খুব সহজে বলতে গেলে আপনি আপনার কম্পিউটারে কোন জরুরী ফাইল অথবা ডোকুমেন্টস সেভ করে রাখলেন। পরবর্তীতে কোন কাজের কারণে আপনি বাইরে গেলেন কিন্তু আপনি আপনার কম্পিউটারটি নিতে পারলেন না। সে সময়ে যদি আপনার সেই ফাইল বা ডোকুমেন্টস প্রয়োজন পড়ে আপনি তখন কি করবেন? অথবা কিভাবে সেই ফাইল বা ডোকুমেন্টটি আপনি খুঁজে পাবেন? ভেবেছেন কি ?
ক্লাউড কম্পিউটিং কিন্তু আপনাকে সেই সময়ই সাহায্য করবে। ক্লাউড কম্পিউটিং কি এবং ডিজিটাল বিজনেস এর ব্যবহার সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য। আপনাদের সকল ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করব আজকের লেখার মাধ্যমে। তাহলে চলুন এর বিস্তারিত সম্পর্কে জানা যাক।
ক্লাউড কম্পিউটিং কি?
মোবাইল অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারি। তবে এ ধরনের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ খুব সহজেই এই তথ্যগুলো হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আপনি ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। সেই ইন্টারনেটের সাহায্য পাবেন ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে। ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করা হয় আপনার যেকোনো ধরনের ডাটা অথবা ফাইলস সেভ করে রাখার ক্ষেত্রে। স্টোরেজ, সার্ভার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডেটাবেজ, ইনটেলিজেন্স ইত্যাদি সেবা কোনো ক্রেতা কিংবা কোম্পানির নিকট নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে এবং অর্থের বিনিময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাড়ায় প্রদান করাই ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের কাজ।
সাধারণত একটি কম্পিউটার যে ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে ক্লাউড কম্পিউটিং ঠিক সেই কাজটিই করে থাকে, তবে এর কাজের ধরন আলাদা। আপনি ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেজ, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার অথবা এনালাইটিকের মত বিভিন্ন ধরনের কাজ করা সম্ভব এর দ্বারা। যেমন : ডেক্সটপ , Google Drive, Dropbox, Picasa, Flickr, HubSpot, Salesforce, Adobe Marketing Cloud, Google Docs, Amazon web services, SlideRocket, IBM Cloud, Microsoft Azure, Google Cloud, Oracle Cloud, Alibaba Cloud ইত্যাদি।
যেহেতু ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সার্ভিসটি পাওয়া যায়, তাই আপনি খুব সহজেই যেকোন জায়গায় অথবা যে কোন সময় আপনার প্রয়োজনীয় ডোকুমেন্ট এক্সেস করতে পারবেন। শুধু এর জন্য প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট কানেকশনের। এতে করে আপনাকে কোন ধরনের ল্যাপটপ অথবা পেনড্রাইভের প্রয়োজন পড়বে না এবং আপনি নিশ্চিন্তে আপনার বিভিন্ন ধরনের ডাটা স্টোর করে রাখতে পারবেন। আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেলে আপনার ডাটাগুলো সহজে হারিয়ে যাবে না। কারণ সেইসব ডাটার ব্যাকআপ পেয়ে যাবেন ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি?
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা গুলো হচ্ছে-
- ব্যবহার করা সহজ: এই সার্ভিসটি পাওয়ার জন্য আপনার শুধু প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট কানেকশনের। এটি আপনি যেকোনো সময় যেকোন জায়গায় অ্যান্ড্রয়েড, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে পেতে পারেন। তাই বিজনেসের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অনেক কার্যকরী।
- দ্রুত স্পিডসম্পন্ন : যেহেতু এটি ইন্টারনেট নির্ভর সার্ভিস, তাই আপনার ইন্টারনেটের স্পিড যত দ্রুত হবে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আপনার সমস্ত কাজও তত দ্রুত গতিতে হবে।
- পারফরমেন্স ব্যবস্থা: কম্পিউটিং সার্ভিসের পারফরমেন্স মূলত নির্ভর করে তার সিকিউরিটি ও প্রসেসর কতটা আপগ্রেড তার উপরে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সার্ভিস সিকিউর ও কতটা আপগ্রেড ।
- নির্ভরযোগ্যতা: ক্লাউড কম্পিউটিং ডাটা ব্যাকআপ থেকে শুরু করে ডাটা রিকভারি করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। এজন্যই এটি খুব সহজেই নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধা গুলো হচ্ছে-
- ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে।
- ডাটা পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ডেটা, তথ্য, প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশনের উপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
- একবার ক্লাউডে ডাটা পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কিভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার কোন উপায় থাকে না।
ডিজিটাল বিজনেসে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যবহার কেমন?
