ইলোন মাস্ক, বর্তমান সময়ের একজন সফল উদ্যোক্তা, একজন রিয়েল লাইফ আয়রন ম্যান এবং মোস্ট এডভেঞ্চাররাস বিজনেসম্যান। এই মানুষটাকে নিয়ে জানার কোনো শেষ নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি একজন বিজনেস আইডল এবং ইয়ুথ আইকন। এই সাকসেসফুল ব্যাক্তিকে নিয়ে জানার জন্যে মানুষ আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। আমরা ইলোন মাস্কের ব্যাপারে আপনাদের এমন কিছু তথ্য দিবো যা অবশ্যই আপনাকে অবাক করে দিবে।আশা করি পুরো ব্লগটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন, কারণ এটি হতে পারে আপনার জীবনের অনেক বড় অনুপ্রেরণা, যেই ইনফোগুলো আমরা শেয়ার করবো আপনার সাথে মনে হয় না একটি সেকেন্ডও আপনার নষ্ট হবে।
যেকোনো সাধারণ মানুষের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে সাধারণত ৬ মাস এর মতো সময় লাগে। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রথম কম্পিউটার হাতে পাওয়ার পর এই মহান ব্যাক্তি একটি প্রোগ্রামিং এর একটি বইও কিনে নেন সাথে। টানা তিনদিন দিনরাত করে তিনি বইটি পড়েও শেষ করে ফেলেন। সেই প্রোগ্রামিং স্কিলকে ব্যাবহার করে মাত্র ১২ বছর বয়সে একটি গেম ডিজাইন করে ফেলেন তিনি।এরকম এমন অনেক আশ্চর্যজনক অনেক ঘটনা আছে এই ব্যাক্তিকে ঘিরে। অনেকে বলেন ইলোন মাস্ক এর ফটোজোনিক পাওয়ার আছে মানে তিনি যেই জিনিস একবার দেখেন সেটা তার সবসময় মনে থাকে।
জানা যায়, স্কুলে সহপাঠীদের কাছে তাচ্ছিল্যের স্বীকার হওয়ার কারণে তার বেশি তেমন বন্ধু ছিলনা তাই তিনি বেশিরভাগ সময় বই পড়েই কাটিয়ে দিতেন। ইলোন মাস্ক এর ভাই এর সূত্রে জানা যায়, তিনি দিনে ১৫-১৬ ঘন্টা বই পড়ে কাটাতেন। ছোটবেলায় যখন কারো সাথে কথা বলতেন অজান্তেই নিজের চিন্তায় মগ্ন হয়ে যেতেন ইলোন। তাই তার পরিবার ভাবতো তিনি কানে কম শোনেন, এইজন্য কানের অপারেশনও হয়েছিল তার। বিষয়গুলো আপনার কাছে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্য।
ছোটবেলা থেকে ইনোভেটিভ হওয়ার পাশাপাশি বিজনেস মাইন্ড এরও ছিলেন ইলোন। না হয় মাত্র ১২ বছর বয়সে কোনো বাচ্চা নিজের গেম ডিজাইন করে সেটি কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রিও করে দিচ্ছে। ১৭ বছর বয়সে ইলোন পেনসেলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি, কানাডায় চলে আসেন। সেখানে তার কিছু বন্ধু তৈরি হয়। তারা ক্লাব করতেন। সেই ক্লাব এর মাধ্যমে তাদের একটি বড় কমিউনিটি তৈরি হয়। ইউনিভার্সিটি শেষ করে ইলোন তার বড়ভাই এর সাথে প্রথম স্টার্টআপ “জিপি টু” শুরু করেন। জিপটু থেকে টেসলা, স্পেসএক্স সহ যতগুলো স্টার্টআপ করেন ইলোন প্রতিটাতেই ইনোভেশন জড়িত ছিল। কিন্তু তার সবচেয়ে শক্তিশালী পিলার ছিল “জিপ টু”।
