দেখুন উদ্যোগ তো আমি আপনি সবাই নিতে পারি। কিন্তু আসলে সফল হয় কয়জন? আপনি হয়তো আপনার বিজনেসে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু দিনশেষে হয়তো ঠিক যেমন তা চাচ্ছেন তেমন সফলতা কোন ভাবেই পাচ্ছেন না। একটু ভেবে দেখুন তো আপনার মধ্যে একজন সফল উদ্যোক্তার দক্ষতাগুলো আছে কি?
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার ইনভেস্টমেন্ট লাগবে বা ভালো কর্মদক্ষ টীম মেম্বার লাগবে কিন্তু এটা কি ভাবছেন যে আপনার মধ্যে সেই দক্ষতাগুলো লাগবে যেগুলো একজন সফল উদ্যোক্তার মাঝে ছিল! একজন সফল উদ্যেক্তা নিজে অবশ্যই দক্ষতা সম্পূর্ন ছিলো বলেই আজ সে সফল। তাই একজন সফল উদ্যোক্তার দক্ষতার তো শেষ নেই। রিসার্চ করে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য দক্ষতা পাওয়া গিয়েছে যা প্রায় সকল সফল উদ্যোক্তাদের মাঝে ছিল।
দিনশেষে আপনার বিজনেস চালাতে হলে একজন সফল উদ্যোক্তার চারিত্রিক গুণাবলি এবং এই দক্ষতাগুলো আপনার লাগবেই।। আজ আমরা এই সফল উদ্যোক্তাদের ৭টি দক্ষতা নিয়ে কথা বলবো। যা আপনি আয়ত্ত করতে পারলে আপনিও পারবেন সফল একজন উদ্যোক্তা হতে।
নেতৃত্বদানের যােগ্যতা –
নেতৃত্ব বলতে বুঝায়? আপনি কিভাবে ব্যবসায়টিকে পরিচালনা করবেন আপনার কর্মচারীদের নিয়ে। বা আপনি কিভাবে আপনার টিম মেম্বারদের সাথে আপনার নিজের আইডিয়া শেয়ার করবেন। আপনি আপনার ব্যবসায়ের প্রতিটি ধাপে কিভাবে নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন। অন্যদের সাথে পরিপূর্ন যোগাযোগ বজায় রাখবেন এবং অন্যদের বিশ্বাস অর্জন করবেন। এ সকল কিছুই নেতৃত্ব দানের সাথে সম্পর্কিত। এটি সফল উদ্যোক্তার উল্লেখযোগ্য একটি দক্ষতা।
এই নেতৃত্ব দানের দক্ষতা থাকলে অন্যরা আপনার কথা শুনবে, আপনাকে মানবে, আপনাকে শ্রদ্ধা করবে। এবং আপনি আপনার কাজ গুলো খুব সহজে করিয়ে নিতে পারবেন। আপনি পুরো টিমকে মেইনটেইন করতে পারবেন। একজন উদ্যোক্তার নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা না থাকলে তার একটি টিম নিয়ে কাজ করা এবং সফল বিজনেসে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস –
আপনি নিজে কি করছেন তা যদি আপনি নিজের উপর বিশ্বাস না রাখেন তাহলে অন্যজন আপনার উপর কিভাবে বিশ্বাস করবে। নিজে যা করছেন তা নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আপনি পারবেন না এটা ভেবে যদি আপনি উদ্যোগ নিয়ে থাকেন আপনি আসলেই পারবেন না। আপনার কাজ কর্মের উপর আত্নবিশ্বাস থাকতে হবে।
হেনরি ফোর্ড এর একটি উক্তি আছে “যদি মনে কর তুমি পারবে, কিংবা মনে কর তুমি পারবেনা, দুই ক্ষেত্রেই তোমার বিশ্বাস সঠিক”
একজন উদ্যোক্তাকে তো অবশ্যই আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। আপনি যদি যে কোন উদ্যোগ নেওয়ার সময় নিজের প্রতি বিশ্বাস না রাখেন তাহলে এই উদ্যোগ কখনই সফল হবেনা। সফল উদ্যোক্তারা জানতেন তারা কি করতে যাচ্ছে। তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরা স্থির ছিল বিধায় আজ তারা সফল হতে পেরেছেন। তারা যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দিহান থাকতো তাহলে তারা নিজের উদ্যোগে সফল হতে পারতেন না। সফল উদ্যোক্তার দক্ষতার মধ্যে এটি না থাকলে হয়তো তারা সাহস করে উদ্যোগ নিতে পারতেন না এবং সফলও হতে পারতেন না।
কর্মী অনুসন্ধান ও পরিচালনা
ব্যবসায় পরিচালনা করতে গেলে আপনার বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কর্মী নিয়োগ করতে গিয়ে যদি আপনি ভুল কর্মী নিয়োগ করে ফেলেন তাহলে তাহলে আপনার সেই ব্যবসায় কোন উন্নতি আপনি দেখতে পারবেন না। ব্যবসায়ের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে কর্মীদের উপর। তারা কিভাবে কাজ করছে। তারা কাজ যত ভালো করে গুছিয়ে করবে আপনার ব্যবসায়ের তত উন্নতি হবে। তাই কর্মী অনুসন্ধান করতে হবে খুব সতর্ক ভাবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে। আপনি যত ভালো করে কর্মী বাছাই করতে পারবেন আপনার কাজ তত সহজ হয়ে যাবে।
