২.৯৩ বিলিওন মাসিক এক্টিভ ব্যবহারকারী নিয়ে বর্তমানে ফেসবুক রাজত্ব করে চলেছে আর সে রাজত্বে যুক্ত হয়েছে অগণিত ফেসবুক মার্কেটারও।
শুধুমাত্র যোগাযোগ এবং বিনোদনমূলক মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক তৈরি হলেও বর্তমানে এটি শুধু এই দুইয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং মার্কেটিং জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারন ফেসবুকে রয়েছে হাজার হাজার, অসংখ্যা গ্রাহক।
যে কেউ যথাযথভাবে ফেসবুক মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ফলো করতে পারলে সে খুব সহজেই একজন সফল ফেসবুক মার্কেটার হতে পারবে।
আপনি যদি একজন ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে সবেমাত্র যাত্রা শুরু করে থাকেন এবং গ্রোথের উপায় খুঁজে থাকেন, তাহলে সঠিক, সহজ, এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যার এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে।
ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে গ্রোথের জন্য যে ৫ টা স্টেপ আপনার ফলো করা উচিৎ-
স্টেপ ১- টার্গেট অডিয়েন্স
![](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/04/টার্গেট-অডিয়েন্স--1024x683.png)
যেকোনো সেক্টরের মার্কেটারদের এর ক্ষেত্রেই, হোক তারা ফেসবুক মার্কেটার কিংবা ডিজিটাল মার্কেটার, অডিয়েন্স বা গ্রাহক নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আপনি কি নিয়ে মার্কেটিং করবেন তার উপর ভিত্তি করে অডিয়েন্স বা গ্রাহক টার্গেট করতে হবে।
টার্গেট অডিয়েন্স মূলত কী বা কারা? আপনার প্রোডাক্ট এর প্রতি যেসব মানুষের সর্বোচ্চ আগ্রহ বা চাহিদা থাকে তারাই মুলত আপনার মার্কেটিং এর টার্গেট অডিয়েন্স।
আর এই টার্গেট অডিয়েন্সের ক্ষেত্রে যে বিষয় বিবেচনা করতে পারেন-
- বয়স
- লোকেশন
- লিঙ্গ
- আয়-রোজগার
- আগ্রহ ইত্যাদি।
একজন ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে আপনি যদি আপনার মার্কেটিং জগতে গ্রোথ চান, সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম টার্গেট অডিয়েন্স এর স্টেপটি মাথায় রাখবেন। কারন এর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী স্টেপগুলো সাজানো হবে।
স্টেপ ২- ফেসবুক মার্কেটিং গোল সেট করা
![](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/04/ফেসবুক-মার্কেটিং-গোল-সেট-করা-1024x683.png)
আপনি যদি একজন সফল এবং পূর্নাঙ্গ ফেসবুক মার্কেটার হতে চান তবে টার্গেট অডিয়েন্স এর পরে যে বিষয়টিতে জোর দিতে হবে তা হলো- একটি ইফেক্টিভ ফেসবুক মার্কেটিং গোল সেট করা।
বেশিরভাগ ফেসবুক মার্কেটারদের লক্ষ্য হয় মূলত তাদের পেইজে অনেক ফলোয়ার্স হোক! এর কারণ কী? অবশ্যই অধিক কাস্টমার, আর অধিক কাস্টমার মানেই বেশি বেশি সেল!
অত্যাধিক সেলিং ছাড়াও অনেক মার্কেটারদের লক্ষ্য যেগুলো থাকে-
- ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করা
- সেলিং এর কোয়ালিটি উন্নতি করা
- কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করা
- স্মার্ট গ্রোথ
- অনলাইনের মাধ্যমে ফিজিক্যালের শপে ট্রাফিক নিয়ে আসা
- প্রগেস ট্র্যাকিং করা ইত্যাদি।
স্টেপ ৩- যথাযথ কন্টেন্ট স্ট্রাটেজি পরিকল্পনা
![](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/04/যথাযথ-কন্টেন্ট-স্ট্রাটেজি-পরিকল্পনা--1024x683.png)
সহজভাবে যদি বলি কন্টেন্ট স্ট্রাটেজি হচ্ছে – আপনার মার্কেটিং গ্রোথের জন্য এবং রিচ বাড়ানোর জন্য আপনি কী ধরণের কন্টেন্ট তৈরি করে পোস্ট করবেন এবং তা কখন পোস্ট করবেন।
ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে গ্রোথের জন্য অবশ্যই চমৎকার এবং মানসম্মত কন্টেন্ট বানাতে হবে। তবে তা আপনার মার্কেটিং গোল এবং টার্গেট অডিয়েন্সের উপর ভিত্তি করে।
এমন কোনো কন্টেন্ট বানানো যাবেনা যা টার্গেট অডিয়েন্সের অনুপযোগী।
ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য কিছু কন্টেন্ট টিপস-
- কন্টেন্টে কোনো আইডিয়া শেয়ার করার মাধ্যমে প্রোডাক্ট প্রমোট করা
