প্রোডাক্ট ম্যানেজার কারা, বাংলাদেশে এই পেশার ডিমান্ড কেমন?

প্রোডাক্ট ম্যানেজার কারা, বাংলাদেশে এই পেশার ডিমান্ড কেমন?
Share This Post

প্রোডাক্ট ম্যানেজার একটি পণ্যের সমগ্র লাইফসাইকেল এর অর্কেস্ট্রেটর হিসাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করে এবং ওভারঅল সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রোফেশনালরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে গ্যাপ ফুলফিল করে, ব্যবসার লক্ষ্য, ব্যবহারকারীরদের চাহিদা এবং প্রযুক্তিগত পসিবলিটিস এর একটি নিরবচ্ছিন্ন কম্বিনেশন নিশ্চিত করে। তাদের দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে মার্কেট বিশ্লেষণ, পণ্যের ভিশন এক্সপ্লেইন করা এবং পুরো ডেভেলপমেন্ট প্রোসেস জুড়ে ক্রস-ফাংশনাল টিমকে গাইড করা।

প্রোডাক্ট ম্যানেজার কারা, বাংলাদেশে এই পেশার ডিমান্ড কেমন

সহজ কথায়, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ম্যানেজার সেই প্রতিষ্ঠানের পন্য ও সার্ভিস কে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করে। অর্থাৎ অডিয়েন্স এর সামনে সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ভিশন, গুরুত্ব, সুবিধা গুলো সহজ ভাষায় এক্সপ্লেইন করে। পাশাপাশি সেই পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হতেও কিনতে আগ্রহী করে। মোট কথা, প্রোডাক্ট ম্যানেজার হলেন, পন্যকে বিভিন্ন উপায়ে প্রেজেন্ট করে সেলস ড্রাইভ করাই যার কাজ। 

পুরো বিশ্বে এখন সেলস ম্যানেজার বা প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর ডিমান্ড প্রচুর বেশি। গুড কমিউনিকেশন স্কিল, এডাপটেশন ক্যাপাসিটি এবং প্রেজেন্টেশন দক্ষতা সম্পন্ন প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর চাহিদা এখন বাংলাদেশেও। 

প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর মূল দায়িত্ব:

একজন প্রডাক্ট ম্যানেজার কে? এবং তার দায়িত্ব গুলো কি কি? সে বিষয়েই আলোচনা করবো – 

১. মার্কেট রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস:

প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের অনেক গুলো দায়িত্ব থাকে, তার মধ্যে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট হল, মার্কেট ট্রেন্ড, কাস্টমার বিহেভিয়ার এবং প্রতিযোগিতামূলক ল্যান্ডস্কেপ বোঝার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও একটি প্রোডাক্ট এর পুরো ডেভেলপমেন্ট স্টেজ জুড়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব ও প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর ওপর থাকে। 

মার্কেট রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস

প্রোডাক্ট ম্যানেজার সর্বপ্রথম, মার্কেট রিসার্চ করে। কোন জিনিস গুলো ট্রেন্ড করছে, সেই অনুযায়ী মার্কেটিং অপর্চুনিটি খুঁজে বের করে। এরপরের স্টেজ হল, কাস্টমার বিহেভিয়ার ট্র্যাক করা। অর্থাৎ কাস্টমার কি চায়, কাস্টমার এর পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রোডাক্ট ম্যানেজার এবং সেই অনুযায়ী ডাটা পার্সোনালাইজড করে মার্কেটিং করে। 

২.প্রোডাক্ট স্ট্র্যাটেজি এবং ভিশন: 

প্রোডাক্ট ম্যানেজার পণ্য সম্পর্কে ও সেলস নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নির্ধারণ করে, যা কাস্টমারের গোল এবং ডিমান্ডের ফুলফিলেমেন্টে ভূমিকা রাখে। প্রোডাক্ট স্ট্র্যাটেজির মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং ডেভেলপমেন্ট টিমের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা। 

প্রোডাক্ট স্ট্র্যাটেজি এবং ভিশন

অর্থাৎ, একটা পণ্য সিলেকশন থেকে শুরু করে কাস্টমারের কাছে পৌছানো পর্যন্ত যেই জার্নিটা, এর রোডম্যাপ তৈরি করে একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার। একটি প্রোডাক্ট সেলস এর পেছনে কয়েক ধাপে লোক বা কর্মচারী থাকে। এদের কাজের একটি স্টেপ বাই স্টেপ আউটলাইন তৈরী করে ও প্রোডাক্ট ভিশন সেট করা। 

৩. ক্রস-ফাংশনাল কোলাবরেশন:

প্রোডাক্ট ম্যানেজাররা ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং এবং সেলস সহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর টিমের সাথে কাজ করে এবং তাদের কে তাদের গোলস গুলো ফুলফিল করতে সহযোগিতা করে। যেহেতু প্রত্যেকে একটা অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করে কাজ করে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকের জন্য কার্যকর যোগাযোগ এবং সমন্বয় অপরিহার্য।

