মাইক্রোসফট আবিষ্কারের ইতিহাস ও বিল গেটস এর অবদান

Share This Post

মাইক্রোসফট আবিষ্কারের বিষয়টি মোটেও এক রাতের কোন গল্প ছিল না। যেকোনো বড় ধরণের আবিষ্কারের পিছনে থাকে কঠোর শ্রম, সাধনা আর আত্মবিশ্বাস। ঠিক তেমনিভাবে মাইক্রোসফট আবিষ্কার করতে গিয়েও এসবের মুখোমুখি হতে হয় আবিষ্কারকদের। মাইক্রোসফট এবং বিল গেটস দুটি শব্দ একে অপরের পরিপূরক। ২৮ অক্টোবর, ১৯৫৫ সালে ওয়াশিংটন এ জন্মগ্রহণ করেন বিল গেটস এবং ঠিক একই সাথে জন্মহয় পরবর্তী বদলে দেওয়া আধুনিক পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টার। ১৯৬০ সালে প্রথমবার এর মতো স্কুল এর গন্ডিতে পা রাখেন তিনি। শুরু হয় তার নতুন পথচলা। ঠিক ওই বছর এই পৃথিবীজুড়ে আবিষ্কার হয় মাইক্রো কম্পিউটার এর। মাইক্রো কম্পিউটার ছিল তখন সবচেয়ে কম মূল্যের কম্পিউটার, এছাড়া অন্যান্য কম্পিউটার এর দাম ছিল আকাশ চুম্বি। “PDP-8” ১২ বিট এর মিনি এই কম্পিউটারটির দাম ছিল বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার এর কাছাকছি। বড় নামি দামি ব্র্যান্ড বা ইউনিভার্সিটিগুলো ব্যবহার করতো এই কম্পিউটার।

তাই মাইক্রো কম্পিউটারই ছিল তখনকার সময়ে সবার জন্যে সহজ উপায়। বিল গেটস এর খুব কাছের বন্ধু ছিলেন “Paul Allen”, ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার ডিভাইস বা টেক ডিভাইস এর প্রতি প্রচুর আগ্রহী ছিলেন তিনি। ফলে দুই বন্ধু মিলে শুরু করে দেন মাইক্রো কম্পিউটার শেখার প্রসেস। মাইক্রোসফট এর গল্পটা শুরু হয় ১৯৭৪ সাল এর দিকে, সেই সময় বিল গেটস নিজের পড়াশুনার জন্যে পাড়ি জমান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং “Paul Allen” চলে যান ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করার জন্যে।

সেই সময় সবচেয়ে যুগোপযোগী মাইক্রো কম্পিউটার “Altair 8800” বাজারে আসে এবং এই কম্পিউটারটির বিষয়ে আগ্রহ থেকে সরাসরি কোনো কিছু না ভেবে কম্পিউটারটি নিয়ে সোজা চলে যান বিলগেটস এর কাছে। বিল গেটস খুব ভালোভাবে কম্পিউটারটি চেক করতে গিয়ে হঠাৎ ভাবলেন তারা চাইলে কোনো সফটওয়্যার তৈরি করতে পারেন এর জন্যে যা সহজভাবে কম্পিউটারটিতে রান করানো যায়। 

বিল গেটস - মাইক্রোসফট আবিষ্কার

ভাবতেই ভাবতেই কাজ। “Paul Allen” চলে গেলেন “Altair” কোম্পানির কাছে এবং জানালেন তাদের কাছে একটি সফটওয়্যার আছে যা তারা এই কম্পিউটারটিতে ইউজ করতে চান এবং কম্পিউটারটিতে এটি খুব ভালোভাবে কাজ করবে। তাদের আত্মবিশ্বাস দেখে তখন “Altair” কোম্পানিও সফটওয়্যারটি নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে সঠিক ডিজাইন এবং দক্ষতার সাথে তারা তৈরি করে ফেলেন একটি পূর্ণাজ্ঞ সফটওয়্যার এবং সেটি উত্তীর্ণ হয় সব ধরনের টেস্টে। যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব পেলো প্রথমবারের মতো কোনো থার্ডপার্টি সফটওয়্যার। 

নিজেদের এই সফলতার পর তারা আর থেমে থাকেননি। শুরু করে দেন নিজেদের যাত্রা, তারা তাদের এই কোম্পানির নাম দেন “Microsoft Corporation” যার মানে মাইক্রো কম্পিউটার এর জন্য সফটওয়্যার। তারা তাদের অফিস স্থানান্তর করেন ওয়াশিংটন এর বেলভিউতে। ১৯৭৯ সালে তখন তারা চিন্তা করতে থাকেন তারা একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করবেন। ঠিক তখন “IBM” ও অপারেটিং সিস্টেম খুঁজতে থাকেন তাদের জন্যে। তারা তখনকার বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু অন্যান্য কোম্পানি যখন “IBM” এর কাছে অনেক বেশি দাম এ তাদের অপারেটিং সিস্টেম সেল করতে চাচ্ছিলেন ঠিক এই সময় বিল গেটস চিন্তা করলেন ভিন্ন।

