কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বর্তমান যুগের একটি পাওয়ারফুল ড্রাইভিং ফোর্স।
বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এর বিবর্তনের পিছনে মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে AI, এবং ই-কমার্সও এর ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে AI এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে দারুন সব বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স কে আরো উন্নত করেছে৷
![ই-কমার্স এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউজের সুবিধা](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/332-2-1024x576.webp)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উদ্ভাবনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য, আমাদের কাজকে সহজ ও এডভান্স করা। তাই ক্রমবর্ধমান বিবর্তনের এই আধুনিক যুগে AI এর ব্যাবহার সময়োপযোগী এবং স্মার্ট সিদ্ধান্ত। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে AI ব্যাবহারের বহুমুখী সুবিধাগুলি নিয়েই আজকে আলোচনা করবো।
ই-কমার্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনুকরণ করতে সক্ষম একটা কম্পিউটার সিস্টেম। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে, AI অনলাইন কেনাকাটার এক্সপেরিয়েন্স কে বিভিন্ন ভাবে উন্নত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ই-কমার্স এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মূল অ্যাপ্লিকেশন হল ইউজার বিহেভিয়ার এবং কাস্টমার চয়েস গুলো বিশ্লেষণ করে পার্সোনালাইজড রিকমেন্ডেশন প্রদান করা। AI চালিত চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট তাৎক্ষণিক এবং দক্ষ কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইড করে, এবং ওভারঅল কাস্টমার স্যাটিসফেকশন বাড়ায়।
![ই-কমার্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/333-2-1024x576.webp)
AI এর Predictive বিশ্লেষণ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলোকে ট্রেন্ড এনালাইজ করতে, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট অপ্টিমাইজ করতে এবং প্রাইস নির্ধারণের স্ট্র্যাটেজি গুলোকে রিফাইন করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও AI অনলাইন লেনদেনে জালিয়াতি একটিভিটি সনাক্ত করতে এবং প্রতিরোধ করতে, সর্বোপরি সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে।
সংক্ষেপে, AI মূলত পার্সোনালাইজড এক্সপেরিয়েন্স, সিস্টেমেটিক একটিভিটি এবং স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইন্টেলিজেন্ট সমাধান প্রোভাইড করে, ই-কমার্সের ল্যান্ডস্কেপকে ডেভেলপ করে।
ই-কমার্স এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের সুবিধা :
ই-কমার্স এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বদলে দিতে পারে বিজনেস স্ট্যাটিসটিক্স, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স এবং বিজনেস এর ওভারঅল প্রোফিট। AI এর এমনই কিছু সুবিধা হচ্ছে-
১. ব্যক্তিগতকৃত কেনাকাটার অভিজ্ঞতায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI):
AI এর অ্যালগরিদম বিপুল পরিমাণ কাস্টমার ডেটা বিশ্লেষণ করে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিকে Personalised বা ব্যক্তিগতকৃত কেনাকাটার অভিজ্ঞতা প্রোভাইড করতে সাহায্য করে। Accenture এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৯১% গ্রাহক এর ক্ষেত্রেই রিলেভ্যান্ট অফার এবং রিকমেন্ডেশন প্রোভাইড করে এমন ব্র্যান্ড গুলোর সাথে কেনাকাটা করার সম্ভাবনা বেশি।
AI চালিত রিকমেন্ডেশন ইঞ্জিনগুলি, Amazon এবং Netflix এর মত প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, গ্রাহকদের বিহেভিয়ার এর ডেটা ব্যবহার করে, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী পণ্যের পরামর্শ দেয় এবং ইউজার এনগেজমেন্ট ও স্যাটিসফেকশন বাড়ায়।
![ব্যক্তিগতকৃত কেনাকাটার অভিজ্ঞতা](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/334-2-1024x576.webp)
উদাহরণস্বরূপ, আপনার ফোনে হয়ত ই-কমার্স প্লাটফর্ম, অ্যাপস কিংবা ওয়েবসাইট এ সাইন আপ করা আছে। অথবা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে লগ ইন করা আছে। এ অবস্থায় আপনি প্রায়শই দেখতে পারবেন আপনার পছন্দের বিষয় গুলোর কনটেন্ট ই আপনার সামনে আসছে। আপনি যে বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলেছেন, কনটেন্ট এ লাইক শেয়ার করেছেন, ওই রিলেটেড পন্য ই আপনার সামনে আসছে।
এই যে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কে ডিটেক্ট করে আপনার সামনে রিলেভ্যান্ট প্রোডাক্ট শো করা হচ্ছে, এখানেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার হচ্ছে।
২. উন্নত কাস্টমার সাপোর্ট:
