একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কিভাবে শুরু করবেন?

নতুন উদ্যোক্তা
Share This Post
আপনি একজন নতুন উদ্যোক্তা? 

নিজেই নিজের বস হওয়া, সব সিদ্ধান্ত নিজে নেয়া, নিজের টাইম টেবিল মতন, নিজের গোল সেট করা এবং অন্যদেরকে সেই লক্ষ্য অর্জন করতে মোটিভেট করা, নিজের সব প্রফিটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেয়া ইত্যাদি কারণে অনেকের কাছেই উদ্যোক্তা হওয়া ক্যারিয়ারের আল্টিমেট গোল।

কবি জন মিল্টন তাঁর প্যারাডাইস লস্ট কাব্যে লিখেছিলেন, “স্বর্গে গোলামি করার চাইতে নরকে রাজত্ব করা অনেক ভালো।”

উদ্যোক্তা হওয়ার যেমন চমৎকার কিছু দিক আছে তেমন এর ঝুঁকিও প্রচুর। একজন নতুন উদ্যোক্তার ঝুঁকি, স্ট্রেস ইত্যাদি কোনভাবেই নরক যন্ত্রণার চাইতে কম নয়। কিন্তু, তারপরও মানুষ উদ্যোক্তা হতে চায়। কারন, এটি আপনাকে রাজা হওয়ার অনুভূতি দিবে।

আমরা ব্যবসায় উদ্যোগের কেবল আলোর অংশটুকু দেখেই এতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি। কিন্তু, বাস্তবতা অনেক কঠিন। অলমোস্ট ৯০% নতুন উদ্যোক্তা ফেইল করে। যাঁরা সাফল্য পায় তাঁরা একটি দীর্ঘসময় লস দিয়ে ব্যবসা করতে থাকে। লাভ পেতে পেতে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০/১৫ বছরও অপেক্ষা করতে হয়।

একজন নতুন উদ্যোক্তার ভেতর ধৈর্য, ক্ষতি স্বাভাবিকভাবে সয়ে নেয়ার ক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তি এই সকল গুনাগুন অবশ্যই থাকা উচিত।

আজকের ব্লগে আমরা নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় তথা একজন নতুন উদ্যোক্তা কিভাবে তাঁর যাত্রা শুরু করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করব। 

১) প্রফিটেবল স্টার্ট আপ আইডিয়া খুঁজে বের করাঃ-

একজন নতুন উদ্যোক্তার কাজ হয় প্রথমেই একটি প্রফিটেবল স্টার্ট আপ আইডিয়া জেনারেট করা। কোন ব্যবসা প্রফিটেবল হবে? যেখান থেকে মানুষ পণ্য এবং সেবা বেশি গ্রহন করবে অবশ্যই সেই ব্যবসা।

এখন আমরা কিভাবে বুঝবো কোন ধরনের পণ্য বা সেবা মানুষ বেশি গ্রহন করবে? অবশ্যই যা মানুষের সমস্যার সমাধান বেশি দিতে পারবে সেই সব পণ্য বা সেবা।

সুতরাং, আপনি কোন ধরণের ব্যবসায় নামবেন তা আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করে আপনি মানুষের কোন প্রবলেমের সল্যুশন দিতে পারছেন তাঁর উপর নির্ভর করে।

স্টার্ট আপ আইডিয়া নতুন-উদ্যোক্তা

কোন সমস্যার আপনি সমাধান করবেন তাঁর জন্য মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে আপনার বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। যেমনঃ- উবারের প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভিস কালনিক এবং গ্যারেথ ক্যাম্প একদিন ট্যাক্সিক্যাব পাচ্ছিলেন না। এই সমস্যার সমাধানেই তাঁরা উবার সার্ভিস শুরু করলেন।

আইডিয়া জেনারেট করার আরেকটি উপায় হচ্ছে নতুন ইমার্জিং স্টার্ট আপগুলির উপর নজর রাখা। তাঁরা কি কাজ করছে, কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে সেই বিষয়গুলিকে কিভাবে আপগ্রেড করা যায় এসব নিয়ে চিন্তা করলেই নতুন আইডিয়া তৈরি করা সম্ভব। 

এইক্ষেত্রে ট্রেন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনাকে অবশ্যই মার্কেটের নতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে। শুধু আইডিয়া রাখলে চলবে না আগামীতে এই ট্রেন্ডের কি কি ইমপ্রুভমেন্ট হতে পারে সেইসব বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে আইডিয়া ডেভেলপ করতে হবে।

২) গ্রোয়িং কোন ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করাঃ-

একটি প্রোডাক্টের কয়েকটি স্টেজ আছে। গ্রোয়িং স্টেজ হচ্ছে একটি প্রোডাক্টের তেমন একটি স্টেজ যখন তাঁর মার্কেটে চল শুরু হয় এবং সম্ভাবনা থাকে যে আগামীতে একটি দীর্ঘসময় এই প্রোডাক্টটি বেশ ভালভাবেই মার্কেটে বিরাজ করবে। 

আপনি অবশ্যই ডিক্লাইনিং স্টেজে থাকা কোন প্রোডাক্ট কিংবা খুব কম সময়ের ভেতরেই ডিমান্ড শেষ হয়ে যেতে পারে এমন কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করবেন না। এতে খুবই বেশি সম্ভাবনা আছে অল্পসময়ের ভেতরেই আপনার ব্যবসা লাটে ওঠার। 

