ছাত্রজীবনে যে স্কিলগুলো থাকলে প্রফেশনাল লাইফ ইফেক্টিভ হবে

ছাত্রজীবনে যে স্কিলগুলো থাকলে প্রফেশনাল লাইফ ইফেক্টিভ হবে
Share This Post

আজকের এই প্রতিযোগিতামূলক প্রোফেশনাল ওয়ার্ল্ডে, সাফল্য শুধুমাত্র একাডেমিক কৃতিত্বের উপর নির্ভর করে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কর্তারা এখন কন্টিনিউয়াসলি স্কিলড এবং সেন্টার্ড ব্যক্তিদের ভ্যালুকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। যারা বিভিন্ন ধরণের দক্ষতার অধিকারী, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরের সেক্টর গুলোতে পারদর্শী, তারা কিন্তু বেশি প্রায়োরিটি পাচ্ছে।

ছাত্রজীবনে যে স্কিলগুলো থাকলে প্রফেশনাল লাইফ ইফেক্টিভ হবে

তাছাড়া শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষা দিয়ে আপনি একটি কর্পোরেট জব এ সাকসেসফুল হওয়ার আশা রাখতে পারেন না৷ এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে হলেও পড়াশোনার পাশাপাশি দরকার কিছু এক্সট্রা স্কিল। আজকে আমরা রিলেটেবল পরিসংখ্যান দ্বারা সমর্থিত পাঁচটি স্কিল সম্পর্কে আলোচনা করবো যা আপনার প্রফেশনাল লাইফ এর জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে।

প্রফেশনাল লাইফ এ ইফেক্টিভ ৫ টি স্কিল :

শুধু পড়াশোনা ই আপনার একটা সাকসেসফুল প্রফেশনাল লাইফ এর জন্য যথেষ্ট না। এরজন্য প্রয়োজন এক্সট্রা কিছু স্কিল। এমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হল- 

১. ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল: 

ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন প্রফেশনাল লাইফ এর  সাফল্যের মূল ভিত্তি। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কলেজ অ্যান্ড এমপ্লয়ার্স (NACE) দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৮২% নিয়োগকর্তা নিয়োগের সময় পাওয়ারফুল কমিউনিকেশন স্কিল কে অগ্রাধিকার দেন। অর্থাৎ আপনি কতটা ফ্লুয়েন্ট ভাবে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তাদের সাথে কমিউনিকেট করতে পারেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

 ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল

বিশেষ করে সেলস বা মার্কেটিং, বিজনেস ফিল্ডের জব গুলো। তাছাড়া প্রাইভেট সেক্টর এর এমন অনেক জব আছে যেখানে গুড কমিউনিকেশন স্কিল ছাড়া প্রফেশনাল লাইফ এ সাকসেসফুল হওয়া অসম্ভব। 

আপনার কর্মক্ষেত্রে, কাজ বিষয়ক ধারণাগুলি কে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকা, একটিভ লিসেনিং এ যুক্ত হওয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে যোগাযোগ করার ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দক্ষতার বিকাশ আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার সহযোগিতা বাড়ায় এবং ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি আরও বেশি প্রোডাক্টিভ কাজের পরিবেশ তৈরি করে।

২. এডাপটেশন ক্যাপাসিটি ও ফ্লেক্সিবিলিটি: 

প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দ্রুত গতি এবং মার্কেটের গতিশীলতা এমন প্রোফেশনাল দের ডিমান্ড করে যারা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি সমীক্ষায় ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় শীর্ষ ১০টি দক্ষতার একটি হিসাবে এডাপটেশন বা অভিযোজনযোগ্যতাকে মার্ক করা হয়েছে৷ 

অভিযোজনযোগ্য বা এডাপটেবল হওয়া একজন মানুষকে যেকোনো পরিবর্তনকে নির্বিঘ্নে নেভিগেট করার ক্ষমতা দেয়। সেটা হোক পরিবেশগত পরিবর্তন বা কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন। ধরুন, আপনি সারাবছর ঘরকুনো হয়ে পড়াশুনা করে গিয়েছেন। অথবা হোম সিকনেস ফিল করছেন৷ কর্মক্ষেত্রে গিয়ে কাজে ফোকাস করতে পারছেন না। কোনো প্রতিষ্ঠান কি এমন এমপ্লয়ি আদৌও চাইবে? 

এডাপটেশন ক্যাপাসিটি ও ফ্লেক্সিবিলিটি

রিসেন্ট একটি সার্ভে তে দেখা যায় যে, এখনই ৬৯ % নিয়োগকর্তাই এডাপটেবিলিটি বা অভিযোজনযোগ্যতাকে প্রধান নিয়োগের মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা শুরু করছেন। তাহলে ভবিষ্যৎ এ এর ডিমান্ড আরো কতো বেশি হবে বুঝতেই পারছেন। 

৩. ক্রিটিকাল থিংকিং এবং প্রবলেম সলভিং :

বড় বড় প্রতিষ্ঠান এর নিয়োগকর্তারা এমন ব্যক্তিদের খোঁজ করেন যারা যেকোনো পরিস্থিতি সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেটার একটা কার্যকর সমাধান তৈরি করতে পারে। ফাউন্ডেশন ফর ক্রিটিকাল থিংকিং-এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে ৯৩% নিয়োগকর্তা সম্মত হন যে, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা একটি উচ্চ-অগ্রাধিকার দেওয়ার মত দক্ষতা। 

