কন্টেন্ট কে ইন্টারনেটের প্রাণ বলা হয়। বর্তমান ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট রয়েছে, ভিডিও কন্টেন্ট, অডিও কন্টেন্ট, রাইটিং কনটেন্ট, আর্টিকেল এবং আরো অনেক। মার্কেটার বা বিভিন্ন ব্র্যান্ড মালিক তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদা আলাদা কন্টেন্ট এর দিকে ফোকাস করে থাকেন তাদের ব্র্যান্ড প্রচার এবং সেলস বৃদ্ধি করার জন্য।
কিন্তু বর্তমানে এতো এতো ধরনের পপুলার কন্টেন্ট টাইপ রয়েছে যে ব্র্যান্ড মালিক এবং মার্কেটার রা অনেক সময় কনফিউজড হয়ে যান ঠিক কোন টাইপের কন্টেন্ট মার্কেটিং এ ফোকাস করবেন এবং কোন টাইপের কন্টেন্ট তাদের ব্র্যান্ডের জন্য এপ্রোপ্রিয়েট হবে। একেক টাইপের কন্টেন্ট একেক টাইপ মার্কেটিং এর জন্য কার্যকরী। সুতরাং কন্টেন্ট মার্কেটিং করার আগে আপনাকে বুঝতে হবে ঠিক কোন ধরনের কন্টেন্ট টাইপ আপনার ব্র্যান্ডের জন্য উপযুক্ত। চলুন দেখে নেই সাতটি পপুলার কন্টেন্ট টাইপ এবং এগুলি কিভাবে আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে এবং সেল বাড়াতে ব্যবহার করবেন
সাতটি পপুলার কন্টেন্ট টাইপ
১. ব্লগ
পপুলার কন্টেন্ট টাইপ গুলির মধ্যে ব্লগ পোস্ট বর্তমানে বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্পেশালি বিভিন্ন বিজনেসের ক্ষেত্রে তারা ব্লগ পোস্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে বিশাল নাম্বার অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

আপনার ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট রিলেটেড রিলেভ্যান্ট, হাই কোয়ালিটির এবং ওয়েল রাইটেন ব্লগ ক্রিয়েট করুন। এবং ব্লগ টপিকের দিকে মনোযোগ দিন, এমন টপিক সিলেক্ট করুন যেটা একই সাথে আপনার ব্র্যান্ড কে হাইলাইট করবে এবং অডিয়েন্স ও ইন্টারেস্টেড হবে ব্লগ পোস্টটি পড়ার জন্য এবং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে রিলেশনশিপ বিল্ট করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। ব্লগ পোস্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্লগ লিখা এবং পাব্লিশ করা খুবই ইজি এবং খুব ইজিলি এটা অন্যান্য দের সাথে শেয়ার করা যায় এবং সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেও অডিয়েন্স শর্ট টাইমেই ডিসকাভার করতে পারে। আপনার প্রত্যেক ব্লগ পোস্টে CTA (Call to action) এড করতে ভুলবেন না। এবং ব্লগ পোস্ট করার ক্ষেত্রে রেগুলারিটি মেইনটেইন করা জরুরি। এছাড়াও ব্লগ পোস্ট রিলেভ্যান্ট কী ওয়ার্ডস (Key Words) দিয়ে অপটিমাইজ করুন এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এর জন্য।
২. ইমেইল কন্টেন্ট
মোস্ট পপুলার কন্টেন্ট টাইপ এর মধ্যে সবচেয়ে ওল্ড টাইপ হলো ইমেইল কন্টেন্ট। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন বিজনেস এবং ব্র্যান্ড মালিক তাদের টার্গেটেড কাস্টমার দের সাথে ইমেইলের মাধ্যমে কমিউনিকেট করে থাকে। এটা হলো ফরমাল একটা ওয়ে কাস্টমার দের সাথে কানেক্ট থাকার। ইমেইল কন্টেন্ট এর মাধ্যমে ব্র্যান্ড মালিক তাদের কাস্টমার দের কে ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইনফর্ম করে, এবং পার্টিকুলার কাস্টমারদের, নতুন বা পুরাতন কাস্টমারদের কে তাদের সার্ভিস, ডিসকাউন্ট, মেগা সেল সম্পর্কে ইনফর্ম করে থাকে।

ইমেইল কন্টেন্ট এর মাধ্যমে মার্কেটিং করার সময় অবশ্যই আপনাকে ইমেইল সাবজেক্ট, ল্যান্ডিং পেইজ নিয়ে থিংক করতে হবে এবং ক্রিয়েটিভ ওয়েতে এসব ডিজাইন করতে হবে। ইমেইল কখনোই অনেক লং হওয়া যাবেনা। কেননা, অডিয়েন্স অনেক সময় লং ইমেইল পড়তে ইন্টারেস্টেড হয়না। সুতরাং অল্প কথায় ইমেইল কমপ্লিট করতে হবে এবং রাইট মেসেজ দিতে হবে। এবং ইমেইলের লাস্টে আপনার সিগনেচার, কোম্পানি লোগো, কন্টাক্ট ইনফরমেশন এবং ওয়েবসাইট লিংক এড করা জরুরি।
৩. ইনফোগ্রাফি (Info-graphics)
আরেকটি পপুলার কন্টেন্ট টাইপ হলো ইনফোগ্রাফি যেটা আপনি মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন সহজেই। কারণ এই একটা ইনফোগ্রাফি তেই আপনি পাচ্ছেন লার্জ নাম্বার ইনফরমেশন একদম ভিজ্যুয়াল ওয়েতে৷ যেমন, স্ট্যাটিসটিকস, রিসার্চ এবং আরো অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ডাটা। এবং এগুলি সহজে শেয়ার ও করা যায়।

