আমাদের চারপাশে সকলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেই হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। যেকোনো পরিস্থিতিতে অথবা যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এসব নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। তেমনি আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এ ধরনের বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা অনেক বেশি জরুরী। আজ আমরা বিজনেস নেটওয়ার্ক কি ? ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক বিল্ড করার ক্ষেত্রে কি করতে হবে?? এধরনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। তাহলে চলুন জেনে আসা যাক এর বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
বিজনেস নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক কি?
বিজনেস নেটওয়ার্ক হচ্ছে ব্যবসায়িক সুবিধার্থে অথবা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য কর্মস্থানের ক্লাইন্ট, বিজনেস পার্টনার, শেয়ার হোল্ডার ইত্যাদি নানা ধরনের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। আর ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক এমনই পাওয়ারফুল একটি পদ্ধতি। যার সাহায্যে খুব সহজেই আপনি আপনার কাস্টমার বা বিজনেস পার্টনারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারেন, বিজনেসের জন্য নতুন কিছু অপর্চুনিটি বা সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন বা যেকোনো ধরনের কাজের সহযোগিতা পেতে পারেন । তাই এটা বলা বাহুল্য যে বিজনেস নেটওয়ার্ক একটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
কি কি ধরনের বিজনেস নেটওয়ার্ক হতে পারে?
বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক হতে পারে। যেমন –
- ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং : এটি মূলত সামনা-সামনি মিটিং, ইভেন্ট, সম্মেলন, ট্রেড শো অথবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিটআপের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এতে করে আপনি খুব সহজেই আপনার ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন যা আপনার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে , যেমন মানুষের সাথে কথা বলার ধরন, চালচলন, আই কন্টাক্ট, বা বিভিন্ন ধরনের জড়তা। এগুলো দূর করার মাধ্যমে বিজনেস নেটওয়ার্কে আরো শক্তিশালী করতে পারেন।
- অনলাইন নেটওয়ার্কিং: সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম লিংকড ইন, টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদি নানা মাধ্যমের সাহায্যে আপনি আপনার বিজনেস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে পারেন। অনলাইন নেটওয়ার্কিং এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এর সাহায্যে আপনি অনেক বেশি অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছাতে পারবেন যা বিজনেস নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বেশ প্রয়োজনীয়।
- রেফারেল নেটওয়ার্কিং : এই নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা মূলত তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যারা আপনাকে চেনেন অথবা আপনাকে বিশ্বাস করেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের সাহায্যে আপনি খুব সহজেই তাদের বিজনেস নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন অথবা তাদের নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হতে পারেন।
- সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং : আপনার দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এধরনের নেটওয়ার্কিং তৈরি হয়। যেমন : আপনার প্রতিবেশী, সহকর্মী, বা পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
এতে করে তাদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা ছাড়াও এটি আপনার কর্মজীবনে অসাধারণ সুযোগ তৈরি করতে পারেন।
কিভাবে শক্তিশালী ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক বিল্ড করবেন?
আপনি কি দুশ্চিন্তা করছেন যে কিভাবে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক বিল্ড করা যায়? তাহলে সে দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আমরা আপনাদেরকে এমনই ৮টি স্টেপ সম্পর্কে জানাবো যা কিনা আপনাকে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল বিজনেস নেটওয়ার্ক বিল্ড করতে সাহায্য করবে। তা হলো –
টার্গেট অডিয়েন্স বা সুইটেবল জোন সিলেক্ট করুন :
বিজনেস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাদের সাথে আপনি সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছেন তারা যেন আপনার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় অথবা তাদের দক্ষতা দ্বারা আপনি উপকৃত হবেন। অথবা টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন। কাজের স্বাচ্ছন্দ্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে। এছাড়াও একটি শক্তিশালী বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সহায়তা করবে।
নেটওয়ার্কিং সার্কেল বৃদ্ধি করা :
আপনার নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে প্রসারিত করুন। বিভিন্ন ধরনের ক্লাইন্ট, কাস্টমার, শেয়ার হোল্ডার, সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা, বিজনেস পার্টনার ইত্যাদি সকলের সাথে বিজনেস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা। এটি বিভিন্ন বিষয়ে ও কাজে আপনার ধারণা, জ্ঞান, বা দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। এসকল বিষয় আপনার বিজনেস নেটওয়ার্ককে আরো শক্তিশালী করবে।
ব্যবসায়িক সফলতার কথা চিন্তা করা :
বিজনেস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যারা আপনাকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে তাদেরকে সব সময় অগ্রধিকার দেয়ার চেষ্টা করুন। যেহেতু বিজনেস নেটওয়ার্ক আপনাকে সমূহ সুযোগ প্রদান করে থাকে যেমন – যেকোনো ধরনের পোস্ট, প্রোজেক্ট, চুক্তি, সহযোগিতা, অথবা সুপারিশ প্রদান করার ক্ষেত্রে। তাই এটি আপনার ক্যারিয়ারকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে অনেকাংশে।
সঠিক মাধ্যম খুঁজে বের করুন :
আপনার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম বা টেকনোলজি গুলোকে চিহ্নিত করুন, যেমন – সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম অথবা ইভেন্টের আয়োজন করা। অন্য ধরনের মিটিং এর মাধ্যমে আপনি বিজনেস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে পারেন। যে ধরনের ডিজিটাল হাব বা মেম্বার আপনি অংশগ্রহণ করতে পছন্দ করেন সেসব ইভেন্টের সাথে সংযুক্ত হন, যোগাযোগ করুন অথবা বিভিন্ন ধরনের একটিভিটিসে অংশগ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে মিটআপ বা ওয়েবনার অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কন্টেন্ট স্ট্রাটেজি তৈরি করুন :
আপনার কাজে সফলতা অথবা টার্গেট অডিয়েন্সের কথা চিন্তা করে কন্টেন্ট স্ট্রাটেজি দিয়ে তৈরি করুন। শক্তিশালী বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করার এটি অন্যতম একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করে তা সকলের সাথে শেয়ার করুন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করুন। এতে করে আপনার বিজনেসের প্রতি অন্যদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি খুব সহজেই অন্যদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারবেন।
সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ করুন :
বিজনেস নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এই সকল তথ্য আপনাকে বর্তমান অথবা ভবিষ্যতের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করবে। বিভিন্ন ধরনের টিপস, কৌশল অথবা উপদেশ আপনার কাজকে আরো সহজ করতে সহায়তা করবে। এজন্যই বিজনেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন।
সকলের দৃষ্টিগোচর হওয়ার চেষ্টা করুন :
মনে রাখবেন, আপনি যত বেশি বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন সকলের কাছে আপনার দৃশ্যমান হওয়ার চান্সও তত বেশি হবে। আপনি আপনার বিজনেস সম্পর্কে সকলকে জানানোর চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসায়িক কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে, যেকোনো কাজের সুপারিশ পেতে সাহায্য করবে, এছাড়াও সব থেকে বেশি সুবিধা হচ্ছে আপনি সকলের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন :
আপনি যদি সঠিক বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন তবে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে, বিভিন্ন অভিনব টিপস বা কৌশল ব্যবহার করে, অন্যদের অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে চেষ্টা করুন আপনার কর্মজীবনের সমস্যা গুলোকে সমাধান করার। এতে করে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা চ্যালেঞ্জেস গুলোকে ক্রিয়েটিভ, কার্যকরী বা সুনিপণ দক্ষতা সাথে সমাধান করতে পারবেন এবং এটি আপনার কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করবে।