সাধারণত যিনি উদ্যোগ গ্রহন করে তাকে আমরা উদ্যোক্তা বলি। একজন উদ্যোক্তাকে একজন উদ্ভাবক ও বলা যায়, সে নতুন ধারণা,পন্য, পরিষেবা নিয়ে আসে। সে তার আইডিয়াকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য সর্বদা কাজ করে যায়।
ফরাসি অর্থনীতিবীদ ব্যাপটিস্ট, যিনি প্রথম ১৮০০ সালে উদ্যোক্তা শব্দের অন্যতম প্রবর্তক। তার মতে, উদ্যোক্তা হচ্ছে এমন একজন যিনি সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। যিনি অর্থ শ্রম ও পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে পণ্যের মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে বের করেন।
চলুন জেনে আসি উদ্যোক্তার ৭ টি ভিন্ন ধারণা
উদ্ভাবন
আইডিইও -এর মতে, উদ্ভাবন বলতে কোন পণ্য বা পদ্ধতি বা সেবার উন্নয়ন বা অভিযোজন বা প্রবর্তন বোঝায় যা জনগণের জন্য নতুন সুবিধা বা উপকার তৈরি করে। একজন উদ্যোক্তা তার মেধা, বুদ্ধি ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনে সচেষ্ঠ থাকে। সে উদ্ভাবনের মাধ্যমে পন্যে বা সেবায় নতুনত্ব নিয়ে আসে। তাতে করে ক্রেতা বা ভোক্তারা নতুন নতুন সেবা বা পন্য পায় এবং উদ্যোক্তা ও তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে এগিয়ে যায়।
দূরদর্শিতা
ভবিষ্যতের বিষয় অনুধাবন করে জ্ঞান আর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পূর্বে প্রস্ততি নেওয়াকে দূরদর্শিতা বলে। একজন উদ্যোক্তার মাঝে দুরদর্শিতা বিদ্যামান থাকে। পিপড়া যেমন বছরের দীর্ঘ সময় খাবার সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য, কেননা ওই সময় খাবার সংগ্রহে কষ্ট হবে ও প্রতিকূলতার মাঝে পড়তে হতে পারে বলে, তেমনি একজন উদ্যোক্তা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সমস্যার কথা চিন্তা করে আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে।
পিপড়া বিপদ থেকে বাঁচার জন্য দলবেঁধে চলাফেরা করে। কোনো বিপদের কথা শুনলে মুহূর্তের মধ্যে সে তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আমরা যদি আমাদের বিপদের দিনের জন্য সাধ্যমতো সঞ্চয় করি, তাহলে আমরা উপকৃত হবো। আর এসব গুনগুলো উদ্যোক্তার মধ্যে বিদ্যমান
উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণাই তাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
সর্বদা শিখতে থাকে
একজন উদ্যোক্তার নিজেকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে সর্বদা জ্ঞান অর্জন বা শিখতে থাকে। শিখতে শিখতে সে দক্ষ হয়ে উঠে,উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণা আর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে একটূ একটু করে পৌঁছে যায়।
একজন উদ্যোক্তা সব জায়গায় থেকে শিক্ষা গ্রহন করে। কোথাও সমস্যায় পড়লে কোথাও সাফল্য অর্জন করলে, এগুলো থেকে সমস্যায় পড়ার কারন বের করে এবং তা সমাধানে সচেষ্ঠ থাকে এখান থেকে ও উদ্যোক্তা শিক্ষা গ্রহন করে ,যাতে করে পরবর্তিতে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। আবার যখন কোন কিছু অর্জন করে তখন ও সেখান থেকে উদ্যোক্তা সেখান থেকে শিখে কিভাবে এটি অর্জন হলো আর কি কি করলে আরো বেশি ভালো করা যেত। শেখার এই আগ্রহ তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
কৌতুহলী
একজন উদ্যোক্তা সর্বদা কৌতুহলী থাকে। কেন হচ্ছেনা, কেন হচ্ছে, সমস্যা কোথায়, সম্ভাবনা কোথায়, প্রতিযোগীরা সমস্যার সমাধান করছে কিভাবে, তারা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এগুলো জানার ব্যাপারে বেশ কৌতুহলী থাকে। আর কৌতুহলী থেকে জানার চেষ্টা করে। আর যত বেশি জানবে সে তত বেশি এগিয়ে যাবে। উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণা তাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে।
ঝুঁকি গ্রহন
ইংরেজিতে প্রবাদ আছে “No Risk, No Gain”। প্রতিটি সম্ভাবনার যায়গাতে ঝুঁকি রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে পৌঁছাতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে কেননা প্রত্যেক ব্যবসায়ই ঝুঁকি বিদ্যমান কোনটাতে কম কোনটাতে বেশি। আর একজন উদ্যোক্তা ঝুঁকি গ্রহন করে। ঝুঁকি আছে জেনে ও তিনি বিনিয়োগ করেন।
মার্ক জুকারবার্গ বলেন, সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কোনও ঝুঁকি না নেওয়া। যে পৃথিবীতে সত্যিই দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, একমাত্র কৌশল যে ব্যর্থ হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে তা হল ঝুঁকি না নেওয়া। উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণা তাকে ঝুঁকি নিতে সাহায্য করে।
উদ্যোক্তা ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে
যারা ব্যর্থ হওয়ার সাহস করে শুধু তারাই বড় সফলতা অর্জন করতে পারে।
— রবার্ট এফ কেনেডি
ব্যর্থতা সফলতার একটি অংশ। উদ্যোক্তারা ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে।তারা ব্যর্থ হলে সেখান থেকে শিখে সেটা পরবর্তীতে কাজে লাগায়। সব ইন্টারভিউ থেকে রিজেক্ট হয়ে যাওয়ার পর জ্যাক মা যদি হাল ছেড়ে দিতেন, যদি আর নতুন করে কিছু করার চেষ্টা না করতেন তাহলে তিনি চায়নার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রিটেইলার আলিবাবার মালিক হতে পারতেন না। এটি একটি উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণা। উদ্যোক্তার ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে তাই এ নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করে ও বাস্তবায়ন এর জন্য কাজ করে। এসব কাজে সমস্যাগুলো একজন উদ্যোক্তা দক্ষতার সাথে সমাধান করে।
লক্ষ্য অর্জনে অটুট
আর্ল নাইটেঙ্গেল (পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট) বলেন, “কখনো কি ভেবেছ, কিছু মানুষ কেন যা চায়, তাই পায়; আর কিছু মানুষ অনেক কষ্ট করার পরও কিছুই পায়না? এর কারণ লক্ষ্য। কিছু লোকের লক্ষ্য আছে, কিছু লোকের নেই। লক্ষ্য থাকলে অর্জন করতে পারবে – লক্ষ্য না থাকলে কিছুই পাবে না” ভালো খারাপ যাই ঘটুক না কেন একজন উদ্যোক্তা সব প্রতিকুলতার মাঝে ও লক্ষ্য অর্জনে অটুট থাকে। একভাবে ব্যর্থ হলে অন্যভাবে চেষ্টা করে, অন্য ভাবে ও ব্যর্থ হলে নতুন উপায় বের করে। লক্ষ্য অর্জনে সে থাকে অবিচল। তার ধারণা থাকে অন্যদের থেকে আলাদা। উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণার ফলে সে থেমে না থেকে তার ধারণা ও বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষন করে তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যায়।
আপনি চাইলে আমাদের একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কিভাবে শুরু করবেন এই ব্লগটি পড়ে আসতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন উদ্যোক্তার ভিন্ন ধারণার ফলে সে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে এবং দ্রুত সফলতা অর্জন করে।