- ইন্টারেস্টিং গল্পের মাধ্যমে প্রোডাক্ট অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরা
- সাম্প্রতিক কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নিয়ে কোনো কন্টেন্ট বানিয়ে প্রোডাক্ট প্রমোট করা, ইত্যাদি।
আপনি যখন কন্টেন্ট পরিকল্পনা করবেন তখন অবশ্যই এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে কন্টেন্ট বানাতে হবে- কন্টেন্ট ৮০ ভাগ হবে তথ্য, বিনোদন, এবং শিক্ষামূলক। আর বাকি ২০% হবে প্রোডাক্ট প্রমোশনাল সম্পর্কিত।
স্টেপ ৪- পেইজ অপ্টিমাইজেশন
![](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/04/পেইজ-অপ্টিমাইজেশন-1024x683.png)
ফেসবুক মার্কেটিং এর বহুল ব্যবহৃত মাধ্যমটি হচ্ছে পেইজ। যদিওবা বর্তমানে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলকে পুঁজি করে সফলতা পাচ্ছে।
তবে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিজনেসের জন্য এবং আরও অন্যান্য কারন বিবেচনা করে পেইজই সর্বোত্তম পন্থা।
ফেসবুকে একটি সফল বিজনেস দাঁড় করানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার পেইজকে সঠিক পদ্ধতিতে অপ্টিমাইজ করতে হবে।
ফেসবুক পেইজ অপ্টিমাইজেশনের ক্ষেত্রে-
- বিজনেসের ধরণের উপর ভিত্তি করে একটি ইউনিক এবং আকর্ষণীয় নাম।
- মানসম্মত প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার পিকচার। সেটা অবশ্যই আপনার বিজনেস নামের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে একটি লোগো নির্বাচন করলে আরও ভালো হয়।
- সিটিএ বাটন। যেমন, Call Now, Message Now, Book Now, Shop Now, ইত্যাদি।
- যথাযথ কন্টান্ট ইনফরমেশন। যেমন ফোন নাম্বার, ওয়েব সাইট লিংক (যদি থাকে), ই-মেইল এড্রেস, ফিজিক্যাল শপ লোকেশন (যদি থাকে), ইত্যাদি।
- এবাউট সেকশনে বিজনেস সম্পর্কিত পরিষ্কার এবং সঠিক ব্যাখ্যা।
- লেটেস্ট কোনো প্রমোশনাল পোস্ট, অফার, কিংবা বিজনেস রিলেটেড FAQ নিয়ে পিন পোস্ট।
যদি আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকে তবে সেটাকে অবশ্যই এসইও ফ্রেন্ডলী করে নিতে হবে।
স্টেপ ৫- বুস্ট, ট্র্যাকিং, এবং এনালাইজিং
![](https://uddoktahoi.com/wp-content/uploads/2023/04/বুস্ট-ট্র্যাকিং-এবং-এনালাইজিং-1024x683.png)
টার্গেট অডিয়েন্স, সঠিক গোল সেট, যথাযথ কন্টেন্ট স্ট্রাটেজি পরিকল্পনা, পেইজ অপ্টিমাইজ করা- এইসবগুলো স্টেপ ভালোভাবে শেষ করার পর, ন্যাচারাল এবং ম্যানুয়াল কিছু লাইক এবং ফলোয়ার্স তৈরি করার পর এইবার পেইজ কিংবা পেইজের নির্দিষ্ট কোনো পোস্ট এর বুস্ট নিয়ে কাজ করতে হবে।
বুস্ট করার ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞ ফেসবুক মার্কেটাররা ব্যক্তিগত ভাবে যা সাজেস্ট করে-
- পেইজে কম হলেও ১০০ লাইক অথবা ফলোয়ার্স রাখতে হবে এবং
- সর্বনিম্ন ২০টি পেইজ পোস্ট
- যথাযথ মার্কেটিং গোল
- মেটা পিকজেল সেট আপ করতে হবে ইত্যাদি।
এবার পেইজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে হবে। পেইজের সেলিং কেমন হচ্ছে, কতজন কাস্টমার ফেরত যাচ্ছে, কেন তারা অসন্তুষ্ট, কোন ধরণের কাস্টমার এর কাছে সেলিং বেশি, আর কী যুক্ত করলে মার্কেটিং আরও ভালো যাবে, ইত্যাদি।
পেইজের সেলিং শুরু হওয়ার পর উপরিউক্ত বিষয়গুলো এনালাইজিং করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী পেইজের পরবর্তী কার্যক্রম করতে হবে।
প্রোডাক্ট সেলিং এর পাশাপাশি, কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করা পাশাপাশি মার্কেটিং সম্পর্কিত অন্যান্য স্ট্রাটেজিও যথাযথভাবে অণুসরণ করতে হবে।
পরিশেষে,
আপনি যদি উপরের ৫টা স্টেপ সঠিকভাবে ফলো করে থাকেন এবং তা অনুযায়ী কাজ করে থাকেন, তবে একজন ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে আপনি অবশ্যই গ্রোথের দিকে এগিয়ে যাবেন।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে বর্তমানে ফেসবুকে মার্কেটিং এ অনেক প্রতিযোগিতা। কিন্তু সত্যি বলতে প্রায় মার্কেটাররাই সঠিক স্ট্রাটেজি ফলো করতে এবং সে অনুযায়ী পরিশ্রম করতে ব্যর্থ হয়।
তবে উপরের প্রত্যেকটা স্টেপ কার্যকরী এবং মার্কেটিং গ্রোথের জন্য উপযোগী।