ডিজিটাল বিপ্লবের এ সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মার্কেটিং। প্যান্ডেমিক -পরবর্তী সময় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাহিদা আসলেই আকাশচুম্বী। অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হয়েছেন তাদের বিজনেস মডেলে ডিজিটাল শব্দটি যুক্ত করতে। এ মার্কেটিংয়ে রয়েছে হাজার রকমের টুলস। বিভিন্ন রকম ডিজিটাল বিজনেস টুলস ব্যবহার ছাড়া ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। যখন আপনি কোন ব্যবসায় বিজনেস করছেন, আপনার কাজের জন্য সঠিক টুলস এর ব্যবহার সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে পার্থক্য এনে দিতে পারে। তাই আপনার বিজনেস এর জন্য সঠিক টুলস খুঁজে পাওয়া অনেকখানি সফলতা থেকে কোন অংশেই কম না।
এই টুলগুলোর বৈশিষ্ট্যের সঠিক ব্যবহার আপনার ব্যবসায়িক মডেল এ ব্যাপক সাড়া ফেলবে। যেহেতু মার্কেট এ অনেক ধরনের সফটওয়্যার আছে, তাই আপনার জন্য সঠিক টুল খুঁজে পাওয়া যা অনেকটা খড়ের গাদা হতে সুঁই খুঁজে বের করবার মতো। আপনার রিসার্চ থেকে খুঁজে বের করতে যে সময় প্রয়োজন তা কিছুটা কম করতে, আমরা এখানে বিজনেস টুলসের লিস্ট করেছি। যা আপনার পছন্দমতো বিজনেস টুলস খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
বিজনের টুলস এর কথা শুরু করলে সর্বপ্রথম আমাদের বিজনেস ক্যাটাগরি সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। আমরা এখানে আপনার বিজনেসকে ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি যাতে করে আপনার পছদমতো টুলস খুঁজে পেতে পারেন এবং সেই সেক্টরে আপনার টুলস প্রয়োজন কিনা তা যাচাই করতে পারবেন।
ক্যাটাগরিগুলো হলোঃ
- মিটিং অ্যাপস
- ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস
- কমিউনিকেশন অ্যাপস
- মার্কেটিং টুলস
- একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস
১. ব্যবসায়ের জন্য মিটিং অ্যাপস
করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকে এক ঝড়ের ন্যায় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে, এবং তার সাথে অনেক কর্মকর্তাদের রীতমতো অকেজো করে দিয়েছে। তার মানে আপনি আর মিটিং করতে পারছেন না। তাই আপনি যদি কর্মীদের সাথে মিটিং করতে চান এবং ফেস-টু-ফেস কনভার্সেসন করতে চান। তাহলে এই টুলস আপনাকে সাহায্য করতে পারেঃ
- জুমঃ কোভিড-১৯ আসবার পর লকডাউন চলাকালীন সময়ে জুম ব্যাপক হারে সাড়া ফেলে এবং তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যেখানে আপনি ভিডিও মিটিং করতে পারবেন আপনার টিমের সাথে, আপনার আইটি টিমের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করতে পারবেন, ভার্চুয়াল ট্রেনিং সেশন করতে পারবেন। মার্চ ২০২০ সালে, জুম এর অ্যাক্টিভ মেম্বার সংখ্যা ১০ মিলিয়ন হতে ২০০ মিলিয়নে পৌছে যায় মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে। ব্যবসায় ছাড়াও শিক্ষকরা ক্লাস নেয়ার জন্য এবং ছাত্রদের ভার্চুয়ালি শিক্ষা দিতে জুম ব্যবহার করছে।
- গুগল মিটঃ পরবর্তী অ্যাপস হচ্ছে গুগল মিট, যা কিনা গুগল হ্যাং আউট অ্যাপস এর ভিডিও ভার্সন। যদি আপনি গুগল সার্ভিসের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে থাকেন , তাহলে জুমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। খুব সহজভাবেই একটি মিটিং সেট করতে পারবেন এবং সেই মিটিং লিঙ্ক আপনার সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করে মুহূর্তের মধ্য মিটিং সেট করতে পারেন। গুগল সর্বোচ্চ ১০০ জন নিয়ে মিটিং করবার সুযোগ দিয়ে থাকে। গুগলের মিটিং সিকিউরিটি নিয়ে কোন সংশয় নেই এবং সাথে থাকছে প্রতিবার পারফেক্ট ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা।
২. ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস
একটি ব্যবসায়ের জন্য ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সবাই জানে। একটি বিজনেস প্রপোজাল থেকে শুরু করে বিজনেস প্ল্যান তৈরী করতে প্রয়োজন ভালো ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
আপনার ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস সঠিকভাবে নির্বাচন করা জরুরী কারন ইহা আপনার ডকুমেন্ট এক জায়গায় সংগ্রহ করতে, কাগজের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি ১০ গুণ বেশি করে তুলতে সাহায্য করে। তাই সঠিক ম্যানেজমেন্ট টুলস বাছাই করা বেশ চিন্তার কাজ। কিন্তু আমরা আপনার এই চিন্তার কারন দূর করছি কিছু অ্যাপসের নাম উল্লেখ করে। অ্যাপসগুলো হলোঃ
- গুগল ড্রাইভঃ আপনার কাছে যদি ভালো মানের টিম থেকে থাকে তাহলে আপনার বেশি পরিমানে ডকুমেন্ট রাখবার প্রয়োজন হবে না। একটি ফ্রী কনটেন্ট ষ্টোরেজ ও ডকুমেন্ট কোলাবোরেশন হিসেবে কাজ করে থাকে গুগল ড্রাইভ। গুগল ড্রাইভ আপনাকে ডকুমেন্ট ক্রিয়েশন, স্প্রেডশীট, ও প্রেজেন্টেশন তৈরীতে সাহায্য করে। এই স্মার্ট সার্ভিস আপনাকে ১৫ জিবি পর্যন্ত ষ্টোরেজ করবার সুযোগ দিয়ে থাকে।
- বিটঃ বিট হচ্ছে এমন একটি অ্যাপস যেখানে আপনার ফাইলগুলোকে ক্রিয়েট, ম্যানেজ ও শেয়ার করতে পারবেন সবকিছু এক জায়গায় রেখে। অর্গানাইজড কনটেন্ট সাধারণত ফোল্ডার ও ওয়ার্কস্পেস থেকে আলাদা হয়ে থাকে, তাই এর সাহায্য আপনি কো- ওয়ার্কারসদের সাথে আলোচনা করে তা শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া স্মার্ট সার্চ এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বিট আপনাকে বহু অংশে সাহায্য করে থাকবে।
৩. কমিউনিকেশন অ্যাপস
প্রতিটি সংগঠনের জন্য কমিউনিকেশন একটি সাফল্যর চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনার আইডিয়া, রিসার্চ এবং প্রতি দিনের যোগাযোগের জন্য কিছু কমিউনিকেশন অ্যাপস রয়েছে। সেই কমিউনিকেশন অ্যাপস হচ্ছেঃ
- স্ল্যাকঃ যদি আপনার কাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই আপনারা স্ল্যাকের কথা শুনে থাকবেন। একটি ম্যাসেজ অ্যাপস যেখানে আপনাকে সুযোগ দেয়া হয় যে আপনার মেম্বার্সদের চ্যানেল তৈরী করে যেটা আপনার প্রজেক্ট, ইন্টারেস্ট ও ডিপার্টমেন্টের উপর নির্ভর করে থাকে এবং সাথে সেখানে আপনার নির্ধারিত কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
স্ল্যাক সাধারণত স্টার্ট আপ এবং ছোট বিজনেসের মধ্য ব্যাপক সাড়া ফেলেছে যার মূল কারন তাদের তৈরীকৃত প্ল্যান। প্রায় ৩৫,০০০ পেইড কোম্পানী যার সাথে ৮ মিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজারদের নিয়ে স্ল্যাক সাফল্যর সাথে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্ল্যাক কমিউনিকেশনের জন্য একটি খুবই ভালো অ্যাপস।
- মাইক্রোসফট টিমমেটঃ পরবর্তী অ্যাপস হচ্ছে একটি টিম অ্যাপস যা কিনা শুধুমাত্র মাইক্রোসফটের একটি প্রোডাক্ট। টিম অ্যাপসে ৪৪ মিলিয়ন ডেইলি অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে, যার সংখ্যা ২০১৯ সালে ২০ মিলিয়ন ছিল এবং ইহা অফিস ৩৬৫ স্যুট অ্যাপের একটি অংশ। সহকর্মীদের সাথে ম্যাসেজিং করা ছাড়াও আপনার টিমকে ভিডিও ও অডিও কলের সাপোর্ট দিতে পারবেন এই অ্যাপসের মাধ্যমে। কর্মীরা তাদের পাওয়ার পয়েন্ট, ওয়ার্ড ডকস, এক্সেল স্প্রেডশিট শেয়ার করবার মাধ্যমে এক জায়গায় বসে সকল কাজ সমাধান করতে পারবেন।
