ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করার ৮ টি সুবিধা

ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করার ৮ টি সুবিধা
Share This Post

ফেসবুক কমার্স, যা এফ-কমার্স নামেও পরিচিত, অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে যেটি যুগান্তকারী বিপ্লব। তাই বর্তমানে প্রতিনিয়ত একটি বড় সংখ্যক ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করতে চায়। 

আজকের আমরা ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করার ৮টি সুবিধা নিয়ে জানবো। 

এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি আমরা সেল বৃদ্ধি, কাস্টমার বৃদ্ধি, সোশ্যাল শেয়ারিং বৃদ্ধির প্রয়জনীয় টিপস নিয়েও কথা বলবো। 

সেল বৃদ্ধি এবং কাস্টমার সমাহার থেকে শুরু করে টার্গেটিং অডিয়েন্সের কাছে প্রোডাক্ট পৌছেঁ দেওয়া এবং বিজনেসের খরচ কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফেসবুক বা এফ- কমার্স বিজনেস আশীর্বাদস্বরুপ। 

১. অসংখ্য এবং সক্রিয় কাস্টমার 

প্রতি মাসে ফেসবুকে লগ ইন করে প্রায় ৩ বিলিওনের কাছাকাছি মানুষ। আর প্রতিদিন প্রায় ২ বিলিওন। 

এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝায় যাচ্ছে আপনি ফেসবুকে কমার্স বিজনেস শুরু করলে কী পরিমাণ কাস্টমার পেতে পারেন! 

বিনামূল্যে ফেসবুকে একটি পেইজ কিংবা শপ ক্রিয়েট করে অথবা ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে খুব সহজেই অসংখ্য এবং পটেনশিয়াল কাস্টমারের কাছে পৌছানো যাবে। 

এবং এর মাধ্যমে আপনার ব্রান্ডের পরিচিত বৃদ্ধি পাবে, কাস্টমার বৃদ্ধি পাবে, এবং সেই সাথে সেলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। 

কীভাবে আপনার ফেসবুক কমার্স বিজনেসে কাস্টমার বৃদ্ধি করবেন? কিছু টিপস-

  • প্রাসঙ্গিক এবং আকর্ষণীয় ফেসবুক পোস্ট এবং এড।
  • চমৎকার এবং তথ্যপূর্ণ পণ্যের বিবরণ তৈরি করা। 
  • ফলোয়ার্সদের জন্য ডিসকাউন্টস অথবা প্রোমো কোড অফার করা। 
  • টার্ফেটেড ফেসবুক এড।
  • কাস্টমারদের তাৎক্ষণিক রিপ্লে প্রদান করা। 
  • ফেসবুকে রেগুলার পোস্ট করা এবং একটিভ থাকা।

২. ফেসবুক ইনসাইট

ফেসবুক ইনসাইট ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। 

ফেসবুক ইনসাইট এবং এড ম্যানেজারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা-

  • কাস্টমার ইনসাইট সম্পর্কে জানতে পারে
  • পারফরমেন্স ট্রাক করতে পারে 
  • মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের সফলত পরিমাপ করতে পারে
  • আরো ভালো ফলাফলের জন্য ব্যবসায়িক স্ট্রাটেজি অপ্টিমাইজ করতে পারে, ইত্যাদি।

এই ডেটা- চালিত পদ্ধতিটি ব্যবসায়ীদের মার্কেটিং প্রচেষ্টাকে এবং প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে, কাস্টমারের পছন্দ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। এবং চলমান ডেটার উপর ভিত্তি করে তাদের ফেসবুক কমার্স বিজনেস বৃদ্ধির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। 

কীভাবে সঠিকভাবে ফেসবুক ইনসাইট ব্যবহার করবেন? কিছু টিপস-

  • নিয়মিত ফেসবুক ইনসাইট রিভিও করা
  • অডিয়েন্স ডেমুগ্রাফিক যেমন বয়স, লিঙ্গ, লোকেশন, ইন্টারেস্ট, ইত্যাদি ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করা
  • অডিয়েন্স ইনসাইটের সুবিধা নেওয়া
  • প্রতিযোগীদের লক্ষ্য রাখা
  • নির্দিষ্ট গোল সেট করা এবং প্রগ্রেস পরিমাপ করা ইত্যাদি। 

৩. নিয়ন্ত্রণে জটিলতা নেই

নিয়ন্ত্রণে জটিলতা নেই

ফেসবুকের বিভিন্ন ফাংশন যে কেউ খুব সহজেই আয়ত্য করে ফেলতে পারবে এবং এটি ব্যবহার করা ও অনেক সহজ। 

ফেসবুকের টুলস এবং ফিচার সাধারণত সহজে ব্যবহারযোগ্য যার মাধ্যমে যে কেউ তার সর্বনিম্ন টেকনিক্যাল স্কিল নিয়ে ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে একটি ফেসবুক  শপ খুলতে পারবে, লিস্টিং প্রোডাক্ট সেট করতে পারবে, এবং অর্ডারসমূহ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এবং খুব সহজে ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করতে পারবে। 

সহজে এবং সঠিকভাবে ফেসবুক কমার্স বিজনেস নিয়ন্ত্রণ করার কিছু টিপস-

  • নির্দিষ্ট এবং পরিষ্কার গোল সেট করা
  • ফেসবুক বিজনেস পেইজ অপ্টিমাইজ করা
  • লিভারেজ ফেসবুক এডভার্টাইজিং
  • অডিয়েন্সের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা
  • ফেসবুক পলিসি এবং গাইডলাইনের আপডেট লক্ষ্য রাখা
  • পারফরমেন্স মনিটরিং করা এবং এনালাইসিস করা

৪. মার্কেটিং খরচ হ্রাস করে 

মার্কেটিং খরচ হ্রাস করে 

একটি ফেসবুক পেইজ দিয়ে বিজনেস শুরু করার জন্য আপনার কোনো প্রকার খরচের দরকার পড়বে না। 

ফেসবুকে বিজনেস সম্পর্কিত এমন কিছু ফিচার্স রয়েছে যেগুলো বিনামূল্যে তৈরি এবং ব্যবহার করা যায়। যেমন- ফেসবুক পেইজ, প্রোডাক্ট লিস্টিং পোস্ট করা, কাস্টমার বৃদ্ধি করা, ইত্যাদি। 

এক্ষেত্রে যারা মূলত ছোট ব্যবসা বা স্টার্টআপ শুরু করতে চায় অনলাইনে, তাদের জন্য ফেসবুক কমার্স বিজনেস অন্যতম। 

ফেসবুক কমার্স বিজনেসে কীভাবে খরচ হ্রাস করা যায়? কিছু টিপস-

  • ওভারস্টকিং বা স্টকআউট এড়াতে ইনভেন্টরি লেভেল অপ্টিমাইজ করুন
  • আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করবে বা আপনার প্রোডাক্টে ইন্টারেস্ট দেখাবে এমন কাস্টমার এর কাছে টার্গেটেড এড অপ্টিমাইজ করুন
  • প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট, কাস্টমারদের সাথে দ্রুত রেসপন্স করার মাধ্যমে অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করা 
  • খরচ কমাতে প্যাকেজিং এবং শিপিং উপকরণ অপ্টিমাইজ করুন 
  • কাস্টমারদের আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে ইতিবাচক রিভিও দিতে উৎসাহিত করা ইত্যাদি। 

৫. এডভার্টাইজিং এর সুবিধা

আমরা সবাই এটা জানি যে প্রতি দিনই বিলিওন বিলিওন মানুষ অনবরত ফেসবুক স্ক্রল করে থাকে। একই সাথে মিলিওন মিলিওন এডভার্টাইজিং প্রতিদিন উক্ত ব্যবহারকারীদের নজরে আসার চেষ্টা করে, যাতে করে তারা এড এ উল্লিখিত প্রোডাক্টের প্রতি আকৃষ্ট হয়। 

আপনি যদি ইচ্ছে করেন, ফেসবুকে খুব সহজেই আপনার ফেসবুক কমার্স বিজনেস এডভার্টাইজিং করে অসংখ্যা কাস্টমারের কাছে আপনার প্রোডাক্ট পৌছে দিতে পারবেন। 

আপনার ফেসবুক কমার্স বিজনেসেরে জন্য কীভাবে সঠিকভাবে এডভার্টাইজিং করবেন? কিছু টিপস-

  • টার্গেট অডিয়েন্স সনাক্ত করা
  • হাই-কোয়ালিটি ছবি, ভিডিও ব্যবহার করা 
  • প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের সুবিধাগুলো চমৎকারভাবে উপস্থাপণ করে আকর্ষণীয় এড কপি তৈরি করা
  • প্রোমোশন এবং ডিসকাউন্ট সুবিধা প্রদান করা ইত্যাদি। 

৬. মোবাইল কমার্স

ফেসবুকের এক  বৃহৎ সংখ্যক ব্যবহারকারী রয়েছে মোবাইল ডিভাইসে, মোবাইল কমার্স বিজনেস এর জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

আর কাস্টমারদের মোবাইল শপিং এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে যে কেউ খুব সহজেই এই সুবিধাটি লুফে নিতে পারে। 

ফেসবুকের মোবাইল-ফ্রেন্ডলী ফিচারের জন্য, ব্যবসায়ীরা মোবাইল-অপ্টিমাইজড অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে কাস্টমারদের একটি সুবিধাজনক কেনাকাটার অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে৷

ইফেক্টিভ ফেসবুক মোবাইল কমার্স বিজনেসের কিছু টিপস-

  • পেইজকে যথাযথ ভাবে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করা
  • মোবাইল ফ্রেন্ডলি কাভার ফটো এবং প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করা 
  • কাস্টমারদের জন্য ইজি রিটার্ন এবং রিফান্ড প্রক্রিয়া চালু করা
  • ঘন ঘন জিজ্ঞেস করা হয়- গ্রাহকের এমন প্রশ্নগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অটোমেটেড চ্যাটবট সেট আপ করা এবং দ্রুত রেসপন্স করা। 
  • ফেসবুক এড ম্যানেজার ব্যবহার করে মোবাইল অপ্টিমাইজড এড তৈরি করা ইত্যাদি। 

৭.সোশ্যাল শেয়ারিং 

ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিন অগণিত মানুষ তাদের প্রোফাইলে বিভি ন্ন প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস শেয়ার করছে তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুবান্দব, পরিবার, এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে। 

এক্ষেত্রে আপনি যদি ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করতে চান, তবে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। এটি আপনার সেলিং প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। 

আপনি যে নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে বিজনেস শুরু করবেন, তা নিয়ে অবশ্যই আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে, যাতে করে টার্গেটেড অডিয়েন্সরা এতে মুগ্ধ হয়ে তাদের ফেসবুকে প্রোফাইলে শেয়ার করে। এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট আরও বেশি মানুষের কাছে পৌছে যাবে। 

ফেসবুক কমার্স বিজনেসে সেল বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল শেয়ারিং বৃদ্ধির কিছু টিপস-

  • আকর্ষণীয় এবং হাই-কুয়ালিটি ভিডিও, ইমেইজ ব্যবহার করা
  • বিশেষ অফার, ডিসকাউন্টস প্রদান করা 
  • বিভিন্ন কনটেস্টের আয়োজন করা
  • সঠিক স্ট্রাটেজি অবলম্বন করে হ্যাশট্যাগ ইউস করা ইত্যাদি। 
  •  ২৪/৭ কাস্টমার সেবা  

ফেসবুক তার ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ২৪/৭ অনলাইন উপস্থিতি প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে তারা খুব সহজেই নন-স্টপ তাদের প্রোডাক্টস বা সার্ভিস প্রদর্শন করতে পারে, কাস্টমারের সাথে যে কোনও সময়, যে কোনো জায়গা থেকে যোগাযোগ করতে পারে, যেকোনো সময় অর্ডার রিসিভ করতে পারে, এবং অর্ডার নিয়ে কথা বলতে পারে। 

কাস্টমারদের ২৪/৭ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কিছু টিপস-

  • অটোমেটেড চ্যাটবট সিস্টেম চালু
  • দ্রুত রেসপন্স
  • কাস্টমারের সমস্যা মনোযোগ সহকারে বোঝার চেষ্টা এবং দ্রুত সমাধান দেওয়া
  • প্রোডাক্ট সম্পর্কে সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য পরিষ্কারভাবে প্রদান করা
  • নেতিবাচক এবং ইতিবাচক উভয় ফীডব্যাকে সমানভাবে রেসপন্স করা ইত্যাদি। 

পরিশেষে,

আশা করছি উপরে উল্লেখিত ফেসবুক কমার্স বিজনেস শুরু করার ৮টি সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জেনেছেন।

অনলাইন উপস্থিতি এবং ড্রাইভ সেল বৃদ্ধির জন্য ফেসবুক কমার্স বিজনেস অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে থাকে। 

ছোট দোকান কিংবা খুব বিশাল ব্রান্ড- যাই হোক না কেন, যেসব ব্যবসায়ীরা এই ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফলত পেতে চায়, ফেসবুক কমার্স বিজনেস হতে পারে এক সহজ সমাধান। 

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
ক্যাম্পেইন ট্র্যাক করার লক্ষ্যে ৭টি এসেনশিয়াল ডিজিটাল মার্কেটিং KPI
Marketing

ক্যাম্পেইন ট্র্যাক করার লক্ষ্যে ৭টি এসেনশিয়াল ডিজিটাল মার্কেটিং KPI

ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই হিউজ ল্যান্ডস্কেপ এ ক্যাম্পেইন ট্র্যাক করা, সাকসেস পরিমাপের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। Key Performance Indicators (KPI) গুলো কিন্তু আপনাকে এই ক্যাম্পেইন

কিভাবে আপনার স্টার্টআপ বিজনেসের মার্কেটিং শুরু করবেন
Marketing

কিভাবে আপনার স্টার্টআপ বিজনেসের মার্কেটিং শুরু করবেন

একটা স্টার্টআপ বিজনেস শুরু করা একদিকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আবার এর অন্যদিকে আছে সাফল্যের হাতছানি, অসংখ্য অপরচুনিটির সম্ভাবনা। মোট কথা স্টার্টআপের টোটাল পার্ট একটা  উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রা।