ডিজিটাল বিপ্লব বিশ্বের বাস্তবতা খুব দ্রুত বদলে দিয়েছে। বর্তমানে আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যা বিশ্ব ইতিহাসের অন্য যেকোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি গতিশীল। একবিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল টেকনিক না জানলে আপনি কোনক্ষেত্রেই কাজ করতে পারবেন না। ডিজিটাল যুগের মাস্ট নিড হচ্ছে ডিজিটাল স্কিল অর্জন।
যত সময় এগোবে ডিজিটাল টেকনিকের গুরুত্বও তত বাড়বে। বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর এই বাস্তবতা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। করোনা লকডাউনের সময় মানুষের ডিজিটাল ডিপেন্ডেন্সি অনেক বেশি বেড়েছে। এই সময় ফিজিক্যাল বিজনেসগুলো বিশাল ধাক্কা খেলেও ঠিক এর উলটোচিত্র দেখা গেছে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে। ই-কমার্স গুলো এই সময়ে বিশাল লাভ করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাদে অন্যান্য সকল সরকারি এবং বেসরকারি অফিস পরিচালিত হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে।
সুতরাং,বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল টুলস এন্ড ডিজিটাল স্কিল আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি ডিজিটাল যু্গে একজন তরুন কি ডিজিটাল স্কিল অর্জন করবেন তাঁর ওপর ভিত্তি করে। সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
১) ডিজিটাল লিটারেসিঃ-
ডিজিটাল লিটারেসি বলতে বোঝায় ডিজিটাল বিভিন্ন টার্মস এন্ড কনসেপ্টস সম্পর্কে জ্ঞান রাখা। এর ভেতর বেসিক কিছু টার্ম সম্পর্কে তো সবাইকেই জ্ঞান রাখতে হবে । তাছাড়া আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং-কে আপনার জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ধরে নেন ,তাহলে একজন ডিজিটাল মার্কেটিং প্রফেশনাল হিসেবে এই সম্পর্কিত ডিপ নলেজ আপনাকে রাখতে হবে।
- ই-মেইল।
- সোশ্যাল মিডিয়া।
- ক্লাউড কম্পিউটিং।
- অনলাইন মার্কেটিং।
- মোবাইল ব্যাংকিং।
- বিভিন্ন অ্যাপস এর ব্যবহার।
- অনলাইন মিটিং অ্যাপস।
এইসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা না রাখলে এই সময়ে আপনি এক পা’ও চলতে পারবেন না।
আবার ,আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে এসবের পাশাপাশি আরেকটু হায়ার লেভেলের জিনিস নিয়ে আপনার ধারণা থাকতে হবে।
যেমনঃ-
- কন্টেন্ট ক্রিয়েশন।
- সার্চ ইঞ্জিন আপটিমাইজেশন।
- প্রোডাক্ট অটোমোশন।
- সাইবার সিকিউরিটি।
- ফিনটেক
ইত্যাদি নিয়ে ভাল ধারণা আপনাকে একটি ভাল পজিশন পেতে সাহায্য করে।
২) মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাঃ-
ডিজিটাল টেকনোলজির সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গতিশীলতা। প্রতিদিনই নতুন নতুন টেকনোলজিক্যাল ফর্ম আবিষ্কৃত হচ্ছে। পুরাতন স্ট্রাকচার বাতিল হচ্ছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এমনও সাইট আছে যাঁরা প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন নতুন ফিচার যুক্ত করছে। নিজেদের ওয়েবসাইটকে আরো বেশি আপডেট করছে। ডিজিটাল যুগের একজন তরুনকে অবশ্যই নতুন নতুন ফিচার এবং সাইটের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার এবিলিটি থাকতে।
দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে তাকে তাঁর কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ডিজিটাল যুগে এই ডিজিটাল স্কিল থাকতেই হবে একজন তরুণের।
যে যত দ্রুত শিখতে পারবে এবং চেঞ্জড সিচুয়েশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে সে তত দ্রুত গতিতে ক্যারিয়ারে ভাল করতে পারবে।
এইজন্য আপনাকে লেটেস্ট টেকনোলজি সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকতে হবে। আর যেকোন ধরণের পরিবর্তনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
৩) টিমওয়ার্কে পারদর্শিতাঃ-
ডিজিটাল টেকনোলজির একটা স্পেশাল দিক হলো এখানে টিম পারফরম্যান্স ছাড়া কোন কাজ করা মুশকিল। আপনি চাইলেও একা একা কোন প্রজেক্ট নামাতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রচুর প্রেশারের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। সবচাইতে ভাল আউটপুটটিও এইরকম অবস্থায় আপনি দিতে পারবেন না।
আপনাকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের কাজ একটি টিমের মাধ্যমে করতে হবে। একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কথাই ভাবুন না। কাউকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন,কাউকে সাইট তৈরি,কাউকে কন্টেন্ট রাইটিং,কাউকে ওয়েব ডিজাইনিং এভাবে বিভিন্ন জনের মধ্যে কাজ ভাগ হয়ে আছে। এদের সবার সবার কাজের সমন্বয় হয়েই একটি আউটপুট আমাদের সামনে আসে।
আপনি যখন কোন কাজ করবেন তখন অবশ্যই আপনার পার্টটি এমনভাবে করবেন যেন তা আপনার টিম মেম্বারদের কাজকে সহজ করে। আর অবশ্যই ডেডলাইনের ভেতরে আপনাকে আপনার কাজ শেষ করার অভ্যাস করতে হবে। ডিজিটাল যুগে একটি টিমে সাধারণত যেইসব কাজ হয় সেগুলোর কোন একটি স্কিলে আপনাকে স্পেশালাইজড হতে হবে।
যেকোন একটি স্কিলে স্পেশালিটি অর্জন করতে গেলে আপনাকে পুরো প্রসেস নিয়েই একটি ধারনা নিতে হবে যা আপনাকে পুরো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের একটি কমপ্লিট ধারনা প্রদান করবে।
এইক্ষেত্রে যেসব মাস্ট নিড ডিজিটাল স্কিল আছে সেইগুলো হচ্ছেঃ-
- কন্টেন্ট রাইটিং।
- ওয়েব ডিজাইনিং।
- গ্রাফিক্স ডিজাইন।
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
- ভয়েস ওভার।
- প্রেজেন্টেশন।
- ফটোগ্রাফি।
- ভিডিও ইডিটিং ।
ইত্যাদি।
৪) ইন্টারপারসোনা ডিজিটাল স্কিলঃ-
এইসব টেকনিক্যাল স্কিলের পাশাপাশি আপনার কিছু মানবিক এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে যাঁর কারনে আপনার টিম মেম্বাররা আপনার সাথে কাজ করতে ইজি ফিল করে।
- আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভাল হতে হবে।
- সমন্বয় করে কাজ করার টেকনিক জানা থাকতে হবে।
- অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার ক্যাপাবিলিটি থাকতে হবে।
- আপনার ভেতরে এমপ্যাথি থাকতে হবে।
৫)ক্রিয়েটিভিটি এবং উপস্থিত বুদ্ধিঃ-
ডিজিটাল যুগ হচ্ছে ক্রিয়েটিভ মানুষদের যুগ। আপনি যদি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ভাল কিছু করতে পারবেন।
দ্রুত সমস্যা সমাধানের এবিলিটি হচ্ছে আরেকটি গুন যা আপনার ভেতর থাকতে হবে। চর্চার মাধ্যমে এইসব বিষয় আপনাকে আয়ত্ত্ব করতে হবে।
শেষ কথা
এই ছিলো ডিজিটাল যুগে তরুনদের ডিজিটাল স্কিল নিয়ে আমাদের আজকের ব্লগ।
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।