একজন উদ্যোক্তার জন্য ৮টি ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স টিপস

একজন উদ্যোক্তার জন্য ৮টি ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স টিপস ফিচার ইমেজ
Share This Post

২০১৫ সালে Oswald, Proto এবং Sgroi দ্বারা পরিচালিত একটি সার্ভেতে 12,000 জনেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুখী এবং পার্সেনাল ও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স করে চলা উদ্দোক্তারা ১২ শতাংশ বেশি সফল হয়।  

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে, কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যকার ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যেতে পারে। ফলে আপনার বিজনেস টি একটি ভারসাম্যহীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। মোটকথা আপনার ব্যাবসার সামগ্রিক প্রসার এবং প্রডাক্টিভিটিকে ব্যপক ভাবে প্রভাবিত করে।

যাইহোক, কাজের সাথে সাথে মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেল, আমরা আটটি ইউজফুল টিপস নিয়ে আলোচনা করব যা উদ্যোক্তাদের তাদের প্রোফেশনাল এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। 

উদ্যোক্তা হিসেবে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স এর ৮ টিপস

১। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স এর জন্যে ক্লিয়ার বাউন্ডারি সেট করুন 

কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে স্পষ্ট বাউন্ডারি স্থাপন করা একদম অপরিহার্য। এজন্য নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং আপনার টিম এবং ক্লায়েন্টদের সাথে এই টাইম লিমিট মেইনটেইন করুন। এই লিমিটের মধ্যেেই লাইফ ব্যালেন্স করুন। এবং ক্রমাগত কাজের ইমেল চেক করার বা ব্যক্তিগত সময়ে ব্যবসায়িক কল করার মত বিহেভিয়ার গুলো এড়িয়ে চলুন। 

এই অভ্যাসটি শুধুমাত্র আপনার নিজের এবং প্রিয়জনের জন্য সময় নিশ্চিত করে না। পাশাপাশি আপনার কাজের সময়গুলিতে ফোকাস এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায়। কারণ, আপনি পরিবারের সাথে কোয়ালিটি টাইমে কাজ নিয়ে আসলে, পুরো সময় টা ভাল ভাবে উপভোগ করতে পারবেন না। অন্যদিকে, নিজের ব্যক্তিগত লাইফে সময় না দেয়াটা আপনার ওয়ার্ক লাইফের ফোকাস কে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই কাজের সময় কাজ, এবং অবসরে উপভোগ করাই শ্রেয়।

২। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে সেল্ফ কেয়ারকে অগ্রাধিকার দিন

উদ্যোক্তারা প্রায়ই তাদের ব্যবসার চাহিদার কারণে তাদের নিজেদের যত্নকে অবহেলা করে। যাইহোক, দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় থাকতে ব্যায়াম, সঠিক পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মতো সেল্ফ কেয়ার একটিভিটিকে অগ্রাধিকার দিন। উপরন্তু, এমন একটিভিটিতে জড়িত হন যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং আপনাকে রিল্যাক্স করতে সহায়তা করে, যেমন শখ বা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো। মনে রাখবেন, একজন শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ উদ্যোক্তা আরও বেশি সফল ও কার্যকরী।

এছাড়াও ১৯৯৪ সালে Staw, Sutton, এবং Pelled-এর একটি রিসার্চ আর্টিকেলে বিভিন্ন গবেষণা পরীক্ষা করে এবং “ইফেক্টিভ ইভেন্ট থিওরি” প্রস্তাব করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, পার্সোনাল ও ওয়ার্কিং লাইফ ব্যালেন্স করে চলা ব্যাক্তিরা তুলনামূলক বেশি সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং এক্সিলেন্ট প্রোডাক্টিভিটি ক্যারি করে। 

৩। প্রতিনিধি এবং আউটসোর্স 

টিপ 3: প্রতিনিধি এবং আউটসোর্স 

আপনি একা একাই আপনার ব্যবসার প্রতিটি দিক পরিচালনা করার চেষ্টা করলে আপনার বিজনেস দ্রুত বার্নআউট হতে পারে। এর পরিবর্তে, একটিভ দলের সদস্যদের কাছে কার্যগুলি হান্ডওভার করুন বা নির্দিষ্ট ফাংশন আউটসোর্সিং এর ব্যবস্থা করুন। দায়িত্ব অর্পণ করা শুধুমাত্র আপনার কাজের চাপকে হালকা করে না বরং আপনার দলকে শক্তিশালী করে এবং এর প্রোফেশনাল গ্রোথ কে উৎসাহিত করে। 

