জন্মগতভাবে আপনি সকল গুনের অধিকারী হবেন এই ধারণাটি কিছুটা ভুল এবং আপনি জন্মগত ভাবে যদি কিছু গুনের অধিকারী হয়েও থাকেন যদি সেটা চর্চা না করেন তবে সেই গুনও কিন্তু থাকেনা। সকল কিছু চর্চার বিষয়। একজন সফল উদ্যোক্তা তার নিজেস্ব গুনবলীকে আরো স্থির করার জন্য প্রতিনিয়ত চর্চা করেন এবং যে গুন তার নেই তা অর্জন করার জন্য। এমনই ৫টি গুণ যা একজন সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণ হিসেবে আখ্যায়িত এবং যেগুলো অর্জন করতে পারলে উদ্যোক্তা জীবন অনেকটা সহজ হয়ে আসে সেই বিষয় নিয়েই আজকের আলোচনা।
উদ্যোক্তাদের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে তার কিছু ব্যক্তিগত গুনের উপর। এই সকল গুন তাকে সফল হতে সাহায্য করে। ব্যবসায় অনুকূল এবং প্রতিকূল উভয় পরিস্থিতি ই থাকবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কিছুটা সহজ হয়ে যায় একজন উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত গুনের জন্য।
এমনই বিশেষ ৫টি গুণাবলী সম্পর্কে আজকে আমরা কথা বলবো যা একজন সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণ হিসেবে পরিচিতঃ
১. আত্ম-নিয়ন্ত্রন এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস
এটি আত্ম-নিয়ন্ত্রন উদ্যোক্তার চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি একজন উদ্যোক্তা তার প্রয়োজনীয় সকল কাজ করতে পারে তাহলেই সে সফলতা দেখতে পাবে। আসলে বলতে গেলে সেলফ ডিসিপ্লিন হচ্ছে নিজের সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং ভিতরের ইমোশনকে সেন্স অফ রেস্পন্সিবিলিটি দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা। সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণগুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি নিজে কি করছেন তা যদি আপনি নিজের উপর বিশ্বাস না রাখেন তাহলে অন্যজন আপনার উপর কিভাবে বিশ্বাস করবে। নিজে যা করছেন তা নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আপনি পারবেন না এটা ভেবে যদি আপনি উদ্যোগ নিয়ে থাকেন আপনি আসলেই পারবেন না। আপনার কাজ কর্মের উপর আত্নবিশ্বাস থাকতে হবে।
আর একজন উদ্যোক্তাকে তো অবশ্যই আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। আপনি যদি যে কোন উদ্যোগ নেওয়ার সময় নিজের প্রতি বিশ্বাস না রাখেন তাহলে এই উদ্যোগ কখনই সফল হবেনা। সফল উদ্যোক্তারা জানতেন তারা কি করতে যাচ্ছে। তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরা স্থির ছিল বিধায় আজ তারা সফল হতে পেরেছেন। তারা যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দিহান থাকতো তাহলে তারা নিজের উদ্যোগে সফল হতে পারতেন না।
২. ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা
উদ্যোক্তার আরেক নাম হচ্ছে ঝুঁকি নেয়া। উদ্যোক্তার সফল হবার জন্য সবচেয়ে বড় একটি গুণ হচ্ছে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু সকল ঝুঁকি নেয়া উদ্যোক্তারা সফল হতে পারে না। একজন সফল উদ্যোক্তা জানেন যে কখন ঝুঁকি নিতে হয় এবং কী ধরনের ঝুঁকি কোম্পানী বা নিজের জন্য লাভজনক ও ক্ষতিকর হতে পারে তার একটি ধারনা থাকা।
৩. ক্রিয়েটিভ থিঙ্কিং
একজন সফল উদ্যোক্তার মাথায় সবসময় ক্রিয়েটিভ চিন্তা ধারনা দিয়ে পরিপূর্ণ থাকা উচিত। বিস্তৃত নতুন বিজনেস আইডিয়া চিন্তা করার এই কঠোর ক্ষমতা একজন উদ্যোক্তাকে একটি অনন্য, সৃজনশীল উপায়ে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্রিয়েটিভ চিন্তা চেতনা আপনাকে প্রতিযোগিতার বাজারে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আলাদাভাবে প্রকাশেও সাহায্য করে থাকে।
৪. সততা
সমস্ত উদ্যোক্তাদের অবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য হল সততা। সম্ভবত আপনি সবচেয়ে মূল্যবান এবং সম্মানিত গুণটি বিকাশ করতে পারেন যা হচ্ছে সততা। আপনি যা কিছু করেন এবং প্রতিটি লেনদেন ক্রিয়াকলাপে পুরোপুরি সৎ হন। কখনও আপনার সততা নিয়ে আপোষ করবেন না। মনে রাখবেন যে আপনার সততার উপরই নির্ভর করছে আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ যা আপনাকে সুনাম এনে দিতে সাহায্য করবে। সমস্ত সফল ব্যবসা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণ হিসেবে সততাই আপনার বিশ্বাসের চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে।
৫. নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা ও অটুট থাকা
সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণগুলোর মধ্যে সর্বশেষ গুণ হল নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা এবং তা অটুট রাখতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। আজকের দিনে বহুল প্রতিযোগিতা এবং দ্রুত পরিবর্তনের কারণে নিজ এবং প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের মধ্যে দিনের পর দিন অপারেটিং কমে গেছে। এটি সফল ব্যবসায়ীদের গুণাবলী নয়। আপনার নিজের এবং আপনার ব্যবসায়ের প্রতিটি অংশের জন্য আপনাকে স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, আপনার লোকদের কাছে সম্ভবত আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হ’ল তাদের কাজের ক্ষেত্রে তাদের একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া।
“একজন মানুষের নির্ধারিত লক্ষ্য তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম পথেও এগিয়ে নিয়ে যায় অপরদিকে একজন লক্ষ্যহীন ব্যক্তি সবচেয়ে সহজতম পথেও কোন অগ্রগতির দেখা পায় না”
থমাস কার্লেল
উদ্যোক্তারা বেশিরভাগ সময় তাদের লক্ষ্যর কথা ভেবে থাকে। যার ফলাফল তারা প্রতিনিয়ত তাদের লক্ষ্যর দিকের এগোতে থাকে এবং লক্ষ্যে তাদের দিকে এগিয়ে আসে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন উদ্যোক্তা হবার জন্য শুধুমাত্র সফল উদ্যোক্তার ভালো গুণাবলী নয়, বরং তা কার্যকর হবার জন্য কিছু দক্ষতা ও উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিটি কাজের উপর নজরদারী রাখা, সাথে ভুল হলে কী ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায় তা প্রতিটি সদ্যসের সাথে বসে আলোচনা করা। আপনাকে অনেকাংশে উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্যর দিকে ধাবিত করে। নিজেকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্যে রাখা একজন সফল উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
