বর্তমানের আধুনিক যুগের বহুল পরিচিত একটি ব্যবসা হলো ই -কমার্স। ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে ই-কমার্স ব্যবসার পরিমান এবং প্রসার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ মানুষই ই-কমার্স ব্যবসার সাথে জড়িত কারণ অনেক মানুষই অনলাইনে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। অনলাইনের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে অর্থের লেনদেন করতে পারছে কোনোপ্রকার ভোগান্তি ছাড়াই। এই সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে , ডিজিটাল প্লাটফর্ম ই-কমার্স ব্যবসার কল্যাণে।
অতীতে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে, পেমেন্ট গেটওয়ে প্রদানকারীর অভাব ছিল। কিন্তু আজকাল, প্রতি সেকেন্ডে প্রযুক্তির প্রবণতা হিসাবে, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে প্রদানকারীদের মধ্যে ব্যাপক বৃদ্ধি রয়েছে।এই মুহূর্ত থেকে, আপনার ই-কমার্স ব্যবসায় একটি অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি কনফিগার করার জন্য কোন বড় চ্যালেঞ্জ নেই। গবেষণার হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে,৮৬% অনলাইন ব্যবহারকারী ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এই ডিজিটাল বিশ্বে সমস্ত ই-কমার্স স্টোর মালিকদের জন্য একটি অনলাইন অর্থপ্রদানের পদ্ধতি বাধ্যতামূলক৷
ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে কি?
পেমেন্ট গেটওয়ের বলতে বুঝায়-কাস্টমার এবং অনলাইন স্টোরের মালিকের মধ্যে সুরক্ষিত এবং দ্রুত সংযোগের প্রতিনিধিত্বকারী সফ্টওয়্যার,যা অনলাইন ওয়ালেট, ব্যাংক ট্রান্সফার, গিফট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থপ্রদান অন্তর্ভুক্ত করে।পেমেন্ট গেটওয়ে হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে বিক্রেতারা ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহন করে থাকে কোনো প্রকার ঝামেলাহীন ভাবে। এটি হলো মূলত তৃতীয় পক্ষের একটি মার্চেন্ট সার্ভিস,পেমেন্ট গেটওয়ের মূল লক্ষ্য হলো – যেখানে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো ঘরে বসে ই-কমার্স সাইট গুলোতে শপিং করতে পারবে এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে পারবে।
পেমেন্ট গেটওয়ে-কে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়ে থাকে :
ডাইরেক্ট পেমেন্ট গেটওয়ে:
ডাইরেক্ট পেমেন্ট গেটওয়ের ক্ষেত্রে পেমেন্ট পদ্ধতিটি প্যারেন্ট সাইটে করা হয়।
এক্সটার্নাল গেটওয়ে :
এখানে লেনদেন চালানোর জন্য ক্রেতাকে অন্য অনলাইন পোর্টালে পাঠানো হয় এবং ট্রান্সাকশন ভেরিফিডের পরে প্যারেন্ট ওয়েবসাইটে রিডিরেক্ট করা হয়।
নিমোক্ত ৭টি টিপস দেয়া হলো ই-কমার্স এ পেমেন্ট গেটওয়ে বেছে নেয়ার জন্য :
১. আপনার ব্যবসার মডেলকে অবশ্যই ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে সমর্থন করতে হবে :
আপনার ব্যবসার কৌশলের সাথে এর সামঞ্জস্য রেখে আপনাকে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রোভাইডার বেছে নিতে হবে।আপনাকে সর্বপ্রথম খুঁজে বের করতে হবে,আপনার ব্যবসার ব্যবসায়িক মডেলকে দক্ষতার সাথে সমর্থন করে এমন ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে।
অনেক পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থাগুলির একটি তালিকা দেয়, যা তারা তাদের ওয়েবসাইটে অনুমোদন করে না। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য কর্পোরেট প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে।
পেমেন্ট গেটওয়ে প্রদানকারীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে :
১.লো টু মিডিয়াম রিস্ক মডেল।
২. হাই রিস্ক প্রসেসিং মডেল।
অতএব, আপনাকে অবশ্যই এমন একটি পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করতে হবে, যা পরবর্তীতে পরিবর্তনের সাথে সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং যেকোন কোম্পানির কৌশলের সাথে ইন্টিগ্রেট করতে পারে। সুতরাং, আপনার পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্ত পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করা অত্যাবশক।