ক্রস-ফাংশনাল কোলাবরেশন

অর্থাৎ, একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার আলাদা আলদা ভাবে প্রতিটি সেক্টরের সাথে কাজ করে এবং দিকনির্দেশনা দেয়। পরবর্তী তে সেই সব সেক্টর গুলোকে একত্রিত করে তাদের সাথে কমিউনিকেট করে পুরো সেলস সাইকেল টি কমপ্লিট করে। 

৪. ইউজার-সেন্ট্রিক এপ্রোচ:

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, প্রোডাক্ট ম্যানেজার দের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।  অর্থাৎ এই প্রোডাক্ট ইউজ করে বা সেবা নিয়ে গ্রাহকরা যাতে সন্তুষ্ট থাকে এবং তাদের এক্সপেরিয়েন্স যেন সুখকর হয় সেটা নিশ্চিত করা প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর দায়িত্ব। 

ইউজার-সেন্ট্রিক এপ্রোচ

এজন্য তারা কাস্টমারদের পছন্দগুলির পক্ষে সবসয়ম সমর্থন করে। তাদের গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে, ব্যবহারকারীর এক্সপেরিয়েন্স টেস্ট করে, ম্যানেজ করে এবং পণ্যটির সামগ্রিক ব্যবহারযোগ্যতা বাড়াতে কাজ করে।

বাংলাদেশে প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর ডিমান্ড :

বাংলাদেশে, দক্ষ প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা টেকনোলজি ড্রাইভেন প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির বৈশ্বিক প্রবণতা কেই রিফ্লেক্ট করে। বেশ কয়েকটি কারণ এই ডিমান্ড এ অবদান রাখে:

১. প্রযুক্তি শিল্পের প্রবৃদ্ধি:

বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতের প্রসারের সাথে সাথে কোম্পানিগুলো আরও ডিজিটাল পণ্য ডেভেলপ ও লঞ্চ করেছে। এর ফলে এমন প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর প্রয়োজন তৈরি হয়েছে যারা সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর জটিলতা গুলো নেভিগেট করতে পারে এবং পণ্য গুলো যেন মার্কেটের চাহিদা পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে পারে।

প্রযুক্তি শিল্পের প্রবৃদ্ধি

২. ই-কমার্স বিবর্তন:

বাংলাদেশের বিকাশমান ই-কমার্স ল্যান্ডস্কেপ প্রোডাক্ট ম্যানেজাররা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইনোভেশন করতে , ইউজার এর অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এবং ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান ডিমান্ড কে পূরণ করতে খুবই  কার্যকর ভুমিকা পালন করে। মোট কথা ই-কমার্স এর বিবর্তন এর সাথে সাথে বাংলাদেশ এ তুমুল হারে বেড়েছে প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর ডিমান্ড। 

ই-কমার্স বিবর্তন

৩. স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম:

বাংলাদেশে স্টার্ট-আপগুলির উত্থান একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে এখানে প্রোডাক্ট ম্যানেজার দের প্রয়োজন পড়ছে। তারা সেলস এর অনিশ্চয়তা নেভিগেট করার জন্য, প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট করা এবং বাজারের পরিবর্তনের সাথে দ্রুত এডাপটেশন নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করছে। ফলস্বরূপ তাদের ডিমান্ড দিন দিন বেড়ে চলছে। 

স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম

পরিসংখ্যানগত ওভারভিউ:

ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিবেদন অনুসারে, প্রযুক্তি কোম্পানি এবং স্টার্টআপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। আর এই বৃদ্ধি সহজাতভাবে প্রোডাক্ট ম্যানেজার সহ দক্ষ প্রফেশনালদের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চে দেখা যায়, ৮৯ ভাগ সফল প্রতিষ্ঠান-ই তাদের প্রোডাক্ট সেলস ড্রাইভ করার জন্য একজন স্কিলড এন্ড প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর খোঁজ করেন। আর আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশও ২০২৫ সাল নাগাদ প্রোডাক্ট ম্যানেজার এর ডিমান্ড বাড়বে ৩৮ শতাংশ। ( বাংলাদেশ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর সূত্র অনুযায়ী) 

উপসংহারে, প্রডাক্ট ম্যানেজার-রা ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-চালিত বিশ্বে, ব্যবসার সাফল্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশে, এই পেশাদারদের ডিমান্ড, প্রযুক্তি খাতের বৃদ্ধি, ই-কমার্স কার্যক্রমের বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধ স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম দ্বারা ড্রাইভ হচ্ছে। যেহেতু বড় বড় কোম্পানি গুলো এখন উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে, তাই প্রোডাক্ট ম্যানেজার-রা মার্কেট পণ্য গুলোকে সফল ভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে ও সেলস ড্রাইভ করতে আউটস্ট্যান্ডিং রোল প্লে করছে। 

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