আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর রিসার্চ। কম্পিটিটর রিসার্চ আপনাকে আপনার বিজনেস এর ল্যান্ডস্কেপ অ্যানালাইসিস করার অপর্চুনিটি দিবে। আপনি পুরো মার্কেট ব্যবস্থার ওপর একটা ওভারঅল আইডিয়া নিতে পারবেন৷
আপনি বিজনেস বা ইন্ডাস্ট্রি এর ফ্লিল্ডে পা রাখলেই বুঝতে পারবেন এই সেক্টরটি কতটা প্রতিযোগিতামূলক। ডিজিটাল মার্কেটিং এর কল্যানে এর পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি যে নিশ নিয়ে কাজ করবেন ভাবছেন, অলরেডি সেই নিশে অসংখ্য ব্যবসায়ী কাজ করছে। তাই এই অবস্থায় মার্কেট এ এসে জায়গা করে নিতে এবং টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন আপনার কম্পিটিটরদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, বিজনেস প্লাটফর্ম, টার্গেট অডিয়েন্স, লিড জেনারেশান প্রোসেস এবং সেলস ড্রাইভিং টেকনিক গুলো।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ সাকসেসফুলি নিশ বেইসড কম্পিটিটর রিসার্চ এর জন্য দারুন সব আইডিয়া নিয়ে আজকের আলোচনা।
নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ –
নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ বলতে আমারা বুঝি, আপনি যে নিশ নিয়ে কাজ করছেন, মার্কেটে ওই নিশে কাজ করা অন্য উদ্দোক্তা বা প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে স্টাডি করা। নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ এর ধাপ গুলো-
১. নিজের নিশ সিলেক্ট করুন:
প্রথমেই আপনি নিজে কি নিয়ে কাজ করবেন সেটা সিলেকশন করুন। নিশ সিলেক্ট করার আগে যে রিসার্চ করতে হবে, সেটা হচ্ছে মার্কেট রিসার্চ। অর্থাৎ বর্তমান বাজারের অবস্থা, প্রতিযোগিতা, বাজারে কোন জিনিসটির ডিমান্ড বেশি, কিংবা কোন জিনিসটি বেশি ট্রেন্ডিং এ আছে, মার্কেট ডেমোগ্রাফি, জিওগ্রাফি, ইন্টারেস্ট এগুলো আইডেন্টিফাই করুন।
এক্ষেত্রে নিজের পছন্দ, ক্রিয়েটিভিটি এবং স্কিল কে প্রাধান্য দিন৷ এতে করে ওই সিলেক্টেড নিশে কাজ করা আপনার জন্য কম্ফোর্টেবল হবে।
২. আইডেন্টিফাই কম্পিটিটর:
নিশ সিলেকশন এর পড়েই আমাদের আজকের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি চলে আসবে। এখানে আপনি খুঁজে বের করুন সেইম নিশে কারা কাজ করছে ও কারা সফল হচ্ছে। পাশাপাশি কারা ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের মার্কেট ডাউনফলের কারণ গুলোও খুঁজে বের করতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্লাটফর্ম বেজড কম্পিটিটর খোঁজা। অর্থাৎ আপনি কোন মার্কেটপ্লেস আপনার বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছেন। সেই অনু্যায়ী আপনার কম্পিটিটর ও আলাদা হবে। অপনি অফলাইনে সফল ব্যবসায়ীদের ফলো করে কখনও অনলাইনে ও ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল হতে পারবেন না।
SEMrush, Ahrefs, Google এনালাইটিক এর মত টুলস দিয়ে আপনি ডিজিটাল উপায়েও কম্পিটিটর রিসার্চ করতে পারবেন।
৩. কম্পিটিটরের ওয়েবসাইট অ্যানালাইসিস:
এখানে থেকে কম্পিটিটর রিসার্চ এর আরকটি উল্লখযোগ্য স্টেপ শুরু হয়। আপনার কম্পিটিটর এর বিজনেস ওয়েবসাইট টা কেমন? তারা কিভাবে তাদের প্রোডাক্ট গুলো ডিসপ্লে করছে?
ওয়েবসাইট এর ওভারঅল স্ট্রাকচার এবং লে আউট কেমন। আরেকটি ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস হল এই ওয়েবসাইট কি রকম ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রোভাইড করছে? ইউজাররা কি এতে স্যাটিসফাইড?
