দিন বদলাচ্ছে, মানুষ আধুনিক হচ্ছে দিনে দিনে, প্রযুক্তি ব্যবহারের চরম শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ, বদলে যাচ্ছে জীবনধারা। আর এত আধুনিকতার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে ইন্টারনেট। আজকাল মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ছাড়া চিন্তা কারো যেন দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সংযুক্তি, মোটেই কোন নতুন কথা নয়। আজকাল অনলাইন কেন্দ্রীক যেমন ছোট বড় অনেক বিজনেস শুরু হয়েছে, তেমনি অনেক অফলাইন ব্যবসাও, ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে ব্যবসাকে সম্প্রসারন করছে।
ব্যবসার কথা চিন্তা করলেই মানুষ Facebook বা Google-এ ads দিয়ে পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসার প্রচারের কথা অবশ্যই মাথায় রাখেন। এই দুই জায়ান্ট মাধ্যম ভিত্তিক পেইড মার্কেটিং আজকাল যেকোন ব্যবসাকে অনেক গতিশীল করে দিয়েছে। বিজ্ঞাপন জগতের এই দুই গেরিলা, আপনার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালক হতে পারে।
যদিও দুইটি প্লাটফর্মকে প্রায়শই প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যবসায়িক মডেল, ব্যবসার আকার, বিজ্ঞাপনের ধরন, ভিত্তি, খরচ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এই দুই পেইড মার্কেটিং প্লাটফর্ম আলাদাভাবে পারফর্ম করে থাকে। তাই আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক বিজ্ঞাপন মাধ্যম বেছে নেওয়ার বাধা পার করার জন্যই আজকের আমার এই লেখনি।
পেইড মার্কেটিং কি
পেইড মার্কেটিং যা আসলে পেইড অ্যাডভার্টাইজিং বা অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং নামেও পরিচিত। মূলত পেইড মার্কেটিং হচ্ছে টার্গেডেট ক্রেতা বা অডিয়েন্সের কাছে নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য অর্থ প্রদান করে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যেকোনো পণ্য বা সেবার প্রচার প্রচারণা চালানো।
পেইড মার্কেটিং আসলে বিভিন্ন চ্যানেল বা প্ল্যাটফর্মকে অন্তর্ভুক্ত করে যার প্রত্যেকটির নিজস্ব কিছু ইউনিক বৈশিষ্ট্য ও টার্গেটেড অডিয়েন্স আছে। যার ফলে কোন পণ্যের প্রচার খুব সহজেই অনেক সফলভাবে ও দ্রুততার সাথে করা সম্ভব।
Google ads কি
এই আর্টিকেলের গভীর যেতে হলে শুরুতেই আমাদের জানতে হবে Google ads কি ও Facebook ads কি এবং এদের পেইড মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কি? “গুগল অ্যাডস”, যা পূর্বে Google AdWords নামে পরিচিত ছিল, এটি একটি শক্তিশালী অনলাইন বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম যা Google দ্বারা তৈরি করা হয়েছে৷
Google ads ব্যবসা এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের বিভিন্ন Google-মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম, যেমন Google অনুসন্ধান, YouTube, Google প্রদর্শন নেটওয়ার্ক এবং Google Maps জুড়ে বিজ্ঞাপন তৈরি এবং প্রদর্শনের অনুমতি দেয়।
Google Ads একটি পে-পার-ক্লিক (PPC) বা মূল্য-প্রতি-ইম্প্রেশন (CPM) মডেলে কাজ করে, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা কীওয়ার্ডে বিড করে এবং ব্যবহারকারীরা তাদের বিজ্ঞাপনের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করলেই অর্থ প্রদান করে। এটি এত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, এটি “পেইড সার্চ” শব্দটির সমার্থক হয়ে উঠেছে।
আপনি Google ads সে পাঁচ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন ads বেছে নিতে পারবেন-
- সার্চ (যা text ads বা সার্চও বলা হয়)
- প্রদর্শন (যা ওয়েবসাইটে ছবির বিজ্ঞাপন)
- ভিডিও (ইউটিউবে ভিডিও ads)
- শপিং (Google-এ পণ্যের তালিকা)
- App (অনেক চ্যানেলের মাধ্যমে আপনার অ্যাপের প্রচার)
Facebook Ads কি
মূলত সহজ ভাসায় বলতে গেলে Facebook ads হচ্ছে Facebook ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেওয়া। একটু বিস্তারিত বললে Facebook ads বিজ্ঞাপন হল, Facebook দ্বারা তৈরি একটি ব্যাপক এবং বহুমুখী অনলাইন বিজ্ঞাপনের প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবসা এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের Facebook এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম যেমন Instagram, Messenger, এবং Audience Network-এ দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি এবং প্রদর্শন করতে দেয়।
