বর্তমানে বিজনেস শুরু করার অনেক রকমের ওয়ে আছে যেখানে আপনি আপনার ক্রিয়েটিভিটি কে কাজে লাগাতে পারেন এবং টাকা আয় করতে পারেন। কাস্টমাইজড টি-শার্ট ডিজাইন হলো সেরকমই গ্রেট একটা ওয়ে। আপনার আর্ট, নিজস্ব ডিজাইন প্রিন্ট করা টি-শার্ট সেল করে নিজস্ব ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করতে পারেন এবং বেশ ভালো পরিচিতি লাভ করতে পারেন। কাস্টমাইজড টি-শার্ট বিজনেস এ ক্রিয়েটিভিটি কে কাজে লাগিয়ে যতো আকর্ষণীয় ডিজাইন করতে পারবেন ততো বেশি প্রফিট লাভ করতে পারবেন। চলুন দেখে নেই কিভাবে খুব সহজেই কাস্টমাইজড টি-শার্ট ডিজাইন বিজনেস শুরু করতে পারেন এবং নিজের ইউনিক ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করতে পারেন।
কাস্টমাইজড টি-শার্ট ডিজাইন বিজনেস আইডিয়া
প্ল্যান করুন
কাস্টমাইজড টি-শার্ট বিজনেস এবং সেল শুরু করার আগে আপনাকে প্ল্যান তৈরি করতে হবে যেটা ওভার অল আপনার বিজনেস কে গাইড করবে, এবং বিজনেসের জন্য কি কি একশন দরকার সেগুলির জন্য প্রোপার গাইডলাইন দিবে। এজন্য টি-শার্ট ডিজাইন করা শুরু করে সেল পর্যন্ত প্রত্যেক টা কাজ কিভাবে করবেন সেটার প্রোপার প্ল্যান চার্ট ক্রিয়েট করে ফেলুন। এখানে বাজেট প্ল্যান, মার্কেটিং প্ল্যান, ডিজাইন প্ল্যান সবকিছুই ইনক্লুড থাকবে।
প্রথমত এবং সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট যেটা, তা হলো বিজনেসের জন্য প্রোপার একটা নাম সিলেক্ট করতে হবে এবং লোগো সিলেক্ট করতে হবে। এটা আপনার নামের সাথে মিল রেখেও হতে পারে অথবা ডিফারেন্ট কিছুও হতে পারে যেটা টি-শার্ট ব্র্যান্ড কে রিপ্রেজেন্ট করবে এবং পরবর্তীতে আপনার বিজনেসের জন্য লোগো ক্রিয়েট, বিজনেস কার্ড ক্রিয়েট এবং ওয়েবসাইট ক্রিয়েটের জন্যও কাজে লাগবে।
অডিয়েন্স রিসার্চ
যেকোনো বিজনেস শুরু করার আগে অডিয়েন্স রিসার্চ এবং রাইট কাস্টমার আইডেন্টিফাই করা জরুরি। এটা করতে ব্যর্থ হলে পুরো বিজনেস টাই ফেইল হতে পারে। কাস্টমাইজড টি-শার্ট বিজনেস শুরু করার আগে আপনাকে রিসার্চ করে বের করতে হবে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স কারা। কাদের জন্য আপনার টি-শার্ট গুলি পার্ফেক্ট। সেটা হতে পারে ইয়াং জেনারেশন, অথবা ছোট বাচ্চা, বা সিনিয়র সিটিজেন। টার্গেট অডিয়েন্স আইডেন্টিফাই করার পর তাদের পছন্দ, রুচি, চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন ক্রিয়েশনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট যেটা তা হলো অডিয়েন্সের চাহিদা বুঝতে পারা, তারা এই মুহূর্তে কোন ধরনের ফ্যাশনের দিকে কনসেনট্রেশান দিচ্ছে, মার্কেটে কি ট্রেন্ড চলছে এগুলো রিসার্চ করে সেই অনুযায়ী আপনি ডিজাইন ক্রিয়েট করতে পারেন।
ওয়েবসাইট ক্রিয়েট
প্ল্যান করা এবং নাম সিলেক্ট করা হলে আপনাকে একটা ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে তাহলে যখন টি-শার্টের জন্য ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করবেন তখন ডোমেইন টি লিংক আপ করতে পারবেন ব্র্যান্ডের সাথে। Shopify and Etsy হলো পপুলার একটা অপশন টি-শার্ট সেল করার জন্য। কিন্তু আপনি যদি নিজস্ব কাস্টমাইজড ওয়েবসাইট বিল্ড করতে চান সেক্ষেত্রে ভালো কোনো ওয়েবসাইট ডিজাইনার এর এবং ডেভলপারের হেল্প নিতে পারেন। ওয়েবসাইটের নাম ব্র্যান্ডের নামের সাথে মিল রেখেই ইউনিক করার ট্রাই করুন, এবং ব্র্যান্ড লোগো এড করতে ভুলবেন না। এবং প্রত্যেক ব্র্যান্ডের কিছু স্লোগান থাকে, যেটা একদম এক লাইনে ব্র্যান্ডের পরিচয় তুলে ধরে, সেরকম একটা স্লোগান এড করতে পারেন ওয়েবসাইট এবং সকল বিজনেস প্রোফাইলে।
ক্রিয়েট ইউনিক ডিজাইন