২. সিম্পল ইন্টিগ্রেশন পদ্ধতি :
ই-কমার্স ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে একীভূত করা সময়সাপেক্ষ কাজ ৷ সুতরাং, ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে আপনার সিস্টেমে ইন্টিগ্রেট করা কতটা সহজ এবং সাধারণ তা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এটি সম্পর্কে আরও বিশদ ধারণা পেতে একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সাথে পরামর্শ করতে পারেন। তারা আপনাকে গাইড করবে – সম্পূর্ণ সিস্টেমের সাথে এবং সেট আপ করার ক্ষেত্রে।
এমন একটি পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করুন – যা আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পাশাপাশি আপনার দোকানের কাস্টোমারদের জন্য উপকারী। জনপ্রিয় ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে যেমন – WooCommerce, Shopify, এবং Magento ই-কমার্স সিস্টেমে সহজে ইন্টিগ্রেশন অফার করে এবং এইগুলো খুবই গ্রহণযোগ্য।
৩. পেমেন্ট গেটওয়ের প্রসেসিং স্পিড:
আপনার কাস্টোমারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়ার স্পিডের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার ওনারদের জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম-এ কাস্টোমারের অভিজ্ঞতা এবং তাদের হ্যাপিনেস খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কনজিউমার-রা যেন কম অর্থপ্রদানে সম্মুখীন না হয়, সে জন্য একটি প্রপার পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি ফাস্ট স্পিড প্রসেসিং অর্জন করতে চান, আপনার জন্য ক্লাউড ট্রান্সমিশন একটি বড় সহায়তা হতে পারে। ব্যবসায়িক ইউজারদের জন্য একটি উপযুক্ত ওয়ার্কফ্লোও এর মাধ্যমে কর্মক্ষম কার্যকারিতা প্রোমোট করা যেতে পারে।
৪. উপযুক্ত ক্যাশ ফ্লো:
আপনার কোম্পানীর প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে আপনার পেমেন্ট গেটওয়ে এটির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তাই এটিকে যথেষ্ট পরিমাণে স্কেলযোগ্য হতে হবে। আপনার ব্যবসায় আসা উপযুক্ত ক্যাশ ফ্লো পরিচালনা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সেরা পেমেন্ট গেটওয়ে বেছে নিতে হবে।
যেকোনো লিডিং পেমেন্ট গেটওয়ে বেছে নেওয়ার জন্য নিমোক্ত অপসন গুলো ওয়েবসাইটের ফলো করা উচিত :
১. সিকিউর ফর্মস :
অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট কাস্টোমারদের জন্য অর্থপ্রদানের ফর্ম অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করা হয়। ফর্মটিতে সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য রয়েছে, যা একটি সমন্বিত API কলের মাধ্যমে গেটওয়ে প্রদানকারীকে পাঠানো হয়।
২. পেমেন্ট রিডিরেকশন অথবা iframe :
এই পদ্ধতিতে, ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত হোস্টেড পেমেন্ট পৃষ্ঠায় রোউটেড করা হয়, অথবা সাইটে এম্বেড করে iFrame-এ তাদের তথ্য লিখা হয়। ডেভেলপারস রা এই পদ্বতিতে উপকৃত হবে কারণ এটি ইনকর্পোরেট করা সহজ ।
৩. এস্ক্রোও সিস্টেম :
আপনার প্ল্যাটফর্মে একটি এস্ক্রোও সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে, ক্যাশ ডিলে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ গ্র্যান্টেড করবে।
৫. পেমেন্ট গেটওয়েস কস্ট এবং ফিস :
একটি ব্যবসা যে ধরনের লেনদেন অনলাইনে পরিচালনা করে বা অনলাইন এবং ব্যক্তিগত উভয়ের সমন্বয়ে করে তার উপর নির্ভর করে পেমেন্ট গেটওয়ে এবং পেমেন্ট প্রসেস। সুতরাং, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে অবশ্যই এনালাইজ করতে হবে যে কীভাবে আপনার ব্যবসায়িক মডেল গেটওয়ে বা পেমেন্ট প্রোভাইডারের স্ট্রাকচারের সাথে মেলে।
ব্যবসায়িক লেনদেনের মূলত ধরন হলো পেমেন্ট গেটওয়ের সার্ভিস ফি, যা ট্রান্সাকশন ফ্রিকোয়েন্সি,ব্যবসার সেলস,রেভিনিউ কন্সিস্টেন্সি এবং অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রদানকারী ব্যবসার দ্বারা সম্পাদিত লেনদেনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সার্ভিস ফি ধার্য করে।
কিছু সার্ভিস রয়েছে যেগুলির কন্ট্রাক্ট এবং সেট-আপ খরচ প্রয়োজন, অথবা সার্ভিসটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ট্রান্সাকশন ভলিউম বা অর্ডারটি সেটিসফায়েড না হলে, তারা সার্ভিস ফি চার্জ করতে পারে।
একটি পেমেন্ট গেটওয়ে বেছে নেওয়ার আগে, নির্দিষ্ট পেমেন্ট গেটওয়ের বিভিন্ন খরচ এবং ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা উচিত।
১. রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি।
২. ট্রান্সাকশনের মোট ফি।
৩. একটি পেমেন্ট গেটওয়ে স্থাপনের খরচ।
৪. মান্থলি সাবস্ক্রিপশন মূল্য।
৫. রিফান্ড এবং চার্জব্যাক সাপেক্ষে ফি।
৬.গেটওয়ের সিকিউরিটি এন্টি-ফ্রড প্রসিডিউর :
একটি ই-কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে একটি হল কাস্টোমারদের দ্বারা করা অর্থপ্রদানের নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই, অনলাইনে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ব্যবসার মালিকদের নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার সাথে সমৃদ্ধ একটি ভাল অভিজ্ঞতা প্রদান করা বাধ্যতামূলক। Amazon, eBay, Flipkart এবং আরও অনেকের মতো প্রধান ই-কমার্স জায়ান্টগুলি কাস্টোমারদের ভাল শপিং অভিজ্ঞতা সক্ষম করার জন্য খুব নিরাপদ এবং সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
বেশ কিছু পেমেন্ট গেটওয়ে জালিয়াতি সনাক্তকরণে স্পেশালিজ। এই ফাংশনটি অর্থপ্রদানের পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সন্দেহজনক আচরণ সনাক্ত করতে আপনাকে সহায়তা করে।
যদিও বেশিরভাগ কাস্টমার আপনার ব্যবসা ভিজিট করবে, তাদের ট্রলি লোড করবে এবং তাদের কেনাকাটার আনন্দের সাথে করবে এবং অর্থ প্রদান করবে, কিন্তু একটি ছোট অনুপাত,ফ্রড কার্যকমের মাধ্যমে আপনাকে লস করার চেষ্টা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা একটি কম্প্রোমাইসড ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্ট থেকে ফান্ড ব্যবহার করে আপনাকে অর্থ প্রদানের চেষ্টা করতে পারে। কেউ কেউ দাবি করবে যে তারা এমনটি করে নাই কিন্তু প্রকতপক্ষে যদিও তারা তা করেছে।
আপনার সর্বদা এমন একটি ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে প্রোভাইডার বেছে নেওয়া উচিত যা অত্যাধুনিক ডেটা নিরাপত্তার সাথে আপনার কনজিউমারদের পেমেন্ট রক্ষা করবে।
৭. ২৪*৭ কাস্টমার সাপোর্ট :
ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে হলো একটি কাস্টমার সহায়তা সাপোর্ট, যা পেমেন্ট-সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের ব্যাখ্যা করতে পারে। বেশ কিছু পেমেন্ট কোম্পানি কাস্টমার সার্ভিস প্রদান করে না, সেক্ষেত্রে ইউজারদের সমস্যা সমাধানের জন্য ম্যানুয়াল নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
অতএব,পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য আপনাকে ফাইন্ড আউট করতে হবে এমন ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রোভাইডার,যেন কাজের সময় লাইভ টেকনিক্যাল হেল্প আপনাকে প্রদান করে,যেন আপনি যে কোনো টেকনিক্যাল সমস্যার সম্মুখীন হলে তা ইম্মিডিয়েটলি পরিচালনা করতে পারে।
সবশেষে, আপনি এমন একজন সার্ভিস প্রোভাইডার চান যিনি জরুরী পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক এভেইল্যাবল। যদিও বেশিরভাগ সমস্যার জন্য ইমেল যথেষ্ট ,তাছাড়া একজন লাইভ ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর জন্য ফোন বা চ্যাটের মাধ্যমও খুব স্যাটিসফায়িং।
ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে আধুনিক যুগে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। পেমেন্ট গেটওয়ে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৭টি টিপস আপনি অনুসরণ করে আশানুরূপ ফলাফল পেতে পারেন।