AI চালিত চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর ব্যাবহার ই-কমার্সে কাস্টোমার সাপোর্ট কে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। IBM-এর একটি প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, AI ভিত্তিক চ্যাটবট গুলো কাস্টমার এর রুটিন প্রশ্নের ৮০% পর্যন্ত উত্তর দিতে পারে। এটি শুধুমাত্র রিয়্যাকশনের সময়ই কমায় না বরং 24/7 সহায়তা প্রদান করে, যা গ্রাহকের আস্থা এবং বিশ্বস্ততা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
![উন্নত কাস্টমার সাপোর্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/335-2-1024x576.webp)
অর্থাৎ ম্যানুয়ালি সব কাস্টমার কে রিপ্লাই করা, একজন দুইজন এডমিন বা মেম্বারের পক্ষে সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ছোট বিজনেস গুলোর ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে কমিউনিকেশন এর জন্য আলাদা করে কয়েকজন লোক রাখা ব্যয়বহুল।
এক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ইউজ আপনার কাজকে করে দিতে পারে আরো সহজ এবং ফাস্ট।
৩. দক্ষ ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) :
AI এর অ্যালগরিদম গুলো আপনাকে মার্কেট ডিমান্ড ও পন্যের প্রেডিক্টেড সাফল্য সম্পর্কে আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করতে পারে। আপনার বিজনেস এর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোনো আসন্ন ঝুঁকি কিংবা চেইঞ্জ এর আপডেট দিতে পারে। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাহায্য আপনি ডিটেক্ট করতে পারবেন কোন পন্য গুলোর মাধ্যমে আপনার প্রোফিট বেশি হচ্ছে, কোন গুলো আশানুরূপ রেজাল্ট দিচ্ছে না। কোন প্রোডাক্টে বেশি ইনভেস্ট করতে এবং কোন গুলো মোডিফিকেশন এর জন্য বেশি সময় দিতে হবে। মোট কথা আপনার ইনভেন্টরি ম্যানেজ করতে সহজ ও দ্রুত সমাধান খুঁজে দিতে পারে AI ।
![দক্ষ ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/336-2-1024x576.webp)
ম্যাককিন্সির একটি সমীক্ষা অনুসারে, যে ব্র্যান্ড গুলো ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতার জন্য AI ব্যবহার করে তাদেট খরচ ৫০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পায় এবং স্টকআউট ঝুঁকি ও ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। মূলত, AI এটা নিশ্চিত করে যে আপনার ই-কমার্স ব্যবসা টি সর্বোত্তম ইনভেন্টরি লেভেল বজায় রাখতে পারে এবং ক্ষতি কমিয়ে এবং সর্বাধিক লাভ করতে পারে।
৪. জালিয়াতি সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ:
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলো প্রতারণামূলক একটিভিটি থেকে ক্রমাগত হুমকির সম্মুখীন হয়। যেমন, পেমেন্ট জালিয়াতি এবং অ্যাকাউন্ট টেকওভার, এছাড়াও ওয়েবসাইট গুলোর ক্ষেত্রে কাস্টমার সাপোর্ট হওয়া, ডাটা চুরি। কিংবা অ্যাপস গুলোর ক্ষেত্রে ভাইরাস এর উপস্থিতি ইত্যাদি। তবে AI চালিত জালিয়াতি সনাক্তকরণ সিস্টেমগুলি এই সব অসঙ্গতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে। মূলত লেনদেনের ধরণ এবং ইউজারের আচরণ বিশ্লেষণ করে আসন্ন ঝুঁকির পূর্বভাস দিতে পারে।
![জালিয়াতি সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/337-2-1024x576.webp)
জুনিপার রিসার্চের একটি সমীক্ষা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, AI ভিত্তিক জালিয়াতি সনাক্তকরণ সিস্টেম ব্র্যান্ড গুলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয়ে সাহায্য করবে, পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি হ্রাস করবে এবং বিজনেস এবং কাস্টমার উভয়কেই সুরক্ষা দেবে।
৫. স্ট্রীমলাইনড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট:
AI মূলত, ডিমান্ড এর Forecasting বা পূর্বাভাস করে, সাপ্লাই এর উন্নতি করে এবং সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন প্রোসেস গুলোকে ডেভেলপ করে। Deloitte দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে যে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে AI ব্যবহার করে এমন কোম্পানি গুলোর লিড টাইম এ ৫০% হ্রাস এবং অতিরিক্ত ইনভেন্টরি তে ৪৫% হ্রাস অনুভব করে। এই উন্নতির ফলে খরচ ও সাশ্রয় হয় এবং আরও ফ্লেক্সিবল এবং রিয়্যাক্টিভ সাপ্লাই চেইন তৈরী হয়।
![স্ট্রীমলাইনড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/Google-ads-এর-সুবিধা-1024x576.webp)
উপসংহার,
ই-কমার্সে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার এক কথায় একটা গেম চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। যেটা অপারেটিং দক্ষতা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ানোর মত অসংখ্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
পার্সোনালাইজড কেনাকাটার অভিজ্ঞতা, উন্নত গ্রাহক সহায়তা, দক্ষ ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট, জালিয়াতি সনাক্তকরণ এবং সুবিন্যস্ত সাপ্লাই চেইন প্রসেস- এমন কয়েকটি ক্ষেত্র যেখানে AI ই-কমার্সের ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দিয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত থাকায়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ই-কমার্সের মধ্যে সমন্বয় ইন্ডাস্ট্রি এর উদ্ভাবন এবং বৃদ্ধিকে আরো যুগান্তকারী বিপ্লবের মধ্যে নিয়ে যাবে।