অথবা নিজেকে একজন ইউজার এর জায়গায় বসিয়ে চিন্তা করুন আপনি কি কি বিষয় পছন্দ করছেন বা অপছন্দ করছেন এই ওয়েবসাইট এর৷ কোন জিনিস গুলো পরিবর্তন হলে একজন ইউজার হিসেবে আপনার এক্সপেরিয়েন্স আরো স্মুথ হল। এটা কম্পিটিটরদের ওয়েবসাইট অ্যানালাইসিস এর সবচেয়ে ইফেক্টিভ উপায়৷
৪. কনটেন্ট অ্যানালাইসিসে কম্পিটিটর রিসার্চ:
কনটেন্ট ইজ দ্যা কী। যেকোনো ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, যেটাই হোক না কেন, সাকসেসফুল মার্কেটিং নির্ভর করে কনটেন্ট এর কোয়ালিটি এর ওপরে। পেইড মার্কেটিং বা বুস্টিং করে সাময়িক ট্রাফিক গ্যাদার করলেও,লং টাইম ও সাসটেইনেবল ট্রাফিক কাস্টমার পেতে হলে দরকার কোয়ালিটি কনটেন্ট।
এজন্য আপনার কম্পিটিটর এর কনটেন্ট গুলো অ্যানালাইসিস করুন। সেগুলো কেন মানুষ পছন্দ করছে, বা সেগুলের রিচ কেমন হচ্ছে? কিংবা রিচ না হওয়ার ও বা কারণ কি এবং এইসব বিষয় গুলোই আপনার কনটেন্ট এ এপ্লাই করার জন্য নোট করে রাখুন।
৫. SEO স্ট্র্যাটেজি:
আপনার কম্পিটিটররা কিভাবে তাদের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট এর ভিজিবিলিটি বাড়াচ্ছে। কি কি কি ওয়ার্ড বা টুলস ইউজ করছে সেগুলো খুঁজে বের করুন৷ তাদের টপিক, ফরম্যাট এবং এসইও ফ্রিকোয়েন্সী বোঝার চেষ্টা করুন। তারা এসইও এর জন্য আলদা এক্সপার্ট এর সাহায্য নিচ্ছে কিনা এবং সেটা কতটা ইফেক্টিভ হচ্ছে এটাও জানা জরুরি। এসইও অপটিমাইজেশন এর জন্য কি কি টুলস ইউজ করা হচ্ছে সেগুলোও আইডেন্টিফাই করতে হবে।
আপনি নিজে থেকেও কম্পিটিটরদের এসইও অ্যানালাইসিস করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের টুলস যেমন, BuzzSumo, গুগল অ্যানালাইটিক্স এগুলো আপনাকে SEO এক্সামিন এ হেল্প করবে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্স:
কম্পিটিটরদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল গুলো এক্সামিন করুন। তারা কোন নিশের জন্য কোন প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে এবং সাকসেসফুলি হচ্ছে সেটা জেনে রাখা আপনার প্লাটফর্ম সিলেকশনে সাহায্য করবে।
তাদের পোস্টের কনটেন্ট, টপিক, পোস্ট করার ফ্রিকোয়েন্সী, পোস্টের টাইমিং, এনগেজমেন্ট এগুলো নোট করুন। পাশাপাশি তারা কীভাবে কাস্টমারদের সাথে কানেক্টেড থাকছে, চ্যটবট বা মডারেটর কোন উপায়ে মেসেজিং করে বেশি বেনিফিট পাচ্ছে এগুলো আপনার খুঁজে বের করতে হবে।
৭. ই-মেইল মার্কেটিং-কম্পিটিটর রিসার্চ:
কম্পিটিটরদের নিউজলেটার পাওয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইট এ সাইন আপ করে রাখতে পারেন। এতে করে নিয়মিত তাদের প্রোমোশনাল ই-মেইল গুলো আপনার চোখে পড়বে। এগুলো দিয়ে আপনি তাদের ই-মেইল পাঠানোর ম্যানার, সময়, টপিক ও ট্রিকস গুলো সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন। কিভাবে তারা ইমেইল মার্কেটিং করে ভিজিটরকে বা রিসিভারকে কাস্টমার এ রুপান্তর করছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৮. পেইড অ্যাডভার্টাইজিং:
মার্কেট এ প্রচুর পরিমাণ উদ্দোক্তা রয়েছে, আছে অসংখ্য নিশ। তবে এতসব ভীড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করার জন্য এবং টার্গেটেড অডিয়েন্স এর চোখে পড়ার জন্য সাহায্য নিতে হচ্ছে পেইড বিজ্ঞাপন এর। তাই কখন আপনার পেইড মার্কেটিং এর দিকে যাওয়া উচিত বুঝতে হলে কম্পিটিটর রিসার্চ করুন।
তারা কত সেকেন্ড এর অ্যাড দিচ্ছেন, কোন প্লাটফর্ম এর দিচ্ছেন, কনটেন্ট গুলো কি রকম এগুলো খুঁজে বের করুন। এছাড়াও তারা পেইড অ্যাডভার্টাইজিং এর জন্য কোন কোন কি ওয়ার্ড এ বিড করছে, তাদের এড কপি অপটিমাইজেশন ও ল্যান্ডিং পেইজ গুলো নিয়ে স্টাডি করুন। এতে করে আপনার পেইড বিজ্ঞাপন এর প্রয়োজন পড়বে কিনা, আর কিভাবে করতে হবে এগুলোর আইডিয়া থাকবে।
উপসংহারে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিল্ড বর্তমানে অনেক বেশি প্রসারিত হচ্ছে। মার্কেট সাইজ যেমন বড় হচ্ছে, একই নিশে প্রতিযোগীর সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় লক্ষ লক্ষ উদ্দোক্তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে আপনার কম্পিটিটর রিসার্চ এর দিকে ফোকাস করতে হবে।
তাই, মার্কেট এ পা রাখার আগেই, যথাসম্ভব কম্পিটিটর রিসার্চ করে নিন। তাদের পাওয়ারফুল ট্রিক্স, মার্কেট স্ট্র্যাটেজি, বিজনেস স্ট্রাকচার, প্লাটফর্ম চয়েস ইত্যাদিতে নজর রাখুন। পাশাপাশি খুঁজে বের করুন তাদের ভুল গুলোও। যেগুলো আপনি আপনার বিজনেসে অ্যাভয়েড করতে চান। এই সিম্পল টেকনিক গুলোই আপনাকে আপনার হাজারো কম্পিটিটর এর থেকে এগিয়ে রাখবে।