প্রোডাক্ট প্রমোশনে ফেসবুক লাইভ যেন এক যুগান্তকারী বিপ্লবের নাম। আপনি জানেন কি, শতকরা ৮০ ভাগ ক্রেতা এখন পোস্ট পড়ার থেকে ফেসবুক লাইভকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর ফেসবুকের ওয়াচটাইম এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ১০০ মিলিয়ন ঘন্টারও বেশি। এছাড়া ফেসবুক গ্রুপ গুলোতে আছে ১ বিলিয়নের বেশি ইউজার। যা একটি হিউজ এমাউন্টের ক্রেতা ধরে আনতে সক্ষম।
ফেসবুক সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে গুলোতে প্রতিদিন কোটি কোটি ভিজিটর এর আনাগোনা। আর এফ-কমার্সের জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ প্রচারণা। তাই এফ-কমার্সের ফাউন্ডারদের জন্য ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিং যেন সোনায় সোহাগা৷ সেলস বাড়ানোর জন্য ছোট থেকে বড়, নানা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এখন বেছে নিয়েছে ফেসবুক লাইভ এর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
তাই আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রোডাক্ট প্রমোশনের ক্ষেত্রে ফেসবুক লাইভ শুরু করার ইফেক্টিভ সব আইডিয়া ও যাবতীয় তথ্য তুলে ধরছি আজকের ব্লগে
ফেসবুক লাইভ কিভাবে কাজ করে?
ফেসবুক লাইভের প্রভাব ও প্রসার যতটা বিস্তৃত, এর কন্ট্রোল ততটাই সহজ। এর কাজের স্ট্র্যাটেজিও খুবই সিম্পল। আপনি খুব সহজেই আপনার ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, ফোন বা ট্যাবলেট এর মত ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারবেন।
- ফেসবুকে আপনি আপনার বিজনেস পেজ, গ্রুপ কিংবা ইভেন্ট এর মাধ্যমে লাইভে যেতে পারবেন। তবে গ্রুপ বা ইভেন্ট এর থেকে পেজ থেকে লাইভ করা বেশি টুলসের এক্সেস দিয়ে থাকে।
- এজন্য প্রথমেই আপনি আপনার ডিভাইস থেকে ফেসবুক অ্যাপ ওপেন করুন। আর চলে যান কাঙ্ক্ষিত পেজ, গ্রুপ বা প্লাটফর্মে। এরপর শুরু লাইভ / গো লাইভ অপশনে ক্লিক করুন।
- লাইভ পোস্টে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় একটি শিরোনাম দিন
- লাইভ চলাকালীন সময়ে আপনি মোট ভিউয়ের সংখ্যা, কমেন্ট, রিয়্যাক্টের মত অনেক টুলস পেয়ে যাবেন। আর খুব সহজেই নিজে কিংবা এডমিনের মাধ্যমে এগুলো কন্ট্রোল করতে পারবেন।
- আপনার লাইভ শেষ হবার পর এটি আপনার টাইমলাইনে সেভ হয়ে থাকবে। লাইভ ছাড়াও অডিয়েন্স রা যেকোনো সময়ে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে পারবে।
ফেসবুক লাইভ কেন ব্যবহার করবেন?
গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের মনোযোগের স্প্যান অনেক ছোট হয়ে এসেছে। প্রোডাক্টের লং ডেসক্রিপশন আর প্রমোশনাল কথাবার্তা মানুষ খুব একটা পড়তে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। অন্যদিকে ভিডিও দেখা বেশ সহজ, এন্টারটেইনিং আর ক্রেডিবিলিটি ও বেশি। তাই এফ-কমার্সে ফেসবুক লাইভের চাহিদা এখন তুঙ্গে।
আর লাইভ স্ট্রিমিং এ রিয়েল টাইম এনগেজমেন্ট বেশ সহজ। ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে বেশ কার্যকরী। পন্য সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্ন,উত্তর ও তথ্য এক ভিডিওতেই কভার হয়ে যায়। বার বার নথি করার দরকার পরে না। তাই স্বল্প খরচে প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে ফেসবুক লাইভের জুড়ি মেলা মুসকিল।
সফলভাবে প্রোডাক্ট প্রমোশনে ফেসবুক লাইভ কিভাবে শুরু করবেন?