এই প্লাটফর্মে তারা বিজনেসম্যান এবং তাদের ইনফোগুলো তার ওয়েবসাইট এ পাবলিশ করতেন। যার মাধ্যমে বিজনেস এবং নেটওয়াকিং এর মতো সুবিধা তিনি পেতেন। এর ফলে কোম্পানিটি খুব দ্রুতই প্রসার হতে থাকে এবং উচ্চ থেকে উচ্চতার সাফল্যে পৌঁছাতে থাকেন। যার কারণে মাত্র ৫ বছর বয়সে ৩৬০ মিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশন এ বিক্রি করে দেন তিনি। এখানে তার শেয়ার ছিল ২২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তারপর থেকেই তিনি একজন মিলিওনিয়ার হয়ে যান। যার কাছে একটি বড় এপার্টমেন্ট, একটি প্লেইন এবং একটি স্পোর্টস কারও ছিল। একদিন ইলোন ব্যাঙ্ক এ গিয়ে ফিল করলেন মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের পেমেন্ট সামলাচ্ছেন। আর সেখানেই জন্ম অনলাইন ব্যাংক “X.com” এর।
এই কোম্পানি অনলাইন লেনদেন কমপ্লিট করতো মাত্র একটি ইমেইল এর মাধ্যমে। প্রথম দিকে খুব একটা বিশ্বাস করতো না মানুষ কিন্তু পরবর্তীতে এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায় যে এটি “X.com” থেকে “PayPal” হয়ে যায়। ২০০২ সালে “eBay” কোম্পানি “PayPal” কে ১.৫ বিলিয়ন ডলার ভালুয়েশন দিয়ে কিনে নেয়। এখানে ইলোন মাস্ক সবচেয়ে বেশি ১১.৭% স্টক হোল্ডার ছিলেন, যার বিনিময়ে ইলোন ১৬৫ মিলিয়ন ডলার পান।
“PayPal” এর পর ইলোন মাস্ক তার স্পেস ট্রাভেল এর স্বপ্ন এর পথে হাটা শুরু করলেন। রকেট কেনার জন্যে ইলোন রাশিয়া চলে যান কিন্তু সেখানে রকেট এর মূল্য ৮ মিলিয়ন ডলার শুনে চলে আসেন তিনি। কিন্তু খালি হাতে ফিরে আসেননি তিনি, নিয়ে এসেছেন নিজে রকেট বানানোর অদম্য অনুপ্রেরণা নিয়ে। বানাতে গিয়ে অনেক বারই পরাজয়ের স্বীকার হন তিনি কিন্তু থেমে থাকেননি। নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়েই চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি নিজের ইলেকট্রিক গাড়ির কোম্পানি “Tesla” তেও ইনভেস্ট করতে থাকেন। কিন্তু এতো চেষ্টার পরেও ব্যর্থতা তার পিছু ছাড়ছিলো না।
একের পর এক রকেট টেস্ট ফেইল হতে থাকে। অন্যদিকে টেসলা ফান্ডিং না পাওয়ার কারণে সেখানেও হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় পড়েন তিনি যে শেষ মেশ তার কাছে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার এ ঠেকে। এমন অবস্থায় রিস্ক নিয়ে অর্ধেক অর্ধেক করে নিজের দুটো প্রতিষ্টানেই ইনভেস্ট করেন তিনি। সৌভাগ্যক্রমে তাদের চতুর্থ রকেট টেস্ট সফল হয়। “SpaceX” এর সফলতা দেখে নাসা তাদের ১.৫ মিলিয়ন ডলার এর কন্ট্রাক্ট দেয়।
“Tesla” এবং “SpaceX” এর মতো অনেক গুলো কোম্পানি আছে ইলোন মাস্ক এর। ইলোন মাস্ক “Starlink” নামে একটি প্রজেক্ট এও কাজ করেছেন যার মাধ্যমে তিনি ১২ হাজারেরও মতো স্যাটেলাইট পাঠাবেন যা পৃথিবীর অরবিট এ একটি স্টার এর মতো চেইন তৈরি করবে। আর এই “Starlink” প্রজেক্ট এর মাধ্যমে পুরো পৃথিবী ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। যেখানে কোনো সাধারণ মানুষের চিন্তা শেষ হয়ে যায় সেখানে ইলোন মাস্ক এর চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। এই জন্য তিনি একজন সফল আইকনিক উদ্যোক্তা এবং হাজারো স্বপ্ন দেখা মানুষের অনুপ্রেরণা।