Facebook ads হল একটি জনপ্রিয় পেইড মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম যা Facebook দ্বারা প্রচলিত, যেটি বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি। তাই এর মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারবেন।
ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করা, নির্দিষ্ট জনসংখ্যার সাথে জড়িত, ব্রান্ডের লিড তৈরি করা, তাদের ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক চালনা করা এবং এমনকি ই-কমার্স বিক্রয়কে সহজতর করার লক্ষ্যে Facebook বিজ্ঞাপনগুলি বিশেষভাবে কার্যকর।
দৃশ্যমান আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন ফর্ম্যাটগুলির সাথে সুনির্দিষ্ট টার্গেটিংকে একত্রিত করার ক্ষমতা রয়েছে Facebook ads এর। যা এটিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর এবং তাদের সাথে জড়িত হওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার করে তোলে।
Facebook এর মাধ্যমেও Google ads এর মত করে একজন গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে বা বিভিন্ন ফরম্যাটে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকতে পারে-
- Video ads
- Photo ads
- Slideshow ads
- Event ads
- Messenger ads
- Stories ads
- Instant experience ads
- Dynamic product ads
Google ads এর সুবিধা
Google হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বিস্তৃত ও বহুল ব্যবহৃত একটি মাধ্যম। Google-এ প্রায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৮.৫ বিলিয়ন সার্চ হয়ে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে যে সংখ্যাটি আসলে ৯৯০০০ প্রায়। আরো একটু বিস্তারিত বললে প্রায় প্রত্যেক মানুষ কমপক্ষে Google-এ ৩-৪ বার ডেইলি সার্চ করে থাকে কোন না কোন বিষয়ে। এই সমীক্ষা দ্বারা স্পষ্ট Google-এর প্রসারতা কতটা বিস্তৃত।
ব্যাপক অডিয়েন্স
একটি পেইড মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হিসাবে Google ব্যবহার করার প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল অনেক বেশি রিচ পাওয়া। Google পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভিজিটেড বা সার্চ করা ওয়েবসাইট।
বিশ্বের সব সার্চের প্রায় ৯২% করা হয়ে থেকে Google-এর মাধ্যমে। Google-এর এই এত সার্চ ভলিউম পড়তে বছর ১০-১৫% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত ব্যাপক সংখ্যক মানুষ দৈনিক google ব্যবহার করে থাকার ফলে এইখানে প্রকাশিত অ্যাড গুলো খুব দ্রুত রিচ পায়।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড
PPC এর নতুন গ্রাহকরা সবসময় এটা ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন যে যাদের বাজেট বেশি তাদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনগুলো বেশি একটিভ থাকবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে Google-এ বাজেট তেমন ফেক্ট করে না, গুগল মূলত ফোকাস দিয়ে থাকে বিজ্ঞাপনের প্রাসঙ্গিকতা ও গুণমানের দিকে।
Google-এ পেইড মার্কেটিং এ প্রকাশিত বিজ্ঞাপন গুলো যত বেশি প্রাসঙ্গিক ও কাস্টমার ফ্রেন্ডলি হবে, তত বেশি Google-এর রেপুটেশন বাড়বে। যার ফলে মানুষ গুগলকে তত বেশি ব্যবহার করবে। আর এই কারণেই প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন ও উচ্চমানের বিজ্ঞাপনদাতাদের বাজেট বা বিড যতই কম হোক না কেন, Google বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য তাদেরকেই বেশি উপযুক্ত হিসেবে মনে করে।
কীওয়ার্ড টার্গেটিং
Google পেইড মার্কেটিং এ কীওয়ার্ড টার্গেটিং হল একটি মৌলিক কৌশল যা ব্যবহারকারীরা, যারা google সার্চে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড লিখে সার্চ দিয়ে থাকে, তাদের কাছে বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপন গুলো পৌঁছে দেয়। এই পদ্ধতি আপনাকে নিশ্চিত করবে যে, আপনার কেত্রাদের কাছে আপনার পণ্য, পরিষেবা বা সামগ্রীর বিজ্ঞাপন গুলো পৌঁছে দিবে।
