বর্তমানে প্রিন্ট অন ডিমান্ড শব্দটি বেশ পরিচিতি পাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সাইট গুলোতে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টকৃত প্রোডাক্ট সেল হতে দেখা যায়। আপনি সেসব মাধ্যম থেকে তাদের দেয়া ডিজাইনের বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট কিনতে পারেন তবে আপনার পছন্দ অনুসারে ডিজাইন দিতে পারেন না। আপনার পছন্দ অনুসারে যেকোনো ধরনের ডিজাইন দ্বারা আপনার প্রোডাক্টটি তৈরি করার সুবিধা প্রদান করে এই প্রিন্ট অন ডিমান্ড।
আজ আপনাদেরকে প্রিন্ট অন ডিমান্ড সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব এছাড়াও কাদের জন্য প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি ওয়েল সুটেড সেই সকল বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন জেনে আসা যাক এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড কি?
কাস্টমারদের পছন্দ মতো ডিজাইন অথবা নিজের তৈরিকৃত ডিজাইনের কথা বিবেচনা করেই মূলত এই বিজনেস আইডিয়াটির আবির্ভাব হয়। প্রিন্ট অন ডিমান্ড এমনই একটি বিজনেস প্রক্রিয়া যেখানে কাস্টমারদের ডিমান্ড এর উপর ভিত্তি করে যেকোনো ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা এবং তাদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
![প্রিন্ট অন ডিমান্ড কি?](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/137-1024x576.webp)
প্রিন্ট অন ডিমান্ডে সেলার/ডিজাইনার এবং ফুলফিলমেন্ট পার্টনার নামক দুটি স্তর রয়েছে। কাস্টমারদের কাছে ডিজাইনকৃত প্রোডাক্টগুলো কেমন হবে তার ধারণা প্রদান করাই সেলারের কাজ অন্যদিকে আপনার অর্ডারকৃত প্রোডাক্টটি তৈরি করে আপনার হাতে পৌঁছে দেয়া ফুলফিলমেন্ট পার্টনারের কাজ।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর সুবিধা কি কি?
প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর সুবিধা গুলো হচ্ছে –
- ইনভেস্টমেন্ট : যেকোনো ধরনের বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আপনি প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে এমন কোন ঝামেলা ছাড়াই অর্থাৎ জিরো ইনভেস্টমেন্টে আপনার বিজনেস এর কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
- ম্যানেজমেন্ট : প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত হয় ফুলফিল্মেন্ট পাটনার দ্বারা। কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্ট পৌঁছানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান ফুলফিল্মেন্ট পার্টনাদের দ্বারাই ম্যানেজ করা হয়। এজন্যই এটি একটি ঝামেলাবিহীন ব্যবস্থাপনা বললেই চলে।
- কাজের পরিমাণ : যেহেতু বিভিন্ন ধরনের সমস্যা গুলো ফুলফিলমেন্ট পার্টনার দ্বারা সমাধান করা হয়, একারণে আপনার দুশ্চিন্তা, ঝামেলা অথবা কাজের পরিমাণ বেশ খানিকটা কম বললেই চলে। আপনার কাজ হচ্ছে কাস্টমারদের ডিজাইন সংগ্রহ করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট স্টোরে নিয়ে আসা এবং সেগুলোকে আপলোড করা।
- স্বাচ্ছন্দ্যবোধ : কাস্টমাররা যেহেতু তাদের পছন্দ অনুসারে প্রোডাক্টের সাইজ কালার সিলেক্ট করা সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন এই প্রিন্ট অন ডিমান্ডে। এ প্রক্রিয়াতে কাস্টমারদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ রয়েছে কেননা প্রোডাক্টের প্রাইজ বা কোয়ালিটি তাদের পছন্দ অনুসারে হলে পরবর্তীতে এরাই আপনার স্থায়ী কাস্টমারে পরিণত হয়।
- লিমিটলেস ইনকাম : বিভিন্ন প্লাটফর্ম ভেদে প্রায় ৩০০ এর বেশি সংখ্যক প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে সেল করা সম্ভব। বর্তমানে লোকাল মার্কেট থেকে শুরু করে গ্লোবাল মার্কেট পর্যন্ত এর বিস্তৃতি লক্ষণীয়। এ কারণে এই বিজনেসে ইনকামের সুযোগ অনেক বেশি।
কাদের জন্য প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি ওয়েল সুটেড?