এমন না যে আপনি ফেসবুক লাইভ শুরু করলেন আর ক্রেতারা পণ্য কেনা শুরু করবে। লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করার ক্ষেত্রে মানতে হবে বিশেষ কিছু কৌশল –
ক্লিয়ার পার্সপেক্টিভ
প্রথমেই ফোকাস করুন আপনার বিজনেস প্রোডাক্টের দিকে। কারণ অডিয়েন্স যখন আপনার ব্যবসা সম্পর্কে ক্লিয়ার একটা আইডিয়া পাবে তখনই ইন্টারেস্ট ফিল করবে। এতে অডিয়েন্স এর সাথে সুন্দর একটা সম্পর্কও তৈরী হবে।
আর লাইভের প্রথমেই আজকের আলোচনার বিষয় সম্পর্কে আকর্ষণীয় একটি ব্রিফিং করুন। প্রডাক্টের ওভারঅল একটা ভিউ শো করুন যাতে ক্রেতারা সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে আগ্রহ ফিল করে।
টার্গেট কাস্টমার
টার্গেট কাস্টমার গোল সেট করুন এবং কোন কোন প্লাটফর্মে তাদের পাওয়া যাবে তার একটি লিস্ট করুন। এবং আপনার পেজ আর গ্রুপে কিছু এডমিন, মডারেটর রাখুন যারা কন্টিনিউয়াস নির্ধারিত প্লাটফর্ম লাইভ শেয়ার করে টার্গেট কাস্টমার কে নিয়ে আসবে।
এছাড়াও আপনার পণ্যে আগ্রহী ক্রতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাইভের পূর্বে বার বার লাইভের সময় ও বিষয়ের ঘোষণা দিয়ে রাখবেন। এতে করে শুরুতেই ভাল ভিউ আসবে।
পণ্য প্রদর্শন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে প্রডাক্ট শো করা। প্রডাক্ট কে যত আকর্ষণীয় ও ইউসফুল হিসেবে তুলে ধরবেন, তত বেশি আগ্রহী ক্রেতা পাবেন।
পণ্য প্রদর্শনের সময়ে কন্টিনিউয়াসলি প্রডাক্টের ডেসক্রিপশন বর্ননা করে যাবেন। এতে করে ক্রেতারা এক নজরে প্রডাক্ট ও এর ফিচার গুলো জেনে যাবে।
পণ্য এমন ভাবে শো করবেন যাতে সবাই ক্লিয়ার ভিউ পায়। এজন্য লাইভের পূর্বই লাইটিং, রুম সেটিং ঠিক রাখবেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
স্বাভাবিকভাবেই ভিডিও দেখতে দেখতে আপনার পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আসব। তাই একটা সময় আলদা করে রাখুন এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য। লাইভের মধ্যে সরাসরি উত্তর প্রদান করুন। এতে করে ক্রেতাদের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে।
তাছাড়া মডারেটর বা এডমিন কর্তৃক নিয়মিত কমেন্টের রিপ্লাই এর ব্যবস্থা করুন।
শর্ট প্রোডাক্ট লঞ্চ ভিডিও
প্রডাক্ট প্রমোশন করার আগে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এটি নিয়ে এক্সাইটিং শর্ট ভিডিও ক্লিপ তৈরী করুন। কারণ প্রথমেই লং ভিডিও অনেক ইউজার রা এক্সপেক্ট করে না। এবং পুরো ভিডিও আর দেখতে চায় না। তাই শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করুন এবং পরবর্তীতে লাইভে বিস্তারিত জানতে ইন্সপায়ার করুন।
ইভেন্ট তৈরী
এটাও লাইভ শুরু আগে একটি ঘোষণা দেয়ার মত। কবে, কখন স্ট্রিমিং করছেন। কি বিষয়ে লাইভ করছেন তার একটি শর্ট ডেসক্রিপশন দিয়ে রাখুন। লাইভ শুরু হবার আগ পর্যন্ত ভিডিও ভাবে ইভেন্টের প্রচারণা করুন। এতে করে লাইভ শুরু হবার সময় থেকেই বেশ ভাল রেসপন্স আসে।
লাইভ ট্রেনিং সেশন
ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বোধ করে যখন সেলার নিজে থেকে সেটা ইউজ করে কিংবা ব্যবহার পদ্ধতি দেখিয়ে দেয়। এতে করে তারা পন্যটি বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করে আর কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই যে পণ্যটিই বিক্রি করতে চাচ্ছেন তার ব্যবহার প্রণালীর একটি লাইভ ট্রেনিং সেশন পরিচালনা করুন।
ইন্ফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
ফেসবুল লাইভে সবচেয়ে কমন ফেস গুলো হল, সোশ্যাল মিডিয়া ইন্ফ্লুয়েন্সার। যেই মুখ গুলো মানুষ অনলাইন সচরাচর দেখতে পছন্দ করেন, পপুলারিটি বেশি, তাদেরকে ক্রেতারা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। প্রিয় কিংবা জনপ্রিয় মুখ গুলো যখন কোনো প্রোডাক্ট ইউজ করে দেখায়, বা প্রোডাক্ট সাজেস্ট করে, মানুষ সেটায় বেশি আগ্রহ ফিল করে। তাই ফেসবুক লাইভে প্রোডাক্ট প্রমোশনে ইন্ফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বেশ ভাল ক্রেতা নিয়ে আসে।
অথেনটিক ফেসবুক লাইভ
আপনি কখনই এমন কোনো জিনিসের প্রমোশন করবেন না যা আপনার কাছে নেই। কিংবা অতিরঞ্জিত করে কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি করার চেষ্টা করবেন না। যতটুকু সার্ভিস আপনার সাধ্যে আছে ঠিক ততটুকু ই প্রচার করবেন। নতুবা একবার প্রডাক্ট নেয়ার পর দ্বিতীয় বার আর কেউ কিনতে আগ্রহী হবে না। বরং পেজের রেপুটেশন নষ্ট হবে। তাই বিজনেস ও প্রোডাক্টের অথেনেটিসিটি বজায় রাখুন।