ফ্লেক্সিবল বাজেটিং
Google পেইড মার্কেটিং এ বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের চাহিদা, লক্ষ্য ও ব্যবসার ধরনের ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাজেট নির্ধারণ করতে পারে। এই মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বাজেট, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, বিজ্ঞাপন বা কিওয়ার্ডে আলাদা আলাদা করে বরাদ্দ করতে পারে। যার ফলে তাদের বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় ও বিজ্ঞাপনকারী যা দ্বারা সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়ে থাকে।
Google পেইড মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতাদের বাজেটের উপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। তারা চাইলে তাদের বাজেটের দৈনিক বা মাসিক খরচ লিমিট সেট করে দিতে পারে। যার ফলে তার এই ব্যয় অনেক অপটিমাইজড হয় এবং অতিরিক্ত খরচ কমে আসে।
Pay-Per-Click (PPC) মডেল
পেইড মার্কেটিং এর জগতে এর একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি বা মডেল। এই কৌশলে বিজ্ঞাপনদাতারা শুধুমাত্র তখনই অর্থ প্রদান করে যখন কেউ তাদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে।
এটি খুব একটি খরচ সাশ্রয়ী পদ্ধতি এবং এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি শুধুমাত্র প্রকৃত ব্যবহারকারীর জন্য অর্থ প্রদান করছেন। PPC বিজ্ঞাপনদাতাদেরদের তাদের ওয়েবসাইটে লক্ষ্যযুক্ত ট্রাফিক চালনা করা এবং এবং নির্দিষ্ট বিপণন লক্ষ অর্জন একটি কার্যকরী উপায়।
বিভিন্ন অ্যাড ফরম্যাট
Google বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপনদাতাদের টেক্সট Ads, ছবি Ads, ভিডিও Ads, শপিং বিজ্ঞাপনসহ আরো অনেক ধরনের বিজ্ঞাপন ও বিন্যাসের অফার করে থাকে। এত বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনের পদ্ধতি থাকার ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরা তাদের কাঙ্খিত বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য গুগল প্ল্যাটফর্মকে চুস করতে পারে এবং যা তাদের ব্যবসার প্রচার ও প্রসারকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
Facebook ads এর সুবিধা
Google-এর মতই Facebook পৃথিবীজুড়ে একটি বড় অনলাইন প্লাটফর্ম যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জরিপে দেখা গেছে, এবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ Facebook ইউজ করে থাকেন। প্রতিদিন প্রায় ২.১ বিলিয়ন মানুষ এটি ব্যবহার করে থাকে। মাসিক ভিত্তিতে ব্যবহারকারীর প্রায় ৬৯ শতাংশ ব্যবহারকারীই দৈনিক Facebook ব্যবহার করে থাকে।
জানুয়ারি ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত, প্রায় ২৬ মিলিয়ন নতুন Facebook ইউজার Facebook-এ অ্যাড হয়েছে। এছাড়াও Facebook-এর মাধ্যমে যারা বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, তারা প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষকে রিচ করতে পারে, যা পুরা Facebook ব্যবহারকারীর ৭৫ শতাংশ প্রায়। তাই এটি খুব সহজেই অনুমেয় যে এই মাধ্যম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রদান করলে তা কত দ্রূত এবং কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বা Facebook ads এর সুবিধা সমূহ-
অডিয়েন্স সংখ্যা বেশি
আগেই বলেছি Google-এর মতো Facebook ও একটা বড় জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করে থাকে। ১৪ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৩৫ অংশ মানুষই Facebook ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে থাকেন। ফেসবুকে বর্তমানে প্রায় ১০ মিলিয়ন বিজ্ঞাপনদাতা আছেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে জানুয়ারী ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত এই তিন মাসেই Facebook-এ বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছে এমন ব্যবহারকারীর সংখ্যাটি প্রায় ২৬৬ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যাটি প্রায় ১০৮ মিলিয়নের কাছাকাছি। তাই আপনি যদি বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য Facebook ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অতি দ্রুত অনেক বেশি অডিয়েন্সকে আপনার সেবা পৌঁছে দিতে পারবেন।
দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন
ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন পদ্ধতি Facebook-কে অন্যান্য text based PPC বিজ্ঞাপন মাধ্যমগুলোর থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রাখে। ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডে ভিডিও, ছবি এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের সাথে খুব ভালো Facebook বিজ্ঞাপনগুলি নির্বিঘ্নে মিশে যায় এবং এটি বিজ্ঞাপনদাতাদের শুধুমাত্র ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপনের দৃঢ় প্ররোচনামূলক গুণাবলীর সুবিধা নিতে সক্ষম করে না, বরং এমনভাবে প্রকাশ করে যাতে ব্যবহারকারীর মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
বিনিয়োগের অবিশ্বাস্য রিটার্ন পলিসি
Facebook-এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা প্রায়শই তাদের টার্গেটিং অপশনগুলোর সূক্ষ্মতার সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেই সাথে সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য Facebook-এর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দ্বারা সাহায্য পেয়ে থাকে। এছাড়াও Facebook বিজ্ঞাপন নতুন বিজ্ঞাপনদাতাদের একটি অবিশ্বাস্য সুবিধা দিয়ে থাকে যা হচ্ছে বিনিয়োগ বাজেট রিটার্ন পাওয়া। এছাড়াও বাজেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে Facebook বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য অনেক বেশি নমনীয় হয়ে থাকে।
এনগেজমেন্ট এবং ইন্টারেকশন
Facebook পেইড মার্কেটিং এর ব্যবহারকারীরা সরাসরি বিজ্ঞাপনটিতে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে পারে। ব্যবহারকারীরা ওই বিজ্ঞাপনের প্রবেশ করে সরাসরি বিজ্ঞাপনদাতাকে বা প্রতিষ্ঠানকে বার্তা পাঠাতে পারে। যার ফলে বিজ্ঞাপনদাতার জন্য তার কাস্টমারকে বা ব্যবহারকারীকে পাওয়া খুব বেশি সহজ হয়। এই সরাসরি মিথস্ক্রিয়া Facebook বিজ্ঞাপনকে অন্যান্য বিজ্ঞাপনের থেকে একটু হলেও এগিয়ে রাখে।
সাশ্রয়ী
Facebook পেইড মার্কেটিং এ আপনি যেকোনো ধরনের বাজেট নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ শুরু করতে পারবেন। এই বাজেটের উপর ভিত্তি করে আপনার বিজ্ঞাপন প্রকাশের ধরন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। Facebook অত্যন্ত সাশ্রয়ী একটি বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা আপনাকে অফার করবে। এই সাশ্রয়ী অফার Facebook-এ অন্যান্য বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান বা মাধ্যমের থেকে Facebook-কে অনেক বেশি এগিয়ে রাখবে।
এছাড়াও Facebook পেইড মার্কেটিং এ, বিজ্ঞাপনদাতাদের বাজেট ও বিডিং কৌশল তাদের আয়ত্তে থাকে, যার জন্য তারা চাইলেই খরচ অপ্টিমাইজ করে নিতে পারে। এক কথায় বলতে Facebook-কে এড দেওয়া একটা অনন্য ভ্যালু ফর মানি অনলাইন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট সলিউশন।
তাহলে আপনার জন্য কোন প্লাটফর্মটি চুজ করা উচিত?
Google ads নাকি Facebook ads? পেইড মার্কেটিং এর জন্য তাহলে কোন প্লাটফর্মটি চুজ করবেন? দুটি মাধ্যমই তার ব্যবহারকারীদের খুব গুরুত্বপূর্ণ অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে। কিন্তু ব্যবসায়িক ধরন, বাজেট, রিটার্ন পলিসি, এড ফরম্যাট তোদের উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য কোন প্লাটফর্মটি বেশি উপযুক্ত হবে তার বাঁচাই করেই খরচ করা উচিত।
অডিয়েন্স সাইজ
Google এবং Facebook দুইটা প্ল্যাটফর্মেই প্রচুর রিচ পেয়ে থাকে বিজ্ঞাপন গুলো। পূর্বে উল্লেখ করেছি প্রতিদিন কমপক্ষে ৮.৫ বিলিয়ন সার্চ হয়ে থাকে Google-এ এবং প্রতিদিন প্রায় ২.১ মিলিয়ন মানুষ Facebook-এ সময় ব্যয় করে থাকে। তাই এতে কোন সন্দেহ নেই এই দুইটা প্লাটফর্মের যেকোনোটি তেই আপনি বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তা খুব দ্রুত অনেক বেশি মানুষ দেখবে।