আপনি যদি টেক প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন তাহলে অবশ্যই সবসময় এই সেক্টরের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের ওপর আপনার নজর রাখতে হবে। কারন,তথ্যপ্রযুক্তির খাতে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পুরাতন কোন প্রোডাক্ট বাতিল হয়ে নতুন কিছু তাঁর জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

নতুন উদ্যোক্তা

 

এক্ষেত্রে আপনি কোন গ্রোয়িং প্রোডাক্ট নিয়ে যে যে ভাবে কাজ করতে পারেন-

  • প্রোডাক্ট ইমপ্রুভমেন্ট।
  • নতুন ফিচার যোগ করা।
  • সৃজনশীল মার্কেটিং আইডিয়া ব্যবহার করা।

এখন কোন প্রোডাক্ট গ্রোয়িং স্টেজে আছে বা ভবিষ্যতে ফ্লারিশ করবে তা বোঝার উপায় কি?

  • প্রোডাক্ট বেনিফিট নিয়ে কাজ করা।
  • প্রোডাক্ট রিভিউয়ারদের মতামত নিয়ে কাজ করা।
  • কাস্টমারদের এটিচিউড কেমন প্রোডাক্টটির প্রতি তা নিয়ে চিন্তা করা।
৩) বেটার কিংবা স্বল্পমূল্যে কোন সল্যুশন নিয়ে আসাঃ-

আপনি যে পণ্য বা সেবা নিয়ে আসছেন সেটি একজিস্টিং কোন প্রবলেমের যে সল্যুশন নিয়ে আসছে সেটি কি যেই সিস্টেমটি এখন আছে তাঁর চাইতে বেটার কিনা সেই সম্পর্কে আপনাকে ভাবতে হবে। 

যদি বেটার নাও হয় আপনাকে চিন্তা করতে হবে আগের চাইতে স্বল্পমূল্যে সার্ভিস আপনি দিতে পারছেন কিনা? এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই আপনার পক্ষে এমন একটি প্রোডাক্ট বাজারে আনা সম্ভব যা আপনাকে প্রফিট জেনারেট করতে সহায়তা করবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে মার্কেট রিসার্চে এবং ব্রেনস্টর্মিং-এ বেশি সময় দিতে হবে। 

সল্যুশন - নতুন আইডিয়া
  • নেটওয়ার্কিং।
  • মার্কেট রিসার্চ।
  • ব্রেইনস্টর্মিং।

এই তিনটি বিষয় আপনাকে নতুন সার্ভিস এবং তাঁর সল্যুশন খুঁজে নিতে সহায়তা করবে।

৪) আপনার বিজনেস আইডিয়ার সাথে কাস্টমারের চাহিদা তুলনা করাঃ-

উপরের তিনটি স্টেপে আপনি আপনার আইডিয়াটি ডেভেলপ করেছেন। এবার আপনার কাজ হবে এটা দেখা যে আপনার প্রজেক্টটি বাস্তবতার সাথে কতটুকু খাপ খাচ্ছে। এর জন্য আপনাকে যেটি করতে হবে তা হলো খুব স্বল্প পরিসরে আপনার পণ্য বা সেবা চালু করে দেখতে হবে কাস্টমাররা এটি পছন্দ করছে কিনা।

কাস্টমারের চাহিদা

কাস্টমারদের রি-অ্যাকশন আপনাকে বলে দিবে যে কিভাবে আপনি আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারেন। 

৫) বিজনেস প্ল্যান তৈরিঃ-

এবার যখনই আপনি আপনার বিজনেস নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে এটি আপনাকে প্রফিট এনে দিবে। এবার আপনার কাজ হবে একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা যাঁর দ্বারা আপনি ইনভেস্টমেন্ট এবং রিটার্নের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে পারেন।

একটি বিজনেস প্ল্যানে আপনার ইনভেস্টমেন্ট, রিটার্ন, রি-ইনভেস্টমেন্ট, কোম্পানি পলিসি এবং এক্সিট এই সমস্ত ব্যাপারগুলো উল্লেখ থাকতে হবে।

বিজনেস প্ল্যান - নতুন উদ্যোক্তা

এভাবেই একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে একজন নতুন উদ্যোক্তা বিজনেসে এগিয়ে যাবেন।

শেষ কথা

এখনকার সময়ে অনেক ইউনিক আইডিয়া নিয়ে নতুন উদ্যোক্তা আসছেন এবং সফলও হচ্ছেন। একজন নতুন উদ্যোক্তা নতুন বিজনেস কিভাবে শুরু করতে পারেন সেই সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়গুলোর সঠিক বিবরন দেওয়ার মাধ্যমে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে সাহায্য করবে, তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কন্টেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্টের ৭টি উপায়
Marketing

বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ৭টি উপায়

একজন উদ্দোক্তার ক্ষেত্রেও তাই। সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া, অর্থাৎ একটা প্রোপার টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব। একটা সুনির্দিষ্ট ওয়ার্কিং শিডিউল ছাড়া কখনই বিজনেস গোল

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,