টি-শার্ট প্রিন্ট করার আগে আপনার কিছু ইউনিক এবং ক্রিয়েটিভ ডিজাইন দরকার যেটা আপনার বিজনেস গোল কে রিপ্রেজেন্ট করে। আপনার যদি মনে হয়, নিজের করা ড্রয়িং, পেইন্টিং, ক্রিয়েটিভ ডিজাইন গুলোই হাইলাইট করবেন তাহলে আপনাকে সেগুলি অবশ্যই ডিজিটাল ফাইলে সেইভ করতে হবে এবং কয়েকটা পেইন্টিং টেস্টিং পারপাসে প্রিন্ট করে দেখতে পারেন যে, সবগুলো ডিজাইন টি-শার্টে ক্লিয়ারলি প্রিন্ট হয় কিনা। এবং এখানে কালার কন্ট্রাস্ট টা অনেক জরুরি। ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই টি-শার্ট এর কালার চুজ করতে হবে। ডিজাইন সিলেকশন শেষে কাস্টমার দেখতে চাইবে যে, এটা আসলে দেখতে কেমন হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো মডেলের গায়ে টি-শার্ট দিয়ে ফটোশুট করে মার্কেটিং করতে পারেন।
প্রফেশনাল টি-শার্ট ডিজাইনিং শিখতে জয়েন করতে পারেন আমাদের ব্যাসিক টু অ্যাডভান্স টি-শার্ট ডিজাইনিং কোর্সে
সেল চ্যানেল সিলেকশন
ডিজাইন ক্রিয়েট করে টিশার্ট প্রিন্ট করা তো হলো, এইবার মার্কেটিং এবং সেল এর পালা। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার এরিয়া অনুযায়ী মার্কেটিং এবং সেলিং চ্যানেল সিলেক্ট করতে হবে। যে এরিয়া তে সেল করতে চাচ্ছেন ওই এরিয়ার অডিয়েন্স কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বেশি এক্টিভ সেটা আইডেন্টিফাই করুন। এবং ওই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মার্কেটিং করুন। এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলিতে ফোকাস করতে পারেন। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে অনলাইন স্টোর ক্রিয়েট করতে পারেন, এবং টি-শার্ট গুলির হাই কোয়ালিটি পিকচার, ভিডিও করে পোস্ট করতে পারেন, এছাড়াও লাইভে এসেও সেল করতে পারেন। লাইভ, পোস্ট গুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এন্ড বেস্ট ডিজাইন কে ফোকাস করে পোস্ট বুস্ট করেও টি-শার্ট এর জন্য নতুন কাস্টমার পেতে পারেন। TikTok ও বেস্ট একটা অপশন প্রোডাক্ট প্রমোশনের জন্য। TikTok এও বিজনেস প্রোফাইল ক্রিয়েট করুন এবং টি-শার্ট এর মার্কেটিং শুরু করুন।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সার দের কে দিয়েই এক তৃতীয়াংশ বিজনেস তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করিয়ে নেয়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলিতে ইনফ্লুয়েন্সার দের কথায় ম্যাক্সিমাম অডিয়েন্স ইনফ্লুয়েন্স হয় এবং তাদের এক্টিভিটিস ফলো করে। কেননা, ইনফ্লুয়েন্সার রা ম্যাক্সিমাম টাইম অডিয়েন্সের সাথে যেকোনো ব্র্যান্ডের অথেনটিক প্রোডাক্ট রিভিউ শেয়ার করে থাকে। আপনিও আপনার কাস্টমাইজড টি-শার্ট গুলি ইয়াং এবং বেশি ফলোয়ার্স আছে এমন ইনফ্লুয়েন্সার কে দিয়ে প্রমোট করিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার সাথে আগেই চুক্তি করে নিবেন কিভাবে কতোদিন কাজ করবেন, পেমেন্ট সিস্টেম কেমন হবে। এবং ইনফ্লুয়েন্সার এর সাথে টিম ওয়ার্ক করুন।
ফিডব্যাক কালেকশন
যেকোনো বিজনেসের জন্য কাস্টমারের থেকে ফিডব্যাক নিয়ে সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট মুডিফাই করা অথবা পজিটিভ ফিডব্যাক অডিয়েন্সের সাথে শেয়ার করা জরুরি। সেক্ষেত্রে ফেসবুকে লাইভে এসে অডিয়েন্সের থেকে টি-শার্ট সম্পর্কে ফিডব্যাক নিতে পারেন। প্রোডাক্ট পোস্টের কমেন্ট অপশন সবার জন্য ওপেন রাখতে পারেন যেখানে অডিয়েন্স তাদের মতামত শেয়ার করতে পারে। এবং কাস্টমার যখন পজিটিভ রিভিউ দিবে সেটার ভিডিও বা রাইটেন রিভিউ সোশ্যাল মিডিয়া বিজনেস প্রোফাইল থেকে অডিয়েন্সের সাথে শেয়ার করুন। এবং টি-শার্ট এর কোথায় কেমন চেঞ্জ আনা যায় সেটা নিয়ে কাজ করুন।
পরিশেষে, নিজের ক্রিয়েটিভিটি কে কাজে লাগিয়ে কাস্টমাইজ টি-শার্ট বিজনেস শুরু করা হতে পারে আপনার জন্য গ্রেট একটা অপরচুনিটি নিজের ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করার এবং ইনকাম করার। তবে মনে রাখবেন যেকোনো বিজনেস শুরু করতে হলে অনেক অনেক ডিফিকাল্টিস ফেইস করতে হবে। একটু সময় নিয়ে হার্ড ওয়ার্ক করতে পারলে অবশ্যই সাক্সেস্ফুল হবেন। সুতরাং আপনার যদি প্ল্যান থাকে কাস্টমাইজড টি-শার্ট বিজনেস শুরু করার তাহলে নিজের ক্রিয়েটিভিটির সাথে উপরের স্টেপ গুলিকে কানেক্ট করে শুরু করে দিন।