আপনার ব্যবসায়ের পরিকল্পনা উপস্থাপন বলতে কি বুঝা যাচ্ছে? ব্যবসায় শুরু করতে কি প্রয়োজন?
চট করে উত্তর দিতে গেলে আপনি প্রথমে ‘পরিকল্পনা’ এবং ‘পুঁজি’ এর কথাই বলবেন। একজন উদ্যোক্তার কাছে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু পুঁজি থাকে বিনিয়োগকারীর কাছে। উদ্যোক্তা হয়তো নিজস্ব পুঁজি নিয়ে ব্যবসা আপাতত চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে উদ্যোক্তার সামগ্রিক উদ্যোগটি শেষমেষ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। একজন উদ্যোক্তার জন্য ব্যবসায়ের পুঁজি জোগাড় করতে পার করতে হয় নানান চরাই-উতরাই। মূলত বিনিয়োগের অভাবে বেশিরভাগ উদ্যোক্তা উদ্যোক্তাই থেকে যান; ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারেন না। বলা হয়ে থাকে, প্রত্যেক সফল ব্যবসায়ী একজন সফল উদ্যোক্তা, কিন্তু সকল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী নয়। ধরা যাক, আপনার কাছে একটি দারুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আছে। এখন, একজন উদ্যোক্তা থেকে আপনার সফল ব্যবসায়ী হওয়া নির্ভর করছে কিভাবে আপনি আপনার পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের কাছে উপস্থাপন করছেন। উপস্থাপনা সঠিক হলে বিনিয়োগ প্রাপ্তি অনেকাংশে সহজ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে তা নিয়ে আলোচনা করব যে কিভাবে আপনি আপনার পরিকল্পনাকে উপস্থাপন করবেন। চলুন শুরু করা যাক।
১। টার্গেটেড বিনিয়োগকারী
প্রথমেই আপনাকে টার্গেটেড বিনিয়োগকারী খুঁজতে হবে। সেটা কেমন?। উদাহরন হিসেবে বিল গেটসের কথা বলা যায়। মাইক্রোসফট মূল প্রতিষ্ঠান হলেও ‘গ্রেইল’, ‘ইটাজেন’, ‘মেম্ফিস মিট’ এর মত টেক স্টার্টাপে বিল গেটস বিনিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ, আপনার ব্যবসার কাঠামোগত ধরনের সাথে বিনিয়োগকারী আগে থেকে অভ্যস্ত থাকলে, তার জন্য বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যায়। এবং আপনার পরিকল্পনা উপস্থাপন তারা সহজে বুঝতে পারে।
২। বিনিয়োগকারীর রুচি
পরিকল্পনা উপস্থাপন করার আগে, বিনিয়োগকারীর রুচি সম্পর্কে ধারনা রাখুন। লিখিতভাবে জানালে লেখার কাগজ থেকে শুরু থেকে ফন্ট, সবখানে সেই রুচির সাথে সংগতি রাখুন। সরাসরি উপস্থাপনেরর সুযোগ হলে আপনার পোশাক এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। মনে রাখবেন, একজন বিচক্ষন বিনিয়োগকারী সবসময় দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেন, সেক্ষেত্রে অংশীদারের ব্যক্তিত্ব এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
৩। পরিকল্পনা উপস্থাপনের উপায়
বিনিয়োগকারীকে আপনার উদ্যোগের পরিকল্পনা অনেক ভাবেই জানাতে পারেন। তবে ট্রেডিশনাল পদ্ধতি, লিখিত ভাবে উপস্থাপন এক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। আপনার লিখিত পরিকল্পনাটি হতে হবে স্বচ্ছ, সহজবোধ্য কিন্তু সংক্ষিপ্ত। বিনিয়োগকারীর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে ধারনা রাখা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক বিনিয়োগকারী কমবেশি ঝানু ব্যবসায়ী। সে অবশ্যই বুঝতে চাইবে, আপনার পন্যটির বাজারে উপযোগীতা আছে কিনা। থাকলে কতটুকু? একই ধরনের সেবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে কিনা, নাকি আপনি এক্ষেত্রে অনন্য। বিনিয়োগ করা অর্থ ফিরে আসবে কিনা, আসলে সেটা কবে নাগাদ? আপনার পরিকল্পনা উপস্থাপনায় বিনিয়োগকারীর এইসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর অন্তর্ভুক্ত রাখুন। একজন বড় ব্যবসায়ীর মূল সম্পদ পুঁজি এবং সময়। আপনার লিখিত পরিকল্পনা পড়ে দেখার সময়টুকু তার কাছে আপচয় মনে না হলেই কেবল পুঁজি বিনিয়োগের কথা তিনি চিন্তা করবেন।
৪। বিনিয়োগকারীর সাথে সরাসরি দেখা
যদি সম্ভব হয় বিনিয়োগকারীর সাথে সরাসরি দেখা করুন। বিনিয়োগ বোর্ডের সবাইকে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান অথবা নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। সেখানে আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা উপস্থাপন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর মতামত আলাদা ভাবে শোনার চেষ্টা করুন।
৫। প্রতিক্রিয়া
পরিকল্পনা উপস্থাপনের পরেই প্রতিক্রিয়া জানতে তৎপর হয়ে উঠবেন না। সময় দিন, সময় নিন। অতি উৎসাহী আচারন বিনিয়োগকারীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লিখিত কিংবা সাক্ষাৎ। পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য একজন বিনিয়োগকারীর, উদ্যোক্তাকে খুব বেশি ‘সুযোগ’ দেবার সুযোগ নেই। তাই, আপনার পরিকল্পনাটি উপস্থাপনের পরিকল্পনা থেকেই নিখুঁত হওয়া জরুরী। সমাজে উদ্যোক্তা অনেক, সফল ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সংখ্যালঘু।