ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এটি আপনাকে আপনার কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক জীবনে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে, দলগত কাজ বাড়ানো ক্ষেত্রে এবং ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ আপনি মানুষের সাথে কতটা ভাল ভাবে কমিউনিকেট করতে পারেন, পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করতে পারেন এটি একটি মূখ্য বিষয়। বর্তমানে নামীদামী প্রতিষ্ঠান গুলো কিন্তু এমন সব এমপ্লয়ি দের খোঁজ করেন যাদের কমিউনিকেশন স্কিল খুবই এডভান্স।
আপনি যত বেশি আপনার আশেপাশের মানুষ, ক্লায়েন্ট, কর্মচারী, কর্মকর্তা, বস, সহকর্মী ও রিলেটেড লোকজনের সাথে কানেক্টেড থাকবেন, ততবেশি আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের রিচ বাড়বে। ফলে, সমাজে কিংবা কর্মক্ষেত্রে গুড ইমপ্রেশনস তৈরি করতে কিংবা কাজ কে সহজে এগিয়ে নিতে এই স্কিল প্র্যাকটিসের বিকল্প নেই।
এই আর্টিকেল এ, কমিউনিকেশন স্কিল তৈরি করতে এবং স্কিল কে মডিফাই করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমরা সাতটি টিপস নিয়ে আলোচনা করব।
কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার ৭ টি টিপস :
১. একটিভ লিসেনিং ম্যাটারস:
ইন্টারন্যাশনাল লিসেনিং অ্যাসোসিয়েশনের একটি সার্ভে অনুসারে, মানুষ তাদের কমিউনিকেশন এর টাইমে প্রায় ৪৫% সময় শোনার জন্য ব্যয় করে। একটিভলি অন্যদের কথা শোনা শুধুমাত্র সম্মান প্রদর্শন করে না বরং আপনাকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫৫% সফল যোগাযোগ ডিপেন্ড করে আপনি অপরপক্ষের লোকের কথা কতটা মনোযোগ সহকারে শুনছেন এবং কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর ওপর ভিত্তি করবে আপনি যার সাথে কমিউনিকেট করতে চাচ্ছেন সে আপনার ওপর কতটা নির্ভর করছে।
এছাড়াও একটিভ লিসেনিং কে Key To কমিউনিকেশন ও বলা হয়। কারণ শুরু টা করতে হবে অন্যের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা ও গুরুত্ব দেয়ার ওপরে। তবেই সামনের লোকটি আপনার সাথে আরো বেশি কানেক্টেড থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।
২. নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন ইম্প্রুভ করুন:
নন ভার্বল যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগামী আলবার্ট মেহরাবিয়ানের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, যোগাযোগের ৫৫% ই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আই কন্ট্যাক্ট বজায় রাখার জন্য আলাদা করে কাজ করুন, উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করুন এবং আপনার মেসেজ এর ওভারঅল ইফেক্ট বাড়ানোর জন্য আপনার বলা শব্দের সাথে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কে নেভিগেট করে যোগাযোগ করুন।
আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অর্থাৎ হাতের বা শরীরের অঙ্গভঙ্গি, চোখের ভাষা এগুলো সবই নন ভার্বাল কমিউনিকেশন এর অন্তর্ভুক্ত। এই বিষয় গুলোর ওপরে অন্যদের সামনে আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশন নির্ভর করে। তাই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টা কারেকশন করার চেষ্টা করুন।
৩. ক্লারিফিকেশন এর আর্ট আয়ত্ত করুন:
অস্পষ্টতা কিন্তু ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন কে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। অর্থাৎ আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন, আপনার কথা কতটা যৌক্তিক এটা ক্লারিফাই করা জরুরি। আপনি কি বলছেন সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য এটা নির্ভর করবে আপনার বাচনভঙ্গির ওপর ও আত্মবিশ্বাস এর ওপর।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি সার্ভে-তে দেখা গেছে যে ৫৬% সিনিয়র এক্সিকিউটিভের উইক কমিউনিকেশন এর কারণে বিজনেস এ ভুল বোঝাবুঝি এবং প্রডাক্টিভিটি প্রবলেম এর কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাদের এমপ্লয়ি বা সেলস এক্সিকিউটিভরা ঠিক ভাবে কমিউনিকেট করাতে না পারায়, কোম্পানির বিশ্বস্ততায়, প্রফিটে প্রভাব পরেছে।