৪. মার্কেটিং টুলস ফর বিজনেস
২০২১ সালের এই সময়ে প্রতিটি ব্যবসায়ের উচিত অনলাইনে তাদের কার্যকালাপ রাখা এবং তার ব্যবহার করে কাস্টমারদের সাথে এঙ্গেজ করা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যবহার আপনাকে ট্রেডিশন্যাল মার্কেট থেকেও বেশী পরিমানে কার্যকরী। তাই এখন সময় হচ্ছে কিছু টুলসের ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কাজ শুরু করবার। এখানে কিছু মার্কেটিং টুলস নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- ইলিঙ্কঃ কনটেন্ট তৈরী করবার সময়কালে ইলিঙ্ক একটি দুর্দান্ত টুলস হিসেবে কাজ করে থাকে বিশেষভাবে মার্কেটিং করবার সময়, ইলিঙ্ক আপনাকে মার্কেটার ও কনটেন্ট পাবলিশারদের ইমেইল নিউজলেটার, ওয়েব পেইজ, ওয়েব কনটেন্ট তৈরীতে সাহায্য করে শুধুমাত্র লিঙ্ক দেয়ার মাধ্যমে (আর্টিকেল, ভিডিও) আপনাকে ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট সরবরাহ করবে কিছু সেকেন্ডের মাধ্যমে। ৩০টির অধিক রেস্পন্সিভ ডিজাইনের সাথে আপনাকে ডিজাইন নিয়ে চিন্তা করবার কিছুই নেই, আপনি শুধুমাত্র কনটেন্ট নিয়ে ফোকাস থাকুন।
- গুগল এনালিটিক্সঃ মার্কেটিং এর একটি বড় অংশ জানে যে আপনার সাইটে কোথায় কাজের প্রয়োজন এবং কোথায় ইম্প্রুভমেন্ট দরকার। গুগল এনালিটিক্স আপনাকে সাহায্য করবে আপনার সাইটকে এনালাইসিস করতে তাদের ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করবার মাধ্যমে। ওয়েবসাইট ভিজিটর, প্রোডাক্ট, মার্কেটিং গোল, এবং কনভার্সন সহজে ট্র্যাক করা যায়। গুগল অপ্টিমাইজের সাহায্য আপনার সাইটকে টেস্টিং করা হবে এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জন্য ডাটা-ইনফর্মেশন সেট করা হয়। প্রায় ৫৫% সাইট গুগল এনালিটিক্স ব্যবহার করে থাকে, তাহলে আপনি কেন নয়?
৫. একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস
প্রতিটি ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস। কারন একাউন্ট সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ব্যবসায়ের পতন ঘটতে পারে। তাই আমরা একাউন্ট সম্পর্কিত কিছু টুলস নিয়ে আলোচনা করছিঃ
- ফ্রেশবুকসঃ ইহা একটি একাউন্টিং ও ইনভয়েস প্ল্যাটফর্ম, ফ্রেশবুকস আপনাকে সাহায্য করে শত কাজের মধ্য আপনার একাউন্টকে আপডেট রাখতে। কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং ব্যয়গুলোর কারন সবকিছু এখানে নিয়ন্ত্রন করা যায়। ফ্রেশবুকস সবকিছুই কভার করে থাকে। এছাড়া অটোমেশন সার্ভিস আপনাকে মনে করিয়ে দিবে পেমেন্ট কালেকশনের জন্য, যা আপনার বিজনেসের জন্য অটোপাইলট হিসেবে কাজ করবে।
- জেরোঃ ছোটখাটো বিজনেসের জন্য জেরো একটি একাউন্টিং টুলস যার ইন্টারফেস খুবই সহজ। দ্রত ইনভয়েস তৈরী এবং সেটা খোলার পর নোটফিকেশন পাওয়া, ইনভেন্টরি ট্র্যাকিং, ফাইলের সাথে ইনভয়েস যুক্ত করা, কাস্টম অর্ডার পারচেজ, ব্যয় সকলকিছু জেরো ড্যাশবোর্ড হতে করা যায়। পেমেন্ট এবং পেয়িং স্প্লায়ারদের কাছে থেকে বিল ম্যানেজ করা যায় এখান থেকে। জেরো টুলস প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ ইউজ করে যাচ্ছে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই।
অতএব কোন প্রকার ব্যবসায় ছোট অথবা বড় যাইহোক না কেন সকলক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রযুক্তি। তাই আপনার ব্যবসায় উন্নতির জন্য উপরে উল্লেখিত টুলসগুলো আপনাকে অনেকাংশে সাহায্য করবে আমরা মনে করি।