ক্রিটিকাল থিংকিং এবং প্রবলেম সলভিং

এই ক্ষমতা মেমোরাইজেশনের বাইরে গিয়ে পেশাদারদের সৃজনশীলতা এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার মাধ্যমে, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ গুলির কাছে যেতে সাহায্য করে এবং সেগুলোর একটা গঠনমূলক চিন্তাভাবনায় আসতে সাহায্য করে। সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা গড়ে তোলার ফলে ডেভেলপড সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে আপনি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারবেন৷ তাছাড়া ওয়ার্ক প্লেস এ নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকতে চাইলে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। 

উপস্থিত ভাবে সমস্যা আইডেন্টিফাই করা, সেটাকে এক্সপ্লেইন করা ও সমাধান করার প্র্যাকটিস না থাকলে লিড কোনো দায়িত্বে আপনি অবস্থান করে নিতে পারবেন না। তাই একাডেমিক সাবজেক্ট এ পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন কম্পিটিশন, ইভেন্ট, সেমিনার ও ওয়ার্কশপসহ নানা উপায়ে ক্রিটিকাল থিংকিং ও প্রবলেম সলভিং আয়ত্ত করতে পারবেন। 

৪. টাইম ম্যানেজমেন্ট:

দক্ষতার সাথে সময় ম্যানেজ করার ক্ষমতা একটা বেসিক নিড এর মত। কারণ টাইম ম্যানেজ করার দক্ষতা কিন্তু সরাসরি আপনার কাজের প্রোডাক্টিভিটি কে প্রভাবিত করে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৫৪% কর্মচারী তাদের কাজের চাপে স্ট্রেস বোধ করেন। আর তাদের প্রত্যেকের একটাই রিজন যে তারা সঠিক ভাবে কাজ ও সময় কে কম্বাইন্ড করতে পারছেন না। অর্থাৎ তাদের যেটুকু সময় আছে কাজ করার, অতটুকুর মধ্যে সব ম্যানেজ করতে হিমসিম খাচ্ছেন।

 টাইম ম্যানেজমেন্ট

কিন্তু সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার স্কিল এই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্যে অবদান রাখে। প্রফেশনাল লাইফ এ যারা কার্যকরভাবে কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে এবং সময়সীমা ফুলফিল করতে পারে তাদের ক্যারিয়ারে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিয়োগকর্তারাও এটিকে বেশ প্রাধান্য দেন, প্রায় ৮৮% কোম্পানি ই তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল কে বিবেচনা করে চাকরি দিচ্ছেন। 

৫. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা:

আবেগগত বুদ্ধিমত্তা বা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (EI) কে বলা হয় প্রফেশনাল লাইফ এর সাফল্যের মূল নির্ধারক। TalentSmart-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে কর্মক্ষেত্রে ৯০% শীর্ষস্থানীয় পারফর্মাররা উচ্চ মাত্রার মানসিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। অর্থাৎ, আপনাকে বুঝতে হবে আপনার কাছ থেকে আপনার সিনিয়র-রা কেমন কাজ আসা করে, তাদের এক্সপেকটেশন কি। তারা কি চাচ্ছে, কার সাথে কিভাবে ডিল করতে হবে। এছাড়াও আপনার আশে- পাশে যারা কাজ করছে তাদের সাথে, ক্লায়েন্টদের পছন্দ অপছন্দ বুঝতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী কাজের ধরন প্লান করতে হবে। 

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা

EI এর মাধ্যমে ইনডিভিজুয়াল এবং অন্যদের আবেগ বোঝা এবং সেগুলো ম্যানেজ করা, আরও ভাল কো-রিলেশন বা সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রোফেশনাল-রা কর্মক্ষেত্রের গতিশীলতা নেভিগেট করতে, কার্যকরীভাবে সহযোগিতা করতে এবং সফলভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে আরও ভালোভাবে ডিসিশন নিতে পারে। 

উপসংহারে, যদিও একাডেমিক যোগ্যতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই পাঁচটি দক্ষতার সমন্বয় প্রফেশনাল লাইফ এ একজনের সাফল্যের সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। নিয়োগকর্তারা এখন একটিভলি এমন প্রার্থীদের সন্ধান করেন যারা কেবল প্রযুক্তিগত দক্ষতাই আনেন না বরং ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন, এডাপটাবিলিটি, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সময় ব্যবস্থাপনা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার মত স্কিল গুলো কে প্রায়োরিটি লিস্টে রাখে।  তাই আপনিও পড়াশোনার পাশাপাশি এই দক্ষতা গুলোর ওপর ফোকাস করতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ারের সাফল্যের দিকে এগিয়ে যান।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্টের ৭টি উপায়
Marketing

বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ৭টি উপায়

একজন উদ্দোক্তার ক্ষেত্রেও তাই। সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া, অর্থাৎ একটা প্রোপার টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব। একটা সুনির্দিষ্ট ওয়ার্কিং শিডিউল ছাড়া কখনই বিজনেস গোল

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,