তিনি “IBM” এর কাছে তাদের সফটওয়্যারটি এককালীন ৫০ হাজার ডলার এ বিক্রি করে দেন তবে শর্ত ছিল অপারেটিং সিস্টেম এর সত্তাধিকার থাকবে মাইক্রোসফট এর এবং সাইনিং রেজিস্ট্রেশন হবে “IBM” এর নামে এবং বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতিটা অপারেটিং সিস্টেম এর জন্যে মাইক্রোসফট কে মাত্র ১ ডলার করে দিতে হবে। এমন অসাধারণ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় “IBM” এবং এই চুক্তিকে বিশ্বের সবচেয়ে অসাধারণ চুক্তি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। চারিদিকে তখন মাইক্রোসফট এর জয়জয়কার কারণ সে সময় ৯৫% কম্পিউটার-ই হয়ে যায় উইন্ডোজ পিসি এবং রাতারাতি বিলিওনিয়ার হয়ে যান বিল গেটস।

পৃথিবীতে কম্পিউটার জগতে তখনকার পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তিত্ব এর মধ্যে একজন হয়ে উঠেন তিনিঁ এবং সাথে সাথে একটি পরিচিত রেপুটেড কোম্পানিতে প্রতিষ্টিত হয় মাইক্রোসফট। ১৯৮৪ সালে মাইক্রোসফট এর সাথে চুক্তি হয় “Apple” এর। তখন “Apple” প্রথমবারের মতো বাজারে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস সম্মৃদ্ধ কম্পিউটার নিয়ে আসে বাজারে এবং এই কাজটি করে মাইক্রোসফট। এখান থেকে “Apple” এবং মাইক্রোসফট এর সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় কারণ সে সময় বিল গেটস ঘোষণা দেন যে তারা পরের বছর থেকে উইন্ডোজ পিসিতে একই ইন্টারফেস ইউজ করবেন যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি স্টিভ জবস। 

এতে করে তখন তাদের মধ্যে বেশ বড় কম্পিটেটিভে শত্রুতা বেড়ে যায়। এতে করে মাইক্রোসফট এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে এবং পুরো মার্কেটটি তাদের আয়ত্তে চলে যায়। এই দ্বন্দের ২ বছর পর মাইক্রোসফট তাদের আইপিউ নিয়ে আসে মার্কেটে এবং এর সফলতায় প্রায় ১২ হাজার বিলিওনিয়ার তৈরি হয় মাইক্রোসফট এর এমপ্লয়ীদের থেকে। ১৯৯০ সালে তারা প্রথমবারের মতো “মাইক্রোসফট অফিস” নিয়ে আসে বাজারে। যাতে ছিল অফিস এবং এক্সেল। এর কারণে সারা বিশ্বজুড়ে উইন্ডোজ এর চাহিদা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়। সারাবিশ্বের কম্পিউটার মার্কেট ডমিনেট করা শুরু করে তারা তখন। 

বর্তমানে পৃথিবীতে যতগুলো পিসি ব্যবহার হচ্ছে তার ৭০-৭৫% মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে পরিচালিত। বর্তমানে মাইক্রোসফট এর মালিকানাধীন কোম্পানি রয়েছে অসংখ্য। তার মধ্যে “Microsoft Azure, MSN, Microsoft HoloLens, Nokia, LinkedIn, Skype, Xbox, Microsoft Bing, GitHub””.অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মাইক্রোসফট প্রথবারের মতো একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কোম্পানিকে কিনে নেন, যার নাম ছিল “Forethought” সেই থেকে এখন পর্যন্ত মাইক্রোসফট প্রায় ২২৬ টি কোম্পানিকে তাদের আয়ত্তে নিয়ে নেয় যাদের ম্যাক্সিমাম এই হয় তাদের কম্পিটিটর বা না কম্পিটিটর হবে এমন। এমন আরো ১০০ টির মতো কোম্পানি রয়েছে যেগুলোতে তাদের শেয়ার রয়েছে। 

এছাড়া মাইক্রোসফ্ট এর শেয়ার রয়েছে উবার, এটিএন্টি, ফেইসবুক এর মতো কোম্পানিতেও। মাইক্রোসফট এখন ট্রিলিয়ন ডলার এর কোম্পানি যা এর আগে এই রেকর্ড ছিল এপল এবং আমাজন এর। বর্তমানে মাইক্রোসফট এর রয়েছে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ১০৬ জন এমপ্লয়ি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাইক্রোসফট আয় করেছে ১৪৩.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে মাইক্রোসফট এর নেট ইনকাম ছিল ৪৪.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে সফটওয়্যার এর পাশাপাশি হার্ডওয়্যার এও নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে শুরু করেছে মাইক্রোসফট। এর আগে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজনেস করলেও বর্তমানে তারা স্বল্পোন্নত দেশেও নিজেদের বিজনেস প্রসার করছে। স্ক্রিন এ এই মুহূর্তে যেই ইমেজটি দেখতে পাচ্ছেন এটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উইন্ডোজ ব্যাকগ্রাউন্ড। বর্তমানে মাইক্রোসফট বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের বিজনেস করে যাচ্ছে দারুণভাবে, তার মধ্যে কম্পিউটার সফটওয়্যার, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, কনজিউমার ইলেকট্রনিকস, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও গেমস, ইন্টারনেট এবং কর্পোরেট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অন্যতম। বিল গেটস একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত। বর্তমানে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন নামে পরিচালনা করছেন তারা।

মাইক্রোসফট আবিষ্কার ও তার পরবর্তী সকল সফলতা সকলের জন্যই মনোমুগ্ধকর। কিন্তু এর পিছনে বিল গেটস এর অক্লান্ত পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার সাথে নেওয়া সিদ্ধান্তই তাকে আজ এত উপরে উঠতে সাহায্য করেছে।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন
Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন?

আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর