প্রায় কয়েক যুগ ধরেই ই-কমার্স বিজনেস বেশ রাজত্ব করছে, এবং সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ই-কমার্সে এসেছে নতুন নতুন পরিবর্তন, এড হয়েছে আরো বিভিন্ন বিজনেস সিস্টেম, ফিচার এবং ওয়ে। এফ কমার্স হলো ই-কমার্সের ই একটা পার্ট। Facebook ভিত্তিক বিজনেস কেই মূলত এফ কমার্স বলা হয়। এটা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর একটা পার্ট, যেখানে যে কেউ চাইলেই অল্প পুঁজি নিয়ে ঘরে বসেই শুরু করতে পারে। সেক্ষেত্রে শুধু দরকার হবে একটি ফেসবুক বিজনেস পেইজ এবং প্রোফাইল, আর আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দক্ষতা। তাহলে দেশের যেখানেই থাকুন না কেন যদি আপনার প্রোডাক্ট কাস্টমারের চাহিদানুযায়ী, ভ্যালিড প্রাইসে ডেলিভারি দিতে পারেন এবং কোয়ালিটি ভালো হয় তাহলে খুব কম সময়েই এফ কমার্স বিজনেস থেকে প্রফিট লাভ করতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে কিভাবে শুরু করবেন এফ কমার্স বিজনেস? এই পোস্টে থাকছে স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন। যেগুলি ফলো করে শুরু করে দিতে পারেন এফ কমার্স বিজনেস।
এফ কমার্স বিজনেস গাইডলাইন
ফেসবুক বিজনেস পেইজ
এফ কমার্স শুরু করতে হলে সর্বপ্রথম আপনার দরকার হবে একটা ফেসবুক বিজনেস পেইজ। ফেসবুকের আউটস্ট্যান্ডিং একটা ফিচার হলো এখানে আপনি একদম ফ্রি তে বিজনেস প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারেন এবং আপনার সেলিং প্রোডাক্ট দিয়ে অনলাইন স্টোর সেট-আপ করতে পারেন। এজন্য আপনার কোনো ধরনের পেমেন্ট গুনতে হবেনা।
পেইজে যতো বেশি ফলোয়ার্স থাকবে ততো বেশি চান্স থাকে বেশি অডিয়েন্সের কাছে প্রোডাক্ট মার্কেটিং রিচ করার। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় নিজের ফ্রেন্ডলিস্টের সবাই কে পেইজে ইনভাইট করুন এবং তাদের কেও তাদের ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করার জন্য বলুন। তারপর বিভিন্ন বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের মাধ্যমে আপনার পেইজ প্রমোট করিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও একটা প্রোডাক্ট পোস্ট কে ফোকাস করে পোস্ট করেও পেইজের ফলোয়ার্স বাড়াতে পারেন। মাত্র কয়েক ডলার খরচ করেই পোস্ট গুলি বুস্ট করে পেইজের রিচ বাড়াতে পারেন এবং সেল ও বাড়াতে পারেন।
পেইজ ডেকোরেশন
পেইজ ক্রিয়েট করা হলে কিছু ফলোয়ার্স হলে এইবার পেইজ ডেকোরেশন করার পালা। প্রথমেই আপনার পেইজ কি সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কিত সেটার একটা পোস্ট পিন করে রাখুন। প্রোডাক্টসের সাথে মিল রেখে পেইজের একটা ইউনিক নাম দিন, এবং ব্র্যান্ড লোগো, কভার ফটো এড করুন। কারণ, যেকোনো বিজনেসের জন্য একটা ইউনিক নেইম এবং ব্র্যান্ড লোগো অনেকটা ভূমিকা রাখে। অডিয়েন্স লোগো দেখে সহজেই আপনার প্রোডাক্ট এর কথা মনে করতে পারে এবং ইউনিকনেস থাকলে তারা আরো বেশি ইন্টারেস্টেড হয়। অনলাইন স্টোর বিল্ড করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক টা প্রোডাক্ট এর ডিটেইলস, বেনেফিট ডেসক্রিপশন বক্সে এড করুন। প্রোডাক্টসের আকর্ষণীয় ভিডিও, এবং হাই কোয়ালিটি পিকচার এড করুন। প্রোডাক্টসের প্রাইজ, কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটির উপর ভিত্তি করে প্রোডাক্ট সেগমেন্ট করুন।
প্রোডাক্ট কালেকশন এন্ড প্রাইস
অথেনটিক সোর্স থেকে প্রোডাক্ট কালেক্ট করার ট্রাই করুন। সেক্ষেত্রে অনেক রিসার্চ করে সিদ্ধান্ত নিন কোথা থেকে রিসনেবল প্রাইসে ভালো প্রোডাক্ট স্টক করতে পারবেন। এরপর যেহেতু আপনি ঘরে বসেই বিজনেস করতে পারছেন, সেক্ষেত্রে আপনার দোকান ভাড়া, ও এক্সট্রা খরচ গুলো সেইভ হচ্ছে, সুতরাং অপেক্ষাকৃত কম দামে এবং ডিসকাউন্ট প্রাইসে প্রোডাক্ট সেল করার ট্রাই করুন। এবং পন্যের কোয়ালিটি বজায় রাখুন, ব্র্যান্ডিং আকর্ষণীয় ভাবে করুন। বেশি লাভের আশায় নকল প্রোডাক্ট সেল করবেন না। কেননা এতে করে আপনি একবার লাভবান হবেন বাট লং-টার্ম বিজনেস এ ফেইল হতে টাইম লাগবেনা।
পেইজ ম্যানেজমেন্ট
এফ কমার্স এর ক্ষেত্রে পেইজ ম্যানেজমেন্ট এ গুরুত্ব দিতে হবে, এবং দক্ষতার সাথে পেইজ ম্যানেজ করতে হবে এবং ম্যাক্সিমাম টাইম এক্টিভ থাকা জরুরি। প্রয়োজনে একজন মডারেটর হায়ার করতে পারেন।