কন্টেন্ট মার্কেটিং ইন্সটিটিউট এর রিপোর্ট অনুযায়ী B2B মার্কেটিং এ এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ইনফোগ্রাফি। এবং লাস্ট কয়েক বছরে এটা ৬৭% এ দাড়িয়েছে। ইনফোগ্রাফি শুধু মাত্র আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আসতেই হেল্প করেনা পাশাপাশি কোয়ালিটি ব্যাকলিংকস এবং অডিয়েন্স বাড়াতেও হেল্প করে।
ইনফোগ্রাফি ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে ডিজাইন স্কিল থাকা ইম্পর্ট্যান্ট। কন্টেন্ট কে সেকশন অনুযায়ী ব্রেক করা ক্লিয়ার ফন্ট ব্যবহার এবং কালার মেইনটেইন করাও জরুরি অডিয়েন্সের কনসেন্ট্রেশন ধরে রাখতে।
৪. ই-বুক
ই-বুক হলো লং-ফর্ম টাইপের কন্টেন্ট যেগুলি ইলেকট্রনিক বুকস হিসেবে ক্রিয়েট করা হয় এবং পিডিএফ ভার্সনে এভেইলেবল ডাউনলোড করা যায় এবং HTML ফরম্যাট এও এভেইলেবল। এই টাইপের কন্টেন্ট আপনাকে গ্রেট আউটলেট দিতে পারে আপনার নলেজ শেয়ারের জন্য। ই-বুকস এর আরো সুবিধা হলো এর মাধ্যমে সেলস অপরচুনিটি তৈরি করা যায়, অথোরিটি ইস্টাবলিশ এবং ইমেইল লিস্ট বিল্ট করা যায়।

ই-বুকসের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারে ফোকাস থাকা জরুরি তা হলো এর মাধ্যমে আপনি সল্যুশনস প্রোভাইড করবেন তা না হলে অডিয়েন্সের কাছে এটার কোনো ভ্যালু ক্রিয়েট হবেনা।
৫. ভিডিও কন্টেন্ট
ভিডিও হলো মোস্ট সাক্সেস্ফুল এবং পপুলার কন্টেন্ট টাইপ। ৯৩% মার্কেটার এটা মনে করেন যে ভিডিও কন্টেন্ট ছাড়া মার্কেটিং ইনকমপ্লিট। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় সকল অডিয়েন্স যেকোনো কিছুর ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করেন। ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট এর ক্রিয়েটিভ ভিডিও আপনার প্রোডাক্টের জন্য অডিয়েন্স বাড়াতে হেল্প করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে (Youtube, Facebook, LinekdIn, TikTok,Instagram) আপনার প্রোডাক্ট ভিডিও শেয়ার করার জন্য।

ভিডিও কন্টেন্টে অলওয়েজ ব্র্যান্ড কে ফোকাস করবেন, প্রোডাক্ট, সার্ভিসের কোয়ালিটি, বেনেফিট, ফিচার সবকিছু ডিটেইলস এ এক্সপ্লেইন করবেন। এবং হাই কোয়ালিটি মেইনটেইন করা জরুরি যেনো অডিয়েন্স ভিডিও দেখা মাত্রই ইন্টারেস্টেড হয়।
৬. কেস স্টাডিজ
কেস স্টাডিজ হলো পপুলার B2B কন্টেন্ট টাইপ। এবং এটি রিয়েল লাইফ ফিডব্যাক, কাস্টমার ফিডব্যাক ব্যবহার করে থাকে কাস্টমারের প্রব্লেম, পেইন পয়েন্ট আইডেন্টিফাই করার জন্য। ব্র্যান্ড মালিকদের জন্য এই টাইপের কন্টেন্ট হলো গুড চয়েজ, কারণ এর মাধ্যমে তারা তাদের গ্যাপ গুলো আইডেন্টিফাই করে আরো বেটার সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারে।

কেস স্টাডিজ এর জন্য ফার্স্ট এ প্রব্লেম সামারাইজিং এর মাধ্যমে শুরু করুন যেগুলো আপনার কাস্টমার ফেইস করছে। নেক্সটে সল্যুশনস খোঁজে বের করুন এবং স্টেপ বাই স্টেপ একশন নিন।
৭. ওয়েবিনার
যেকোনো বিজনেসের পরিচিত বাড়ানোর জন্য ওয়েবিনার এর বিকল্প কিছু নেই। ওয়েবিনার এর মাধ্যমে আপনি টার্গেটেড অডিয়েন্স কে এওয়ারনেস দেওয়ার পাশাপাশি আপনার নিজের প্রোডাক্ট এবং ব্র্যান্ডের মার্কেটিং করতে পারেন।

ওয়েবিনার হোস্ট করার সময় আপনার ফোকাস থাকবে অডিয়েন্স কে এওয়ারনেস দেওয়ার উপর এবং এডুকেট করার উপর। কেননা অডিয়েন্স যখন ফ্রি তে আপনার থেকে কিছু শিখতে পারবে তখনই আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিসের প্রতি ইন্টারেস্টেড হবে।
পরিশেষে, সোশ্যাল মিডিয়া কে কেন্দ্র করে এখন মার্কেটিং এর এক বিশাল অংশ এখানেই কমপ্লিট হয়ে থাকে, এবং এজন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন টাইপের কন্টেন্ট। উপরে সাতটি মোস্ট পপুলার কন্টেন্ট টাইপ এক্সপ্লেইন করেছি, এখন আপনার বিজনেস অনুযায়ী উপযুক্ত কন্টেন্ট মার্কেটিং সিলেক্ট করুন এবং মার্কেটিং শুরু করুন।