ডিজিটাল বিজনেসের ক্ষেত্রে এ ক্লাউড কম্পিউটিং অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভূমিকা পালন করে। ডিজিটাল বিজনেসে এর ব্যবহারসমূহ হলো –
১. ডোকুমেন্টস স্টোরেজ :
আপনার বিজনেসের যেকোনো ধরনের জরুরি ডোকুমেন্ট ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে সেভ করে স্টোর করতে পারেন। এতে করে এসব জরুরি ডোকুমেন্টগুলো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। আপনি যেকোনো সময় যে কোন জায়গায় অথবা যে কোন প্রয়োজনেই আপনার স্টোর করা ইনফরমেশনগুলো সহজেই এক্সেস করতে পারবেন। এছাড়াও ফাইল এডিট সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস পেতে পারেন এর মাধ্যমে। এজন্যই আপনার ডিজিটাল বিজনেসের অন্যতম সহায়ক ক্লাউড কম্পিউটিং।
২. হাই স্পিড:
ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে অধিক পরিমানে ক্লাউড হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করা হয়। ক্লাউড সার্ভার মূলত সব সার্ভার একসাথে কাজ করার বিশাল পরিমান মেমোরি, ক্লক স্পিড ও প্রসেসর স্পিডে মতো নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। একারণে ক্লাউড হোস্টিংয়ে হোস্ট করা ওয়েবসাইট গুলো অনেক দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়। ক্লাউড হোস্টিংয়ে অনেকগুলো সার্ভার একসাথে থাকার কারণে আপনার যদি কোন একটি সার্ভারে কোন ধরনের সমস্যা হয় তারপরও আপনার ওয়েবসাইট অ্যাক্টিভ থাকবে।
৩. ব্যকআপ স্টোরেজ :
অনলাইনের বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন গুলোর ব্যাকআপ রাখার জন্য বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করা হয়। যেহেতু এই সার্ভিসটির জন্য আপনার শুধু দরকার হবে ইন্টারনেটের, তাই আপনার বিজনেসে যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনের ব্যাকআপ রাখার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যেহেতু যেকোনো ধরনের ডোকুমেন্ট অথবা অ্যাপ্লিকেশন গুলোর ব্যাকআপ রাখা সম্ভব,তাই আপনাকে কোন ধরনের পেনড্রাইভ অথবা এসএসডি প্রয়োজন পড়ে না। নিজস্ব ফাইল, ডোকুমেন্ট এবং তথ্যসমূহ সংরক্ষনে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয় আর ডিজিটাল বিজনেস এর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অনেক বেশি চোখে পড়ে।
৪. লো মেইনটেইন্যান্স :
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস যেকোনো ধরনের অনলাইন বিজনেসের অপারেটিং খরচ কমাতে সাহায্য করে । আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যার ক্রয় করার পরিবর্তে স্বল্প খরচে ভাড়া করে ব্যবহার করার সুবিধা পেতে পারেন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে অপারেটিং খরচ অনেকাংশে লাঘব হয়।
৫. অ্যাপস ডেভলপমেন্ট :
বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন টেস্ট এবং ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল বিজনেসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ডাটার ডেভলপমেন্টের প্রয়োজন পড়ে। সেই সকল ডেভলপমেন্টের জন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন ক্লাউড কম্পিউটিংকে। কারণ এটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে যেমন- আপনি অনলাইনেই এসব ডাটা খুব সহজেই এডিট করতে পারবেন।
৬. পে এজ ইউ গো সুবিধা :
ব্যবহারকারীর অতিরিক্ত খরচ হ্রাস করার ক্ষেত্রে ক্লাউড কম্পিউটিং অন্যতম। কারণ একজন অনলাইন বিজনেস ব্যবহারকারী ঠিক যতটুকু সার্ভিস ব্যবহার করতে চাইবেন তাকে ঠিক ততটুকুর জন্যই পেমেন্ট করতে হবে। এখানে অতিরিক্ত পেমেন্ট গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই, যাকে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভাষায় বলা হয় পে এজ ইউ গো (pay as you go)।