পেইজে যেকোনো প্রোডাক্ট পোস্ট করার পর কমেন্ট বক্সে এক্টিভ থাকুন৷ অডিয়েন্সের সকল প্রশ্নের ফাস্ট উত্তর দেয়ার ট্রাই করুন। কেউ কোনো প্রোডাক্ট সাজেশন চাইলে তার নিডস বুঝে তবেই সাজেশন দিন। প্রয়োজনে ইনবক্সে ডিটেইলস সেন্ড করুন। কেউ পেইজ ইনবক্স করলে সাথে সাথে তো আর রিপ্লাই দেওয়া পসিবল না সেক্ষেত্রে কাস্টমাইজড টেক্সট অটো রিপ্লাই সিস্টেম রাখুন। যাতে করে কেউ নক করলে সাথে সাথেই সে একটা টেক্সট পায় এন্ড পরবর্তীতে আপনি সেটা রিভিউ করতে পারেন।
কেউ যদি নেগেটিভ কমেন্ট বা রিভিউ শেয়ার করে তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বা কমেন্ট ডিলিট করার ও প্রয়োজন নেই। ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, এবং পজিটিভ ওয়েতে বুঝিয়ে রিপ্লাই করুন। যদি কোনো প্রব্লেম হয়েও থাকে তাহলে তারাতাড়ি ফিক্সড করে পেইজে আপডেট দিন। তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি কাস্টমারের ট্রাস্ট আরো বাড়বে।
ফেসবুক লাইভ
এফ কমার্স বিজনেসের মোস্ট পপুলার এন্ড ইফেক্টিভ একটা ফিচার হলো ফেসবুক লাইভ। মাঝে মাঝেই লাইভে যান। প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি আড্ডা দিন। প্রোডাক্টসের পজিটিভ দিক গুলো তুলে ধরুন, রিয়েল টাইম রিভিউ শেয়ার করতে পারেন সেটা হতে পারে কাস্টমারের থেকে পাওয়া কোনো পজিটিভ ফিডব্যাক। প্রোডাক্ট ডেমো দেখাতে পারেন। এবং লাইভে অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট থেকে তাদের ক্রাইটেরিয়া গুলো বুঝে তারপর উত্তর দিন, বা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাজেস্ট করুন। এছাড়াও লাইভে যে অনলি প্রোডাক্ট নিয়েই কথা বলতে হবে তা না, সমসাময়িক ট্রেন্ড সম্পর্কে এওয়ার থাকুন এবং সেগুলি নিয়ে লাইভে আড্ডা দিতে পারেন৷ প্রয়োজন অনুযায়ী অডিয়েন্স কে কিছু মেসেজ দিতে পারেন। ক্রিয়েটিভ কিছু শেয়ার করতে পারেন বা বিনোদন মূলক কিছু যেগুলি দেখে অডিয়েন্স ইন্টারেস্টেড হয়।
ডেলিভারি সিস্টেম
এফ কমার্স বিজনেসের জন্য ডেলিভারি সিস্টেম অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা পার্ট। এমন একটা ডেলিভারি এজেন্সির সাথে পার্টনারশিপ করুন যারা প্রোডাক্টসের কোয়ালিটি বজায় রেখে খুব দ্রুত সময়ে ডেলিভারি দেয়। বিজনেস যদি ছোট হয় সেক্ষেত্রে পার্সোনাল ডেলিভারি ম্যান দিয়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করতে পারেন। এবং পেইজে সকল প্রোডাক্ট পোস্টে ডেলিভারি সিস্টেম এবং চার্জ উল্লেখ করুন। পেমেন্ট অপশন গুলোও এভেইলেবল রাখুন। যেমন, বিকাশ, ক্যাশ অন ডেলিভারি অথবা এডভান্স পেমেন্ট সিস্টেম।
মার্কেটিং বাড়ানো
এফ কমার্স বিজনেস শুরু করার পর আস্তে আস্তে ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট মার্কেটিং বাড়ান। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রোডাক্ট প্রমোশনের জন্য কোনো সেলেব্রিটি বা ইনফ্লুয়েন্সার কে গিফট করতে পারেন। অথবা কোনো ফেমাস ইনফ্লুয়েন্সার কে দিয়ে পেমেন্ট এর বিনিময়ে প্রোডাক্ট প্রমোট করিয়ে নিতে পারেন। ইনফ্লুয়েন্সার রা যেকোনো প্রোডাক্ট মার্কেটিং এ অনেক বড় ভূমিকা রাখে। কেননা তারা সকল ধরনের ট্রেন্ড ফলো করে এবং ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে প্রোডাক্টসের অনেস্ট রিভিউ শেয়ার করে, এজন্য তাদের কথায় অডিয়েন্স অনেক বেশি ইনফ্লুয়েন্স হয়। প্রয়োজনে পেইড মার্কেটিং করুন। এক্ষেত্রে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের বিভিন্ন এডস সিস্টেম আপনাকে হেল্প করতে পারে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলির এডভার্টাইসিং ফিচার গুলিকে ব্যবহার করুন। নিজের প্রোডাক্ট ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল ক্রিয়েট করুন।
সুতরাং, হোপফুলি বুঝতে পেরেছেন এফ কমার্স বিজনেস কি এবং কিভাবে শুরু করবেন। এখন আপনার যদি বিজনেসের প্রতি প্যাশন থাকে অথবা অল্প পুঁজিতে সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে এফ কমার্স বিজনেস নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে পারেন। এবং শুরু করে দিতে পারেন। হ্যাপি মার্কেটিং।