কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) কথা আমরা কম বেশি সকলেই শুনেছি। এটি কাজকে অনেক বেশি স্বয়ংক্রিয়, কম্পিউটিং সমাধান এবং দক্ষতা উন্নত করে বর্তমানে আমাদের বিশ্বকে আরও স্মার্ট করে তুলছে৷ Al , এখন ডিজিটাল মার্কেটিং ডোমেনেও প্রচলিত। যা ওয়েবসাইট ব্যক্তিগতকরণ করতে, কন্টন্টের বিষয়বস্তু তৈরি করতে, আচরণের পূর্বাভাস দেয়া সহ আরও অনেক কিছু করে থাকে। অনেক ধরনের ডাটাকে খুব দ্রুত এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করার জন্য AI বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটারদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। চলুন আজকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ AI এর ইফেক্টিভ ব্যবহার সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
কন্টেন্ট মার্কেটিং :
কনটেন্ট মার্কেটিং যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের প্রমোশন বা প্রচার প্রচারণা করতে পারেন। বিভিন্নভাবে মার্কেটিং এর জন্য কনটেন্ট তৈরি করা হয়। ছবি, ভিডিও বা লেখার মাধ্যমে আপনি আপনার যেকোন প্রোডাক্টের প্রমোশন বা সেল বৃদ্ধি করতে পারেন। এধরনের যেকোন কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমানে AI ব্যবহার করা হচ্ছে। কনটেন্ট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে কনটেন্ট জেনারেট করতে হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ভাষায় যেকোনো ধরনের কনটেন্ট লিখতে পারেন অথবা ছবি বা ভিডিও এর কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন , যেমন : Jasper AI, Rytr ইত্যাদির মাধ্যমে। এই ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলসগুলোর মাধ্যমে ওয়েব মার্কেটিং, কন্টেন্ট, ফেসবুকের বিজ্ঞাপন, ক্যাপশন, সেলস ই-মেইল ইত্যাদি কাজ করা সম্ভব। এছাড়াও ব্লগের আউটলাইন, প্যারাগ্রাফ, পার্সোনাল বায়ো লেখার ক্ষেত্রে বর্তমানে এ ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হয়। এটি ডিজিটাল মার্কেটারের সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় করতে সাহায্য করে।
পার্সোনালাইজেশন :
AI অ্যালগরিদম গুলো বিভিন্ন ধরনের পার্সোনালাইজ কনটেন্টের উপর ভিত্তি করে ।
অতীতের বিভিন্ন ধরনের কাজ বা পদ্ধতি – AI এর সাহায্যে এনালাইজ করে, মার্কেটাররা তাদের কাস্টমারদের কাছে বিভিন্ন ধরনের অফার ও প্রোডাক্টের রিকমেন্ডেশন করতে পারে।
একটি কোম্পানির কাস্টমারদের ব্রাউজিং ট্রাক করা যায় AI এর সাহায্যে। যার সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই কাস্টমাররা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পণ্যে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়াও এই পদ্ধতির সাহায্যে কাস্টমারদের প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত প্রদান করা যায়। এটি যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া এনালাইজ, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং সার্ভে করে থাকে , তাই কাস্টমারদের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
চ্যাটবট :
পার্সোনালাইজড কাস্টমার সাপোর্ট, ডাটা সংগ্রহ এবং তা এনালাইস করে কাস্টমারদের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে এই চ্যাটবট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এর সুবিধা গুলো হলো-
চ্যাটবট সাধারণত উন্নত মানের কাস্টমার সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যেহেতু এটি সপ্তাহের ২৪ ঘন্টাই কাস্টমারদের নির্ভরতা ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে থাকে, তাই AI এর এই সুবিধাটি ওয়ারকারদের কাজের লোড কমায় অনেকাংশে।
চ্যাটবট ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম গুলোয় কাজ করার সুবিধার্থে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা প্রদান করে।
কাস্টমারদের ব্যবহারের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট রেকমেন্ডেশন, অফার, ডিসকাউন্ট বা প্রমোশন প্রদান করে থাকে এই চ্যাটবট।
চ্যাটবট লিড জেনারেশন এবং মার্কেটিংয়ের জন্য ইমেল ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও ডাটা এনালাইজ করে মার্কেটিং ইমপ্রুভ করা, টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ এর দ্বারা করা সম্ভব।
প্রেডিক্ট এনালাইটিক :
AI অ্যালগরিদম ডিজিটাল মার্কেটারদের সাহায্য করে কাস্টমারদের বুঝতে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট অ্যানালিটিক্স এবং কাস্টমারদের প্রতিক্রিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে এটি। আগে থেকেই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা রাখাই হচ্ছে প্রেডিক্ট এনালাইটিক বা ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ। এছাড়াও এটি ডেটা এনালাইসিস করে কাস্টমারদের আচরণের পূর্বাভাস দিতে পারে এবং পণ্য কেনাকাটা এবং প্রমোশন করার মতো প্রবণতাও তৈরি করতে পারে। আরও রয়েছে –
গ্রাহক ধরে রাখা: ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ অনেক বেশি কাস্টমারদের ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে এই ডাটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
প্রোডাক্ট ইম্প্রুভ: ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ প্রোডাক্ট ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে, কারন আপনার কস্টমারদের সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রোডাক্টের মান উন্নয়ন করা সম্ভব এই AI এর মাধ্যমে।
পূর্বাভাস: ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে গ্রাহকের আচরণ এবং আগ্রহ অনুমান করতে পারে। এই তথ্য প্রোমোশনের এবং প্রোডাক্টের মান উন্নত করা সহ আরও নানা কাজে সাহায্য করে থাকে।
AI জেনারেটেড আর্ট :
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রমোশনের জন্য অথবা আপনার ওয়েবসাইটটিকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছবি অথবা আর্ট ব্যবহার করা হয়। প্লাগারিজম থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় নতুনত্ব আনতে পছন্দ করি। বর্তমানে AI জেনারেটেড আর্টের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার কাল্পনিক অথবা বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে কনটেন্ট গুলোর ক্ষেত্রে নতুন যেকোনো ধরনের ছবি তৈরি করতে পারেন। এতে শুধু দরকার হবে আপনার সঠিক নির্দেশনার।
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনের কথা চিন্তা করে থাকেন, তবে AI আপনাকে সেই সুবিধা প্রদান করবে। আপনি শুধু সঠিক নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং আপনার নির্দেশনার ভিত্তিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুবই সহজেই সেই সুবিধা দিয়ে সাহায্য করবে আপনাকে।
AI জেনারেটেড ভিডিও :
কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটারদের বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে আপনি AI সাহায্যে ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করতে পারবেন। ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ফেইস করতে হয়। তাই সেসব ভিডিও তৈরি করা খুবই কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানে AI জেনারেটেড ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোডাক্টের অথবা অন্য যে কোন ধরনের প্রমোশনে কনটেন্ট এর ভিত্তিতে খুব সহজেই ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। যা কিনা একজন ডিজিটাল মার্কেটার জন্য অত্যন্ত সুবিধা প্রদান করে থাকে। আপনি যে ধরনের নির্দেশনা প্রদান করবেন তার ভিত্তিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করবে। এক্ষেত্রে আপনি যে ধরনের ভিডিও তৈরি করতে চাইছেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আপনাকে এই ধরনের সুবিধাই প্রদান করবে। এছাড়াও এতে যেকোনো ধরনের মানুষের প্রতিবিম্ব তৈরি করার জন্য কোন ধরনের পারমিশনের প্রয়োজন হয় না কারণ এটি কাল্পনিক একটি চরিত্র তৈরি করে। তাই বর্তমানে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম।