ডিজিটালের এই যুগে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের পরিসীমা দিন দিন বেড়েই চলছে। সেরকমই একটি ই-কমার্স ব্যবসা প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর প্রতি উদ্যোগী হচ্ছেন অনেকেই । বর্তমানে নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনার ক্ষেত্রে আমরা অনলাইনের বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্মের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি। তাই প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের মাধ্যমে নিজের পছন্দের জিনিসপত্র কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহও তৈরি হচ্ছে অনেক বেশি। আজ আমরা আপনাদেরকে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েই বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড বলতে কি বুঝি?
আপনি যদি যেকোন জিনিসপত্রে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ধরনের ডিজাইন অথবা ছবি প্রিন্ট করতে চান তবে সেসব জিনিসপত্রের অর্ডার এবং সরবরাহ করার দায়িত্ব যে ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে, তাই হচ্ছে প্রিন্ট অন ডিমান্ড। এটি সাধারণত সেলার অথবা ডিজাইনার এবং ফুলফিল্মমেন্ট পার্টনার নামক দুটি স্তরে বিভক্ত। যেখানেই সেলার অথবা ডিজাইনারদের কাজ হচ্ছে কাস্টমারদের কাছ থেকে ডিজাইনকৃত প্রোডাক্টগুলো কেমন হবে তা সম্পর্কে ধারণা নেয়া অন্যদিকে ফুলফিল্মমেন্ট পার্টনারদের কাজ হচ্ছে সময় মত কাস্টমারদের অর্ডারকৃত প্রোডাক্ট তৈরি করে তাদের কাছে সরবরাহ করা।
কোন ধরনের প্রোডাক্টের উপর ভিত্তি করে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি করা সম্ভব?
কাস্টমারদের চাহিদার ভিত্তিতে আপনি বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন। যেহেতু কাস্টমাররা তাদের স্বাচ্ছন্দ্য মতো ডিজাইন অথবা ছবি তাদের অর্ডারকৃত প্রোডাক্টে ফুটিয়ে তুলতে পারে, তাই কাস্টমারদের চাহিদাকে চিন্তা করে প্রোডাক্ট এর ভিন্নতা আনা অত্যন্ত জরুরী। এটি আপনাকে অন্যান্য প্রিন্ট অন ডিমান্ডের বিজনেস থেকে আলাদা করবে। যেটি আপনার বিজনেসের প্রতি বিভিন্ন স্তরের কাস্টমারদেরকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করবে।
তাই কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখে এমনি বেশ কিছু প্রোডাক্ট যেমন টি-শার্ট, ব্যাগ, মগ, জুতা, পানির বোতল, ওয়ালমেট, হুডি, প্যান্ট, পোস্টার, ক্যাম্পেইন জ্যাকেট, মোবাইল কভার, ক্যাপ, ফেইস মাস্ক, ইয়োগা প্যান্ট, ইয়োগা ম্যাট ইত্যাদি নানা ধরনের প্রোডাক্টে কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এসব প্রোডাক্ট ছাড়াও আপনাকে সব সময়ই নতুনত্ব আনতে হবে যেকোন প্রোডাক্ট বাজারে আনার ক্ষেত্রে। আপনি আপনার বিজনেসে যত বেশি নতুনত্ব নিয়ে আসতে পারবেন প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ এ আপনি তত বেশি সাফল্য অর্জন করবেন।
প্রিন্ট অন ডিমান্ডের কি কোনো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ?
প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর জনপ্রিয় কিছু প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে আপনি যেকোনো ধরনের প্রিন্টটেড প্রোডাক্ট আপলোড করে প্রমোট করা ছাড়াও সেগুলোকে সেল করতে পারবেন। সে প্লাটফর্ম গুলো হচ্ছে-
- মার্চ-বাই-অ্যামাজন (Merch by Amazon)
- টিস্প্রিং (TeeSpring)
- রেডবাবল (Redbubble)
- ভাইরাল স্টাইল (ViralStyle)
- প্রিন্টফুল (Printful)
- প্রিন্টফাই (Printify)
- টি-পপ (T-Pop)
- SPOD
- প্রিন্টবেজ (Printbase) ইত্যাদি।
বর্তমান বাজারে প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর চাহিদা কেন বেশি?