তাই এক্ষেত্রে আপনার জন্য কোন প্লাটফর্মটি বেশি উপযুক্ত সেটা নির্ণয় করা একটু জটিল হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ভাবতে হবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সটা আসলে কোন প্লাটফর্মটি বেশি ব্যবহার করে থাকে।
Google অনেক সময় উচ্চাভিলাসী ভাবে কাস্টমারকে রিচ করতে পারলেও অনেক সময়ই টার্গেট অডিয়েন্স এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের পুনরায় রিচ করার ব্যাপারে অপারগতা দেখায়। তাই আপনার ব্রান্ড অ্যাওয়ারনেস, অনেক বেশি গ্রাহকদের রিচ করা, তাদের পুনরায় সার্ভিস দেওয়া এবং সহজতার দিক চিন্তা করলে এক্ষেত্রে আপনার জন্য Facebook মার্কেটিং ভালো অপশন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
খরচ ও রিটার্ন পলিসি
আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম বাঁচাই এর ক্ষেত্রে খরচ বিবেচনা করা কত জরুরি একটা বিষয়। বাজেটের উপর আসলে আপনার জন্য কোন প্লাটফর্মটি বেশি উপযুক্ত তা অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে।
Google-এর বিজ্ঞাপন প্রদানের খরচ আসলে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে থাকে যেমন ইন্ডাস্ট্রি, টার্গেটিং অডিয়েন্স, Ads নেটওয়ার্ক ইত্যাদি। Google-এ বিজ্ঞাপন প্রদান করলে মাসিক ১ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত গড়ে খরচ হতে পারে, যে হিসেবে Cost-Per-Click (CPC) হয় ১-২ ডলার।
অন্যদিকে যদি Facebook-এ Ads দেওয়ার খরচের কথা বলি, গড়ে প্রতি ক্লিকে এই প্লাটফর্মে খরচ ০.৯৪ ডলার প্রতি এক হাজার ইম্পেশনে যার খরচ প্রায় ১২ ডলার। Facebook Ads-এ ফিন্যান্স এবং ইন্সুরেন্স এর সবচেয়ে ব্যবহার বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকে তবে যার খরচ গড়ে প্রতি ক্লিকে ৪ ডলারের একটু বেশি।
বলাই যায় তাহলে যে Facebook Ads, Google ads এর চেয়ে সাশ্রয়ী। এছাড়াও Facebook-এর রিটার্ন পলিসি Google-এর চেয়ে একটু বেশিই গ্রাহক উপযোগী। তাই রিটার্ন পলিসি ও বাজেটের কথা চিন্তা করলে আপনার জন্য Facebook Ads একটু বেশিই গ্রহণযোগ্য হবে।
Ads ফরম্যাট
আসলে Ads ফরম্যাট নিয়ে কথা বলতে হলে প্রথমে আপনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের বিজ্ঞাপন বেশি প্রচার করতে যাচ্ছেন কোন মাধ্যম গুলো বেশি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য বিজ্ঞাপনের প্ল্যাটফর্মটি আলাদা হবে।
Facebook-এ আপনি অবশ্যই বেশি সৃজনশীলতা দেখাতে পারবেন এবং এটি আপনার ব্রান্ড রেপুটেশন ও গ্রাহকদের প্রতি আপনার আনুগত্য বেশি প্রকাশ করবে। Facebook-এ যেহেতু ভিজুয়াল বিজ্ঞাপনগুলো বেশি প্রকাশিত হয়ে থাকে, গ্রাহক সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা Google-এর বিজ্ঞাপনের গুলোর চেয়ে একটু বেশি হয়ে থাকে।
আপনার যদি ই-কমার্স বিজনেস থেকে থাকে আর সেক্ষেত্রে আপনার যদি বেশি ভিজুয়াল বিজ্ঞাপনের দরকার হয়ে থাকে, এক্ষেত্র Facebook Ads মাধ্যম কে আপনি পছন্দ করতে পারেন।
ক্রেতার অভিপ্রায়
যখনই ক্রেতার ইচ্ছার কথা চলে আসে তখনই Google Ads, Facebook Ads কে অবশ্যই হার মানায়। ক্লায়েন্ট বা ব্যবহারকারী কোন ধরনের পণ্য বা পরিষেবা দরকার তা অনুসন্ধান Google-এর চেয়ে Facebook Ads বেশি ভালো করতে পারেনা। তাই আপনার পণ্য বা সেবা খুব দ্রুত Google দ্বারা কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায়।
যদি বলি এক ব্যক্তির একটি এয়ারকন্ডিশনার ভেঙে যায় তাহলে সে সেটা অবশ্যই মেরামতের জন্য অনুসন্ধান শুরু করবে। তখন Google Ads এই মেরামত সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন গুলোকে, ওই গ্রাহকের সামনে বেশি উপস্থাপন করবে। যা গ্রাহকের জন্য তার নির্দিষ্ট সেবা খুঁজে পাওয়ার জন্য অনেক বেশি উপকারী হবে।
এক্ষেত্রে Facebook Ads এই কাজটা করতে পারেনা। যদিও সে সেই ধরনের বিজ্ঞাপন আগে প্রচার করতে পারে, কিন্তু কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক ওই সময়ে এই বিজ্ঞাপন গুলো দ্রুত প্রচার করতে পারে না। যার ফলে সময়ের উপযোগী গ্রাহককে রিচ করার কথা চিন্তা করলে আপনাকে অবশ্যই Google-কে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।