আপনি ভালো কর্মী পেয়ে গেলেন। কিন্তু আপনি পরিচালনা করতে না পারলে আপনার এই কর্মী দিয়ে ব্যবসায়ের কোন উন্নতি হবেনা। কর্মীর ভালোর চেয়েও জরুরি কর্মীকে পরিচালনা করা। পরিচালনা করা বলতে কি বুঝি? এর অর্থ হচ্ছে আপনি একজন কর্মীকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া। তার সাথে প্রতিনিয়ত কমিউনিকেশন করবেন। প্রত্যেক সফল ব্যবসায়ে কর্মীদের চেইন মেইনটেইন করা হয়। কর্মীদের সেই চেইন অনুসারে চলানো।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা
কোন একটি পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে নেই? আপনি ঘাবড়ে যাচ্ছেন। হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং। এটাই আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে। ব্যবসায়ে কেউ এসে আপনাকে বলে যাবে না এই নেও তোমার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করো। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আপনার সামনে যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তাকে কিভাবে কোন কোন উপায়ে আপনি মোকাবেলে করতে পারবেন তার উপায় বের করতে হবে। নাকি হাল ছেড়ে দিতে হবে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা না থাকলে উদ্যোগ নেয়া যাবে কিন্তু সফল হওয়া যায় না। প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তার দক্ষতার মাঝে এটা অবশ্যই ছিলো।
প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা
কোন কিছু দেখে মাঝে মধ্যেই মনে হয় যে এটা এমন কেন হলো। এটা এভাবে না হয়ে ওভাবে কেনো হলো না। বা এখানে এই জিনিসটার অভাব। এটা থাকা দরকার ছিল। এই সাইন গুলো একজন উদ্যোক্তার। একজন সফল উদ্যোক্তা সবসময় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। এটা একজন ভালো উদ্যোক্তার দক্ষতা। যেমন আপনার এলাকা তে ৪টা প্রিন্টের দোকান আছে। কিন্তু আপনিও উদ্যোগ নিলেন প্রিন্টের দোকান দিবেন।
প্রথমত এখানে আপনার বিজনেস আইডিয়াতে ভুল ছিলো। কারন আপনি এটা প্রশ্ন করেন নি যে এটা কি আদৌ এখানে দরকার ছিলো নাকি। এখন উদ্যোগ নিয়ে নিয়েছেন যেহেতু এখনো আপনার প্রশ্ন খোঁজার আছে যে ওই ৪টা দোকান তুলনায় আপনি এমন কি দিতে পারেন যাতে কাস্টমার আপনার টায় আসে। আপনি যদি প্রশ্নের উত্তর না খুঁজেন তাহলে আপনি উদ্যোগ নিবেন কিভাবে। উদ্যোগ নিতে হলে
ভালো কমিউনিকশন করা
কমিউনিকেশন পাওয়ার যার যত ভালো সে তত বেশি সাকসেস। সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেনো। আর সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই এই দক্ষতা থাকতেই হবে। এটা সকল সফল উদ্যোক্তাদের ছিল। আপনি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে আপনার বিজনেসকে আরো পরিসর করার জন্য কাজ করতে পারবেন। বিভিন্ন আইডিয়া হতে শুরু করে সাহায্য পাবেন।
অন্যের পরামর্শ নেওয়া
আইডিয়ার কোন শেষ নেই। আপনি যদি এটা ভাবেন আপনার নিজের চিন্তা ধারা সেরা তাহলে সফল হতে কষ্ট হয়ে যাবে। আপনাকে অন্যের পরামর্শ শুনতে হবে এবং কেউ পরামর্শ না দিলে তার কাছ থেকে চেয়ে পরামর্শ নিন। এটাতে আপনি অনেক ধরণের মানুষের চিন্তাধারা বুঝতে পারলেন। আপনার নিজের আইডিয়ার চেয়ে ভালো আইডিয়া পেতে পারবেন। নিজের ভুল কোথায় হচ্ছে কোথায় সুধরানো দরকার আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন। পরবর্তিতে আপনার এই সকল চিন্তাধারা মাথায় রেখেই আপনার বিজনেস পরিসর করতে পারবেন আরও ভালো ভাবে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে সফল উদ্যোক্তার দক্ষতা গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেটা আপনি আয়ত্ত করলে আপনিও সফল হতে পারবেন।
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।