সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যবসার মার্কেটিং প্র্যাক্টিসে এর এক জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। অল্প সময়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে, ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে এবং অডিয়েন্স এর সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য এটি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। যাইহোক, সব ভাল সাথে কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য ও থাকে, ঠিক যেমন স্প্যামিং। যার কারণে আপনার বহু দিনের কষ্ট করে গড়ে তোলা অনলাইন বিজনেস প্রোফাইল তার খ্যতি হারাতে পারে।
এমন কিছু কাজ আছে যা গ্রাহকদের মনযোগ আকর্ষণ করা তো দূরে থাক, উল্টো তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে। হারাতে পারে আপনার বিজনেসের বিশ্বাস্যোগ্যতা। তাই আমরা স্প্যামিং প্রতিরোধ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্র্যাকটিসে আপনার কখনই করা উচিত নয় এমন ছয়টি জিনিস নিয়েই আলোচনা করব।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্প্যামিং কি?
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্প্যামিং বলতে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পণ্য, পরিষেবা বা বিষয়বস্তুর অত্যধিক এবং নির্বিচারে প্রচার করার বাজে অভ্যাস টাকে বোঝায়। অর্থাৎ অবাঞ্ছিত মেসেজ পাঠানো, রিপোস্ট বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু পোস্ট করা, অথবা প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস টার্মস ও শর্তাবলী লঙ্ঘন করা এগুলোকেই বোঝায়। এগুলো এক কথায়, দর্শকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আপনার বিজনেস এর ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এখানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্প্যামিংয়ের কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যেমন,
- অতিরিক্ত মেসেজ করা
- একই জিনিস বার বার পোস্ট করা
- অথবা কমেন্ট / মেসজের রিপ্লাই না দেয়া
- ফেইক পণ্য প্রদর্শন এমন আরো অনেক কিছু।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্প্যামিং এর ক্ষতিকর দিক
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্প্যামিং বিভিন্ন কারণে খারাপ বলে বিবেচিত হয়:
ইউজারের নেগেটিভ অভিজ্ঞতা:
স্প্যামিং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অবাঞ্ছিত এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তুতে ডুবিয়ে দেয। ফলে সে যে প্রডাক্টের সন্ধান করছে সেটিই খুঁজে পায় না। অথবা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। এক পর্যায়ে ইউজার রা বিরক্তি বোধ করেন। শেষ
এবং জড়িত করা কঠিন করে তোলে। যার ফলে স্প্যামিংয়ের জন্য দায়ী ব্র্যান্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
সত্যতার অভাব:
স্প্যামিং এ আরেকটি দিক হল সয়ংক্রিয়তা। এটি হয়ত আপনার জন্য ভাল, কিন্তু ইউজারদের কাছে এটি বিরক্তির কারণ হতে পারে। ক্রেতারা আপনার ব্র্যান্ডের উপর থেকে বিশ্বাস হারাতে শুরু করে। তথ্য গুলো ফেইক কিংবা অটো জেনেরেটেড মনে হতে পারে।
ব্র্যান্ডের খ্যাতি নষ্ট:
যখন একটি ব্র্যান্ড স্প্যামিং প্র্যাক্টিস করে, তখন নিঃসন্দেহে এর খ্যাতি নষ্টের ঝুঁকি থাকে। ম্যাক্সিমা ব্যবহারকারীরা ব্র্যান্ডটিকে অ-পেশাদার, মরিয়া বা অনৈতিক বলে মনে করতে পারে। ব্র্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদী জনপ্রিয় অল্প কিছুদিনেই ধ্বংস হতে পারে
প্ল্যাটফর্মের নিয়ম লঙ্ঘন:
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কিছু টার্ম এন্ড কন্ডিশন থাকে। যেগুলো স্প্যামিং কে বা এই রিলেটেড কাজ গুলোর একদম বিপক্ষে। তাই কোনো ভাবে স্প্যামিংয়ে জড়িত হলে অ্যাকাউন্ট সাসপেনশন বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সহ জরিমানাও হয়ে যেতে পারে। প্ল্যাটফর্মের নিয়ম লঙ্ঘন করা শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের অনলাইন প্রেজেন্টেশন এর ক্ষতি করে না বরং এর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতাকেও এফেক্ট করে।
