নেগোসিয়েশন স্কিল ভালো করার ১০টি টিপস

নেগোসিয়েশন স্কিল
Share This Post

আপনি আপনার চাকরি জীবনের একদম শুরুর দিকে থাকুন কিংবা একেবারে টপ লেভেলে, ক্লাবের সাথে যুক্ত থাকুন কিংবা বড় কোন সংগঠনের সাথে। অফিস ডেস্ক থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত যেই স্কিলটি আপনার লাগবেই তা হচ্ছে নেগোসিয়েশন স্কিল। এই স্কিল ছাড়া আপনি এক পা’ও চলতে পারবেন না। 

মানুষের সাথে ডিল করার আসল রহস্যটি লুকিয়ে আছে আপনার নেগোসিয়েশন স্কিলের মধ্যে। আর আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন ,তাহলে নেগোসিয়েশন স্কিল হবে আপনার প্রধান টুল যাঁর দ্বারা আপনি আপনার ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়ে চলবেন। ব্যবসার প্রধান ভিত্তি হচ্ছে “বিশ্বাস”! আপনার কাস্টমাররা যদি আপনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারে তাহলে আপনি টাকাপয়সা প্রাথমিক অবস্থায় বেশি না ঢেলেও আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অতীব প্রয়োজনীয় এই নেগোসিয়েশন স্কিল নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।

আজকের ব্লগে আমরা এমন ১০ টি টিপস আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি যাঁর দ্বারা আপনারা আপনাদের নেগোসিয়েশন স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন। 

১। নিজেকে প্রস্তুত রাখাঃ- 

যেকোন ধরণের নেগোসিয়েশন প্রসেসে যাওয়ার আগে নিজেকে ভালভাবে প্রস্তুত করে নেয়াটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন? আপনার সামনে কি কি প্রশ্ন আসতে পারে? সবচাইতে ভাল এবং বাজে আউটকাম কি হতে পারে? নেগোসিয়েশন সফল হলে এর পরের স্টেপ আপনার কি হবে? অথবা যদি ব্যর্থ হয় আপনার প্ল্যান-বি কি হতে পারে? এই সমস্ত ব্যাপার নিয়ে আগের থেকে এক ধরণের প্রস্তুতি নিজের ভেতর সেরে রাখতে হবে। 

কোন নেগোসিয়েশনে ইনভলভ হওয়ার আগে যেই যেই প্রশ্নগুলি আপনি আপনার মাথায় সাজিয়ে নিবেন সেগুলি হচ্ছেঃ-

নেগোসিয়েশন দক্ষতা
  • আমি এই নেগোসিয়েশন থেকে কি ফলাফল আশা করছি?
  • আমি এই রেজাল্টের বিপরীতে কোন কোন বিষয় কম্প্রোমাইজ করতে রাজি আছি?
  • আমার অবস্থানের পক্ষে যেই যুক্তিগুলি আমি সাজিয়েছি সেগুলো কি শক্তিশালী?
  • আমার ডিমান্ডগুলি লজিক্যাল কি না?
  • এই নেগোসিয়েশনের সবচাইতে বাজে আউটকাম কেমন হতে পারে?
  • অন্য পক্ষ আমার কাজে কিভাবে রেসপন্ড করবে?

এই প্রশ্নগুলির উত্তর করে আপনি আপনার নেগোসিয়েশনের জন্য প্রথমেই একটি সিকোয়েন্স সাজিয়ে নিবেন। যা আপনাকে নেগোসিয়েশনের পসিবল সিনারিও সম্পর্কে আগের থেকে প্রস্তুত করে রাখবে। এটা একটি নেগোসিয়েশন স্কিল।

২। লক্ষ্য সম্পর্কে স্থির থাকাঃ-

আপনি এই আলোচনা থেকে কি চান? অর্থাৎ,আপনার লক্ষ্য কি? সেই সম্পর্কে আপনাকে স্থির থাকতে হবে। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে স্থির ধারনা না রাখেন তাহলে খুব বেশি সম্ভাবনা আছে যে আপনি এই নেগোসিয়েশন থেকে বেস্ট আউটকামটি আনতে পারবেন না। 

৩। বিকল্প পরিকল্পনা বা প্ল্যান-বি হাতে রাখাঃ-

বিকল্প পরিকল্পনা বা প্ল্যান-বি হাতে রাখা হচ্ছে একটি নেগোসিয়েশন স্কিল। একটি নেগোসিয়েশনের সফল হওয়ার এবং ব্যর্থ হওয়ার ৫০-৫০% চান্স থাকে । আপনি যদি হাতে কোন প্ল্যান বি না রেখে আপনার পুরো চিন্তাভাবনা একটি নেগোসিয়েশনকে কেন্দ্র করে পরিচালিত করেন তাহলে সেটি কার্যকর না হলে আপনার পুরো ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিংবা যেই প্রজেক্টটি হাতে নিয়ে আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন সেই প্রজেক্টের নতুন কোন ডেভেলপমেন্ট নাও দেখা যেতে পারে। 

নেগোসিয়েশন স্কিল

এজন্য সবসময়ই কোন কাজে নামার আগে একটি ব্যাক আপ প্ল্যান বা প্ল্যান-বি যাকে বলে সেটি হাতে নিয়েই এগোনো উচিত । যেন কোন কারণে যদি আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা কাজে না লাগে ,তাহলে যেন আমরা আমাদের বিকল্প পরিকল্পনা অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে পারি। আপনার এই নেগোসিয়েশন স্কিলটি থাকলে আপনি খুব ভালো ভাবে নেগোসিয়েশন করতে পারবেন।