বিভিন্ন সেক্টরের ক্ষেত্রে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি ওয়েল সুটেড। এদের মাঝে রয়েছে-
১। টি-শার্ট প্রিন্ট :
টি-শার্ট কমবেশি সকলের একটি পছন্দের পোশাক আর তা যদি হয় নিজে তৈরিকৃত বা পছন্দের ডিজাইনে তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রিন্ট অন ডিমান্ড হিসেবে টি-শার্ট প্রিন্ট চমৎকার একটি প্রোডাক্ট এবং এটি অনেক বেশি জনপ্রিয় সকলের কাছে। কাস্টমাররা তাদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ডিজাইন প্রিন্ট করতে পারে তাদের পছন্দের কালারের টি-শার্টে। বর্তমানে এ ধরনের প্রোডাক্টের ডিমান্ড এবং সেল দ্বিগুণ হারে বেড়ে উঠেছে।
![টি-শার্ট প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/138-1024x576.webp)
২। ব্যাগ প্রিন্ট :
বর্তমানে ব্যাকপ্যাক বা হ্যান্ড ব্যাগ সহ বিভিন্ন স্টাইলের ব্যাগে প্রিন্টেড ডিজাইন অনেক বেশি প্রচলিত। প্রিন্টকৃত এসব ব্যাগ অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং স্টাইলিশ হওয়ার কারণে দিন দিন এর ডিমান্ড বেড়ে চলছে। তাই আপনি যদি প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস করার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে কাস্টমারদের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে তাদের পছন্দকৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ সেল করতে পারেন। এটি আপনার ইনকামের অন্যতম একটি সোর্স হিসেবে কাজ করবে।
![ব্যাগ প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/139-1024x576.webp)
৩। মগ প্রিন্ট :
বিভিন্ন স্টাইলের মগ অথবা গ্লাস ঘর সাজাতে, কাউকে গিফট দিতে কিংবা শখের বসে কিনে থাকেন অনেকেই। ধরুন আপনার কোন স্পেশাল মোমেন্টকে স্মরণীয় করে রাখতে সেই ছবি বা ডিজাইনগুলো প্রিন্ট করে রাখতে চান। কিছুটা নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রে আপনি এসব ছবি অথবা ডিজাইন গুলোকে মগ প্রিন্ট করে রাখতে পারেন। এর উপর ভিত্তি করে মগ প্রিন্ট অত্যন্ত চমৎকার একটি পদ্ধতি প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর ক্ষেত্রে।
![মগ প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/140-1024x576.webp)
৪। হুডি প্রিন্ট :
শীতকালের সকলের পছন্দের শীতের পোশাক হিসেবে হুডি অনেক জনপ্রিয়। এ সময়টাতে বিভিন্ন স্টাইলের অথবা ডিজাইনের হুডি অনেক বেশি সেল হয়। সকলেই নিজের পছন্দকৃত কিছু ডিজাইনের হুডি কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসে আপনি হুডি প্রিন্টকে প্রাধান্য দিতে পারেন।
![হুডি প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/141-1-1024x576.webp)
৫। প্যান্ট প্রিন্ট :
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অথবা স্টাইল পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে প্যান্ট প্রিন্ট নতুন একটি ধারা তৈরি করেছে। বিভিন্ন ফেস্টিবলের উপর ভিত্তি করে নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রে মানুষের কাছে প্যান্ট প্রিন্ট অত্যন্ত সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে প্যান্টগুলোকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। তাই আপনি যদি প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি শুরু করার জন্য নতুন কিছু আইডিয়া খুঁজে থাকেন তবে প্যান্ট প্রিন্ট তারই মাঝে অন্যতম একটি।
![প্যান্ট প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/142-4-1024x576.webp)
৬। বোতল প্রিন্ট :
পানি ক্যারি করার জন্য আমরা সবসময়ই কোনো না কোনো বোতল আমাদের ব্যাগে রাখার চেষ্টা করি। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন আকারের অথবা স্টাইলের পানির বোতল পাওয়া যায়। সেসব বোতলগুলোতেও আপনি আপনার পছন্দকৃত ডিজাইনে তৈরি করতে পারবেন। এসব প্রিন্টকৃত বোতল যেমন আকর্ষণীয় তেমনি কাস্টমারদের কাছেও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এজন্যেই প্রিন্ট অন ডিমান্ডের ক্ষেত্রে বোতল প্রিন্ট অন্যতম একটি পদ্ধতি।
![বোতল প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/143-1-1024x576.webp)
৭। ক্যাপ প্রিন্ট :
প্রিন্ট অন ডিমান্ডের অন্যতম একটি আইডিয়া হচ্ছে ক্যাপ প্রিন্ট। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অথবা স্টাইলের উপর ভিত্তি করে ক্যাপ প্রিন্ট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনি আপনার পছন্দের ডিজাইনটি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন প্রিন্টের মাধ্যমে। বিভিন্ন রঙের এবং কালার কনট্রাস্টের উপর ভিত্তি করে কাস্টমারদের ডিমান্ড অনুসারে ক্যাপ প্রিন্ট করার মাধ্যমে এধরনের প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন অনায়াসেই।
![ক্যাপ প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/144-1-1024x576.webp)
৮। জুতা প্রিন্ট :
বর্তমানে স্নিকার গুলোকে বিভিন্ন ডিজাইনে প্রিন্ট করা হয়। এধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইনগুলো কাস্টমারদের কাছে অনেক বেশি সাড়া ফেলেছে। রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে এসব জুতা। অনেকেই কাস্টমাইজড জুতা কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। তাই যারা এধরনের ব্যবসায়িক কাজের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন তারা যদি প্রিন্ট অন ডিমান্ডের মাধ্যমে কাস্টমারদের পছন্দকৃত জুতা প্রিন্টকে প্রাধান্য দিয়ে আপনি আপনার বিজনেসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
![জুতা প্রিন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/11/145-1-1024x576.webp)