নির্দিষ্ট কাজের জন্য অন্যদের হায়ার করে, আপনি স্ট্র্যাটিজিকাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উচ্চ-ভ্যালুড ফিল্ড গুলোতে ফোকাস করার জন্য সময় বের করতে পারবেন। এত করে আপনার ব্রান্ডের ওভারাল ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপ করবে। 

৪। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স করতে প্রযুক্তি এবং অটোমেশনকে একসেপ্ট করুন 

প্রযুক্তি এবং অটোমেশনকে একসেপ্ট করুন 

বিজনেস মডেলে এমন অনেক কাজ থাকে যেগুলো বার বার রিপিট করতে হয়৷ এই কাজ গুলো বেশ একঘেয়ে আর সময়সাপেক্ষ ও হয়ে থাকে। তাই এই সব পুনরাবৃত্তি ধাঁচের বা সময়সাপেক্ষ কাজগুলিকে স্ট্রিমলাইন এবং স্বয়ংক্রিয় করতে প্রযুক্তির সুবিধা নিন। আপনার ওয়ার্কফ্লো অপ্টিমাইজ করতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন। 

আর অটোমেশন ম্যানুয়াল কাজ গুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ ও সাবলীল পারে এবং আপনাকে কম সময়ে আরও বেশি কাজ করারও অপরচুনিটি দেয়। তাই প্রযুক্তিকে একসেপ্ট করে, আপনি মূল্যবান সময় বের করতে পারেন যা ব্যক্তিগত কাজ বা ক্রিয়েটিভ ডেভেলপমেন্টের জন্য ইউজ ফুল হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময়ে প্রযুক্তি, ডিজিটাল ডিভাইস বা এডভান্স লেভেল এর টুলস গুলো মানুষের থেকেও ভাল কাজ করে। একদিকে দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা, অন্যদিকে কোয়ালিটি সার্ভিসের কারণে এসব ওয়ার্কিং টুলস গুলো কিন্তু একজন ব্যস্ত উদ্দোক্তার নিত্যদিনের পার্ফেক্ট সঙ্গী। 

৫। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স মেইনটেইনের জন্যে প্লানিং এবং প্রায়োরিটি 

 প্লানিং এবং প্রায়োরিটি 

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স মেইনটেইন করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা এবং স্পষ্ট প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দিন বা সপ্তাহ শুরু করুন ব্যক্তিগত এবং প্রফেশনাল উভয় ক্ষেত্রেই আপনার মেইন টার্গেটেড কাজগুলির মধ্য দিয়ে। এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী আইটেম গুলো কে আগে চিহ্নিত করুন। এবং সেই অনুযায়ী সময় বরাদ্দ করুন।

নিজেকে অতিরিক্ত কমিটমেন্টে জড়ানো বা ওভারল্যাপ এসব এড়িয়ে চলুন এবং আপনার প্রায়োরিটি লিস্টে এডেড না এমন কাজগুলিকে “না” বলতে শিখুন। কার্যকরী পরিকল্পনা এবং অগ্রাধিকার আপনাকে আপনার কাজে ফোকাস থাকতে এবং জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে দ্রুত কৃতিত্ব অর্জন করতে বেচ সহায়তা করবে।

৬। একটি সাপোর্টিভ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন 

একটি সাপোর্টিভ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন 

একটি শক্তিশালী সমর্থন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা উদ্যোক্তাদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। নিজেকে সেইম পার্সপেক্টিভ এর মানুষের সাথে সবসময় কানেক্টেড রাখুন যারা একজন উদ্যোক্তা বা তাদের চ্যালেঞ্জ এবং চাহিদা বোঝেন। এছাড়াও একজন আদর্শ মেন্টর কিংবা পরামর্শদাতাদের খোঁজ করুন। সবচেয়ে ভাল হয় উদ্যোক্তা কমিউনিটি গুলোতে এড হয়ে যান, কানেক্টিভিটি ডেভেলপ করুন। যেখানে আপনি আপনার অভিজ্ঞতা শোর করতে পারেন, নতুন নতুন পার্সপেক্টিভ সম্পর্কে জানতে পারবেন, বিভিন্ন রকম জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং সমমনা লোকদের কাছ থেকে সমর্থন পাবেন।  