৪। নিজেকে কখনোই ছোট অবস্থায় না রাখাঃ-

নেগোসিয়েশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আপনি কখনোই এমন এটিচিউড রাখবেন না যে আপনি ছোট কিংবা আপনি কোন ধরণের দায়ে পড়ে এই ডিল করতে বসেছেন। মনে রাখতে হবে নেগোসিয়েশন ব্যাপারটি পুরোটাই একটি গেমের মতন আপনি যদি প্রথমেই নিজেকে ছোট কোন পজিশনে নিয়ে যান সেইক্ষেত্রে আপনি যাঁর সাথে ডিল করছে সে অবশ্যই এই সুযোগটি নিবে। এতে করে সে আপনার উপরে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাবে যা আপনি চান না। 

সেইজন্য নিজেকে ইকোয়াল পজিশনে রেখে তবেই বার্গেইনিং-র ভেতর যেতে হবে । সবসময় সবচাইতে বেস্ট আউটকামের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

৫। সময় দিনঃ-

কি কি ব্যাপার আপনি আলোচনার টেবিলে তুলতে চান সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে টিম মেম্বারদের সাথে বসুন । গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নোটডাউন করে নিন। আপনার অপর পার্টির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কোন সিদ্ধান্তে যদি আপনি কনফিউজড থাকেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত না দিয়ে অপেক্ষা করুন । সময় নিয়ে, চিন্তা করে আপনার টিম মেম্বারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

নেগোসিয়েশন

একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বেশি তড়িঘড়ি করা যাবে না আবার যেন এরকম না হয় যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় আপনি লাগিয়ে দিচ্ছেন। সমস্ত ব্যাপারটি যেন একটি টাইম টেবিল মেনে সম্পন্ন হতে পারে সেই সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। 

৬। কমিউনিকেশন স্কিল ভাল করাঃ-

নেগোসিয়েশনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিল। আপনি আপনার কথা বলার ক্ষমতা, মানুষকে কনভিন্স করার ক্ষমতা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার উপর অপর পার্টির ট্রাস্ট সৃষ্টি করবেন। আপনার বিজনেস কিংবা যেই প্রজেক্ট নিয়ে আপনি এগিয়ে যেতে চাইছেন তাঁর সাফল্য নির্ভর করছে আপনার পার্টনাররা কতটুকু আপনাকে বিশ্বাস করছে তাঁর উপর।

আপনি কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখবেন –

  • খুব ক্লিয়ার কাট কথা হতে হবে। যতধরণের ইস্যু সব আগেই সলভ করে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
  • আপনার কথা এবং কাজের মিল থাকতে হবে। আপনি আপনার কথামতন যদি কাজ ডেলিভারি দিতে না পারেন সেইক্ষেত্রে আপনার প্রতি অন্যদের ব্যাড ইমপ্রেশন তৈরি হবে।
  • কাজের ভেতর দীর্ঘসূত্রিতা একদম রাখা যাবে না। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সময়ের কাজ যেন আপনি সময়ের ভেতরেই ডেলিভারি দিতে পারেন।
৭। মনোযোগ দিয়ে অপরপক্ষের কথা শোনাঃ-

অপরের কথা যদি আপনি না শুনেন শুধু নিজের মতই প্রতিষ্ঠা করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার সাথে কেউ-ই কাজ করতে চাইবে না। আপনার অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। 

নেগোসিয়েশন স্কিলগুলো

যখন আপনার সাথে কথা বলা মানুষটা বুঝতে পারবে যে আপনি তাঁর কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন তখনই আপনার ওপর তাঁর আস্থা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এটি একটি নেগোসিয়েশন স্কিল।

৮। ফ্লেক্সিবল হওয়াঃ-

কখনো কখনো একই প্ল্যানে পুরোটা সময় আটকে থাকা ভাল ফলাফল বয়ে আনে না। এর জন্য আপনাকে একটু ফ্লেক্সিবল হতে হবে। আপনার প্রোপোজাল কিংবা প্রোডাক্টের সাথে কোন ফিচার যোগ করে যদি একে ইমপ্রুভ করার সুযোগ পান। তাহলে অবশ্যই সেই সুযোগ গ্রহন করতে হবে।

ফ্লেক্সিবল এটিচিউড মার্কেটে আপনার সাস্টেইনিবিলিটি বাড়াবে। 

৯। নেগোসিয়েশন স্কিল এ ছাড় দেয়ার মনোভাবঃ-

আপনার কোম্পানির ভবিষ্যতের ভালোর জন্যই কখনো কখনো আপনাকে কিছুটা ছাড় দিয়ে এগোতে হবে। ছাড় দেয়ার মনোভাব থাকলে আপনার সাথে অন্যরা কাজ করতে চাইবে। তবে খেয়াল রাখা দরকার ছাড় দিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় যাতে আপনি বার্গেইনিং-এ ডাউন পজিশনে থাকেন।

১০। উইন-উইন সিচুয়েশন তৈরিঃ-

একজন ভাল নেগোসিয়েটরের সবচেয়ে ভাল গুণ হচ্ছে যে, সে দুইপক্ষের জন্যই সবসময় উইন-উইন সিচুয়েশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। কোন এক পক্ষকে লস করিয়ে যদি আপনি কোন ডিল করেন তাহলে তা অন্যান্য মার্কেট পার্টিসিপেন্টদের কাছে আপনার কোম্পানি সম্পর্কে একটি বাজে ধারণা দিয়ে থাকে। আল্টিমেটলি যা আপনার কোম্পানি ফিউচারে সমস্যা সৃষ্টি করে।

শেষ কথা

এই ছিলো নেগোসিয়েশন স্কিল সম্পর্কিত আমাদের দশটি টিপস।

পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন
Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন?

আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর