Word-of-mouth প্রবাদ টি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। বিজনেস ও মার্কেটিং এর ফিল্ডেও কিন্তু এর প্রচলন ব্যপক। আপনি হয়ত লক্ষ করেছেন হঠাৎ করেই একটা কনটেন্ট ভাইরাল হচ্ছে। কিংবা মুখের কথা দিয়েই গুঞ্জন রটানো এবং সেই কথাকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং করা হচ্ছে । এটাই ছিল ভাইরাল মার্কেটিং।
![ভাইরাল মার্কেটিং আল্টিমেট গাইডলাইন](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/306-1024x576.webp)
ভাইরাল মার্কেটিং এর প্রচলন কিন্তু আজকে থেকে নয়। ব্যবসা বাণিজ্যের বিবর্তনের সাথে সাথে এই স্ট্রাটেজিও অনেক আগেই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেছে। স্টক আউট, লিমিটেড টাইম কিংবা হঠাৎ করে প্রডাক্ট বা সার্ভিসের গুনমান নিয়ে গুঞ্জন ওঠা। এই টেকনিক গুলো যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর জোরে ভাইরাল মার্কেটিং এডভান্স পর্যায়ে চলে গেছে। ৭৬ শতাংশ সেলস বৃদ্ধি পেয়েছে ভাইরাল মার্কেটিং এর এপ্লিকেশনে। শুধু তাই নয়, ট্রেন্ডি বা ভাইরাল প্রোডাক্টকেই কাস্টমাররা এখন ক্লারিফিকেশন হিসেবে নিচ্ছে।
তাই ডিজিটাল যুগের মার্কেট গ্রোথ ও কম্পিটিশনে এগিয়ে থাকতে ভাইরাল মার্কেটিং এর কমপ্লিট গাইডলাইন থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
ভাইরাল মার্কেটিং কি?
ভাইরাল মার্কেটিং হল একটি ডায়নামিক এবং ইনফ্লুয়েন্সিং স্ট্র্যাটেজি যা একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রচার করার জন্য ইউজ করা হয়। এখানে মূলত মুখের কথার শক্তিকে কাজে লাগানো হয়। অর্থাৎ সিম্পলি একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে পজিটিভ বা নেগেটিভ রিভিউ করে বিষয়টিকে ছড়িয়ে দেওয়া । এটির লক্ষ্য হচ্ছে একটা গুঞ্জন বা বাজ তৈরি করা, যার ফলে আপনার শেয়ার করা তথ্য গুলো দ্রুত একটি ছোঁয়াচে ভাইরাসের মতো হিউজ অডিয়েন্স এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
![ভাইরাল মার্কেটিং কি?](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/307-1024x576.webp)
এই পদ্ধতিটি এখন আধুনিক সমাজের সবচেয়ে ট্রেন্ডি এবং মোস্ট ইউজফুল স্ট্র্যাটেজি বলা যায়। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভাইরাল মার্কেটিং এখন আরো দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।
ভাইরাল মার্কেটিং এর মূল কম্পোনেন্ট :
ভাইরাল মার্কেটিং করতে হলে এতে অবশ্যই ৪ টি জিনিস ইনক্লুড থাকতে হবে। তবে এটি অন্যান্য মার্কেটিং এর সাথে আলাদা করা যাবে।
১. কম্পেইলিং কনটেন্ট:
ভাইরাল মার্কেটিং শুরুই হয় এমন কনটেন্ট এর ক্রিয়েশনের মাধ্যমে যা টার্গেট অডিয়েন্স কে সারপ্রাইজ করে এবং ইন্সপায়ার করে। এটা হতে পারে একটা হাস্যকর ভিডিও, একটা ইমোশনাল গল্প, বা একটি মাইন্ড-ডাইভার্সিং মেসেজ। মোট কথা এটা অডিয়েন্স এর মনে খুব দ্রুত একটা ইফেক্ট ফেলবে। পাশাপাশি মানুষের ইমোশনাল, পার্সোনাল নিড কে হিট করবে। তবেই জিনিসটা ভাইরাল হবে।
![কম্পেইলিং কনটেন্ট](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/308-1024x576.webp)
২. শেয়ারেবিলিটি:
আপনি যে কনটেন্টটা পাবলিশ করবেন এটা শুধু লিমিটেড অডিয়েন্স এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে অর্থাৎ আপনার কনটেন্টটা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম জুড়ে সহজে শেয়ারযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ কনটেন্টটি শেয়ার করার মত অপশন থাকতে হবে। বিভিন্ন প্লাটফর্ম-এ এর এবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে।
![শেয়ারেবিলিটি](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/309-1024x576.webp)
পাশাপাশি কনটেন্ট এমন ভাবে ক্রিয়েট করবেন যাতে অডিয়েন্স নিজে থেকেই এটা শেয়ার করতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো কিন্তু ভাইরাল মার্কেটিং এর শেয়ারিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট এর বেস্ট ওয়ে।
৩. টার্গেটেড অডিয়েন্স সিলেকশন:
অনেকসময় আপনার কনটেন্ট ভাইরাল হলেও দেখা গেছে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের তেমন রিচ হচ্ছে না বা সেলস হচ্ছে না৷ এর কারণ হয়ত আপনার মেসেজ, কনটেন্ট, বা ভিডিও অনেকেই পছন্দ করেছে। কিন্তু আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন, সেই নিশে ইন্টারেস্টড অডিয়েন্স এর কাছে এখনো পৌঁছাতে পারেন নি। তাই আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
![টার্গেটেড অডিয়েন্স সিলেকশন](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/310-1024x576.webp)
তাই আগে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স সিলেক্ট করুন৷ তাদের কে ফোকাসে রেখে কনটেন্ট তৈরি করুন। এরপর রিচ বাড়ানোর জন্য ভাইরাল করার চিন্তা করুন।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা:
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ভাইরাল মার্কেটিং এর সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পপুলার চ্যানেল এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে কনটেন্ট এর রিচ বাড়ানো কনটেন্ট এর ভাইরাল হওয়ার পসিবিলিটিকে বাড়িয়ে তুলে। তাই রিসেন্টলি মার্কেট রিসার্চাররা বর্তমান যুগের অডিয়েন্স রিচ গবেষণা করে, ভাইরাল মার্কেটিং এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে এড করেছে।
![সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/311-1024x576.webp)
সাকসেসফুল ভাইরাল মার্কেটিং গাইডলাইন:
আপনার ব্র্যান্ডের রেপুটেশন ও রিচ বাড়াতে যদি ভাইরাল মার্কেটিং এর আশ্রয় নিতে চান এবং সাকসেসফুল হতে চান তাহলে অবশ্য ফলো করুন এই বিষয় গুলো-
১. কনটেন্ট এর অথেনটিসিটি বা সত্যতা :
আপনার একটা কনটেন্ট ভাইরাল করার উদ্দেশ্য আপনার সেলস বাড়ানো। অহেতুক, মিথ্যা প্রচারণা ও ট্রেন্ডে থাকা আপনার উদ্দেশ্য নয়। তাই আপনি যে টপিকটি ভাইরাল করছেন তা যেন আপনার বিজনেস এর সাথে রিলেটেড হয় এবং জেনুইন হয়। অর্থাৎ ভাইরাল করা অফার, ইনফরমেশন যেন সত্যি হয়। নতুবা ব্র্যান্ডের রেপুটেশন এর ওপর নেগেটিভ ইফেক্ট পড়বে।
![কনটেন্ট এর অথেনটিসিটি বা সত্যতা](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/312-1024x576.webp)
২. ইমোশনাল অ্যাপিল:
আপনার কনটেন্ট অডিয়েন্স এর আবেগ বা সিচুয়েশনের সাথে যত বেশি মিলে যাবে তারা তত বেশি সেটার সাথে রিলেট করবে এবং সেটা শেয়ার করবে। For example আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুনদের সাথে কানেক্টেড এমন একটা কনটেন্ট বানালেন যেটা দেশের তরুনরা তাদের বাস্তব জীবনের সাথে রিলেটেবল মনে করল। দেখবেন তখন তারা নিজে থেকেই কনটেন্টটি শেয়ার করবে। তাই অডিয়েন্স এর সাথে কনটেন্ট এর মাধ্যমে ইমোশনাল এটাচমেন্ট রাখার ট্রাই করুন।
![ইমোশনাল অ্যাপিল](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/313-1024x576.webp)
৩. সিমপ্লিসিটি এবং ক্লারিটি:
আপনি আপনার কনটেন্ট এর মাধ্যমে কি মেসেজ দিতে চাচ্ছেন সেটা সহজ এবং ক্লিয়ার রাখুন। কারণ জটিল বিষয়বস্তু কেউ সহজে বুঝতে চাইবে না বা শেয়ার করতে চাইবে না। তাই কনটেন্ট এর মেসেজ যথাসম্ভব শর্ট, সিম্পল এবং ক্লিয়ার রাখুন।
![সিমপ্লিসিটি এবং ক্লারিটি](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/314-1024x576.webp)
৪. কারেন্ট ট্রেন্ড:
ভাইরাল আর ট্রেন্ড দুটো জিনিস খুব কাছাকাছি। কারণ একটা আপনার একটা কনটেন্ট যখনই ভাইরাল হবে, সেটা ট্রেন্ডি থাকবে তত বেশি আপনার সেলস বাড়বে। তাই আপডেটেড এবং কারেন্ট ট্রেন্ড নিয়ে কনটেন্ট বানানোর চেষ্টা করুন।
![কারেন্ট ট্রেন্ড](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/315-1024x576.webp)
৫. ইউজারদের অংশগ্রহণ:
কোনো চ্যালেঞ্জ, প্রতিযোগিতা বা ইন্টারেক্টিভ কনটেন্ট তৈরি করে ইউজারদের অংশগ্রহণকে আরো মোটিভেটেড করুন। বর্তমানে ফুড নিশে যারা কাজ করে এই ট্রেন্ড তারা বেশ ভালভাবে কাজে লাগায়৷ ফুড চ্যালেঞ্জ, কম্পিটিশন এর মাধ্যমে প্রথমে ভাইরাল হয় এবং সেলস ড্রাইভ করে।
![ইউজারদের অংশগ্রহণ](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/316-1024x576.webp)
৬. শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম অপ্টিমাইজ করুন:
বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজ করতে আপনার কনটেন্ট টি উপযুক্ত প্লাটফর্মে পাবলিশ করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, ভিডিওগুলো টিকটক এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ভাল পারফর্ম করতে পারে। আবার টুইটার শর্ট মেসেজ গুলো ভাইরাল করতে পারে।
![শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম অপ্টিমাইজ করুন](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2024/03/317-1024x576.webp)
উপসংহারে, ভাইরাল মার্কেটিং হল একটি ডায়নামিক এবং মাল্টিফেস স্ট্রাটেজি। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সেলস ড্রাইভ করার একটি দুর্দান্ত অপর্চুনিটি। তাই পজিটিভ ভাইরাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিল্ড কে আরো বেশি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ভাইরাল বা ট্রেন্ডি থাকার এই কম্পিটিশন যেন কোনো অপ্রয়োজনীয় মেসেজ সমাজে ছড়িয়ে না পড়ে এবং উদ্দেশ্য যেন নেগেটিভ না হয়।