসাগুলো সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজে উপরের দিকে জায়গা পায়, যার ফলে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বৃদ্ধি হয় এবং বেশি বেশি লিড জেনারেশনের সু্যোগ তৈরি হয়।
- বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা
হাই-কোয়ালিটির ও তথ্যপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি করে ব্যবসাগুলো নিজেদেরকে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং টার্গেট অডিয়েন্সদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে।
এর ফলে কাস্টমারদের লয়ালিটি বৃদ্ধি পাবে এবং বিক্রয় বাড়বে।
- প্রতিযোগিতামূলক অ্যাডভান্টেজ (সুবিধা) প্রদান করুন
কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্যবসাগুলিকে তাদের প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক অ্যাডভান্টেজ তথা সুবিধা প্রদান করতে পারে।
যেমন টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা ও ইন্টারেস্ট অনুযায়ী ইউনিক এবং হাই-কোয়ালিটির কন্টেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে ব্যবসাগুলো নিজেদের আলাদা করতে পারে এবং আরও কাস্টমার আকর্ষণ করতে পারে।
কীভাবে কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করতে হয়?
একটি কার্যকর কন্টেন্ট মার্কেটিং এর স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল তৈরি করার জন্য,
টার্গেটেড অডিয়েন্সদের বোঝা, স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং উন্নত মানের কনটেন্ট তৈরি ও ডিস্ট্রিবিউট করার পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর কাজটি দুর্বহ হতে পারে। তবে যদি কন্টেন্ট মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সঠিক পরিচালনাযোগ্য এবং টেকসই হয় তবে তা দুর্বহ মনে হবে না বরং এই কন্টেন্ট মার্কেটিং টিই হবে একটি সফল কন্টেন্ট মার্কেটিং।
যাইহোক, এমনকিছু টিপস রয়েছে যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের কন্টেন্ট মার্কেটিং প্রচেষ্টাকে অপ্টিমাইজ করে ব্যবসায় আরও ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে।
নিম্নোক্ত অংশে আমরা ব্যবসায় কন্টেন্ট মার্কেটিং এর কিছু মূল টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
- বেশি পরিমাণে কন্টেন্ট তৈরির চেয়ে কম পরিমাণে ভালো কোয়ালিটির কন্টেন্ট তৈরির দিকে ফোকাস করুন
আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের জন্য মূল্যবান এবং তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করা অতীব জরুরি।
আপনার কন্টেন্ট যেন আপনার প্রোডাকশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং নিম্ন-মানের কন্টেন্ট অনেক বেশি পরিমাণে তৈরির পরিবর্তে আপনার অডিয়েন্সদের পছন্দ এমন উচ্চ-মানের কন্টেন্ট পরিমাণে কম হলেও তা তৈরিতে ফোকাস করা উচিত।
কেননা, নিশ্চই কেউ জেনে বুঝে লো-কোয়ালিটির জিনিস পরিমাণে বেশি হলেও নিতে চাইবেনা।
- বিভিন্ন টাইপের কন্টেন্ট ব্যবহার করুন
বিভিন্ন লোক বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট পছন্দ করে, তাই সবার চাহিদা অনুযায়ী ব্লগ পোষ্ট, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক্স, পডকাস্ট এবং এরকম আরো অনেক কিছুর মতো বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
এই কৌশল আপনাকে আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে এবং আপনার কন্টেন্টকে সতেজ ও আকর্ষক রাখতে সাহায্য করে।
- একই কন্টেন্ট নতুন ভাবে উপস্থাপন করুন
কনটেন্ট পুনঃপ্রয়োগ করলে আপনি যখন আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাবেন তখন আপনার সময় এবং অর্থ দুইটাই বাঁচবে।
উদাহরণস্বরূপ আপনি একটি ব্লগ পোস্টকে ভিডিও অথবা পডকাস্টে পরিণত করে নতুন ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, এছাড়াও আপনার পূর্বের কন্টেন্টকে প্রোমোট করার জন্য নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তৈরি করতে পারেন।
- ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কোলাবোরেট (collaborate) করুন
আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে একজন ইনফ্লুয়েন্সারের পার্টনারশিপ তথা অংশীদারিত্ব
আপনাকে আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনে সাহায্য করবে।
সুতরাং ওই সকল ইনফ্লুয়েন্সারদের শণাক্ত করুন যারা আপনার ব্র্যান্ড মান ও টার্গেট অডিয়েন্সদের সাথে যুক্ত এবং কন্টেন্ট তৈরি করতে অথবা পূর্বের কন্টেন্ট প্রচার করতে তাদের সাথে কাজ করুন।
- আপনার স্ট্র্যাটেজি জানাতে ডেটা ব্যবহার করুন
সময়ের সাথে সাথে আপনার স্ট্র্যাটেজি অপ্টিমাইজ করার জন্য আপনার কন্টেন্ট মার্কেটিং প্রচেষ্টার কার্যক্ষমতা পরিমাপ করা অপরিহার্য।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক, এনগেজমেন্ট ও রূপান্তরের হারের মতো ম্যাট্রিক্সগুলো ট্র্যাক করতে গুগল অ্যানালেটিক্স এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালেটিক্সের মতো
টুলগুলো ব্যবহার করুন এরপর প্রয়োজন অনুসারে আপনার স্ট্র্যাটাজি অ্যাডজাস্ট করতে এই ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।
- এক্সপেরিমেন্ট এবং এর পুনরাবৃত্তি করুন
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর এক্সপেরিমেন্ট তথা পরীক্ষা এবং এর পুনরাবৃত্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আপনি নতুন টাইপের কন্টেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ট্রাই করতে পারেন, বিভিন্ন ম্যাসেজিং ফরম্যাট টেস্ট করতে পারেন এবং আপনার অডিয়েন্সরা কোনটি বেশি পছন্দ করে তা শণাক্ত করতে ডাটা ব্যবহার করতে পারেন।
বেস্ট আউটপুট পাওয়ার জন্য এই স্ট্রাটেজিটি ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি করবেন এবং
প্রয়োজন পড়লে স্ট্র্যাটাজিটি অপ্টিমাইজ করবেন।
উপসংহার
সব ধরণের এবং সাইজের বিজনেসের জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করার মতো নয়।
ভ্যালুয়েবল, ইনফরমেটিভ, এবং এনগেইজিং কন্টেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে একটি বিজনেস খুব সহজেই সফল একটি কন্টেন্ট মার্কেটিং রান করাতে পারে।
আর এভাবে সে বিজনেসটি টার্গেট অডিয়েন্স আকর্ষণ করতে পারে, ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে পারে, ট্রাফিক ড্রাইভ করতে পারে, এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেল বৃদ্ধি করতে পারে।