আপনার মত সেইম নিশ নিয়ে কাজ করতে থাকা বা সিমিলার স্ট্রাগল করছে এমন উদ্দোক্তাদের  সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এবং তাদের সাথে  বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে করে আপনি আপনার অনুভূতি গুলো আদান-প্রদান করতে পারবেন এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারবেন। এমন কমিউনিটি গুলোতে কানেক্টেড থাকলে আপনি নিয়মিত উদ্যোক্তাদের উত্থান-পতনে নেভিগেট করতে পারবেন। এবং মার্কেটের প্রয়োজনীয় তথ্য গুলোতে আপ-টু-ডেট থাকতে পারবেন। 

৭। ডাউনটাইম নির্ধারণ করুন

ডাউনটাইম নির্ধারণ করুন

ডাউনটাইম শিডিউল করার জন্য ইন্টেনশনাল ইফোর্ট দিন এবং এটিতে লেগে থাকার চেষ্টা করুন। প্রতি দিন বা সপ্তাহে শুধুমাত্র বিশ্রাম, শখ, বা প্রিয়জনের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানোর জন্য সিলেক্ট করা সময়ের গুলো আলাদা করুন। এই সময়টিকে কোনো রকম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বা আলাপ আলেচনা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। 

একে কোয়ালিটি টাইম হিসাবে বিবেচনা করুন এবং এটিকে প্রায়োরিটি দিন। যেমন আপনি অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবেন। কাজের বাইরে আপনাকে আনন্দ এবং পরিপূর্ণতা এনে দেয় এমন কাজে জড়িত হওয়া আপনার এনার্জি রিচার্জ করার জন্য এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স এর জন্যে মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিস করুন 

মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিস করুন 

সবসময়ে প্রানবন্ত থাকতে, কাজের প্রতি ফোকাসড থাকতে এবং শরীর ও মনের ওপর চাপ কমাতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে মননশীলতার বা মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিসের ব্যাবস্থা রাখুন। এর জন্য স্ট্রেস কমানোর ব্যায়াম, যেমন ধ্যান বা গভীর শ্বাস প্রশ্বাস, আপনাকে শান্ত এবং ফ্রেশ অনুভূতি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। 

নিজেকে একটি কাজে কেন্দ্রীভূত বা ডিটারমাইন্ড  করতে এবং পুনরায় ফোকাস করতে সারা দিন ছোট ছোট বিরতি নিন। মননশীলতা অনুশীলন করে, আপনি আপনার কর্মক্ষমতা এবং মানসিক অবস্থা আরো বিকাশ করতে পারেন। এগুলো  আপনাকে আরও স্ট্যাবিলিটির সাথে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স চ্যালেঞ্জ গুলোর মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।

সর্বোপরি, আপনি ইফেক্টিভলি আপনার পার্সোনাল ও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স করতে পারলে খুব দ্রুতই একজন সফল উদ্দোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেতে পারবেন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
মার্কেটিং অটোমেশনের আল্টিমেট গাইডলাইন
Marketing

মার্কেটিং অটোমেশনের আল্টিমেট গাইডলাইন

কেমন হয় যদি মার্কেটিং এর জন্য আপনার তেমন কোন পরিশ্রমই না করতে হয়? অটোমেটিকালি, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি গুলো আপনার বিজনেস কে কিউরেট করে! এতে, একদিকে আপনার

বাইয়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির উপায়
Marketing

বাইয়ার্সদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির উপায়

একটা কঠিন সত্য হল, যদি বায়ার্সাদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট এঙ্গেজমেন্ট না থাকে, সেটা কোনো সফল বিজনেস এর পর্যায়ে পরে না। মার্কেটে সহস্র প্রোডাক্টের ভীড় থাকা,