তাই আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করতে আপনার চিন্তাভাবনা গুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ট্রাই করুন। তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত ভাষা ব্যবহার করুন এবং কোনো কিছু না জানলে অকপটে স্বীকার করার মানসিকতা রাখুন। ভুল ব্যাখ্যা আপনার ক্লারিফিকেশন কে উল্টো দিকে নিয়ে যেতে পারে।
৪. কথায় ও ব্যবহারে সহানুভূতি ডেভেলপ করুন:
গ্লোবাল ইমপ্যাথি ইনডেক্স একটি চার্ট এ দেখায় যে, যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী, সার্ভিস ম্যানেজাররা যত বেশি সহানুভূতিশীল বা কাইন্ড, তাদের সেলস, প্রোফিট, প্রডাক্টিভিটি তত বেশি।
মূলত কথার মধ্যে কাইন্ডনেস বা সহানুভূতি একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলে এবং পাওয়ারফুল কমিউনিকেশন তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনার সামনের লোকটি আপনার সাথে আরো বেশি কম্ফোর্ট ফিল করে। ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে এবং ফিডব্যাক জানতে খুব একটা পরিশ্রমের দরকার পরে না। তাই অন্যদের পার্সপেক্টিভ, প্রায়োরিটি, রিয়্যাকশন সহজে বোঝার জন্য কথা ও ব্যবহারে কাইন্ডনেস রাখার অনুশীলন করুন।
৫. আপনার অডিয়েন্সদের সাথে মানিয়ে নিন:
আপনার অডিয়েন্সদের সাথে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল কে পাওয়ারফুল ভাবে কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেলয়েটের একটি সমীক্ষায় পাবলিশ করেছে যে ৮৮% ক্ষেত্রেই লিডাররা এমপ্লয়িদের সাথে মানিয়ে নিলে সেই সেশন বেশি ইফেক্টিভ হয়।
ঠিক তেমনই, আপনি যখন কারো সাথে কমিউনিকেট করছেন, তখন আপনার অডিয়েন্স এর সাথে আপনার আগে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে আপনি একটিভ পারসন হিসেবে রোল প্লে করবেন৷ অপরপক্ষকে কম্ফোর্টেবল করা, তাদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া, ফিডব্যাক নেয়া, পার্সোনালাইজড ডাটা কালেক্ট করা, এগুলোর জন্য অডিয়েন্স এর সাথে আগে মানিয়ে নেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মোট কথা, আপনি আপনার অডিয়েন্স কে ফিল করাবেন আপনি তাদেরই একজন৷ কিংবা তাদের সাথে আপনার কমন কিছু রয়েছে বা আপনি তাদের পাশে আছেন। আপনি যদি ভেবে থাকেন অপরপক্ষ থেকে এপ্রোচ আসবে, এরপর কনভার্সেশন শুরু করবেন, তাহলে কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার কোনো ভ্যালু থাকবে না৷
৬. টেকনোলজির ইফেক্টিভ ব্যবহার:
আধুনিক যুগে, ডিজিটাল যোগাযোগের সরঞ্জাম সবজায়গায়ই এভেইলএবল। ম্যাককিন্সির একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়ি রা তাদের ওয়ার্কিং উইক এর প্রায় ২৮% সময় ইমেল পড়তে এবং ফিডব্যাক জানাতে ব্যয় করে।
তাই আজকের এই ইন্টার কানেক্টেড বিশ্বে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশনের জন্য ইমেইল ম্যানার, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে কমিউনিকেশন স্কিল অর্জন করা প্রয়োজন।
৭. গঠনমূলক কমেন্ট একসেপ্ট করতে শিখুন এবং অন্যকেও প্রোভাইড করুন:
জার্নাল অফ অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কর্মচারীরা নিয়মিত ফিডব্যাক পান তাদের সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা ১২ গুণ বেশি।
এজন্য আপনার পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল কমিউনিটির মধ্যে গঠনমূলক কমেন্ট করার ট্রেডিশন গড়ে তুলুন। আর নিজেও যেকোনো হেলদি এবং ইফেক্টিভ কমেন্ট এর জন্য ওপেন মাইন্ডসেট রাখুন। কারণ, ইফেক্টিভ সমালোচনা আপনার পার্সোনাল ও প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট এ যেমন কার্যকর তেমনি অন্যকেও গঠনমূলক ও হেলদি ক্রিটিসিজম বা কমেন্ট করলে, কনফ্লিক্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কমিউনিকেশন আরো প্রোডাক্টিভ হয়।
উপসংহারে, ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার একটা কন্টিনিউয়াস ও সিস্টেমেটিক প্রক্রিয়া। একটিভ লিসেনিং, নন ভার্বাল কমিউনিকেশন, কথার মধ্যে স্বচ্ছতা, নমনীয়তা, সহানুভূতি, এডাপটেশন ক্যাপাসিটি, প্রযুক্তিগত স্কিল এবং গঠনমূলক কমেন্ট করার মাধ্যমে আপনিও ডেভেলপ করতে পারেন আপনার কমিউনিকেশন স্কিল। আশা করি, এই সাতটি টিপস আপনাকে আপনার প্রোফেশনাল ও পার্সোনাল লাইফে কমিউনিকেশন ডেভেলপ করতে সাহায্য করবে।