প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ বলতে গেলে দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা যায় যে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটির বিশ্ববাজার মূল্য ২০২২ সালে ৬.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার থেকে তা ২০৩০ সালে ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলারে বৃদ্ধি পেতে পারে। যা বলা বাহুল্য যে এ ধরনের ই-কমার্স বিজনেস সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
প্রিন্ট অন ডিমান্ডের চাহিদা বাড়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যা হলো :-
- ইনভেস্টমেন্ট : যেকোনো ধরনের বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট একটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসে আপনি জিরো ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে কোন ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই কাজ শুরু করতে পারবেন।
- কাজের পরিমাণ : এ ধরনের বিজনেসে ফুলফিলমেন্ট পার্টনাররা প্রোডাক্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত সকল ধরনের কাজ অথবা সমস্যার গুলোকে সমাধান করে থাকে। এতে করে আপনি যদি এই বিজনেসের কথা চিন্তা করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার কাজের পরিধি বেশ কম। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা শুধুমাত্র তাদের কাস্টমারদের কাছ থেকে ডিজাইন সংগ্রহ করে, বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট স্টোরে নিয়ে আসে এবং সেগুলোতে আপলোড করে।
- ব্যবস্থাপনা : যেহেতু এ বিজনেসটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত হয় ফুলফিলমেন্ট পার্টনারদের দ্বারা। তাই যেকোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে সাধারণত এরাই সমাধান করে থাকে। তাই এ ধরনের বিজনেসে দুশ্চিন্তা বা ঝামেলা নেই বললেই চলে। ম্যানেজমেন্টের যেকোনো ধরনের ঝামেলা না থাকায় আপনি খুব সহজেই এই ই-কমার্স বিজনেসটি পরিচালিত করতে পারেন।
- স্বাচ্ছন্দ্যবোধ : টি-শার্ট সহ ৩00 টির বেশি প্রোডাক্টে কাস্টমাররা তাদের পছন্দের যেকোনো ধরনের ডিজাইন অথবা ছবি প্রিন্ট করার সুবিধা পেয়ে থাকে এই প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি থেকে। কাস্টমারদের পছন্দের ভিত্তিতে তাই এর চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌখিন জিনিস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিভিন্ন প্রোডাক্টে কাস্টমারদের পছন্দনীয় ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা যেন এর চাহিদা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। তাই প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার বললেই চলে।
- ইনকাম : চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইনকাম বৃদ্ধির হারও বেশি। আপনি আপনার প্রোডাক্টটি যত বেশি কাস্টমারদের কাছে প্রমোট করতে পারবেন অথবা আপনার প্রোডাক্ট দ্বারা তাদেরকে যত বেশি আকৃষ্ট করতে পারবেন ততই এটি আপনার মুনাফা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করবে। প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এই বিজনেসটি লিমিটলেস ইনকাম। একে অনেক বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
উপরের বিষয়গুলো প্রিন্ট অন ডিমান্ডের চাহিদা বাড়ার পিছনে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। যা কিনা প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ কে আরো বেশি উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি কি লাভজনক?
ই-কমার্স বিজনেসে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মাধ্যম। স্বল্প খরচ এবং একটি নিশ্চিন্তের কর্মজীবন হিসেবে অনেকেই প্রিন্ট অন ডিমান্ডকে বেছে নিচ্ছেন। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের এ বিজনেসের প্রতি চাহিদা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে এতে সল্প পরিশ্রম ব্যয় নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি মোটা অংকের টাকা উপার্জন করার সম্ভব।
একজন প্রিন্ট অন ডিমান্ড উদ্যোক্তার মাসিক আয় প্রায় ৪৫০০ ইউএস ডলার , যা কিনা প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির ভিত্তিতে মাসিক আয় প্রায় ৯৫০০ ইউএস ডলার ১০ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ অথবা তারও বেশি হতে পারে। তবে এই আয়ের পরিমাণ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে আপনার পণ্য বেচা কেনার উপরে অথবা আপনি কত দ্রুত আপনার ব্যবসার প্রমোশন করে মানুষদেরকে আকৃষ্ট করতে পারছেন তার উপর।
তবে সকল ধরনের প্রতিকূল ও অনুকূল পরিস্থিতিকে সামলিয়ে আপনি যদি এই ই-কমার্স বিজনেস টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তবে বলা যায় যে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ডের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার এবং লাভজনক একটি ব্যবসা।