৬ টি স্প্যামিং যা মার্কেটিং প্র্যাক্টিস এ অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন-
১. অত্যধিক স্ব-প্রচার:
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় টার্ন-অফগুলির মধ্যে একটি হল ক্রমাগত স্ব-প্রচার করা ব্রান্ড গুলো। যদিও আপনার পণ্য বা সার্ভিসের প্রদর্শন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে গেলো একে স্প্যাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
তাই এর পরিবর্তে, মূল্যবান এবং ইন্টারেস্টিং কনটেন্ট তৈরিতে ফোকাস করুন। যা আপনার দর্শকদের কাছে এন্টারটেইনিং ও ইনফরমেটিভ হবে। আর আপনার ফলোয়ারদের সাথে একটি সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রচারমূলক এবং অ-প্রচারমূলক বিষয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখুন।
২. ফলোয়ার কিনে মার্কেটিং প্র্যাক্টিস করা :
কিছু কোম্পানি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর করার জন্য অনুসরণকারী বা এনগেজমেন্ট মেট্রিক্স কিনে থাকে। এটি একটি ক্ষতিকারক অনুশীলন যা আপনার ব্র্যান্ডের সত্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাকে বাজে ভাবে ব্যহত করে। এসব ফেইক অনুগামীরা কোন বাস্তব এনগেজমেন্ট ক্রিয়েট করবে না। আপনার ব্যবসায় কোনো অর্থপূর্ণ অবদান রাখবে না।
এর পরিবর্তে, নিয়মিত একটিভ থাকুন ও অর্গানিক ফলোয়ার তৈরী করুন। এবং তাদেরকে ব্র্যান্ড প্রমোশনের কাজে ব্যবহার করুন৷
৩. অপ্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা:
হ্যাশট্যাগ হল আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার রিচ এবং ভিজিবিলিটি বাড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কিন্তু, এদের অপব্যবহার ই আবার স্প্যামিং আচরণ হিসাবে দেখা হয়। তাই অপ্রাসঙ্গিক বা অত্যধিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, যেগুলির সাথে আপনার পণ্যের কোন সংযোগ নেই৷
আর প্রাসঙ্গিক এবং নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগ ইউজ করুন যা আপনার ব্র্যান্ড ও পণ্যের সাথে ইউজুয়ালি কানেক্টেড। এটি আপনাকে রিয়েল ইউজার দের আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে যারা আপনার কাজে আগ্রহী।
৪. অটো-ডিএম এবং গণ ট্যাগিং:
স্বয়ংক্রিয় ডিরেক্ট মেসেজ (DMs) এবং গণ ট্যাগিং আপনার অনুসরণকারীদের খুব দ্রুত বিরক্ত করে ফেলে। আর আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার তৈরী হয়। প্রত্যেক নিউ ফলোয়ার কে জেনেরিক বা প্রচারমূলক DM পাঠানো নিময় বহির্ভূত এবং বিরক্তিকর।
একইভাবে, নির্বিচারে মানুষকে অহেতুক পোস্টে ট্যাগ করাও একটি স্প্যামি প্র্যাকটিস। এতে রিচ তো বাড়েই না বরং যারা কানেক্টেড থাকেও তারাও চলে যেতে বাধ্য হয়। তাই পোস্ট কিংবা কমেন্টে অহেতুক ট্যাগিং ও মেনশনের এর বিষয় টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন৷
৫. ইউজার দের কমেন্ট এবং রিয়্যাকশন উপেক্ষা করা:
সোশ্যাল মিডিয়া একটি ডাবল কমিউনিকেশন মাধ্যম। শুধু একদল বলে যাবে আর অন্যদল শুনে যাবে এমনটি না। দু’পক্ষই মতামত আদানপ্রদান, মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। আর এগুলো প্রতি রেসপন্স ও থাকতে হবে।
তাই আপনার ব্র্যান্ড নিয়ে করা কমেন্ট, রিভিউ ও রিয়্যাকশন গুলো যথাযথ রেসপন্স করুন। এতে করে ফলোয়ারদের সাথে খুব ভাল একটা সম্পর্ক তৈরী হবে।
৬. ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট পুনরায় পোস্ট করা:
পণ্য নিয়ে মূল্যবান তথ্য শেয়ার করা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর একটি বেসিক দিক। কিন্তু এর একটি লিমিট থাকতে হবে। ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট পুনরায় পোস্ট করাও স্প্যাম হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ক্রমাগত একই বিষয়বস্তু বার বার পোস্ট করা হলে অডিয়েন্স রা চরম বিরক্ত বোধ করেন। আর সেই পণ্যের প্রতি আকর্ষণ হওয়া তে দূরে কথা, আগ্রহ ই হারিয়ে ফেলতে পারে।
তবে, একই পণ্যের কথা বার বার ক্রেতাদের মনে করিয়ে দিতে চাইলে, সম্পূর্ণ নতুনভাবে ও ইন্টারেস্টিং করে পোস্ট করুন।